‘প্রাণের মালিক আল্লাহ, প্রেসিডেন্ট নন’, দেখা হবে জান্নাতে -কামারুজ্জামান
কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে জেল গেটে স্বজনেরা |
আজ শনিবার বিকেলে পরিবারের সদস্যরা কারাগারে কামারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাত করতে গেলে তিনি তাদের কাছে একথা বলেছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন তার বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী। সাক্ষাত শেষে বিকেল পাঁচটা ১০ মিনেটে কারাগার থেকে বের হন তারা। এর আগে বিকেল চারটা পাঁচ মিনিটে কামারুজ্জামানের সাথে দেখা করতে কারাগারে প্রবেশ করেন পরিবারের ২১ সদস্য।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার গেট থেকে সামান্য দূরে এসে কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী সাংবাদিকদের আরো বলেন, তার পিতা সুস্থ আছেন এবং মানসিকভাবে দৃঢ় আছেন। তিনি পরিবারের সদস্যদের হাসিমুখে বিদায় দিয়েছেন এবং পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকেও হাসিমুখে বিদায় নিয়েছেন। তার মনোবল দৃঢ় আছে। তিনি সুস্থ আছেন। ফাঁসির ব্যাপারে তিনি মোটেও বিচলিত নন।
ওয়ামী বলেন, কামারুজ্জামান বলেছেন, ‘দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট গতকাল শুক্রবার আমাকে কিছুই জিজ্ঞাসা করেননি। এমনকি তারা কথাও বলেননি। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন।’ এ ছাড়া ১৮ বছরের ছেলেকে যুদ্ধাপরাধী সাজিয়ে সরকার স্বার্থ হাসিল করছে বলেও পরিবারকে জানিয়েছেন কামারুজ্জামান।
ওয়ামী অভিযোগ করেন, সরকার প্রাণভিক্ষার নামে গত কয়েকদিন ধরে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য সময়ক্ষেপণ করেছে। কামারুজ্জামান সুস্থ এবং সবল আছেন। তিনি এদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিজয় কামনা করেছেন।
কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে জেল গেটে স্বজনেরা |
শেষ ইচ্ছা হিসেবে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্রশিবির বাংলাদেশের মাটিতে ইসলাম কায়েম করবে এমনটাই আশা করেন তিনি। যে আদর্শ তিনি ধারণ করেন তরুণ প্রজন্ম সেই আদর্শ বাস্তবায়ন করবে। তিনি বলেছেন, আমি বাংলাদেশে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। এখন তরুণ প্রজন্ম এ আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাবে। তারাই এ অন্যায়ের জবাব দেবে। বাবা আমাদের সৎ পথে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
জামায়াতের প্রতি কামারুজ্জামানের ৩ পরামর্শ
মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় থাকা জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামান তার দলের প্রতি তিনটি পরামর্শ দিয়েছেন। বিকালের পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে শেষ সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এই তিন পরামর্শ দেন। কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামী মানবজমিন অনলাইনকে বলেন, জামায়াতের প্রতি তিনি বলেছেন, যেন আবেগতাড়িত হয়ে দল পরিচালনা না করা হয়। তিনি নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন। একই সঙ্গে দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের জ্ঞান বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে বলেছেন। সাক্ষাৎ শেষে বাসায় ফিরে ওয়ামি বলেন, পরিবারের সদস্যরা হাসিমুখে কামারুজ্জামানকে বিদায় জানিয়েছেন। কামারুজ্জামানও তাদের ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দিয়েছেন।
কামারুজ্জামানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি by মেহেদী হাসান
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ১৯৫২ সালে শেরপুর জেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের মুদিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
কুমারি কালিতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তার শিক্ষা জীবন শুরু। ১৯৬৭ সালে তিনি জিকেএম ইনস্টিটিউশন থেকে চার বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে এসএসসি পাশ করেন। ১৯৭২ সালে ময়মনসিংহ নাসিরাবাদ কলেজে থেকে এইচএসসি পাস করেন। ১৯৭৩ (১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত) সালে তিনি ঢাকা আইডিয়াল কলেজ থেকে ডিস্ট্রিংশনসহ বিএ পাস করেন। এরপর কামারুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ভর্তি হন। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেধাবৃত্তি লাভ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি এ বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেীণতে উত্তীর্ণ হন।
