যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে বাণিজ্য বাড়বে by মোস্তাফিজুর রহমান
বাংলাদেশ–ভারত
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নানা দিক থেকেই দেখা যেতে পারে। এর যেমন অর্থনৈতিক ও
রাজনৈতিক দিক আছে, তেমনি ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও এটি দেখা যেতে পারে। একুশ
শতকে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্কের বহুমাত্রিক ঘনিষ্ঠতার
ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ আছে, এটা বাংলাদেশের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য বিষয়।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কৌশলের বড় দিক হচ্ছে একুশ শতকে দুনিয়ার দুই প্রধান শক্তি চীন ও ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করা। আর বাংলাদেশের উন্নয়ন কৌশলে সেটা যথাযথভাবে ব্যবহার করা। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। ভারত বাংলাদেশসহ সার্কের অন্যান্য দেশের পণ্য বিনা শুল্কে তাদের দেশে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ভারতের বিশাল বাজারে ঢুকতে পারে।
ভারত বর্তমানে বিশ্ববাজার থেকে বছরে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। আর এ মুহূর্তে ভারত বাংলাদেশ থেকে এক বিলিয়ন ডলারের অর্ধেকের সমপরিমাণ পণ্য আমদানি করে। এটা ভারতের মোট আমদানির ১ শতাংশের ১০ ভাগের ১ ভাগ। সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে, ভারত যেসব পণ্য আমদানি করে, তার অনেকগুলোই বাংলাদেশ তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ সেসব পণ্য বাংলাদেশের রপ্তানি করার সক্ষমতা আছে। কিন্তু সেটা বাস্তবে হচ্ছে না। এসব পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে বড় বাজার তৈরি করা সম্ভব। এ পরিপ্রেক্ষিতে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, বাণিজ্য সহজীকরণ, অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ—এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ নিবিড়করণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয়, উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ ও চুক্তির প্রসঙ্গ বিবেচনাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্টের প্রস্তাব আছে। আবার বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের কথা আলোচিত হচ্ছে। সার্কের দেশগুলোর মধ্যে মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্টের বিষয়টি অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিন-পাঁচ বছরের জন্য নৌ প্রটোকল হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানিপথের যোগাযোগ নিবিড়করণের কথাবার্তা চলছে। এর বাইরে বিসিআইএম ইকোনমিক করিডরের অধীনে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা নিবিড়করণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে দ্বিপক্ষীয়, উপ–আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এসব আলোচনায় যদি সমন্বিত ও বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলের মাধ্যমে এগোনো যায়, তাহলে সম্প্রসারণশীল ভারতীয় ও আঞ্চলিক বাজারে বাংলাদেশ শক্তিশালী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের ৯০ ভাগই হয় স্থলবন্দর দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে স্থল যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতা, স্থলবন্দরের দুর্বল অবকাঠামো, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ইলেকট্রনিক ডেটা এক্সচেঞ্জ ও সিঙ্গেল উইন্ডোর অনুপস্থিতিতে ব্যবসার খরচ বেশ বেড়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে আমদানি খরচ বাড়ার কারণে ভোক্তা পর্যায়ের মূল্য এবং রপ্তানিমুখী উৎপাদকের ব্যয় বাড়ে। মনে রাখতে হবে, ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান আমদানি সূত্র। সেখান থেকে বাংলাদেশ প্রতিবছর সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। ফলে আমদানি খরচ কমানো দরকার। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে আমদানি ও রপ্তানি উভয় খাতের জন্য তা ভালো।
কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হলে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের সড়ক নির্মাণ ও নদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রেল যোগাযোগব্যবস্থাও হতে পারে আমদানি ও রপ্তানির সুলভ মাধ্যম। ভারতের এক বিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিটের বড় অংশ সড়ক ও যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নে ব্যয় হওয়ার কথা। এর থেকে ভারত ২০০ মিলিয়ন ডলার পদ্মা সেতুর জন্য অনুদান হিসেবে দিয়েছে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় এ লাইন অব ক্রেডিট সম্প্রসারণের কথা শোনা যাচ্ছে। সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ভারতীয় ঋণসহায়তা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, যানবাহন ও পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক ও সারচার্জ নির্ধারণ। এদিকে ভারতের ভূমির ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশও এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুল্ক নির্ধারণ করতে হবে। অন্যদিকে ভারত তার পশ্চিম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য সরবরাহে অত্যন্ত আগ্রহী।
এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ একটি প্রস্তাব দিতে পারে, সড়কব্যবস্থার প্রয়োজনীয় উন্নতি যত দিন না হচ্ছে, তত দিন বাংলাদেশের রেল ও ট্রাক ভারতের পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারে। এর ফলে বর্তমানে ব্যবহৃত ‘চিকেন নেকের’ মাধ্যমে হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে সরবরাহ ব্যয় কমানো সম্ভব। আর বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে সারচার্জ, পরিষেবা চার্জ ইত্যাদির মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা আয় করতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটা আছে।
আমাদের নিকটবর্তী জিএমএসভুক্ত দেশগুলোতেও এটি আছে। বাংলাদেশ ও ভারত উইন-উইন পদ্ধতিতে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই যোগাযোগ ভারতের ‘লুক ইস্ট’ নীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিসিআইএম ইকোনমিক করিডর ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। মোটর ভেহিকেল চুক্তিগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হলে পণ্য ও মানুষের সীমান্ত অতিক্রম-সংক্রান্ত নানা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রটোকল, ভিসা সহজীকরণ ও বিভিন্ন নিয়মনীতির প্রমিতকরণ করতে হবে। আর এসব বিষয়ে আলোচনা করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে।
যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে তা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের শূন্য শুল্কের সুযোগ নিয়ে তার রপ্তানির তুলনামূলক সক্ষমতা বাড়াতে পারে। একইভাবে অন্য দেশগুলোও এ সুবিধা নিতে পারে। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে যে পণ্য উৎপাদন করবে, তা এখান থেকে বিনা শুল্কে ভারতে রপ্তানি করতে পারবে। এতে দুদিক থেকেই বাংলাদেশের লাভ হবে। এদিকে বাংলাদেশের বিএসটিআই ও ভারতের বিআইএসের মধ্যে মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্ট হওয়ার কথা। সেটা হলে বাংলাদেশি পণ্যের ভারতে প্রবেশের সুযোগ অবারিত হবে।
অর্থাৎ সবদিক থেকেই বাংলাদেশ উপ-আঞ্চলিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে পণ্য ও সেবা খাতের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়াতে পারে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ও সহজীকরণ এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
ড. মুস্তাফিজুর রহমান: অর্থনীতিবিদ, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
আমি মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কৌশলের বড় দিক হচ্ছে একুশ শতকে দুনিয়ার দুই প্রধান শক্তি চীন ও ভারতের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক দৃঢ় করা। আর বাংলাদেশের উন্নয়ন কৌশলে সেটা যথাযথভাবে ব্যবহার করা। এ পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। ভারত বাংলাদেশসহ সার্কের অন্যান্য দেশের পণ্য বিনা শুল্কে তাদের দেশে প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ভারতের বিশাল বাজারে ঢুকতে পারে।
ভারত বর্তমানে বিশ্ববাজার থেকে বছরে ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। আর এ মুহূর্তে ভারত বাংলাদেশ থেকে এক বিলিয়ন ডলারের অর্ধেকের সমপরিমাণ পণ্য আমদানি করে। এটা ভারতের মোট আমদানির ১ শতাংশের ১০ ভাগের ১ ভাগ। সিপিডির গবেষণায় দেখা গেছে, ভারত যেসব পণ্য আমদানি করে, তার অনেকগুলোই বাংলাদেশ তৈরি করতে পারে। অর্থাৎ সেসব পণ্য বাংলাদেশের রপ্তানি করার সক্ষমতা আছে। কিন্তু সেটা বাস্তবে হচ্ছে না। এসব পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশের পক্ষে ভারতে বড় বাজার তৈরি করা সম্ভব। এ পরিপ্রেক্ষিতে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, বাণিজ্য সহজীকরণ, অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ—এসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ নিবিড়করণের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দ্বিপক্ষীয়, উপ-আঞ্চলিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ ও চুক্তির প্রসঙ্গ বিবেচনাধীন রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্টের প্রস্তাব আছে। আবার বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে উপ-আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগের কথা আলোচিত হচ্ছে। সার্কের দেশগুলোর মধ্যে মোটর ভেহিকেল অ্যাগ্রিমেন্টের বিষয়টি অনেক দূর অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিন-পাঁচ বছরের জন্য নৌ প্রটোকল হয়েছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পানিপথের যোগাযোগ নিবিড়করণের কথাবার্তা চলছে। এর বাইরে বিসিআইএম ইকোনমিক করিডরের অধীনে ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা নিবিড়করণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে দ্বিপক্ষীয়, উপ–আঞ্চলিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ চলমান রয়েছে। এসব আলোচনায় যদি সমন্বিত ও বুদ্ধিদীপ্ত কৌশলের মাধ্যমে এগোনো যায়, তাহলে সম্প্রসারণশীল ভারতীয় ও আঞ্চলিক বাজারে বাংলাদেশ শক্তিশালী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার বাণিজ্যের ৯০ ভাগই হয় স্থলবন্দর দিয়ে। কিন্তু বর্তমানে স্থল যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতা, স্থলবন্দরের দুর্বল অবকাঠামো, ওয়ান স্টপ সার্ভিস, ইলেকট্রনিক ডেটা এক্সচেঞ্জ ও সিঙ্গেল উইন্ডোর অনুপস্থিতিতে ব্যবসার খরচ বেশ বেড়ে গেছে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি সক্ষমতার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অন্যদিকে আমদানি খরচ বাড়ার কারণে ভোক্তা পর্যায়ের মূল্য এবং রপ্তানিমুখী উৎপাদকের ব্যয় বাড়ে। মনে রাখতে হবে, ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান আমদানি সূত্র। সেখান থেকে বাংলাদেশ প্রতিবছর সাড়ে ছয় বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করে। ফলে আমদানি খরচ কমানো দরকার। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে আমদানি ও রপ্তানি উভয় খাতের জন্য তা ভালো।
কিন্তু যোগাযোগব্যবস্থা শক্তিশালী করতে হলে ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বড় ধরনের বিনিয়োগ দরকার। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের সড়ক নির্মাণ ও নদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে রেল যোগাযোগব্যবস্থাও হতে পারে আমদানি ও রপ্তানির সুলভ মাধ্যম। ভারতের এক বিলিয়ন ডলারের লাইন অব ক্রেডিটের বড় অংশ সড়ক ও যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়নে ব্যয় হওয়ার কথা। এর থেকে ভারত ২০০ মিলিয়ন ডলার পদ্মা সেতুর জন্য অনুদান হিসেবে দিয়েছে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলোও দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আলোচনায় এ লাইন অব ক্রেডিট সম্প্রসারণের কথা শোনা যাচ্ছে। সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে ভারতীয় ঋণসহায়তা বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে, যানবাহন ও পণ্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক ও সারচার্জ নির্ধারণ। এদিকে ভারতের ভূমির ওপর দিয়ে নেপাল ও ভুটান বাংলাদেশের মাধ্যমে তৃতীয় দেশে পণ্য আমদানি-রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশও এ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুল্ক নির্ধারণ করতে হবে। অন্যদিকে ভারত তার পশ্চিম ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোতে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে পণ্য সরবরাহে অত্যন্ত আগ্রহী।
এ ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ একটি প্রস্তাব দিতে পারে, সড়কব্যবস্থার প্রয়োজনীয় উন্নতি যত দিন না হচ্ছে, তত দিন বাংলাদেশের রেল ও ট্রাক ভারতের পণ্য আনা-নেওয়া করতে পারে। এর ফলে বর্তমানে ব্যবহৃত ‘চিকেন নেকের’ মাধ্যমে হিমালয়ের দুর্গম অঞ্চলে সরবরাহ ব্যয় কমানো সম্ভব। আর বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে সারচার্জ, পরিষেবা চার্জ ইত্যাদির মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা আয় করতে পারে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটা আছে।
আমাদের নিকটবর্তী জিএমএসভুক্ত দেশগুলোতেও এটি আছে। বাংলাদেশ ও ভারত উইন-উইন পদ্ধতিতে এ সমস্যার সমাধান করতে পারে। এই যোগাযোগ ভারতের ‘লুক ইস্ট’ নীতির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিসিআইএম ইকোনমিক করিডর ও আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। মোটর ভেহিকেল চুক্তিগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হলে পণ্য ও মানুষের সীমান্ত অতিক্রম-সংক্রান্ত নানা স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রটোকল, ভিসা সহজীকরণ ও বিভিন্ন নিয়মনীতির প্রমিতকরণ করতে হবে। আর এসব বিষয়ে আলোচনা করতে হবে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে।
যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি হলে তা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের শূন্য শুল্কের সুযোগ নিয়ে তার রপ্তানির তুলনামূলক সক্ষমতা বাড়াতে পারে। একইভাবে অন্য দেশগুলোও এ সুবিধা নিতে পারে। তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে যে পণ্য উৎপাদন করবে, তা এখান থেকে বিনা শুল্কে ভারতে রপ্তানি করতে পারবে। এতে দুদিক থেকেই বাংলাদেশের লাভ হবে। এদিকে বাংলাদেশের বিএসটিআই ও ভারতের বিআইএসের মধ্যে মিউচুয়াল রিকগনিশন অ্যাগ্রিমেন্ট হওয়ার কথা। সেটা হলে বাংলাদেশি পণ্যের ভারতে প্রবেশের সুযোগ অবারিত হবে।
অর্থাৎ সবদিক থেকেই বাংলাদেশ উপ-আঞ্চলিক সুবিধা কাজে লাগিয়ে পণ্য ও সেবা খাতের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়াতে পারে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নতি ও সহজীকরণ এ ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
ড. মুস্তাফিজুর রহমান: অর্থনীতিবিদ, নির্বাহী পরিচালক, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
No comments