সিটি করপোরেশনকে ঢেলে সাজাতে হবে by মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর
প্রায়
আট বছর স্থগিত থাকার পর ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ঢাসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত
হতে যাচ্ছে। একটি ঠুনকো অজুহাতে আদালতে আটকা পড়েছিল ঢাসিক নির্বাচন। অনেকের
ধারণা, আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা শহরে তাদের অবস্থা অনুকূল না দেখায় এত দিন
তারা ঢাসিক নির্বাচনে আগ্রহী ছিল না। ওই সময় ঢাকার বাইরে প্রায় সব সিটি
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়েছে। তাই ঢাকাকে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় রাজনীতির (ঢাকা) অঙ্গনে যখন বিএনপি বিপর্যস্ত, দলের বেশির ভাগ
কেন্দ্রীয় নেতা হয় বন্দী বা পলাতক, তখন আদালতের গিঁটটা অতি দ্রুত খুলে যায়।
এটা কারও ইচ্ছায় ঘটেছে, এমন বলা আমাদের অভিপ্রায় নয়। এটা কাকতালীয়ভাবেই
হয়তো ঘটেছে। ঢাকাবাসীদের সৌভাগ্য, নির্বাচনের বাধাটি আদালত অবশেষে অপসারণ
করেছেন। তাই আমরা আজ ঢাসিক নির্বাচন করতে পারছি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের
নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো বাধা ছিল না। নিয়ম অনুযায়ীই চসিক নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে একটা নতুন আইন করার জন্য প্রস্তাব করছি। নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো রিট করা হলে তা তিন মাসের মধ্যে নিষ্পন্ন করতে হবে। আদালতের ব্যস্ততার জন্য তা করা সম্ভব না হলে পরবর্তী নির্বাচনে তা প্রযোজ্য হবে না। এর পরের নির্বাচনে তা প্রযোজ্য হবে। ভাবুন তো, সংসদ নির্বাচন নিয়ে এ রকম একটা রিট করার ফলে আট বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রয়েছে! আশা করি, বাংলাদেশে কলেজ নির্বাচন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবখানে রিটের কারণে তিন মাসের বেশি নির্বাচন স্থগিত রাখার সুযোগ থাকবে না। এ জন্য প্রয়োজন হলে নতুন আইন করা যেতে পারে।
এবার প্রথমবারের মতো ঢাকা সিটি করপোরেশনে (ঢাসিক) দুই ভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ঢাসিককে দুই ভাগ করা কোনো সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নয়। আমাদের ধারণা, ভবিষ্যতে অন্য কোনো সরকার এটা পরিবর্তন করে ঢাসিককে আবার আগের জায়গায় (একক সত্তা) নিয়ে যেতে পারে। ঢাসিকের অনেক সমস্যা। ঢাসিকের আয়তন, জনসংখ্যা, কাজের পরিধি, সেবার মান, সমন্বয় ইত্যাদি নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ঢাকার ৫৬টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর মেয়রের (দুজন মেয়র হলেও) কোনো একক কর্তৃত্ব নেই। ফলে শুধু দুজন কেন, দশজন মেয়র নির্বাচিত হলেও এ সমস্যার সমাধান হবে না। বর্তমান আইন ও ব্যবস্থায় ঢাসিকের মেয়র মূলত একজন নিধিরাম সরদার। সরকার মূল সমস্যার সমাধানে মনোযোগ না করে অহেতুক ঢাসিককে দুই ভাগ করেছে।
ঢাসিকের আরেকটা সমস্যা হলো মেয়র ‘রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির’ মতো এককভাবে নির্বাচিত হন। কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাঁর কোনো নির্বাচনী জোট বা বোঝাপড়া নেই। কেউ কারও কাছে দায়বদ্ধ নয়। মেয়র স্বাধীনভাবে একক কর্তৃত্বে সিটি করপোরেশন চালান। কাউন্সিলরদের উপেক্ষা করেও তিনি মেয়র অফিস চালাতে পারবেন। আইন বাধা হবে না। এটা একটা প্রহসন। উচিত ছিল ‘সংসদীয় পদ্ধতির’ মাধ্যমে নির্বাচন করা। সবাই কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। তাঁরা হবেন শহরের ‘এমপি’। এই ‘এমপিরা’ ভোট দিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও স্পিকার নির্বাচন করবেন। তাহলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য রকম হতো। একই অবস্থা চসিকের জন্যও প্রযোজ্য।
আমাদের প্রস্তাব এবারের নির্বাচনের পর সরকার ‘সিটি করপোরেশন’-এর নির্বাচন ও কার্যাবলি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিশন গঠন করবে। যে কমিশন অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের জন্য নানা সুপারিশ দেবে। ঢাকা দুই ভাগ হবে, না চার ভাগ হবে, তা গবেষণা, জনমত জরিপ ও বিভিন্ন দেশের মডেল দেখে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে। কী ধরনের ব্যবস্থা নিলে ঢাকা বা চট্টগ্রামের সব সেবাদানকারী সংস্থা মেয়রের অধীনে আসবে, তা-ও এ কমিশন সুপারিশ করবে। মোট কথা, বড় সিটি করপোরেশনগুলো ঢেলে সাজাতে হবে।