১৯৭৭ সালে কামারুজ্জামান বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগর সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৮-৭৯ সালে তিনি দ্বিতীয়বারের মত ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি নির্বচিত হন। তার আগে তিনি এ সংস্থার কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৯ সালে তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেন এবং ১৯৯২ সালে এ দলের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন। সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হবার আগে তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া বিভিন্ন সময় তিনি দলের আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন।
জামায়াতের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কমিটি ও লিয়াজো কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি ১৯৮৩-১৯৯০ সাল পর্যন্ত সামরিক স্বৈচারার বিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এছাড়া ১৯৯৩-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্ববাধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন।
শিক্ষা জীবন শেষে কামারুজ্জামান সাংবাদিকতা পেশার সাথে যুক্ত হন। ১৯৮০ সালে ঢাকা ডাইজেস্ট এর নির্বাহী সম্পাদক ও ’৮১ সালে সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তখনকার সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামানের ক্ষুরধার লেখনীর কারণে পত্রিকাটির প্রকাশনা সেসময় নিষিদ্ধ হয়। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়েও তিনি একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। ১৯৮৫-৮৬ সালে তিনি ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত তিনি সাপ্তাহিক সোনার বাংলা পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
একজন তুখোড় বক্তা হিসেবে খ্যাতি রয়েছে মুহম্মদ কামারুজ্জামানের। তিনি একজন সুলেখক। তার পাঁচ ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
শেষ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বান
জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর না করতে শেষ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। শনিবার যখন তার ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি চলছিল তার কিছুক্ষণ আগে এমন আহ্বান জানানো হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মেরি হার্ফ বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিলেট ডিভিশনের রায়কে আমরা শ্রদ্ধা করি। ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা পিটিআই, আউটলুক ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, মেরি হার্ফ বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি এই প্রক্রিয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সুদৃঢ় সমর্থন অর্জন করা যেতে পারে বিচক্ষণ সতর্কতা অবলম্বনের মাধ্যমে। তা করতে হবে মৃত্যুদ- আরোপ ও তা কার্যকর করার ক্ষেত্রে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গণহত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, নির্যাতন, হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযানে দোষী সাব্যস্ত করে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে। মেরি হার্ফ বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার অবশ্যই হতে হবে সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে, যে বাধ্যবাধকতায় বাংলাদেশ অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, আমরা অগ্রগতি দেখেছি। কিন্তু এখনও বিশ্বাস করি যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কার্যক্রমে আরও মানোন্নয়ন করে দেশ ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। যতক্ষণ এসব বাধ্যবাধকতা পূরণ করা না হবে, ততক্ষণ ফাঁসি কার্যকর না করাই হবে উত্তম পন্থা। কারণ, মৃত্যুদ- এমন এক শাস্তি যা কার্যকর হলে তা আর পরিবর্তন করা যায় না। মেরি হার্ফ আরও বলেন, যেসব দেশ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ- আরোপ করছে তাদেরকে অবশ্যই তা করতে হবে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে, যথাযথ প্রক্রিয়ার উচ্চ মান বজায় রেখে, সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে।
কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর -মানবজমিন
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াতের সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। আজ রাত ১০টা ০১ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেয়া দ্বিতীয় মৃত্যুদ- হিসেবে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হলো। এর আগে ২০১৩ সালের ১২ই ডিসেম্বর মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়। কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের বিষয়ে গত দুই দিনে চলা নাটকীয়তার পর শুক্রবার রাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছিলেন শনিবারই কার্যকর হচ্ছে ফাঁসি। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর আপত্তির মধ্যেই সরকার জামায়াতের এ নেতার ফাঁসি কার্যকর করলো। এদিকে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের আগে বিকালে তার পরিবারের ২১ সদস্য তার সঙ্গে দেখা করেন।
এর আগে বিকাল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরকে সামনে রেখে শনিবার বিকাল থেকেই সারা দেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।
দেখা হবে জান্নাতে : কামারুজ্জামান
‘চিন্তা করো না, আল্লাহ চান তো তোমাদের সবার সাথে দেখা হবে জান্নাতে। তোমরা সবাই সৎ জীবনযাপন করবে। হালাল রুজি কামাই করবে’- কথাগুলো বলেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান। গত ৬ এপ্রিল কারা কর্তৃপক্ষের চিঠি পেয়ে পরিবারের সদস্যরা তার সাথে সাক্ষাত করেন। মনে হচ্ছিল এটাই তাদের শেষ সাক্ষাত। ওই বিবেচনাতেই তিনি কথাগুলো বলেছিলেন।
মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামি দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আব্বা বলেছেন, তার এ মৃত্যু নিঃসন্দেহে শহিদি মৃত্যু। তিনি এজন্য আনন্দিত। এভাবে মৃত্যুবরণ করতে পারা সৌভাগ্যের বিষয়। তিনি বলেছেন, কতভাবে কত মানুষের মৃত্যু হয়। যেকোনো দুর্ঘটনা বা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারতেন। কিন্তু এ মৃত্যু আনন্দের। মৃত্যু নিয়ে তিনি ভীত নন।
গত ৬ এপ্রিল কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদন খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ওই দিনই কারা কর্তৃপক্ষ দুপুরের পর কামারুজ্জামানের মিরপুরের বাসায় চিঠি পাঠায়। বিকেল পাঁচটার মধ্যে পরিবারের সদস্যদের কারাগারে কামারুজ্জামানের সাথে সাক্ষাতের জন্য যেতে বলা হয়। কামারুজ্জামানের স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, ভাই, ভাতিজা, ভাগ্নিসহ মোট ১৬ জন সদস্য সন্ধ্যা পৌনে সাতটা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা তার সাথে সাক্ষাৎ করেন।
কামারুজ্জামানের বড় ছেলে হাসান ইকবাল ওয়ামিও ছিলেন এ ১৬ জনের মধ্যে।
হাসান ইকবাল ওয়ামি তার পিতার সাথে ওই সাক্ষাৎ বিষয়ে দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, আব্বা আমাদের বলেছেন, তার অবর্তমানে আমাদের মা আমাদের অভিভাবক। তিনি আমাদের নসিহত করে বলেছেন, তার মৃত্যুতে আমরা যেন কোনোভাবেই বিচলিত না হই। তিনি বলেছেন, তিনি জুলুমের শিকার। ইসলামী আন্দোলনের সাথে যুক্ত থাকা এবং রাজনীতির কারণেই তার আজকের এ পরিণতি। তিনি আমাদের অভয় দিয়ে বলেছেন, চিন্তা করো না, আল্লাহ চান তো একদিন তোমাদের সবার সাথে দেখা হবে জান্নাতে।
হাসান ইকবাল বলেছেন, একদিন এদেশে ইসলামের বিজয় হবে সেটাই আব্বার আশা। একদিন এ দেশের তরুণরা সত্য ইতিহাস জানবে।
আপনাদের পক্ষ থেকে তাকে কী বলেছেন জানতে চাইলে হাসান ইকবাল বলেন, আমরা আব্বার কাছে দুঃখপ্রকাশ করে বলেছি আইনি লড়াইয়ে আমরা তাকে মুক্ত করতে আনতে পারলাম না। এজন্য আমরা দুঃখিত।
ফাঁসির মঞ্চে তিনি ছিলেন ধীরস্থির
ফাঁসির মঞ্চে কামারুজ্জামান ছিলেন ধীরস্থির ও নির্ভীক। স্বাভাবিকভাবে হেঁটে তিনি যখন ফাঁসির মঞ্চে যান তখন কোনো ভয়ভীতি কাজ করেনি তার মধ্যে। ছিল না কোনো অস্থিরতা। কারাগার সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, রাতে গোসল শেষে এশার নামাজ আদায়ের পর নফল নামাজ পড়েন কামারুজ্জামান। ফাঁসির মঞ্চে নেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি জায়নামাজে কুরআন তেলাওয়াতে রত ছিলেন।
