দেড় শ কোটি টাকার সড়ক এখন আবর্জনার ভাগাড়
দেড় শ কোটি টাকায় নির্মিত সড়কটি এখন ময়লা-আবর্জনা রাখার ভাগাড় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সড়কটি কালভার্ট রোড হিসেবে পরিচিত। ওই সড়ক ছাড়াও অন্য রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করার পর গর্তের মাটি, আবর্জনা এবং ব্লকের ভাঙা অংশ জড়ো করা হয়েছে নটর ডেম কলেজের দক্ষিণ পাশের এই সড়কে। আরামবাগ (নটর ডেম কলেজ-সংলগ্ন), ফকিরাপুল এবং পুরানা পল্টন লাইন, বিজয়নগর হয়ে সংযোগ সড়কটি মৎস্য ভবনের সামনের সড়কে গিয়ে মিশেছে। কালভার্ট নির্মাণের আগে নটর ডেম কলেজের প্রান্তে সড়কের একাংশ ছিল টয়েনবি সার্কুলার রোড। এখনো এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে এই নামটির উল্লেখ আছে। ২০০০ সালের দিকে সেগুনবাগিচা খালে ঢাকা ওয়াসা প্রায় সাড়ে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ বক্স কালভার্ট নির্মাণ করেছিল।
পরে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বক্স কালভার্টের ওপর প্রায় দেড় শ কোটি টাকা খরচ করে সড়ক নির্মাণ করে। এর আগে দুপাশের পাকা ভবনসহ বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। সড়কটি নির্মাণ করা হয় মতিঝিল প্রধান সড়ক ও ইনার সার্কুলার রোডের (নয়াপল্টন-ফকিরাপুল প্রধান সড়ক) যানজট কমাতে বিকল্প সড়ক হিসেবে। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই সড়কটি থাকে বেহাল দশায়। পুরো সড়কের দুপাশে গড়ে উঠেছে অজস্র অবৈধ দোকানপাট, মাঝেমঝেই আবর্জনার স্তূপ। গত সোমবার নটর ডেম কলেজের দক্ষিণ পাশের সড়কে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় প্রবেশমুখ থেকে পশ্চিম দিক বরাবর আধা কিলোমিটারের বেশি অংশ মাটি, ময়লা, ব্লকের ভাঙা অংশ আর আবর্জনায় ভরা। এতে সড়কের এক পাশের অন্তত পাঁচ ফুট অংশ চলে গেছে। এসব ফেলতে ফেলতে সড়কের আবর্জনা প্রায় আড়াই ফুট উচ্চতায় দাঁড়িয়েছে। প্রবেশমুখ থেকে প্রায় দেড় শ গজ দূরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার কনটেইনার। এর ভেতরে আবর্জনা, বাইরেও আবর্জনা ছড়িয়ে আছে। সেখানে সড়কটি আরও সরু হয়ে গেছে। আরও দূরে ফুটবল ফেডারেশন ভবনের পেছনের দিকটায় সড়কের কিছু অংশ ভাঙা হয়েছে। পশ্চিম দিকে সড়কের বিভিন্ন অংশে খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে। রাখা হয়েছে মোটা পাইপও। সড়কের মুখে তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানির একটি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। কার্যালয়ে এসে গ্রাহকেরা বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন সড়কে ময়লা রাখায়। এক পাশে একটি চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে এক গ্রাহক আরেক গ্রাহককে বলেন, রাস্তা ব্যবহার হচ্ছে আবর্জনার ভাগাড় হিসেবে।
সিটি করপোরেশন কিছুই বলে না। করপোরেশনের ঠিকাদারেরা যেখানে ইচ্ছা সেখানেই নির্মাণসামগ্রী রাখেন। অনেক সময় রাস্তার এক পাশ গর্ত করেন, আরেক পাশে গর্তের মাটি রাখেন। পুরো রাস্তাই বন্ধ হয়ে যায়। নটর ডেম ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা কোর্স ফি দেওয়ার জন্য দিলকুশায় নির্ধারিত ব্যাংক শাখায় যাবেন বলে ওই সড়কটিতে ঢুকে আবার বেরিয়ে আসেন। তাঁরা বলেন, ওই সড়কে গেলে অল্প সময়ে যাওয়া যেত। কিন্তু সড়কের এ অবস্থায় সোজা মতিঝিল হয়ে যাওয়াই ভালো। নটর ডেম-মৎস্য ভবন সড়ক নির্মাণের সময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন রাজউকের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী (প্রকল্প ও ডিজাইন) আনোয়ার হোসেন। গত রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রাজধানীবাসীর সুবিধার্থে রাজউক বিভিন্ন সময়ে বেশ কিছু সংযোগ সড়ক নির্মাণ করেছে। নটর ডেম-মৎস্য ভবন সড়কটি এর অন্যতম। অন্য সড়কের মতো এই সড়কটিও সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
No comments