রমজানের আগে অস্থির সিলেট by ওয়েছ খছরু
প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ থেকে ১২টি ছিনতাই হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবস্থায় ক’দিন আগেই উদ্বেগ জানিয়েছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট ইইউ শহীদুল ইসলাম শাহীন। তার মতে, ৫ই আগস্ট বিক্ষুব্ধ জনতার ব্যানারে নগরের প্রতিটি থানা ও ফাঁড়িতে আক্রমণ করা হয়েছিল। এরপর দ্রুততম সময়ে থানার কার্যক্রম শুরু করা হলে পুলিশ ফাঁড়ির কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। যত দ্রুত ফাঁড়ির কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে, ততই নগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। একইসঙ্গে তিনি পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনার ওপরও তাগিদ দেন। তার বক্তব্যের সত্যতা মিলেছে। নগরের বেশির ভাগ ফাঁড়ির কার্যক্রম এখনো পুরোদমে শুরু হয়নি। কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হলেও ফোর্স দেয়া হয়নি। ফাঁড়িগুলোকে নতুন করে মেরামত করা হয়নি। লুট করা বেশির ভাগ আগ্নেয়াস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। আর এই সুযোগে নগরে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি ব্যাপক হারে বেড়েছে। বুধবার রাতে জিন্দাবাজারে এক ছিনতাইকারীকে ধরে গণধোলাই দেয় স্থানীয়রা। নগরের বন্দরবাজারে প্রতিদিন গণধোলাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বনকলাপাড়ায় মঙ্গলবার রাতে এক ছিনতাইকারীকে ধরে গণধোলাই দেয়া হয়। ছিনতাই বেড়ে যাওয়ার কারণে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে আইন নিজেরাই নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে। নগরের প্রাণকেন্দ্র জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, যখন ঘটনা ঘটছে তখন পুলিশ আসে না। যদি আসে তাও দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর। এই সুযোগে নগরের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে ছিনতাইকারীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে।
সিলেটের সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী মানবজমিনকে জানায়, সিলেটে অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেভাবে কাজ করার কথা সেভাবে কাজ করতে পারছে না। এজন্য পুলিশের মনোবল বাড়ানো সহ তাদের গতিশীল করার উপর জোর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানান তিনি। এদিকে, এই অবস্থার লাগাম টেনে ধরার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেও কাজ হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার এক রাতের অভিযানেই নগরের কোতোয়ালি থানা পুলিশ আট ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গতকাল শুক্রবার সকালে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের তরফে তাদের আটকের কথা নিশ্চিত করা হয়েছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. রেজাউল করিম ও রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান রমজানের আগে এ নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, নগরের ফুটপাথ দখলে নিয়েছে হকাররা। আর তাদের সঙ্গে মিশে গেছে ছিনতাইকারীরা। ফলে তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না। এ কারণে তারা রমজানের শুরুতেই হকার উচ্ছেদ করার দাবি জানান। বলেন, সড়কের জঞ্জাল কমে গেলে ছিনতাইকারীরা আর অবস্থান করতে পারবে না।
বৈঠকে পাড়াভিত্তিক কিশোর গ্যাং সহ নানা বিষয়ের উৎপাত সম্পর্কে পুলিশ কমিশনার ও ডিআইজিকে অবহিত করা হয়। তবে বৈঠকে পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম জানান, রমজান মাসে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি ও মলম পার্টির অপতৎপরতা রোধে পুলিশি টহল বাড়ানো হয়েছে। পুলিশের এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। হকার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তিনি জানান, এ ব্যাপারে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। তবে এ বিষয়ে নগরবাসীর সহযোগিতা প্রয়োজন। শপিং মলগুলোর সামনে এবং আশপাশে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এদিকে, গতকাল বিকালে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মানবজমিনকে জানান, সিলেট নগরের ছিনতাই রোধ করা এখন পুলিশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ছিনতাই রোধে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। প্রতিটি থানা ও ফাঁড়ি পুলিশ ছিনতাই রোধে অভিযানে রয়েছে। তিনি বলেন, একইসঙ্গে সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে পুলিশ দল চেকপোস্ট বসিয়ে নগরের প্রবেশমুখে তল্লাশি চালাচ্ছে। অপরাধীরা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সে ব্যাপারে নগর পুলিশ সক্রিয় বলে জানান তিনি।
No comments