এ সময় কামারুজ্জামানের সেলের অতি কাছেই চলে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতের কাজ। ফাঁসি কার্যকরের সাথে সম্পৃক্ত কর্মকর্তারা মঞ্চের পাশে গিয়ে বসেন। সোয়া ৯টায় সেলের মধ্যে কামারুজ্জামানের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন চিকিৎসক। ৯টা ৩৫ মিনিটে ১২ জনের একটি কারা কমান্ডো অবস্থান নেয় কামারুজ্জামানের সেলের পাশে। এরপর তওবা পাঠের পর্ব আসে। কামারুজ্জামান বলেন, আমি নিজের তওবা নিজে পড়ব। জেল সুপার বলেন, নিয়মানুযায়ী ইমাম কর্তৃক তওবা পড়াতে হবে। তওবা পড়ানোর পর কামারুজ্জামানকে রাত ১০টা ২০ মিনিটে ফাঁসির মঞ্চের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। কামারুজ্জামান তখন বলেন, আমি নির্দোষ। আমাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দেয়া হচ্ছে। এরপর তিনি দোয়া এবং কুরআনের আয়াত পড়তে থাকেন। এভাবেই দোয়া পড়তে পড়তে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান স্বাভাবিক গতিতে। মঞ্চে নেয়ার পর জেল সুপার হাত থেকে রুমাল ফেলে দেন ঠিক সাড়ে ১০টায়। এরপর ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বিশ্ব মিডিয়ায় কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী মহাসচিব মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়েছে। ই্উরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ভারতের পত্রিকাগুলো ছাড়াও রয়টার্স, এএফপি, এপির মতো বার্তা সংস্থাগুলোও খবরটি ফলাও করে প্রচার করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরায় বলা হয়, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী নেতার ফাঁসি। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনৈতিক নেতাকে ফাঁসি দিয়েছে। মুহাম্মদ কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির ক্ষমাপ্রার্থনা করতে রাজি হননি।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়, ২০১০ সাল থেকে দুটি ট্রাইব্যুনাল এক ডজনেরও বেশি লোককে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এদের বেশির ভাগই জামায়াতে ইসলামির সিনিয়র নেতা।
বিবিসির খবরে বলা হয়, বাংলাদেশে ইসলামপন্থী রাজনীতিবিদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি। এতে ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লাহর ফাঁসির কথাও উল্লেখ করা হয়।
বিবিসি বাংলার শিরোনাম ছিল, 'জামাত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি'। এতে বলা হয়,
বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধে দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসাবে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলো।
পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, শনিবার রাত ১০.৩০-এ মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, জাতিসঙ্ঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ফাঁসি স্থগিত করার জন্য শেষ মিনিটের আবেদন সত্ত্বেও বাংলাদেশ তা কার্যকর করে। জাতিসঙ্ঘ বলেছে, বিচারকাজে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণ করা হয়নি।
গালফ নিউজে বলা হয়, ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধের জন্য ইসলামপন্থী নেতার ফাঁসি। এতে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্ট রিভিউ আবেদন খারিজ করার পর ৬৩ বছর বয়স্ক কামারুজ্জামানকে ফাসি দেয়া হয়।
প্রভাবশালী ব্রিটিশ পত্রিকা গার্ডিয়ানে কামারুজ্জামানের ফাঁসির খবর প্রকাশ করে জানায়, এর ফলে তার সমর্থকদের মধ্যে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে বলা হয়, রায়ের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে তার দল হরতালের ডাক দিয়েছিল।
আরব নিউজে বলা হয়, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাকে ফাঁসি দিয়েছে।
ভারতের এই সময় নিউজ পোর্টালের শিরোনাম ছিল 'জামায়াতে নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি'। এতে বলা হয়, 'গত সোমবারই কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ। সেই আর্জি খারিজ হওয়ায়, রাষ্ট্রপতির কাছে আর প্রাণভিক্ষা চাননি এই জামায়াতে নেতা। তাই আদালতের রায় কার্যকর করা ছিল সময়ের অপেক্ষা। শনিবার স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ১০টায় তাঁর ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জামায়াতে ইসলামির সহকারী সাধারণ সম্পাদক কামারুজ্জামান একাত্তরের মানবতা বিরোধী অপরাধে দোষীসাব্যস্ত হলে, তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।'
জি নিউজ-এর শিরোনাম ছিল '৭১-এর যুদ্ধাপরাধী আরও এক রাজাকারের ফাঁসি আজ'