এবার প্রথমবারের মতো ঢাকায় দুজন মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তাঁরা কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হবেন, তা আমরা পরে জানতে পারব। বা দুজন মেয়র হওয়ায় কী কী সুবিধা হলো, তা-ও পরে জানা যাবে।
আশা করা যায়, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে এ নির্বাচন পরিচালনা করবে। যাতে তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত না হয়। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেভাবে একক কর্তৃত্বে কমিশন পরিচালনা করছেন (সূত্র: প্রথম আলো) তাতে সন্দেহ হয়, তিনি এককভাবে কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন যে বড় দুই দলের সাংগঠনিক অবস্থা এক রকম নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সংস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। অপর দিকে বিএনপির বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা নানা অভিযোগে হয় বন্দী, নতুবা মামলার ভয়ে ফেরারি। গত তিন মাস তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ বন্ধ করে রেখেছিল। ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে। বিএনপি-সমর্থিত অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীও আত্মগোপনে। অন্যদিকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থিত মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থীরা স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। এবারের ঢাসিক নির্বাচন তাই সংগত কারণেই একটি অসম প্রতিযোগিতা হতে যাচ্ছে।
আমাদের মহামান্য আদালত ঢাসিক সীমানা নিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করার জন্য এ সময়টা যে বেছে নিয়েছেন, এ জন্য দূরদর্শিতার প্রশংসা তাঁদের প্রাপ্য। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাঁদের ও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের জামিন দেওয়া যায় কি না, আদালত তা বিবেচনা করতে পারেন।
দলের এ রকম একটা দুঃসময়ে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এ অসম প্রতিযোগিতায় নামতে বিএনপি যে সম্মত হয়েছে, এ জন্য তারা প্রশংসার যোগ্য। ‘জিততেই হবে’ এ রকম মানসিকতা নিয়ে গণতন্ত্রচর্চা হয় না। গণতন্ত্রে ও খেলায় হার-জিতের জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হয়। গত তিন মাস জনসম্পৃক্ততাহীন কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি যে প্রায় নিষ্ফল আন্দোলন পরিচালনা করেছে, সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার রাজনীতিকে সঠিক ট্র্যাকে আবার ফিরিয়ে আনার একটা সুযোগ পেয়েছে। সিটি নির্বাচনের পর তারা আন্দোলনের নতুন ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে পারবে। সরকার যদি আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য সব দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিএনপিকে আর আন্দোলনের কর্মসূচিও দিতে হবে না। আশা করি, সরকার নতুন নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করতে পারবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, বাংলাদেশে দ্রুত আরেকটি অর্থপূর্ণ ও সব দলের অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না।
চট্টগ্রামের পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো। দুই বড় দলের সমর্থন নিয়ে দুই মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। চট্টগ্রামে অন্য ধরনের সমস্যা রয়েছে। বিরোধী দল থেকে মেয়র নির্বাচিত হলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যাশিত সহযোগিতা করে না। দোষ হয় মেয়রের। সরকারি দলের এমপি, মন্ত্রীরা তাতে আনন্দ পান। চট্টগ্রামে চসিকের সঙ্গে সিডিএর (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) একটা দ্বন্দ্ব সরকার তৈরি করে রেখেছে। উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবেন কে?
