প্রার্থীবিহীন নির্বাচন
জামায়াতি নাশকতা এবং তা প্রতিরোধে জনপ্রশাসনের ব্যর্থতা ও অপারগতায় মানুষ আতঙ্কগ্রস্ত। জনজীবনযাপন অচল হয়ে পড়েছে। একটি অভাবনীয় শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ হয়েছে। ১৫১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। এবং সেখানেও দেখা যাচ্ছে, অপেক্ষাকৃত পেশিশক্তিধারীরা নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচন কমিশন এ পর্যন্ত বাস্তবে একটি বৃহত্তম তামাশাই নিশ্চিত করেছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে যে ধরনের তর্জন-গর্জন করেছিলেন, তা ইতিমধ্যেই ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, যাঁর বাড়িতে পেট্রলবোমার হামলা ঘটেছে, তিনি যদিও আশ্বস্ত করেছেন, শিগগিরই এই অবস্থা কেটে যাবে কিন্তু তাঁর এই আশ্বাসের বাস্তব ভিত্তি দেখা যাচ্ছে না। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, নোয়াখালীতে ১৮-দলীয় একটি মিছিল থেকে সরকারি অফিসে নাশকতা চালানো হয়েছে। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক আসাদুজ্জামান নূরের ওপর হামলার ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত।
আমরা সব ধরনের নাশকতার তীব্র নিন্দা ও দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই। ইসিকে মানতে হবে, নির্বাচনী প্রচারণার পরিবেশ নেই। দিন যাচ্ছে। মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। অথচ এর কোনো বিচার-আচার নেই। জামায়াতের নির্বিচার নাশকতা ও ব্যাপকভিত্তিক নিষ্ঠুরতার মোকাবিলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রায় অসহায় বলে প্রতীয়মান হয়েছে।নির্বাচন কমিশন যদিও সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছে। অতীতে যেসব পরিস্থিতিতে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, এবারের পরিস্থিতি তা থেকে ভিন্ন। নির্বাচনে সম্ভাব্য কারচুপি, ভোটকেন্দ্রে আসতে প্রতিপক্ষ কিংবা সংখ্যালঘু ভোটারদের বাধাদান এবং ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তাজনিত কারণ ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জনসাধারণ ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাতেই পারবে না, এ ধরনের আশঙ্কামূলক পরিস্থিতিতে এর আগে সেনা মোতায়েনের কথা ওঠেনি। তাই সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ না করে নির্বাচন করা না-করা সমান কথা। মন্ত্রী আমির হোসেন আমু বিবিসিকে বলেছেন, ইসির পক্ষে আর তফসিল বদলানোর সুযোগ নেই। সাংবিধানিক বাধা আছে। ইসির উচিত নয় এ কথায় কান দেওয়া। কারণ, এবারে ভোটারও থাকবেন না। প্রার্থীও নেই। প্রার্থীবিহীন নির্বাচন খুবই বিরল।
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত একদলীয় নির্বাচন করার পরিস্থিতিও দেশে অনুপস্থিত। সেই নির্বাচনে প্রার্থীদের অভাব ঘটেনি। সামরিক শাসনামলের ভোটারবিহীন নির্বাচনগুলোতেও প্রার্থীসংকট এতটা তীব্র হয়নি। সরকারি দল যে আশা নিয়ে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে দলত্যাগের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, তা সুফল দেয়নি। এমনকি বহুল আলোচিত বিএনএফ কুচক্রীদের মুখে চুনকালি মেখেছে। এরা কাজে আসেনি। জাপাও যে এ রকম করবে, তা-ও ছিল ধারণার বাইরে। সুতরাং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তফসিল স্থগিত করাই হবে সুচিন্তিত। কারণ, হাতে এখনো বেশ সময় আছে। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদমতে, সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচনের দ্বিতীয় বিকল্প এমনকি সংসদ রেখেও ১৫ দিন নির্বাচন পেছানোর সুযোগ আছে। ইসিকে প্রমাণ দিতে হবে, তারা সরকারি দলের বি টিম নয়। সমঝোতা না হতে পারে। সরকারি দলকে বড় রাজনৈতিক খেসারত দিতে হতে পারে। কিন্তু একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইসিকে তার স্বাধীন সত্তা দেখানো উচিত।
No comments