আনন্দবাজার পত্রিকার শিরোনাম ছিল 'জামাত নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসি'।
এতে বলা হয়, 'একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামাতে ইসলামির অন্যতম শীর্ষ নেতা মহম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল বাংলাদেশ সরকার।'
এতে আরো বলা হয়, "গত কয়েক দিন ধরেই কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করার প্রক্রিয়া চলছিল। জেলের মধ্যে ফাঁসির মঞ্চ তৈরির কাজ শেষ হয়েছিল। শেরপুরে কামারুজ্জামানের পরিবার তাঁর শেষকৃত্যের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। সর্বোচ্চ আদালত তাঁর আপিল খারিজ করার পরে প্রাণভিক্ষা চাওয়া না-চাওয়া নিয়ে তিনি কালক্ষেপ করছিলেন। কাল সকালে দুই ম্যাজিস্ট্রেট কারাগারে গিয়ে কামারুজ্জামানের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে আসেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালআজ জানান, ‘আসামি প্রাণভিক্ষা করতে রাজি নন।’"
কামারুজ্জামানের ফাঁসিতে তুরস্কের দুঃখ ও উদ্বেগ প্রকাশ
জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড- কার্যকর করায় দুঃখ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তুরস্ক। দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা আনাডোলু এজেন্সি এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গতকাল এ ব্যাপারে একটি বিবৃতি দেয়া হয়। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ফাঁসি কার্যকর না করতে বাংলাদেশের কাছে আহ্বান জানিয়েছিল তুরস্ক। একই সঙ্গে সামাজিক সম্প্রীতি ও দেশে শান্তি ধরে রাখার জন্য একই রকম অন্য মৃত্যুদ-গুলো স্থগিত রাখারও আহ্বান জানিয়েছে। মৃত্যুদ- বাতিল করা হয়েছে এমন একটি দেশ হিসেবে এই শাস্তি কার্যকর করায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে তুরস্ক। ফাঁসি কার্যকর করায় সমাজে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- বাতিল করে তুরস্ক। এর পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদ-ের শাস্তি বর্ধিত করে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের বিচার করতে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ২০১৩ সালের মে মাসে শাস্তি হিসেবে কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদ- দেয়। নভেম্বরে তার একটি আপিল খারিজ করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ফাঁসি কার্যকর হওয়া দ্বিতীয় ব্যক্তি কামারুজ্জামান। এর আগে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জামায়াতে ইসলামীর আরেক নেতা আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়া হয়।
কামারুজ্জামানের পরিবারের কাছে সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ : জাফরুল্লাহ
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, আমি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের বিরোধিতা করি না, কিন্তু সরকার কামারুজ্জামানকে ফাঁসির দড়িতে ২০ মিনিট ঝুলিয়ে রেখে যে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তার জন্য সরকারের উচিৎ কামারুজ্জামানের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাওয়া।
রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত গণতন্ত্র ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ সহ সকল রাজবন্দীদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তির দাবি এবং সুষ্ঠ অবাধ গ্রহণযোগ্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দাবিতে চিকিৎসক কর্মকর্তা কর্মজীবী সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। খবর শীর্ষনিউজ।
জাফরুল্লাহ বলেন, সারাজীবন দেখেছি মৃত্যুদণ্ড দণ্ডিত ব্যক্তির শেষ ইচ্ছা পূরণ করা হয় কিন্তু কামারুজ্জামানের শেষ ইচ্ছা ছিল শুক্রবারে যেন তাকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয় কিন্তু এই সরকার তার শেষ ইচ্ছাটাও পূরণ হতে দেয়নি।
এসময় তিনি বলেন, চলমান সিটি নির্বাচনে মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে যত মামলাই থাকুক তাকে মাঠে নামতে হবে। জনগণের রায় তার দিকেই আসবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা এই সরকারের আচরণে অতিষ্ট হয়ে গেছি। ২৮ এপ্রিল সিটি নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে সরকার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বিচার হবে।
