নতুন সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে নেপাল ও চীনকে by অজয় ভদ্র খানাল
সেই ১৯৫৬ সাল থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে নেপালের আধুনিকায়ন প্রয়াসে চীনের অবদান অমূল্য।
প্রখ্যাত এক নেপালি কূটনীতিক সম্প্রতি স্মৃতিচারণ করে বলেছেন যে ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকে মাও সেতুং নেপালকে সহায়তা করেছিলেন। এই চীনা নেতা এটাকে একটি গরিব দেশকে একটি ধনী দেশের উপহার হিসেবে দেখেননি, বরং তার কাছে এটি ছিল বন্ধুদের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের বিষয়।
১৯৮৯ ও ২০১৫ সালের অবরোধের সময় নেপালের সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য দৃঢ়ভাবে পাশে ছিল ওই বন্ধু। বন্ধুত্ব, ধারাবাহিকতা ও বিশ্বস্ত মনোভাবের কারণে নেপালের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ চীনকে ইতিবাচকভাবে দেখে থাকে।
অবশ্য গত ১৫ বছরে চীনের সাথে নেপালের সম্পর্ক অনেক বদলে গেছে। নতুন নতুন প্রক্রিয়া ও ঘটনা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
সংকীর্ণ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিচিতি উদ্দেশ্যপূর্ণ এসব নতুন প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী হচ্ছে।
চীনা সম্পদ ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে বলা যায়, তারা তাদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করার সামর্থ্যও বহাল রাখবে, সেইসাথে এমনকি বিরূপ পরিস্থিতিতেও তার সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেবে।
অবশ্য নেপাল ও চীন যদি এসব নতুন ধারা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে এই দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটি পরাশক্তি-ছোট শক্তির সম্পর্কে পরিণত হবে, যেমনটা রয়েছে ভারত ও নেপালের মধ্যে।
এ কারণে নেপাল ও চীনকে অবশ্যই আড়ালে থাকা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় সুরাহা করতে হবে যাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় ওঠে, পারস্পরিক আস্থা ও বন্ধুত্বের মাত্রাটি বাড়িয়ে দেয়।
চীনের সাথে নেপালের সম্পর্ক আরো বেশি বৈষম্যপূর্ণ হয়ে ওঠছে। আগ্রাসী ভারত ৭০-এর দশকে চীনের আরো ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য করে নেপালকে।
২০০৪ সাল নাগাদ নেপালকে ১৮১ মিলিয়ন ডলার মঞ্জুরি দেয়, প্রায় ২৫টি প্রকল্প সম্পূর্ণ করে।
এরপর থেকে চীনের সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। দেশটি রিং রোড, সিভিল সার্ভিস হাসপাতাল, অপটিক্যাল ফাইবার প্রকল্প, আপার ত্রিশুলি ৩এ, ট্রান্সমিশন লাইন, বেশ কয়েকটি রাস্তা ও বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে অবদান রাখে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা সহায়তা অনেক বেড়েছে। ২০১৭-১৮ সময়কালে এই সহায়তার পরিমাণ ছিল ৫৮.৭ মিলিয়ন ডলার। অবশ্য তা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য (১২৩.৯ মিলিয়ন ডলার) ও জাপানের চেয়ে তারা অনেক পিছিয়ে ছিল।
দ্বিতীয়ত, চীন তার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখলেও নেপাল অব্যাহতভাবে তার বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ ও অগ্রাধিকার অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পঞ্চায়েতের আমল থেকে চীনা বাজারে নেপাল তার পণ্য ও পরিষেবা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
অবশ্য চীনে রফতানিতে ছাড় পেতে ব্যর্থ হয়েছে নেপাল, অবকাঠামোতে নিজের অগ্রাধিকারের প্রতিও চীনা সমর্থন সে পায়নি।
বিমান চুক্তিও একটি উদাহরণ। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে চীন ৭০টি পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে। কিন্তু নেপাল এয়ারলাইন্স এখন পর্যন্ত চীনা নগরীগুলোতে সুযোগ পায়নি। বাণিজ্যিক দিক থেকে চীনা নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ঝাম-তাতুপানি সীমান্ত বন্ধ হয়ে আছে। আর রাসুওয়াগধি সীমান্ত খুলে দেয়ার পর নেপালের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে।
