যেভাবে খুন হন মাহফুজা by শুভ্র দেব
দুপুরের
খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী।
তিনটার দিকে মাসিক বেতন আনতে বাসায় যান তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক সুজন। বেতন
বুঝিয়ে দেয়ার পর সুজন বাসা থেকে চলে যান। ৩টা ২১ মিনিটে সুজনের সঙ্গে
মোবাইলফোনে কথা হয় তার। জানিয়ে দেন পরের দিন সকালে বের হবেন সময়মতো যেন চলে
আসে। কথা শেষ করে আবার নিজের শোবার কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। কিছুক্ষণ
পর পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বাসার গৃহকর্মী স্বপ্না ও রেশমা কিলিং মিশনের
প্রস্তুতি নেয়। বিকাল আনুমানিক সাড়ে তিনটার পর তারা দুজন কক্ষে প্রবেশ করে
দরজা বন্ধ করে দেয়।
পরে রেশমা মাহফুজা চৌধুরীর শরীরের ওপর উঠে শক্ত করে হাত-পা ধরে রাখে।
আর স্বপ্না গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টান দিতে থাকে। এসময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় মাহফুজা চৌধুরীর। এক পর্যায়ে হাতের আঙ্গুল ভেঙে যায় তার। বাঁচার জন্য চিৎকার করতে চাইলে স্বপ্না বালিশ চেপে ধরে তার মুখের উপর। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যান ইডেনের সাবেক এই অধ্যক্ষ। পুলিশের হাতে আটকের পর এমনটাই জানিয়েছে গৃহকর্মী ৩০ বছর বয়সী রেশমা। মাহফুজা চৌধুরীর হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পুলিশের বিশ্বস্ত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে রেশমাকে আটকের বিষয়টি গতরাত পর্যন্ত স্বীকার করেনি পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, মাহফুজা চৌধুরী হত্যার পর তার স্বামী ইসমত কাদির গামা বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় স্বপ্না, রেশমা ছাড়াও গৃহকর্মী সরবরাহকারী রুনুকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা এই খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামেন। মামলার একদিন পরেই গ্রেপ্তার করা হয় রুনুকে। তার দেয়া তথ্যমতে পুলিশ আটক করে রেশমার ভাই শরীফকে। পরে পুলিশ শরীফের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে নেত্রকোনার স্বামীর বাড়ি থেকে আটক করে রেশমাকে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, অভাবের সংসারে অর্থের যোগান দিতে গৃহকর্মীর কাজ নেন নেত্রকোনার ৩০ বছর বয়সী রেশমা।
দিনমজুর স্বামী ছাড়াও সংসারে তিন সন্তান রয়েছে তার। তাই সংসারে নিত্যদিন অভাব অনটন লেগে থাকতো। উপায়ান্তর না পেয়ে রেশমা ঢাকায় থাকা তার ভাইয়ের কাছে সব খুলে বলে। বোনের এমন অবস্থা দেখে ভাই তার জন্য কাজ খুঁজতে থাকে। পরিচয় হয় বাংলাদেশ মেডিকেলের আয়া রুনুর সঙ্গে। যিনি বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজের লোক সরবরাহ করতো। এই রুনুই পরবর্তীতে রেশমাকে দীর্ঘদিনের পরিচিত এলিফ্যান্ট রোডের সুকন্যা টাওয়ারের ১৬/সি ও ১৫/সি ডুপ্লেক্স বাসায় মাসে ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ জুটিয়ে দেয়। সেই মোতাবেক ২রা ফেব্রুয়ারি রেশমা ওই বাসাতে কাজে যোগদান করে। একই বাসায় আড়াই মাস ধরে গৃহকর্মীর কাজ করছিলো স্বপ্না (৩০) ও পঞ্চাশোর্ধ রুশিদা বেগম।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রেশমা দাবি করেছে, কাজে যোগদানের পর থেকে গৃহকর্ত্রীর ব্যবহারে অখুশি ছিল সে ও স্বপ্না। যদিও স্বপ্না আরো অনেক আগে থেকেই কাজ করছিলো। স্বপ্না আরো আগে থেকেই গৃহকর্মীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। কিন্তু কিছুতেই সে সেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারছিল না। রেশমা কাজে যোগদানের পর সঙ্গী হিসেবে সে তাকেই বেছে নেয়। দুজনের ক্ষোভ থেকেই তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে রেশমা পুলিশের কাছে দাবি করেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রেশমা জানিয়েছে, বাসার বাইরে যেতে না পারা, স্বজনদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে না পারার জন্য তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তাই ৯ই ফেব্রুয়ারি মাহফুজা চৌধুরীকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় তারা। রেশমা জানায়, কিলিং মিশনে তারা দুজনই অংশ নেয়। কারণ গৃহকর্তা ইসমত কাদির গামা প্রতিদিন সকালে বের হয়ে যেতেন আর আসতেন সন্ধ্যায়। ঘটনার দিন গৃহকর্ত্রী ও গৃহকর্তার মোবাইলফোনে কথা শুনে তারা নিশ্চিত হয়েছেন গৃহকর্তার ফিরতে দেরি হবে। তাই তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী বয়স্ক গৃহকর্মী রুশিদাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। গাড়িচালক সুজন চলে যাওয়ার পর তারা মূল কিলিং মিশন শুরু করে। রেশমা আরো জানায়, মাহফুজা চৌধুরী নিস্তেজ হয়ে গেলে সে চলে যায় ডুপ্লেক্স বাসার ১৫/সি নিচ তলায়। আর এই সুযোগে স্বপ্না ১৬/সি উপরের তলায় এসে নিহতের কাছে থাকা চাবি নিয়ে আলমিরাসহ আরো কিছু জায়গা থেকে টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর রেশমা নিচ তলা থেকে উপরের তলায় গিয়ে দেখে ঘরের সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে। সে বুঝতে পারে স্বপ্না সবকিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে। তখন মাহফুজা চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে কিনা সে আরেকবার নিশ্চিত হয়। পরে ছোট একটি হ্যান্ড পার্টস ব্যাগ থেকে ৬ হাজার টাকা ও একটি স্বর্ণের চেইন ও কিছু কাপড় নিয়ে সেও পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় বাসার নিরাপত্তাকর্মীরা হাতে ব্যাগ দেখে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল সে কোথায় যাচ্ছে। তখন সে বলেছে, ১৬/সি-তে গৃহকর্মীর কাজ করে আর দর্জির দোকানে কাপড় সেলাই করতে যাচ্ছে। তারপর সেখান থেকে সরাসরি সে নেত্রকোনার স্বামীর বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে চলে গেলেও স্বামীর কাছে খুনের বিষয় চাপা রাখে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাড়ি ফিরেছে বলে জানায়।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে এখন পর্যন্ত ডজনখানেক ব্যক্তিকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রুনু, রেশমা ছাড়াও এখনো পুলিশের কাছে আটক আছে রেশমার স্বামী। এর আগেও একাধিক লোককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করা আরেক আসামি স্বপ্না এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাকে আটক করার জন্য পুলিশের একটি টিম গত কয়েকদিন ধরে কাজ করছে। রুনুর স্বামী মো. মোজাম্মেল বলেন, ১২ বছর আগে রুনুর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। সে বাংলাদেশ মেডিকেলে আয়ার কাজ করে আর আমি মোহাম্মদপুরে একটি আড়তে চাকরি করি। ওই আড়তের পাশেই আমাদের বাসা। বাসার পাশেই রেশমার ভাই চাকরি করতো। তাই রুনুকে সে চিনতো। তখন ওই ভাই রুনুকে রেশমার জন্য চাকরি খুঁজে দেয়ার কথা বলেন। মোজাম্মেল বলেন, ইসমত কাদির গামার সঙ্গে আমি ও আমার স্ত্রীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তিনি রুনুকে গৃহকর্মী দেয়ার কথা বলেছিলেন।
তাই রেশমাকে ওই বাসায় কাজে দিয়েছিল রুনু। বিনিময়ে নগদ ২০০ টাকা ও একটি শাড়ি পেয়েছিল। কিন্তু রেশমা এমন কাজ করবে তা সে কখনই জানতো না। ঘটনার পরের দিন গৃহকর্তা রুনুকে ফোন করে গৃহকর্ত্রী হত্যার কথা জানায়। ভয় পেয়ে সে মোবাইল বন্ধ করে তার খালাতো ভাইয়ের বাসায় চলে যায়। তার মোবাইল বন্ধ পেয়ে গৃহকর্তা আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে হত্যার বিষয়টি বলেন। তখন আমিই তাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়েছি। কারণ সে কোনো দোষ করে নি। দোষ না করে যদি সে পালিয়ে থাকে তবে শাস্তি বেশি হবে।
নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি ওই দুই নারী গৃহকর্মীই মাহফুজা চৌধুরীকে হত্যা করেছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
গত ১০ই ফেব্রুয়ারি এলিফ্যান্ট রোডের সুকন্যা টাওয়ারের ১৬ তলা থেকে ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ।
পরে রেশমা মাহফুজা চৌধুরীর শরীরের ওপর উঠে শক্ত করে হাত-পা ধরে রাখে।
আর স্বপ্না গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টান দিতে থাকে। এসময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় মাহফুজা চৌধুরীর। এক পর্যায়ে হাতের আঙ্গুল ভেঙে যায় তার। বাঁচার জন্য চিৎকার করতে চাইলে স্বপ্না বালিশ চেপে ধরে তার মুখের উপর। ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যান ইডেনের সাবেক এই অধ্যক্ষ। পুলিশের হাতে আটকের পর এমনটাই জানিয়েছে গৃহকর্মী ৩০ বছর বয়সী রেশমা। মাহফুজা চৌধুরীর হত্যা মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও পুলিশের বিশ্বস্ত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে রেশমাকে আটকের বিষয়টি গতরাত পর্যন্ত স্বীকার করেনি পুলিশ।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, মাহফুজা চৌধুরী হত্যার পর তার স্বামী ইসমত কাদির গামা বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলায় স্বপ্না, রেশমা ছাড়াও গৃহকর্মী সরবরাহকারী রুনুকে আসামি করা হয়। এরপর থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা এই খুনের রহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামেন। মামলার একদিন পরেই গ্রেপ্তার করা হয় রুনুকে। তার দেয়া তথ্যমতে পুলিশ আটক করে রেশমার ভাই শরীফকে। পরে পুলিশ শরীফের কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে নেত্রকোনার স্বামীর বাড়ি থেকে আটক করে রেশমাকে। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, অভাবের সংসারে অর্থের যোগান দিতে গৃহকর্মীর কাজ নেন নেত্রকোনার ৩০ বছর বয়সী রেশমা।
দিনমজুর স্বামী ছাড়াও সংসারে তিন সন্তান রয়েছে তার। তাই সংসারে নিত্যদিন অভাব অনটন লেগে থাকতো। উপায়ান্তর না পেয়ে রেশমা ঢাকায় থাকা তার ভাইয়ের কাছে সব খুলে বলে। বোনের এমন অবস্থা দেখে ভাই তার জন্য কাজ খুঁজতে থাকে। পরিচয় হয় বাংলাদেশ মেডিকেলের আয়া রুনুর সঙ্গে। যিনি বিভিন্ন বাসাবাড়িতে কাজের লোক সরবরাহ করতো। এই রুনুই পরবর্তীতে রেশমাকে দীর্ঘদিনের পরিচিত এলিফ্যান্ট রোডের সুকন্যা টাওয়ারের ১৬/সি ও ১৫/সি ডুপ্লেক্স বাসায় মাসে ৬ হাজার টাকা বেতনে কাজ জুটিয়ে দেয়। সেই মোতাবেক ২রা ফেব্রুয়ারি রেশমা ওই বাসাতে কাজে যোগদান করে। একই বাসায় আড়াই মাস ধরে গৃহকর্মীর কাজ করছিলো স্বপ্না (৩০) ও পঞ্চাশোর্ধ রুশিদা বেগম।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রেশমা দাবি করেছে, কাজে যোগদানের পর থেকে গৃহকর্ত্রীর ব্যবহারে অখুশি ছিল সে ও স্বপ্না। যদিও স্বপ্না আরো অনেক আগে থেকেই কাজ করছিলো। স্বপ্না আরো আগে থেকেই গৃহকর্মীর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। কিন্তু কিছুতেই সে সেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে পারছিল না। রেশমা কাজে যোগদানের পর সঙ্গী হিসেবে সে তাকেই বেছে নেয়। দুজনের ক্ষোভ থেকেই তারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে রেশমা পুলিশের কাছে দাবি করেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রেশমা জানিয়েছে, বাসার বাইরে যেতে না পারা, স্বজনদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে না পারার জন্য তারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তাই ৯ই ফেব্রুয়ারি মাহফুজা চৌধুরীকে হত্যা করে পালিয়ে যাওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় তারা। রেশমা জানায়, কিলিং