বৃটিশ এমপিদের ধারণা বাংলাদেশের অর্থপাচার তদন্তে বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছে একটি মহল

বাংলাদেশ থেকে বৃটেনে অর্থপাচার তদন্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্যক্তিকে হেয় করতে ভুল তথ্য দিয়ে বৃটিশ এমপিদের টার্গেট করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বৃটিশ এমপিরাই। তারা মনে করছেন এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে যেসব অর্থ পাচার করা হয়েছে, বিশেষত বৃটেনে- সে সম্পর্কে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে তৎপর একটি মহল। বাংলাদেশ থেকে বৃটেনে পাচার হওয়া অর্থের তদন্তে নেতৃত্ব দেয়া ‘ব্যক্তিকে’ প্রশ্নবিদ্ধ করতে এ ধরনের ‘বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা’ চালানো হতে পারে বলে মনে করছেন তারা। দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এমনই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্পর্কে একাধিক ই-মেইল পাওয়ার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বৃটিশ এমপিরা। গত বছর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কর্তৃত্ববাদী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেন আহসান মনসুর। হাসিনার মিত্রদের পাচার করা কয়েক বিলিয়ন ডলারের সম্পদ খুঁজে বের করতে বৃটিশ সরকার এবং বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সহায়তা চাইতে আহসান মনসুর এখন লন্ডনে আছেন।

তিনি বিশ্বাস করেন, পাচারের অর্থ বৃটেনে সম্পত্তি কেনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। গার্ডিয়ানের মতে, মনসুরের এই সফর এমন সময় হচ্ছে, যখন হাসিনার বোনঝি এবং সাবেক বৃটিশ মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়ে একটি ক্রমবর্ধমান বিতর্ক চলছে। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা দায়ের করার পর টিউলিপ এ বছর পদত্যাগ করেন। যদিও টিউলিপ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বৃটিশ এমপিরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে দুর্নীতি তদন্তের প্রচেষ্টা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। কারণ আহসান মনসুরকে নিয়ে বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
দায়িত্বশীল ৪৭ সদস্যের সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের (এপিপিজি) এমপিরা গত সোমবার মনসুরের সঙ্গে একটি বৈঠকের আগে ই-মেইল পেয়েছেন। প্রেরক নিজেকে সাংবাদিক বলে দাবি করেছেন। ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট নামে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্কও পাঠিয়েছেন ই-মেইলে। সেখানে মনসুরের মেয়ের সম্পদের হিসাব এবং সেগুলোর বিরুদ্ধে তদন্ত না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তবে প্রতিবেদনগুলোর কথিত লেখকদের কেউ সাংবাদিক নন।

গার্ডিয়ান জানতে পেরেছে, এদের মেইলে ব্যবহৃত ছবিগুলো আসলে স্টক ইমেজ। মনসুর এবং বৃটিশ এমপিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ইমেলগুলো একটি সমন্বিত অপপ্রচারের অংশ। মনসুর  একজন সাবেক আইএমএফ কর্মকর্তা। এর আগে তিনি ওয়াশিংটনে কাজ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, অর্থপাচারের জন্য তদন্তের আওতায় থাকা লোকজনই তার সুনাম ক্ষুণ্ন করতে তাকে টার্গেট করার চেষ্টা করছে। মনসুর  জানিয়েছেন, তার মেয়ে একজন মার্কিন নাগরিক, যার বাংলাদেশের সঙ্গে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।

বৃটিশ সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ-এপিপিজি’র একজন সদস্য রূপা হক পালাটাইন কমিউনিকেশন্স নামে বৃটেনের একটি পাবলিক রিলেশন্স ফার্ম থেকে আলাদা একটি ইমেইল পেয়েছেন। সেখানেও এই জাতীয় ভুয়া প্রতিবেদনের লিঙ্ক পাঠানো হয়। ইমেলটিতে বলা হয়েছে, মনসুর যদি টিউলিপ সিদ্দিকের সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তবে তাকে এবং তার পরিবারকেও তদন্তের মুখোমুখি হতে হবে। মনসুর বলেছেন, সিদ্দিককে নিয়ে তিনি কখনো কোনো মন্তব্য করেননি। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে হওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সংক্রান্ত একটি চুক্তি নিয়ে তদন্ত করছে দুদক। টিউলিপ সিদ্দিক ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগের তদন্ত করছে তারা। এমপি রূপা হক বলেছেন, এ ধরনের ই-মেইল ভয় দেখানো এবং এমপিদের স্বাভাবিক কাজে হস্তক্ষেপ করার জন্য করা হয়েছে।
এপিপিজির কয়েকজন এমপি ই-মেইলগুলো বৃটিশ পার্লামেন্টের সাইবার নিরাপত্তা পরামর্শদাতাদের কাছে পাঠিয়েছেন এবং পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র কমিটির নজরে এনেছেন। তারা এই বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণার বিষয়ে তদন্ত করছে।

বৃটিশ এমপি ফিল ব্রিকেল বলেন, এটি যদি আমাদের বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে প্রচারণা হয়, তাহলে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে এই প্রচারণার পেছনে কারা রয়েছে এবং তাদের উদ্দেশ্যে কী।

পালাটাইন কমিউনিকেশন্সের একজন মুখপাত্র বলেছেন, আমি সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কর্তৃপক্ষকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি- আমাদের এটা জানতে হবে যে, এসবের জন্য কে অর্থ প্রদান করেছে এবং কেন করছে। আমরা যেন নিজেদের সুরক্ষার সর্বোত্তম উপায় খুঁজে বের করতে পারি।

তিনি আরও বলেন, এই প্রতিবেদনের লেখক সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই এবং এতে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে এটিকে আমরা নির্ভুল বলে দাবি করিনি। অনেক গণমাধ্যমের মতোই, এটি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলেছে, যা এমপিদের বিবেচনার যোগ্য বলে আমরা মনে করি।
ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদনের প্রকৃত লেখক নাম প্রকাশ করতে চাননি। তবে তারা প্রকাশিত তথ্যকে যথেষ্ট সঠিক বলে মনে করেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.