এ সমস্যার একটা সমাধান দরকার। চট্টগ্রাম বা জেলা শহরে উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবেন কে? নির্বাচিত মেয়র? না সরকারি কর্মকর্তা? ঢাকার একটি সমস্যা চট্টগ্রামেও রয়েছে। সেবাদানকারী সরকারি সংস্থাগুলোর ওপর মেয়রের একক কর্তৃত্ব নেই।
সে জন্যই একটি ‘কমিশন’ গঠনের কথা বলেছিলাম। ঢাকা, চট্টগ্রাম বা অন্য সিটি করপোরেশনগুলো কীভাবে চলবে, কীভাবে নির্বাচন হবে, মেয়রের একক কর্তৃত্ব কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার পথ বের করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচিত মেয়ররা তেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন কি না সন্দেহ। আছে আইনের সীমাবদ্ধতা। সেই সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে পরের নির্বাচনের আগেই।
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর: মিডিয়া ও উন্নয়নকর্মী।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে একটা নতুন আইন করার জন্য প্রস্তাব করছি। নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো রিট করা হলে তা তিন মাসের মধ্যে নিষ্পন্ন করতে হবে। আদালতের ব্যস্ততার জন্য তা করা সম্ভব না হলে পরবর্তী নির্বাচনে তা প্রযোজ্য হবে না। এর পরের নির্বাচনে তা প্রযোজ্য হবে। ভাবুন তো, সংসদ নির্বাচন নিয়ে এ রকম একটা রিট করার ফলে আট বছর জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত রয়েছে! আশা করি, বাংলাদেশে কলেজ নির্বাচন থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সবখানে রিটের কারণে তিন মাসের বেশি নির্বাচন স্থগিত রাখার সুযোগ থাকবে না। এ জন্য প্রয়োজন হলে নতুন আইন করা যেতে পারে।
এবার প্রথমবারের মতো ঢাকা সিটি করপোরেশনে (ঢাসিক) দুই ভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ঢাসিককে দুই ভাগ করা কোনো সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত নয়। আমাদের ধারণা, ভবিষ্যতে অন্য কোনো সরকার এটা পরিবর্তন করে ঢাসিককে আবার আগের জায়গায় (একক সত্তা) নিয়ে যেতে পারে। ঢাসিকের অনেক সমস্যা। ঢাসিকের আয়তন, জনসংখ্যা, কাজের পরিধি, সেবার মান, সমন্বয় ইত্যাদি নিয়ে নানা সমস্যা রয়েছে। সবচেয়ে বড় সমস্যা ঢাকার ৫৬টি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের ওপর মেয়রের (দুজন মেয়র হলেও) কোনো একক কর্তৃত্ব নেই। ফলে শুধু দুজন কেন, দশজন মেয়র নির্বাচিত হলেও এ সমস্যার সমাধান হবে না। বর্তমান আইন ও ব্যবস্থায় ঢাসিকের মেয়র মূলত একজন নিধিরাম সরদার। সরকার মূল সমস্যার সমাধানে মনোযোগ না করে অহেতুক ঢাসিককে দুই ভাগ করেছে।
ঢাসিকের আরেকটা সমস্যা হলো মেয়র ‘রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির’ মতো এককভাবে নির্বাচিত হন। কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাঁর কোনো নির্বাচনী জোট বা বোঝাপড়া নেই। কেউ কারও কাছে দায়বদ্ধ নয়। মেয়র স্বাধীনভাবে একক কর্তৃত্বে সিটি করপোরেশন চালান। কাউন্সিলরদের উপেক্ষা করেও তিনি মেয়র অফিস চালাতে পারবেন। আইন বাধা হবে না। এটা একটা প্রহসন। উচিত ছিল ‘সংসদীয় পদ্ধতির’ মাধ্যমে নির্বাচন করা। সবাই কাউন্সিলর নির্বাচিত হবেন। তাঁরা হবেন শহরের ‘এমপি’। এই ‘এমপিরা’ ভোট দিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র, ডেপুটি মেয়র ও স্পিকার নির্বাচন করবেন। তাহলে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ অন্য রকম হতো। একই অবস্থা চসিকের জন্যও প্রযোজ্য।
আমাদের প্রস্তাব এবারের নির্বাচনের পর সরকার ‘সিটি করপোরেশন’-এর নির্বাচন ও কার্যাবলি পর্যালোচনার জন্য একটি কমিশন গঠন করবে। যে কমিশন অন্যান্য প্রতিবেশী দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশের জন্য নানা সুপারিশ দেবে। ঢাকা দুই ভাগ হবে, না চার ভাগ হবে, তা গবেষণা, জনমত জরিপ ও বিভিন্ন দেশের মডেল দেখে সিদ্ধান্ত নিলে ভালো হবে। কী ধরনের ব্যবস্থা নিলে ঢাকা বা চট্টগ্রামের সব সেবাদানকারী সংস্থা মেয়রের অধীনে আসবে, তা-ও এ কমিশন সুপারিশ করবে। মোট কথা, বড় সিটি করপোরেশনগুলো ঢেলে সাজাতে হবে।
এবার প্রথমবারের মতো ঢাকায় দুজন মেয়র নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। তাঁরা কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হবেন, তা আমরা পরে জানতে পারব। বা দুজন মেয়র হওয়ায় কী কী সুবিধা হলো, তা-ও পরে জানা যাবে।
