উৎসবের বদলে উৎকণ্ঠা
বোরো আবাদের মৌসুম। দিনে ও রাতে পালা করে সেচযন্ত্র দিয়ে খেতে পানি দিতে হয়। আবদুল আজিজ জ্বালানি তেল সংগ্রহে বাজারে এসে দেখলেন দোকানপাট বন্ধ। গত সোমবার দুপুরে ওই বাজারে এই প্রতিবেদককে আবদুল আজিজ বলেন, ‘খেতের কাম থাকি দুই বেলা বাজারে আইতাম। মানুষের মাতকথা চলত ইলেকশন নিয়া। প্রার্থীর ভালা-মন্দ টের পাইতাম বাজারও আইয়া।
বাজার বন্ধ, মানুষ অখন ইলেকশন নিয়া মাতামাতি করতে ভয়ের মইধ্যে আছে!’ শুধু আবদুল আজিজ নন,সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার প্রান্তসীমার বাংলাবাজার লাগোয়া দক্ষিণ ও উত্তর কালনীরচরসহ আশপাশের চারটি গ্রামের মানুষের মনে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। অথচ এই উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। নদীর নাম কালনী। এপার দক্ষিণ কালনীচর। ওপার উত্তর কালনীচর। দক্ষিণ ভাগ পড়েছে সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায়। উত্তর পুরোটাই সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর। ভৌগোলিক বিভাজন হলেও দুই এলাকার বাসিন্দাদের চলাফেরা ওসমানীনগর এলাকায়। দুই বসতি এলাকার একটিই বাজার। নাম বাংলাবাজার। গত রোববার এই বাজারে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে দুজন নিহত হওয়ার পর বদলে গেছে দৃশ্যপট। ঘটনার পর থেকে বাজার বন্ধ রাখা হয়েছে। সোমবার সকালে ও বিকেলে দুই দফায় বাংলাবাজার ঘুরে দুই শতাধিক দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে। বাংলাবাজার হাট পরিচালনায় গঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল গণির ‘পিংকি ভ্যারাইটিজ স্টোর’ নামের দোকানটিও বন্ধ রয়েছে। মুঠোফোনে তিনি বলেন, মানুষ আতঙ্কিত। ভোটের আগে আর এ অবস্থার পরিবর্তন হবে কি না, সংশয় প্রকাশ করেন আবদুল গণি। বাংলাবাজার হয়ে উত্তর কালনীরচর গ্রামে ঢোকার মুখে রয়েছে নদীতীরে আরও কয়েকটি দোকানপাট। সেখানে নয়টি দোকানের মধ্যে খোলা পাওয়া যায় মাত্র একটি। সোমবার ভরদুপুরে গ্রামের পথ ধরে এগোতেই নারীদের হাঁকডাক শোনা যায়। শত শত নারীর বোরোর জমিতে দৌড়ঝাঁপ চলল প্রায় ঘণ্টাখানেক। উত্তর কালনীচর গ্রাম থেকে যে রাস্তাটি ফসলি জমির মাঝ দিয়ে জগন্নাথপুর উপজেলায় গিয়ে মিলিত হয়েছে, সে রাস্তার মুখে দাঁড়িয়ে মধ্যবয়সী তুলা মিয়া জানালেন, গত রোববারের ঘটনার পর থাকি তাঁরা এভাবেই দৌড়াচ্ছেন। কারণ, পুলিশের ধরপাকড়। ভোটের প্রসঙ্গ তুলতেই তুলা মিয়া বলেন,
‘এই ভোটাভুটিই তো আমরারে ভয়ের মাঝে ফেলল!’ সিলেটের নবগঠিত উপজেলা ওসমানীনগর। ২০১৫ সালের ১৩ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নিয়োগের মধ্য দিয়ে ওসমানীনগর উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। গত ১ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এ উপজেলা পরিষদের প্রথম ভোট ৬ মার্চ। মোট ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ৪৬০ জন। ভোটকেন্দ্র ৫২টি। বাংলাবাজার ও দক্ষিণ কালনীরচর গ্রামের ভোটাররা ভোট দেবেন সাদীপুরের রহমতপুর উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে। এই কেন্দ্রের সামনে কথা হয় বিভিন্ন বয়সী আটজন ভোটারের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় কোনো প্রার্থীর আর স্বাভাবিক প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না। তাঁদের ভাষ্য, অন্তত দুই সহস্রাধিক লোক ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। গত রোববার চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মো. আতাউর রহমান এবং ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. আখতারুজ্জামান চৌধুরীর (জগলু চৌধুরী) সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই দুজন ছাড়াও চেয়ারম্যান পদে বিএনপির ময়নুল হক চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির মো. শিব্বির আহমদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে একমাত্র প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপির মো. গয়াছ মিয়া। নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আওয়ামী লীগের মুক্তা পারভীন, বিএনপির মুছলিমা আক্তার চৌধুরী এবং স্বতন্ত্র হুছনা বেগম ও শারমিন আক্তার। ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবু লায়েশ বলেন, গত সোমবার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে প্রার্থী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মতবিনিময় হয়। এরপর পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের ব্যাপারে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবে। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনী পরিবেশের যাতে কোনোভাবে ক্ষতি না হয়, সে ব্যাপারে ওই ঘটনার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো নজর রাখছে। তিনি মনে করেন, পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত। দিন দিন আরও স্বাভাবিক হয়ে উঠলে ভোটের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
বিদ্রোহী প্রার্থীর মতবিনিময়
‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে কালনীরচরে সংঘর্ষ ও দুই খুনের দায় আমার ওপর চাপানোর অপচেষ্টা হচ্ছে। একটি মহল আমার প্রার্থিতায় ভোটের আগেই ভীত হয়ে পড়েছে। উপজেলাবাসী এ ষড়যন্ত্রের জবাব অবশ্যই ভোটের মাধ্যমে দেবেন।’ সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামান চৌধুরী (জগলু চৌধুরী) গতকাল মঙ্গলবার ওসমানীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ বক্তব্য দেন।
বিদ্রোহী প্রার্থীর মতবিনিময়
‘আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে কালনীরচরে সংঘর্ষ ও দুই খুনের দায় আমার ওপর চাপানোর অপচেষ্টা হচ্ছে। একটি মহল আমার প্রার্থিতায় ভোটের আগেই ভীত হয়ে পড়েছে। উপজেলাবাসী এ ষড়যন্ত্রের জবাব অবশ্যই ভোটের মাধ্যমে দেবেন।’ সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আক্তারুজ্জামান চৌধুরী (জগলু চৌধুরী) গতকাল মঙ্গলবার ওসমানীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ বক্তব্য দেন।
No comments