অনুষ্ঠানে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস অভিযোগ করে বলেন, আমরা ভোট চাইতে গিয়ে বিভিন্নভাবে বাধা বিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছি। আমরা যেখানে ভোট চাইতে যাই সেখান থেকে আমাদের লোকজনকে পেছন থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
তিনি আরো বলেন, জনগণের রায় আমাদের পক্ষে ১০০% আছে শুধুমাত্র আমাদেরকে সঠিকভাবে ভোট চাইতে দিলেই আমাদের বিজয় নিশ্চিত।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সিটি নির্বাচনকে পুলিশি নির্বাচন আখ্যা দিয়ে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, দেশ যেমন পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, সিটি নির্বাচন তেমন পুলিশি নির্বাচনে পরিণত হয়েছে।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজী, আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম-মহাসচিব রফিকুল ইসলাম বাচ্চু প্রমুখ।
কামারুজ্জামানের কবর ঘিরে গ্রামবাসীদের ভিড় -বিবিসি বাংলা
বাংলাদেশে উনিশশো একাত্তর সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে যেখানে কবর দেয়া হয়েছে সেই শেরপুরের কুমরি বাজিতখিলা গ্রাম থেকে অতিরিক্ত পুলিশ প্রহরা তুলে নেয়ার পর আশপাশের গ্রামগুলো থেকে বহু মানুষকে সেখানে ভিড় করতে দেখা গেছে।
সংবাদদাতারা বলছেন এদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন আবেগতাড়িত। তবে স্থানীয় জামায়াত বা শিবিরের কোনও তৎপরতা চোখে পড়েনি, তাদের কোনও প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি।
শনিবার রাতে মৃত্যদণ্ড কার্যকরের পর মি কামারুজ্জামানের মৃতদেহ শেরপুরের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কড়া পুলিশ প্রহরার মধ্যে আত্মীয়-স্বজন ও কিছু প্রতিবেশীর উপস্থিতিতে আজ রবিবার ভোরবেলা তার দাফন অনুষ্ঠিত হয়।
ভোররাতে মো: কামারাজ্জামানকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স যখন শেরপুর সদর উপজেলার কুমরি বাজিতখিলা গ্রামে পৌঁছায় তখন তার বাড়িকে ঘিরে রেখেছিল কয়েকশো পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আর্মড পুলিশের সদস্য। কাউকেই আশেপাশে ভিড়তে দেয়া হচ্ছিল না।
নামাজে জানাজায় অংশ নিতে পারে জনা পঞ্চাশেক মানুষ, যাদের অধিকাংশই ছিলেন মি কামারুজ্জামানের স্বজন, বাকিরা প্রতিবেশী। এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই ভোর সোয়া পাঁচটা নাগাদ তাকে কবর দেয়া হয়।
সকাল সাতটার পর পুলিশ বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করলে সেখানে সাংবাদিকেরা এবং স্থানীয় মানুষজন প্রবেশাধিকার পায়। এসময় ঘটনাস্থলে ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রহিম।
আব্দুর রহিম পরে বিবিসিকে বলছিলেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়া অনেককেই বিলাপ করতে দেখেছেন তিনি। এরা মূলত মি কামারুজ্জামানের আত্মীয়, প্রতিবেশী এবং উৎসুক জনতা।
জামায়াত বা শিবিরের দলীয় কোনও কর্মসূচী এই গ্রামে কিংবা শেরপুরে চোখে পড়েনি, স্থানীয়ভাবে তাদের তরফ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়াও আসেনি বলে উল্লেখ করেন সাংবাদিক আব্দুর রহিম।
তবে জামায়াতে ইসলামির ওয়েবসাইট থেকে জানা যাচ্ছে, আজকের দিনটিতে তারা দেশ জুড়ে দোয়া অনুষ্ঠানের কর্মসূচী পালন করছে এবং আগামীকাল হরতাল পারন করবে। মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুতে দেশে এবং বিদেশের বিভিন্নস্থানে আজ গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলেও জামায়াত ও শিবিরপন্থী বিভিন্ন ওয়েবসাইটে খবর ও ছবি প্রকাশিত হচ্ছে।
তবে এর আগে ২০১৩ সালের শেষভাগে আরেক জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবার পর পর যেভাবে বাংলাদেশে সহিংস প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, আজ এই প্রতিবেদন তৈরি করা পর্যন্ত দেশের কোনও জায়গা থেকেই তেমন কোনও সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলছেন, তাদের কাছে যে গোয়েন্দা প্রতিবেদন ছিল, তাতে সহিংসতা হবে বলে কোনও পূর্বাভাসও ছিল না।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে শনিবার রাত সাড়ে দশটায় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
এর ঘন্টাখানেক পরেই ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তার মৃতদেহ শেরপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করিয়ে দেয়া হয় তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করবার জন্য।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
