দেশে জ্বালানি তেলের দাম কমবে কবে
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দর এখন সবর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। প্রতি ব্যারেল অশোধিত জ্বালানি তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ মার্কিন ডলার করে। কিন্তু দেশের বাজারে সেই জ্বালানি তেলই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। জ্বালানি তেলের দাম যখন আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলারের উপরে ছিল, তখন যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল এখনো সেই দামের সাথে মিল রেখেই দেশের বাজারে তেল বিক্রি করা হচ্ছে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হচ্ছে দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সময়ন্ব করার জন্য। বলা হয়েছে, সকল ধরনের তেলের দাম ১০ থেকে ২০ শতাংশ কমানো যেতে পারে। এতে করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কোনো আর্থিক ক্ষতি হবে না। উপরন্তু তেলের দাম কমালে দেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। একই সাথে কেরোসিনের দাম কমানো হলে তা গরিব মানুষের উপকারে লাগবে। ডিজেলের দর কমলে তা কৃষি উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে দেবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, এ কথায় কোনো রকম কর্ণপাত করেনি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে, বিশ্ববাজারে সর্বনি¤œ দর হলেও দেশে সেই তেলই বেশি দামে কিনছে সাধারণ মানুষ! গত বছরের মার্চ মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জ্বালানি তেলের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে একটি সার-সংক্ষেপ অর্থমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। সেখানে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বাজারে যে দামে বিভিন্ন জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে তা নির্ধারণ করা হয়েছে যখন বিশ্ববাজারে এসব তেলের দাম অনেক বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমানে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেক কমে গেছে। আগামীতেও এসব তেলের দাম তেমন একটি বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। তাই দ্রুত দেশের বাজারে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম কমানো অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত কাজ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এ পর্যায়ে অকটেন ও পেট্রলের মূল্য ১০ শতাংশ এবং অন্যান্য তেল ২০ শতাংশ কমানো যেতে পারে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতি লিটার অকটেনের মূল্য বিদ্যমান ৯৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৮৯ টাকা ১০ পয়সা, কেরোসিন ৬৮ টাকা থেকে ৫৪ টাকা ৪০ পয়সা, ডিজেল ৬৮ টাকা থেকে ৫৪ টাকা ৪০ পয়সা, পেট্রোল ৯৬ টাকা থেকে ৮৬ দশমিক ৪০ পয়সা করার কথা বলা হয়েছে।
তবে উড়োজাহাজের জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত জেট-১ ফুয়েলের দাম অপরিবর্তিত রাখার কথা বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বর্তমানে এই তেল লিটার প্রতি ৬১ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় হিসাব কষে দেখিয়েছে, দাম কমানোর পরও লিটার প্রতি অকটেনে ২৭ টাকা ১১ পয়সা, কেরোসিনে ৯ টাকা ১১ পয়সা, ডিজেলে ৯ টাকা ৭২ পয়সা, পেট্রলে ২৩ টাকা ৯০ পয়সা এবং ফার্নেস অয়েলে ১৪ টাকা ২৩ পয়সা লাভ থাকবে। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে মন্তব্য করা হয়েছে, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অভ্যন্তরীণ জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সাথে সমন্বয় করা হলে অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং এর সুফল দেশের সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছবে। বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য দরপতনের কারণে বাংলাদেশসহ হাতেগোনা কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই জ্বালানি মূল্য সমন্বয় বা হ্রাস করেছে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম যখন ব্যারেল ১১০ ডলার ছিল তখন সেই দর ধরে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়। এখনো সেই দামেই দেশের বাজারে তেল বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের দাম কমানোর জন্য আমরা বেশ কয়েক দফা সুপারিশ করেছি। এমনকি অর্থমন্ত্রী স্বয়ং এ বিষয়ে ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আমার এখনো মনে করে, জ্বালানি তেলের দাম ১০ থেকে ২০ শতাংশ এখনি কমানো যেতে পারে। অন্য দিকে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আপাতত দাম কমানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।
No comments