সহাবস্থানের সঙ্গে অন্য দাবি আদায়ে অনড় ছাত্র সংগঠনগুলো
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে
কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের পরিবেশ দৃশ্যমান হয়েছে। গতকাল দ্বিতীয়
দিনের মতো মধুর ক্যান্টিনে সময় কাটিয়েছে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী
ছাত্রদল। ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতাসীনদের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের একচ্ছত্র
আধিপত্যের কারণে মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ ও ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড
পরিচালনায় অনেকটা কোণঠাসা ছিল ছাত্রদল। আসন্ন ডাকসু নির্বাচনকে সামনে রেখে
ছাত্রদলসহ বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে
সহাবস্থানের দাবি তুলে।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে আস্তে আস্তে ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করছে ছাত্রদলসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে তারা সহাবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থাপনসহ অন্যান্য দাবি আদায়ে এখনো অনড় রয়েছে। দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চারদিনের আলটিমেটাম দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এদিকে টিএসসিকেন্দ্রিক ২১টি সংগঠনের সঙ্গে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ’র ব্যানারে জোটবদ্ধ হয়ে ডাকসু নির্বাচনের প্যানেল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে মধুর? ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
মধুতে ছাত্রদলের দ্বিতীয় দিন: ডাকসুর জন্য গঠিত কমিটির পুনঃগঠন দাবি: এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো মধুর ক্যান্টিনে গিয়েছে ছাত্রদল। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীসহ ২০-২৫ জন নেতাকর্মী মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ করেন। এর আধঘণ্টা পর আরো কিছু নেতাকর্মী নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে যায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজীব আহসান। এ সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ বলেন, শুধুমাত্র ডাকসু নির্বাচনের জন্য নয়, সহাবস্থানের জন্য তারা ক্যাম্পাসে এসেছেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যসব ক্যাম্পাসেও সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবি করেন।
এ সময় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, আমাদের সাত দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। আমরা ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে করাসহ অন্য ছয় দফা দাবি আদায়েও সচেষ্ট থাকবো। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। এ সময় রাজীব আহসান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কিছু দাবি জানিয়েছিলাম। আশা করছি প্রশাসন আমাদের দাবিগুলোর ব্যাপারে আন্তরিকতা প্রকাশ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সহাবস্থান নেই। আমাদের নেতাকর্মীরা হলে থাকতে পারে না। সহাবস্থানের স্থায়ী সমাধান হোক এটাই চাই। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছে। তবে আমরা শুধু ডাকসুকেন্দ্রিক ক্যাম্পাসে সহাবস্থান চাই না। আমরা চাই সবসময় ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকুক। তিনি বলেন, আমরা যৌক্তিক বিষয়গুলোকে সমর্থন করবো। কিন্তু প্রশাসন যেভাবে নির্বাচন করার জন্য চাচ্ছে সেটিকে ছাত্রদল গণতান্ত্রিক মনে করছে না।
আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের যাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা এ যাত্রা অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আশ্বাস রাখতে চাই। আমরা ডাকসু নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকতে চাই। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিটিগুলোতে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ শিক্ষক নেই অভিযোগ করে এসব কমিটির পুনর্গঠন চেয়ে সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিটিগুলোতে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ শিক্ষক নেই। যাদেরকে এসব কমিটিতে রাখা হয়েছে, তারা সবাই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সমর্থক। তাই এসব কমিটিতে গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ‘ছাত্রদলের মধ্যে শিবির ঢুকেছে’ ছাত্রলীগের এ অভিযোগের বিষয়ে আকরাম বলেন, আমরা প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে যাচাই-বাছাই করে পদ দিয়েছি। তাই ছাত্রদলের কমিটির মধ্যে কোনো শিবির নেই। তবে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে শিবিরের অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কিছুক্ষণ মধুতে অবস্থান করে চলে যান।
একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনে প্রগতিশীলদের আল্টিমেটাম: এদিকে ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করা ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চার দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট। গতকাল ভিসি কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি দেয় ছাত্রজোট। এর আগে মধুর ক্যান্টিন থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভিসি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে বলা হয় আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাবি না মানলে ঐদিন ভিসি কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। জোট নেতারা বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য ও দখলদারি জারি রয়েছে। এ অবস্থায় হলে ভোটকেন্দ্র করা হলে নির্বাচনকেও তারা প্রভাবিত করবে। নির্বাচনের আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা ও বেশির ভাগ সংগঠন হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করার দাবি জানিয়ে আসছি।