এই ট্রানজিট খুলে দেয়ার পর গত বছর আমদানি দ্বিগুণ হয়ে ৮৬১ মিলিয়ন ডলার (৪৩.২৪ বিলিয়ন রুপি) হয়েছে। ফলে নেপালের রফতানি ২৫ ভাগ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ১.১৬ বিলিয়ন রুপি।
আরেকটি সাম্প্রতিক সৃষ্ট বিষয়ও চীন-নেপাল সম্পর্কে অবনতি সৃষ্টি করছে। সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্রের শাসনকালে ও ২০০৮ সালে মাওবাদীরা ক্ষমতায় আসার পর নেপাল ক্রমবর্ধমান হারে তার উন্নয়নে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ দিয়েছিল।
এসব চীনা প্রতিষ্ঠান দালালদের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা ও আমলাতন্ত্রের সাথে অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক সৃষ্টি করে। এসব চীনা কোম্পানির কাছ থেকে রাজনীতিবিদেরা সুবিধা হাসিল করেছিল।
এতে রাজনৈতিক মহল উপকৃত হলেও দেশের জন্য তা আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া নেপালি রাজনীতিবিদেরা দেশের জন্য স্বার্থহানির কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
গুটিকতেক রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীর হাতে নেপালের সাথে চীনের সম্পর্ককে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। চীনের সাথে নেপালকে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর, বিশ্বস্ত ও পেশাদার সম্পর্ক গড়তে হবে।
আর নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মতো ক্ষেত্রগুলোতে নেপাল ও চীনকে জোরালো সংলাপে বসতে হবে।
চীনা শীর্ষ নেতৃত্ব চীনকে একটি পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তারা দুর্নীতির মতো ইস্যুগুলো দমনও করতে চান। আমরা এই প্রেক্ষাপটে চীনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন দেখতে চাই। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি নেপাল-চীন সম্পর্ককে ভবিষ্যতে আরো স্বাস্থ্যকর করবে।
অবশ্য এজন্য নেপালের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজন দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা সমূলে উচ্ছেদ করা।
প্রখ্যাত এক নেপালি কূটনীতিক সম্প্রতি স্মৃতিচারণ করে বলেছেন যে ১৯৭০-এর দশকের প্রথম দিকে মাও সেতুং নেপালকে সহায়তা করেছিলেন। এই চীনা নেতা এটাকে একটি গরিব দেশকে একটি ধনী দেশের উপহার হিসেবে দেখেননি, বরং তার কাছে এটি ছিল বন্ধুদের মধ্যে সম্পদ বণ্টনের বিষয়।
১৯৮৯ ও ২০১৫ সালের অবরোধের সময় নেপালের সার্বভৌমত্বকে রক্ষার জন্য দৃঢ়ভাবে পাশে ছিল ওই বন্ধু। বন্ধুত্ব, ধারাবাহিকতা ও বিশ্বস্ত মনোভাবের কারণে নেপালের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ চীনকে ইতিবাচকভাবে দেখে থাকে।
অবশ্য গত ১৫ বছরে চীনের সাথে নেপালের সম্পর্ক অনেক বদলে গেছে। নতুন নতুন প্রক্রিয়া ও ঘটনা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন সৃষ্টির আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
সংকীর্ণ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিচিতি উদ্দেশ্যপূর্ণ এসব নতুন প্রক্রিয়া আরো শক্তিশালী হচ্ছে।
চীনা সম্পদ ও অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে বলা যায়, তারা তাদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করার সামর্থ্যও বহাল রাখবে, সেইসাথে এমনকি বিরূপ পরিস্থিতিতেও তার সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেবে।
অবশ্য নেপাল ও চীন যদি এসব নতুন ধারা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তবে এই দুই দেশের মধ্যকার বর্তমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটি পরাশক্তি-ছোট শক্তির সম্পর্কে পরিণত হবে, যেমনটা রয়েছে ভারত ও নেপালের মধ্যে।
এ কারণে নেপাল ও চীনকে অবশ্যই আড়ালে থাকা অনেক তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় সুরাহা করতে হবে যাতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় ওঠে, পারস্পরিক আস্থা ও বন্ধুত্বের মাত্রাটি বাড়িয়ে দেয়।
