এত মানুষ মরবে ভেবে স্থির থাকতে পারিনি
জীবন বাজি রেখে পচা পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে শুক্রবার ২৫ বাসযাত্রীকে উদ্ধার করেছেন দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের কনস্টেবল পারভেজ। তার এ বীরত্বে গর্বিত হাইওয়ে পুলিশ। তার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেছে বাহিনীটি। উদ্ধার হওয়া যাত্রীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষও তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় এখন তিনি গণমানুষের নায়কে পরিণত হয়েছেন। শনিবার বিকালে পারভেজের সঙ্গে দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ব্যারাকে কথা হয় যুগান্তর প্রতিনিধির। এ সময় পারভেজ বলেন, শুক্রবারের উদ্ধার অভিযানের কারণে এখন আমার শারীরিক অবস্থা একটু খারাপ। আশা করছি দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠব। এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন কেন? জবাবে পারভেজ বলেন, বাসটি ডোবায় পড়ে যখন ডুবে যাচ্ছিল তখন অনেকেই তা ভিডিও করছিল। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছিল না। এতগুলো মানুষ মারা যাবে, তা ভেবে স্থির থাকতে পারিনি। ঝাঁপিয়ে পড়ি তাদের বাঁচাতে।
যদিও আমি নিজেই তাতে মারা যেতে পারতাম। তবে সে চিন্তা তখন মাথায় আসেনি। পারভেজ বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার হোসেনদি গ্রামে। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম। আমরা ২ ভাই ২ বোন। দ্বিতীয় ভাই মো. মহিউদ্দিন প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে। ২ বোনকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৬ সালে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেই। এর আগেও এভাবে মানুষের উপকার করেছেন বলে জানান পারভেজ। তিনি বলেন, ১৮ জুন দুর্ঘটনায় আহত এক পুলিশ সদস্যকে ঢাকায় হাসপাতালে ভর্তি করে দাউদকান্দি আসছিলাম। পথে রাত ৩টায় মেঘনা সেতু প্রান্তে বাসের এক গর্ভবতী যাত্রী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যুমুখে পড়েন। অনেক যাত্রীকে বললেও কেউ এগিয়ে আসেননি। আমি ড্রাইভারকে বলে গাড়ি থামিয়ে তাকে নিয়ে রাস্তা পার হই। মাইক্রোবাস ভাড়া করে সোনারগাঁ উপজেলার সেবা হাসপাতালে তাকে ভর্তি করি। গভীর রাতে দ্রুতগতিতে ও বেশি ট্রাক চলাচলের কারণে তখনও আমার মৃত্যু হতে পারত। দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, কনস্টেবল পারভেজ সাহসিকতার সঙ্গে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে কাজটি করেছে, তাতে আমাদের পুলিশ বাহিনী তথা সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে সে। নিজের জীবন বাজি রেখে মৃত্যুর মুখে থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করায় কুমিল্লা হাইওয়ে পুলিশ সুপার নগদ দশ হাজার টাকা দিচ্ছে তাকে। হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুল ইসলাম পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছেন। এ ছাড়া গৌরীপুর-পেন্নাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা আক্তার পুরস্কার হিসেবে নগদ পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন তাকে। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দাউদকান্দির গৌরীপুরে ঢাকা থেকে মতলবগামী একটি বাস যাত্রী নিয়ে খাদে পড়ে যায়। উপস্থিত লোকজন যখন দাঁড়িয়ে বাসের ডুবে যাওয়া দেখছিল, তখন কনস্টেবল পারভেজ ডোবার পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
দ্রুত গাড়ির জানালার গ্লাসগুলো ভেঙে দেন। এতে গাড়ির ভেতরে থাকা যাত্রীরা বেরিয়ে আসতে পারেন। পানির নিচে গাড়ির ভেতর গিয়ে বের করে আনেন সাত মাসের এক শিশুকে। পরে অনেককে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করেন। কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার পরিতোষ ঘোষ জানান, যাত্রীদের জীবন বাচাতে আমাদের পারভেজ ঝুঁকি নিয়ে যা করেছে তা হাইওয়ে পুলিশ বিভাগের জন্য সত্যই প্রশংসনীয়। পুরস্কার দিয়ে কাজের মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। তবুও এ কাজের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি যাতে তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে পান এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হবে। দুর্ঘটনায় পড়া বাসের যাত্রী কাউয়াদি গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার স্ত্রী, কলেজপড়–য়া নাতিসহ চিটাগং রোড থেকে এ বাসে উঠি। গৌরীপুর এসে এক পথচারীকে বাঁচাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি ডোবায় পড়ে যায়। আমি মনে করেছি অল্প পানি তাই প্রথমে স্ত্রী এবং নাতিকে বাসের জানালা দিয়ে বের হতে সহযোগিতা করি। পরে আমি নিজেই আস্তে আস্তে পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছিলাম। যখন থুতনি পর্যন্ত তলিয়ে গেছি ওই সময় আমি কারও সাহায্য পাওয়ার জন্য উপরে হাত তুলে নাড়াই। তা দেখে এক পুলিশ আমাকে পানির নিচ থেকে তুলে উপরে নিয়ে আসে।
No comments