টিএসসির সংগঠনগুলোকে নিয়ে জোটবদ্ধ প্যানেল দেবে ছাত্রলীগ: নির্বাচনে টিএসসিকেন্দ্রিক ২১টি সংগঠনের সঙ্গে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ’র ব্যানারে জোটবদ্ধ হয়ে প্যানেল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার দুপুরে মধুর? ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেয়া হয়। টিএসসিকেন্দ্রিক ২১টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিয়ে আয়োজিত ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এ সময় টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের মুখপাত্র ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি এসএম রাকিব সিরাজী। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, এই (সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ) সংগঠনের ব্যানারে ডাকসু নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা করা হবে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও এর সঙ্গে থাকবে বলে জানান তিনি। এ সময় ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবাই সহযোগিতা করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ছাত্রলীগের এই নেতা।
সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী চায় সুন্দর একটি ডাকসু নির্বাচন। তবে, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যেন রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এস এম রাকিব সিরাজী বলেন, টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠনগুলো ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সঙ্গে থাকবে। ডাকসু নির্বাচনের উদ্দেশ্য হলো একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে সহশিক্ষা কার্যক্রমে উৎসাহিত করা। সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও ঢাবিকে একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করাও এর উদ্দেশ্য। তবে গত ২৮ বছরে ডাকসু না থাকায় টিএসসিকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন ডাকসুর বিকল্প হিসেবে কাজ করে আসছে।
এজন্য সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ নামে আদর্শিক প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ একটি জোট একসঙ্গে কাজ করছে। ডাকসু নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র হলে রাখার বিষয়টিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানিয়েছে দাবি করে এতে আরো বলা হয়, ডাকসু নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় হলে হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেটি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো আপত্তি নেই। বরং সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সকল প্যানেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া, দাবি-দাওয়া ও তাদের আবেগ অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ইশতেহার দেবে বলে প্রত্যাশা। এ সময় নির্বাচনের আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে আস্তে আস্তে ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করছে ছাত্রদলসহ প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে তারা সহাবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে ভোটকেন্দ্র একাডেমিক ভবনে স্থাপনসহ অন্যান্য দাবি আদায়ে এখনো অনড় রয়েছে। দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চারদিনের আলটিমেটাম দিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এদিকে টিএসসিকেন্দ্রিক ২১টি সংগঠনের সঙ্গে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ’র ব্যানারে জোটবদ্ধ হয়ে ডাকসু নির্বাচনের প্যানেল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। গতকাল দুপুরে মধুর? ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
মধুতে ছাত্রদলের দ্বিতীয় দিন: ডাকসুর জন্য গঠিত কমিটির পুনঃগঠন দাবি: এদিকে দ্বিতীয় দিনের মতো মধুর ক্যান্টিনে গিয়েছে ছাত্রদল। গতকাল বেলা ১১টার দিকে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার সিদ্দিকীসহ ২০-২৫ জন নেতাকর্মী মধুর ক্যান্টিনে প্রবেশ করেন। এর আধঘণ্টা পর আরো কিছু নেতাকর্মী নিয়ে মধুর ক্যান্টিনে যায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজীব আহসান। এ সময় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ বলেন, শুধুমাত্র ডাকসু নির্বাচনের জন্য নয়, সহাবস্থানের জন্য তারা ক্যাম্পাসে এসেছেন। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অন্যসব ক্যাম্পাসেও সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবি করেন।
এ সময় সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, আমাদের সাত দফা দাবির মধ্যে অন্যতম দাবি সহাবস্থানের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। আমরা ভোটকেন্দ্র হলের বাইরে করাসহ অন্য ছয় দফা দাবি আদায়েও সচেষ্ট থাকবো। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আস্থা রাখতে চাই। এ সময় রাজীব আহসান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কিছু দাবি জানিয়েছিলাম। আশা করছি প্রশাসন আমাদের দাবিগুলোর ব্যাপারে আন্তরিকতা প্রকাশ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সহাবস্থান নেই। আমাদের নেতাকর্মীরা হলে থাকতে পারে না। সহাবস্থানের স্থায়ী সমাধান হোক এটাই চাই। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে আসা শুরু করেছে। তবে আমরা শুধু ডাকসুকেন্দ্রিক ক্যাম্পাসে সহাবস্থান চাই না। আমরা চাই সবসময় ক্যাম্পাসে সহাবস্থান ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকুক। তিনি বলেন, আমরা যৌক্তিক বিষয়গুলোকে সমর্থন করবো। কিন্তু প্রশাসন যেভাবে নির্বাচন করার জন্য চাচ্ছে সেটিকে ছাত্রদল গণতান্ত্রিক মনে করছে না।
আমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের যাত্রা শুরু হয়েছে। আমরা এ যাত্রা অব্যাহত রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আশ্বাস রাখতে চাই। আমরা ডাকসু নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকতে চাই। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিটিগুলোতে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ শিক্ষক নেই অভিযোগ করে এসব কমিটির পুনর্গঠন চেয়ে সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ডাকসু নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিটিগুলোতে গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ শিক্ষক নেই। যাদেরকে এসব কমিটিতে রাখা হয়েছে, তারা সবাই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের সমর্থক। তাই এসব কমিটিতে গ্রহণযোগ্য শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হোক। ‘ছাত্রদলের মধ্যে শিবির ঢুকেছে’ ছাত্রলীগের এ অভিযোগের বিষয়ে আকরাম বলেন, আমরা প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে যাচাই-বাছাই করে পদ দিয়েছি। তাই ছাত্রদলের কমিটির মধ্যে কোনো শিবির নেই। তবে কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে শিবিরের অভিযোগ এলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শেষে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কিছুক্ষণ মধুতে অবস্থান করে চলে যান।
একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপনে প্রগতিশীলদের আল্টিমেটাম: এদিকে ভোটকেন্দ্র আবাসিক হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে করা ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চার দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট। গতকাল ভিসি কার্যালয়ের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ হুঁশিয়ারি দেয় ছাত্রজোট। এর আগে মধুর ক্যান্টিন থেকে এক বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ভিসি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে মিলিত হয়। সেখানে বলা হয় আগামী ১৮ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাবি না মানলে ঐদিন ভিসি কার্যালয় ঘেরাও করা হবে। জোট নেতারা বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য ও দখলদারি জারি রয়েছে। এ অবস্থায় হলে ভোটকেন্দ্র করা হলে নির্বাচনকেও তারা প্রভাবিত করবে। নির্বাচনের আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা ও বেশির ভাগ সংগঠন হলের বাইরে একাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র করার দাবি জানিয়ে আসছি।
টিএসসির সংগঠনগুলোকে নিয়ে জোটবদ্ধ প্যানেল দেবে ছাত্রলীগ: নির্বাচনে টিএসসিকেন্দ্রিক ২১টি সংগঠনের সঙ্গে ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ’র ব্যানারে জোটবদ্ধ হয়ে প্যানেল দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ছাত্রলীগ। বৃহস্পতিবার দুপুরে মধুর? ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেয়া হয়। টিএসসিকেন্দ্রিক ২১টি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনকে নিয়ে আয়োজিত ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী, ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। এ সময় টিএসসিভিত্তিক সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদের মুখপাত্র ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি এসএম রাকিব সিরাজী। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন বলেন, এই (সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ) সংগঠনের ব্যানারে ডাকসু নির্বাচনের প্যানেল ঘোষণা করা হবে। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদও এর সঙ্গে থাকবে বলে জানান তিনি। এ সময় ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সবাই সহযোগিতা করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ছাত্রলীগের এই নেতা।
সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী চায় সুন্দর একটি ডাকসু নির্বাচন। তবে, ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কোনো প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যেন রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে না পারে সে বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। এস এম রাকিব সিরাজী বলেন, টিএসসিকেন্দ্রিক সংগঠনগুলো ডাকসু নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সঙ্গে থাকবে। ডাকসু নির্বাচনের উদ্দেশ্য হলো একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে সহশিক্ষা কার্যক্রমে উৎসাহিত করা। সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায় ও ঢাবিকে একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশাসনকে সহযোগিতা করাও এর উদ্দেশ্য। তবে গত ২৮ বছরে ডাকসু না থাকায় টিএসসিকেন্দ্রিক বিভিন্ন সংগঠন ডাকসুর বিকল্প হিসেবে কাজ করে আসছে।
এজন্য সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ নামে আদর্শিক প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ একটি জোট একসঙ্গে কাজ করছে। ডাকসু নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র হলে রাখার বিষয়টিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বাগত জানিয়েছে দাবি করে এতে আরো বলা হয়, ডাকসু নির্বাচনের ভোট কেন্দ্র ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতায় হলে হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে, যেটি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনো আপত্তি নেই। বরং সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সকল প্যানেল সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাওয়া-পাওয়া, দাবি-দাওয়া ও তাদের আবেগ অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ইশতেহার দেবে বলে প্রত্যাশা। এ সময় নির্বাচনের আচরণবিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
No comments