রোহিঙ্গা সংকটে সমঝোতা: চীনের হাত স্পষ্ট, হাত কামড়াচ্ছে ভারত
রোহিঙ্গাদের
ফেরত পাঠানো নিয়ে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে যে সমঝোতা দলিল স্বাক্ষরিত
হয়েছে, তাতে স্পষ্টই চীনের ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ দেখতে পাচ্ছে ভারত। একইসঙ্গে
তারা কিছুটা হাতও কামড়াচ্ছে!
ভারতের আফসোসের কারণ— প্রায় তিন মাস সময় পাওয়ার পরও রোহিঙ্গা প্রশ্নে দিল্লি কোনও নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারলো না। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীন হয়তো নাক গলাবে না, ভারতের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। কারণ চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পেশ করা ফর্মুলার বেশকিছুটা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মেনে নিলো মিয়ানমার ও বাংলাদেশ।
গত ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে ওই দলিল স্বাক্ষরিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বিকালে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এই সমঝোতার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। তখন মুখপাত্র রবীশ কুমার নিজের অস্বস্তি গোপন করতে না পেরে বলে ফেলেন, ‘যেটা এখন ঘটছে সে বিষয়ে কী মন্তব্য করবো বলুন তো? আর রাখাইন প্রদেশের বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিয়ে কী করা উচিত, তা আমরা আগে অনেকবারই বলেছি। মনে হয় না এর পুনরাবৃত্তির কোনও প্রয়োজন আছে।’
ভারতে তখন বেজেছে বিকাল সাড়ে ৪টা।
নেপিদোতে সই-সাবুদ শেষ হয়ে গেছে এর বেশ আগেই। ঘটনা হলো, তারপর প্রায় সাড়ে তিন দিন কেটে গেলেও ভারত এই সমঝোতা নিয়ে এখনও কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া দেয়নি। না গণমাধ্যমে, না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে।
এদিকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে কথা মুখ ফুটে বলতে পারছে না, তা সরাসরি বলে দিলো দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু’র সম্পাদকীয়। সেখানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই সমঝোতাকে ‘চায়না প্ল্যান’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। চীনের মধ্যস্থতাতেই যে মূলত দুই দেশ মুখোমুখি আলোচনার টেবিলে বসে দলিলে স্বাক্ষর করেছে তা পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে জানানো হয়েছে দ্ব্যর্থহীন ভাষায়।
ভারতের কূটনৈতিক মহলের আক্ষেপ ঠিক এই জায়গাতেই— যে কাজটা আগে উদ্যোগ নিলে হয়তো দিল্লি করতে পারতো, শেষবেলায় এসে চীন কিনা বাজিমাত করে দিলো!
মিয়ানমারে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন এক সাবেক কূটনীতিক রবিবার (২৬ নভেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়ে আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ। কাজেই রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের জন্য এক উভয় সংকট। অতএব কিভাবে ভারসাম্য রাখা উচিত গত তিন মাস ধরে আমরা শুধু সেসবই ভেবে গেলাম। অথচ চীনের জন্যও পরিস্থিতি একই রকম ছিল। কিন্তু তারা ঠিক মোক্ষম সময়ে এসে একটা নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে গেলো।’
দিনকয়েক আগেই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে এসে তার তিন দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ফর্মুলা পেশ করেন। পরে বেইজিংয়ের দাবি ছিল— দুই দেশই তা মেনে নিয়েছে।
অথচ গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও ঢাকায় গিয়েছিলেন। এমনকি রোহিঙ্গা সংকটের একেবারে শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন। মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে সুষমা স্বরাজ ও শেখ হাসিনার কথাবার্তা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবরাও গত তিন মাসে নিউ ইয়র্ক, কলম্বো, এমনকি দিল্লিতেও একাধিকবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সেগুলো মোটেও ফলপ্রসূ হয়নি।
এ কারণে রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারতের ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ দ্বিধাই শেষ পর্যন্ত কাল হলো। আর চীন এসে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলো এ ধরনের বিরাট সংকটে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ কার ওপর বেশি ভরসা রাখতে রাজি।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল অবশ্য দাবি করছে, চীনের আগে প্রথমে তারা ভারতের ওপরেই ভরসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের সিদ্ধান্তহীনতা আর দোলাচলই শেষ পর্যন্ত চীনের দিকে ঠেলে দিয়েছে তাদের। কারণ বাংলাদেশ একটা প্রত্যাবাসন সমঝোতা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। আর তাদের হাতে সময়ও ফুরিয়ে আসছিল দ্রুত। এই সমঝোতার বাস্তবায়ন কতটা ফলপ্রসূ হবে, কতজন রোহিঙ্গাকে কত দ্রুত ফেরানো যাবে সেগুলো অন্য প্রশ্ন। কিন্তু আপাতত চীনের মধ্যস্থতাতেই যে দুই দেশের মধ্যে একটা ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সম্ভব হয়েছে তা নিয়ে কেউই সন্দেহ প্রকাশ করছেন না।
বাংলাদেশের একজন শীর্ষ কূটনীতিক হাসতে হাসতে এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, “এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল, তাই না? মিয়ানমারে চীনের লগ্নি ১০০ বিলিয়ন ডলার হলে সেই তুলনায় সেখানে ভারতের ১০ ভাগও বিনিয়োগ নেই। আমরা এখন বুঝে গেছি— মিয়ানমারের জন্য ভারত বা জাপান ‘বয়ফ্রেন্ড’ হতে পারে, কিন্তু তারা সংসার পেতেছে চীনের সঙ্গেই!”
সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন
ভারতের আফসোসের কারণ— প্রায় তিন মাস সময় পাওয়ার পরও রোহিঙ্গা প্রশ্নে দিল্লি কোনও নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারলো না। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে চীন হয়তো নাক গলাবে না, ভারতের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। কারণ চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পেশ করা ফর্মুলার বেশকিছুটা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মেনে নিলো মিয়ানমার ও বাংলাদেশ।
গত ২৩ নভেম্বর নেপিদোতে ওই দলিল স্বাক্ষরিত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর বিকালে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এই সমঝোতার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। তখন মুখপাত্র রবীশ কুমার নিজের অস্বস্তি গোপন করতে না পেরে বলে ফেলেন, ‘যেটা এখন ঘটছে সে বিষয়ে কী মন্তব্য করবো বলুন তো? আর রাখাইন প্রদেশের বাস্তুচ্যুত মানুষদের নিয়ে কী করা উচিত, তা আমরা আগে অনেকবারই বলেছি। মনে হয় না এর পুনরাবৃত্তির কোনও প্রয়োজন আছে।’
ভারতে তখন বেজেছে বিকাল সাড়ে ৪টা।
নেপিদোতে সই-সাবুদ শেষ হয়ে গেছে এর বেশ আগেই। ঘটনা হলো, তারপর প্রায় সাড়ে তিন দিন কেটে গেলেও ভারত এই সমঝোতা নিয়ে এখনও কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া দেয়নি। না গণমাধ্যমে, না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে।
এদিকে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে কথা মুখ ফুটে বলতে পারছে না, তা সরাসরি বলে দিলো দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্র ‘দ্য হিন্দু’র সম্পাদকীয়। সেখানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই সমঝোতাকে ‘চায়না প্ল্যান’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে। চীনের মধ্যস্থতাতেই যে মূলত দুই দেশ মুখোমুখি আলোচনার টেবিলে বসে দলিলে স্বাক্ষর করেছে তা পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে জানানো হয়েছে দ্ব্যর্থহীন ভাষায়।
ভারতের কূটনৈতিক মহলের আক্ষেপ ঠিক এই জায়গাতেই— যে কাজটা আগে উদ্যোগ নিলে হয়তো দিল্লি করতে পারতো, শেষবেলায় এসে চীন কিনা বাজিমাত করে দিলো!
মিয়ানমারে ভারতের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন এমন এক সাবেক কূটনীতিক রবিবার (২৬ নভেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনকে বলছিলেন, ‘মিয়ানমার ও বাংলাদেশ উভয়ে আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ। কাজেই রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের জন্য এক উভয় সংকট। অতএব কিভাবে ভারসাম্য রাখা উচিত গত তিন মাস ধরে আমরা শুধু সেসবই ভেবে গেলাম। অথচ চীনের জন্যও পরিস্থিতি একই রকম ছিল। কিন্তু তারা ঠিক মোক্ষম সময়ে এসে একটা নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়ে গেলো।’
দিনকয়েক আগেই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং উই বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফরে এসে তার তিন দফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ফর্মুলা পেশ করেন। পরে বেইজিংয়ের দাবি ছিল— দুই দেশই তা মেনে নিয়েছে।
অথচ গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও ঢাকায় গিয়েছিলেন। এমনকি রোহিঙ্গা সংকটের একেবারে শুরুর দিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেও মিয়ানমার সফরে গিয়েছিলেন। মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে সুষমা স্বরাজ ও শেখ হাসিনার কথাবার্তা হয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবরাও গত তিন মাসে নিউ ইয়র্ক, কলম্বো, এমনকি দিল্লিতেও একাধিকবার নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সেগুলো মোটেও ফলপ্রসূ হয়নি।
এ কারণে রোহিঙ্গা প্রশ্নে ভারতের ‘শ্যাম রাখি না কূল রাখি’ দ্বিধাই শেষ পর্যন্ত কাল হলো। আর চীন এসে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলো এ ধরনের বিরাট সংকটে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ কার ওপর বেশি ভরসা রাখতে রাজি।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল অবশ্য দাবি করছে, চীনের আগে প্রথমে তারা ভারতের ওপরেই ভরসা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের সিদ্ধান্তহীনতা আর দোলাচলই শেষ পর্যন্ত চীনের দিকে ঠেলে দিয়েছে তাদের। কারণ বাংলাদেশ একটা প্রত্যাবাসন সমঝোতা করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল। আর তাদের হাতে সময়ও ফুরিয়ে আসছিল দ্রুত। এই সমঝোতার বাস্তবায়ন কতটা ফলপ্রসূ হবে, কতজন রোহিঙ্গাকে কত দ্রুত ফেরানো যাবে সেগুলো অন্য প্রশ্ন। কিন্তু আপাতত চীনের মধ্যস্থতাতেই যে দুই দেশের মধ্যে একটা ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট’ সম্ভব হয়েছে তা নিয়ে কেউই সন্দেহ প্রকাশ করছেন না।
বাংলাদেশের একজন শীর্ষ কূটনীতিক হাসতে হাসতে এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, “এমনটাই তো হওয়ার কথা ছিল, তাই না? মিয়ানমারে চীনের লগ্নি ১০০ বিলিয়ন ডলার হলে সেই তুলনায় সেখানে ভারতের ১০ ভাগও বিনিয়োগ নেই। আমরা এখন বুঝে গেছি— মিয়ানমারের জন্য ভারত বা জাপান ‘বয়ফ্রেন্ড’ হতে পারে, কিন্তু তারা সংসার পেতেছে চীনের সঙ্গেই!”
সূত্র- বাংলা ট্রিবিউন
No comments