চীনের সাথে নেপালের সম্পর্ক আরো বেশি বৈষম্যপূর্ণ হয়ে ওঠছে। আগ্রাসী ভারত ৭০-এর দশকে চীনের আরো ঘনিষ্ঠ হতে বাধ্য করে নেপালকে।
২০০৪ সাল নাগাদ নেপালকে ১৮১ মিলিয়ন ডলার মঞ্জুরি দেয়, প্রায় ২৫টি প্রকল্প সম্পূর্ণ করে।
এরপর থেকে চীনের সম্পৃক্ততা বাড়তে থাকে। দেশটি রিং রোড, সিভিল সার্ভিস হাসপাতাল, অপটিক্যাল ফাইবার প্রকল্প, আপার ত্রিশুলি ৩এ, ট্রান্সমিশন লাইন, বেশ কয়েকটি রাস্তা ও বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে অবদান রাখে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা সহায়তা অনেক বেড়েছে। ২০১৭-১৮ সময়কালে এই সহায়তার পরিমাণ ছিল ৫৮.৭ মিলিয়ন ডলার। অবশ্য তা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য (১২৩.৯ মিলিয়ন ডলার) ও জাপানের চেয়ে তারা অনেক পিছিয়ে ছিল।
দ্বিতীয়ত, চীন তার নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষিত রাখলেও নেপাল অব্যাহতভাবে তার বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থ ও অগ্রাধিকার অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পঞ্চায়েতের আমল থেকে চীনা বাজারে নেপাল তার পণ্য ও পরিষেবা নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে।
অবশ্য চীনে রফতানিতে ছাড় পেতে ব্যর্থ হয়েছে নেপাল, অবকাঠামোতে নিজের অগ্রাধিকারের প্রতিও চীনা সমর্থন সে পায়নি।
বিমান চুক্তিও একটি উদাহরণ। বর্তমানে প্রতি সপ্তাহে চীন ৭০টি পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনা করে। কিন্তু নেপাল এয়ারলাইন্স এখন পর্যন্ত চীনা নগরীগুলোতে সুযোগ পায়নি। বাণিজ্যিক দিক থেকে চীনা নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে ঝাম-তাতুপানি সীমান্ত বন্ধ হয়ে আছে। আর রাসুওয়াগধি সীমান্ত খুলে দেয়ার পর নেপালের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলেছে।
এই ট্রানজিট খুলে দেয়ার পর গত বছর আমদানি দ্বিগুণ হয়ে ৮৬১ মিলিয়ন ডলার (৪৩.২৪ বিলিয়ন রুপি) হয়েছে। ফলে নেপালের রফতানি ২৫ ভাগ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ১.১৬ বিলিয়ন রুপি।
আরেকটি সাম্প্রতিক সৃষ্ট বিষয়ও চীন-নেপাল সম্পর্কে অবনতি সৃষ্টি করছে। সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্রের শাসনকালে ও ২০০৮ সালে মাওবাদীরা ক্ষমতায় আসার পর নেপাল ক্রমবর্ধমান হারে তার উন্নয়নে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ দিয়েছিল।
এসব চীনা প্রতিষ্ঠান দালালদের মাধ্যমে রাজনৈতিক নেতা ও আমলাতন্ত্রের সাথে অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক সৃষ্টি করে। এসব চীনা কোম্পানির কাছ থেকে রাজনীতিবিদেরা সুবিধা হাসিল করেছিল।
এতে রাজনৈতিক মহল উপকৃত হলেও দেশের জন্য তা আর্থিক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া নেপালি রাজনীতিবিদেরা দেশের জন্য স্বার্থহানির কারণও হয়ে দাঁড়ায়।
গুটিকতেক রাজনীতিবিদ বা ব্যবসায়ীর হাতে নেপালের সাথে চীনের সম্পর্ককে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। চীনের সাথে নেপালকে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর, বিশ্বস্ত ও পেশাদার সম্পর্ক গড়তে হবে।
আর নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার মতো ক্ষেত্রগুলোতে নেপাল ও চীনকে জোরালো সংলাপে বসতে হবে।
চীনা শীর্ষ নেতৃত্ব চীনকে একটি পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, তারা দুর্নীতির মতো ইস্যুগুলো দমনও করতে চান। আমরা এই প্রেক্ষাপটে চীনের দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন দেখতে চাই। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি নেপাল-চীন সম্পর্ককে ভবিষ্যতে আরো স্বাস্থ্যকর করবে।
অবশ্য এজন্য নেপালের রাজনৈতিক নেতৃত্বের প্রয়োজন দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা সমূলে উচ্ছেদ করা।
No comments