দেশজুড়ে গায়েবানা জানাজা : বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়ার অভিযোগ
বায়তুল মোকাররমে কামারুজ্জামানের গায়েবানা জানাজা |
চট্টগ্রামে কামারুজ্জামানের গায়েবানা জানাজা |
আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে কামারুজ্জামানের গায়েবানা জানাজা |
জামায়াতের এই নেতা বলেন, সরকারের বাধাবিঘ্ন ও প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে সারা দেশে হাজার হাজার মুসল্লি শহীদ কামারুজ্জামানের গায়েবানা নামাজে জানাজায় অংশ নেন। তার নিজ এলাকায় ফজরের নামাজের পর থেকে অসংখ্যবার হাজার হাজার জনতা পৃথকভাবে গায়েবানা নামাজে জানাজার আয়োজন করে এবং অংশ নেয়।
বগুড়া ইদগাহ মাঠে কামারুজ্জামানের গায়েবানা জানাজা |
তিনি বলেন, শহীদ কামারুজ্জামানের জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্যে গতকাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সৌদি আরবের জেদ্দা, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকা, পর্তুগালসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গায়েবানা নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
গাজীপুরে কামারুজ্জামানের গায়েবানা জানাজা |
কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর- দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে জামায়াতের হরতাল
দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রতিবাদে সারাদেশে জামায়াতে ইসলামীর ডাকে আজ সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হচ্ছে। দলটির আমির মকবুল আহমদ এক বিবৃতিতে এ হরতালের ডাক দেন।
এদিকে জামায়াতের ডাকা হরতালকে ঘিরে রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যৌথ টহল টিম নামানো হয়েছে। দেশের অন্যান্য নগর মহানগর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোতে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। হরতালের সমর্থনে মিছিল-পিকেটিং ঠেকাতে সর্বত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। হরতালে সকালে রাজধানীতে সীমিত সংখ্যক গণপরিবহন চলাচল করতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে যানবাহন চলাচল কিছুটা বাড়লেও তা অন্যান্য দিনের চেয়ে নগণ্য। তাছাড়া প্রাইভেট কার চলাচল নেই বললেই চলে। এদিকে দেশের বিভিন্ন নগর-মহানগরসহ জেলায়ও চলছে শান্তিপূর্ণ হরতাল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক প্রহরার মধ্যেও হরতাল-অবরোধের সমর্থনে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত মিছিল-পিকেটিং করছে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ, রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। জেলা সদর, নগর-মহানগরগুলোর আন্তঃমহাসড়কগুলোতে কিছু হালকা যানবাহন চলাচল করার খবর পাওয়া গেছে। সকাল-সন্ধ্যা হরতালে হরতালে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে মিছিল ও রাজপথ অবরোধ করে ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন শাখা।
ঢাকা মহানগরী পশ্চিম
হরতাল সফল করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে মিছিল অবরোধ করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী পশ্চিম শাখা। সকাল ৭টায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা সম্পাদক মোবারক হোসেনের নেতৃত্বে একটি মিছিল মিরপুর থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাজপথ অবরোধ করে। এসময় শাখা সভাপতি সুলতান মাহমুদসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগরী পূর্ব
হরতাল পালনে সকাল সাড়ে সাতটায় রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় মিছিল অবরোধ করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী পূর্ব শাখা। মিছিলে নেতৃত্বদেন মহানগরী সেক্রেটারী শরিফুল ইসলাম। এসময় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ
হরতাল সফল করতে রাজধানীর ডেমরায় মিছিল অবরোধ করে ছাত্রশিবির ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা। সকাল সাড়ে ৮ টায় এই মিছিল অবরোধে নেতৃত্বদেন শাখা সেক্রেটারী সাদেক বিল্লাহ। এসময় শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা কলেজ
হরতালে সকাল ৭টায় রাজধানী ঢাকার হাতিরপুল এলাকায় ছাত্রশিবির ঢাকা কলেজ শাখা মিছিল অবরোধ করে। এতে নেৃতত্ব দেন শাখা সভাপতি নাজিম উদ্দিন।
No comments