মিশনে তারা দুজনই অংশ নেয়। কারণ গৃহকর্তা ইসমত কাদির গামা প্রতিদিন সকালে বের হয়ে যেতেন আর আসতেন সন্ধ্যায়। ঘটনার দিন গৃহকর্ত্রী ও গৃহকর্তার মোবাইলফোনে কথা শুনে তারা নিশ্চিত হয়েছেন গৃহকর্তার ফিরতে দেরি হবে। তাই তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী বয়স্ক গৃহকর্মী রুশিদাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে। গাড়িচালক সুজন চলে যাওয়ার পর তারা মূল কিলিং মিশন শুরু করে। রেশমা আরো জানায়, মাহফুজা চৌধুরী নিস্তেজ হয়ে গেলে সে চলে যায় ডুপ্লেক্স বাসার ১৫/সি নিচ তলায়। আর এই সুযোগে স্বপ্না ১৬/সি উপরের তলায় এসে নিহতের কাছে থাকা চাবি নিয়ে আলমিরাসহ আরো কিছু জায়গা থেকে টাকা পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর রেশমা নিচ তলা থেকে উপরের তলায় গিয়ে দেখে ঘরের সবকিছু এলোমেলো হয়ে আছে। সে বুঝতে পারে স্বপ্না সবকিছু নিয়ে পালিয়ে গেছে। তখন মাহফুজা চৌধুরীর মৃত্যু হয়েছে কিনা সে আরেকবার নিশ্চিত হয়। পরে ছোট একটি হ্যান্ড পার্টস ব্যাগ থেকে ৬ হাজার টাকা ও একটি স্বর্ণের চেইন ও কিছু কাপড় নিয়ে সেও পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়ার সময় বাসার নিরাপত্তাকর্মীরা হাতে ব্যাগ দেখে তাকে জিজ্ঞেস করেছিল সে কোথায় যাচ্ছে। তখন সে বলেছে, ১৬/সি-তে গৃহকর্মীর কাজ করে আর দর্জির দোকানে কাপড় সেলাই করতে যাচ্ছে। তারপর সেখান থেকে সরাসরি সে নেত্রকোনার স্বামীর বাড়িতে চলে যায়। বাড়িতে চলে গেলেও স্বামীর কাছে খুনের বিষয় চাপা রাখে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে বাড়ি ফিরেছে বলে জানায়।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে এখন পর্যন্ত ডজনখানেক ব্যক্তিকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। রুনু, রেশমা ছাড়াও এখনো পুলিশের কাছে আটক আছে রেশমার স্বামী। এর আগেও একাধিক লোককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে কিলিং মিশনে অংশগ্রহণ করা আরেক আসামি স্বপ্না এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাকে আটক করার জন্য পুলিশের একটি টিম গত কয়েকদিন ধরে কাজ করছে। রুনুর স্বামী মো. মোজাম্মেল বলেন, ১২ বছর আগে রুনুর সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে। সে বাংলাদেশ মেডিকেলে আয়ার কাজ করে আর আমি মোহাম্মদপুরে একটি আড়তে চাকরি করি। ওই আড়তের পাশেই আমাদের বাসা। বাসার পাশেই রেশমার ভাই চাকরি করতো। তাই রুনুকে সে চিনতো। তখন ওই ভাই রুনুকে রেশমার জন্য চাকরি খুঁজে দেয়ার কথা বলেন। মোজাম্মেল বলেন, ইসমত কাদির গামার সঙ্গে আমি ও আমার স্ত্রীর দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। তিনি রুনুকে গৃহকর্মী দেয়ার কথা বলেছিলেন।
তাই রেশমাকে ওই বাসায় কাজে দিয়েছিল রুনু। বিনিময়ে নগদ ২০০ টাকা ও একটি শাড়ি পেয়েছিল। কিন্তু রেশমা এমন কাজ করবে তা সে কখনই জানতো না। ঘটনার পরের দিন গৃহকর্তা রুনুকে ফোন করে গৃহকর্ত্রী হত্যার কথা জানায়। ভয় পেয়ে সে মোবাইল বন্ধ করে তার খালাতো ভাইয়ের বাসায় চলে যায়। তার মোবাইল বন্ধ পেয়ে গৃহকর্তা আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে হত্যার বিষয়টি বলেন। তখন আমিই তাকে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দিয়েছি। কারণ সে কোনো দোষ করে নি। দোষ না করে যদি সে পালিয়ে থাকে তবে শাস্তি বেশি হবে।
নিউ মার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিকুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছি ওই দুই নারী গৃহকর্মীই মাহফুজা চৌধুরীকে হত্যা করেছে। আমরা খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারবো।
গত ১০ই ফেব্রুয়ারি এলিফ্যান্ট রোডের সুকন্যা টাওয়ারের ১৬ তলা থেকে ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে নিউ মার্কেট থানা পুলিশ।
No comments