আশা করা যায়, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠুভাবে এ নির্বাচন পরিচালনা করবে। যাতে তাদের বিরুদ্ধে বড় ধরনের কোনো অভিযোগ উত্থাপিত না হয়। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার যেভাবে একক কর্তৃত্বে কমিশন পরিচালনা করছেন (সূত্র: প্রথম আলো) তাতে সন্দেহ হয়, তিনি এককভাবে কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নিয়েছেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন যে বড় দুই দলের সাংগঠনিক অবস্থা এক রকম নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সব সংস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। অপর দিকে বিএনপির বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা নানা অভিযোগে হয় বন্দী, নতুবা মামলার ভয়ে ফেরারি। গত তিন মাস তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ বন্ধ করে রেখেছিল। ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি-সমর্থিত মেয়র প্রার্থী গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে। বিএনপি-সমর্থিত অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীও আত্মগোপনে। অন্যদিকে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থিত মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থীরা স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। এবারের ঢাসিক নির্বাচন তাই সংগত কারণেই একটি অসম প্রতিযোগিতা হতে যাচ্ছে।
আমাদের মহামান্য আদালত ঢাসিক সীমানা নিয়ে মামলার নিষ্পত্তি করার জন্য এ সময়টা যে বেছে নিয়েছেন, এ জন্য দূরদর্শিতার প্রশংসা তাঁদের প্রাপ্য। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তাঁদের ও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের জামিন দেওয়া যায় কি না, আদালত তা বিবেচনা করতে পারেন।
দলের এ রকম একটা দুঃসময়ে, প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এ অসম প্রতিযোগিতায় নামতে বিএনপি যে সম্মত হয়েছে, এ জন্য তারা প্রশংসার যোগ্য। ‘জিততেই হবে’ এ রকম মানসিকতা নিয়ে গণতন্ত্রচর্চা হয় না। গণতন্ত্রে ও খেলায় হার-জিতের জন্য মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হয়। গত তিন মাস জনসম্পৃক্ততাহীন কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি যে প্রায় নিষ্ফল আন্দোলন পরিচালনা করেছে, সিটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার রাজনীতিকে সঠিক ট্র্যাকে আবার ফিরিয়ে আনার একটা সুযোগ পেয়েছে। সিটি নির্বাচনের পর তারা আন্দোলনের নতুন ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে পারবে। সরকার যদি আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য সব দলের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নেয়, তাহলে বিএনপিকে আর আন্দোলনের কর্মসূচিও দিতে হবে না। আশা করি, সরকার নতুন নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার কথা উপলব্ধি করতে পারবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, বাংলাদেশে দ্রুত আরেকটি অর্থপূর্ণ ও সব দলের অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে না।
চট্টগ্রামের পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো। দুই বড় দলের সমর্থন নিয়ে দুই মেয়র প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। চট্টগ্রামে অন্য ধরনের সমস্যা রয়েছে। বিরোধী দল থেকে মেয়র নির্বাচিত হলে কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যাশিত সহযোগিতা করে না। দোষ হয় মেয়রের। সরকারি দলের এমপি, মন্ত্রীরা তাতে আনন্দ পান। চট্টগ্রামে চসিকের সঙ্গে সিডিএর (চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) একটা দ্বন্দ্ব সরকার তৈরি করে রেখেছে। উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবেন কে?
এ সমস্যার একটা সমাধান দরকার। চট্টগ্রাম বা জেলা শহরে উন্নয়নে নেতৃত্ব দেবেন কে? নির্বাচিত মেয়র? না সরকারি কর্মকর্তা? ঢাকার একটি সমস্যা চট্টগ্রামেও রয়েছে। সেবাদানকারী সরকারি সংস্থাগুলোর ওপর মেয়রের একক কর্তৃত্ব নেই।
সে জন্যই একটি ‘কমিশন’ গঠনের কথা বলেছিলাম। ঢাকা, চট্টগ্রাম বা অন্য সিটি করপোরেশনগুলো কীভাবে চলবে, কীভাবে নির্বাচন হবে, মেয়রের একক কর্তৃত্ব কীভাবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তার পথ বের করতে হবে। অন্যথায় নির্বাচিত মেয়ররা তেমন কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবেন কি না সন্দেহ। আছে আইনের সীমাবদ্ধতা। সেই সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে পরের নির্বাচনের আগেই।
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর: মিডিয়া ও উন্নয়নকর্মী।
No comments