মনিপুর স্কুলে জমাটি আয়োজন
মিলনায়তনের দুই তলা কানায় কানায় ভরা। বিতার্কিকেরা অপেক্ষায় আছে চূড়ান্ত ফল জানতে। মঞ্চ থেকে ঘোষণা আসতেই মধ্যম সারিতে বসা একদল শিক্ষার্থী আনন্দে চিৎকার করে উঠে দাঁড়াল। ছুট লাগাল মঞ্চের দিকে। জিরাবো ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের এই চারজনের দলটিই চ্যাম্পিয়ন। ‘যুক্তিতে মুক্তি’ স্লোগানে গতকাল শনিবার প্রথম আলো স্কুল বিতর্ক উৎসব-২০১৭-এর দ্বিতীয় আয়োজন ছিল মিরপুরের রূপনগরে মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ প্রাঙ্গণে। ১৬টি স্কুলের ১৬ দলের অংশগ্রহণে দিনভর চলে পাল্টাপাল্টি যুক্তির খেলা। সকালে বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক আহমদ রফিক।
সঙ্গে ছিলেন মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন, প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি সাইদুজ্জামান রওশন ও জাতীয় কমিটির সহসভাপতি জান্নাতুল বাকের। আহমদ রফিক বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন আমাদের মুক্তির স্লোগান। জাতীয়তাবোধের মূলনীতিকে জীবনের সব ক্ষেত্রে যুক্ত করতে হবে। যুক্তি ও বিচার-বুদ্ধির মাধ্যমে দেশের জন্য অবদান রাখতে হবে।’ মনিপুর স্কুলের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন বলেন, বিতর্ক প্রতিযোগিতা শিক্ষার্থীদের সত্যসন্ধানী করে তোলে। তাদের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা বাড়ায়। উৎসবে চারটি পর্বে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল থেকেই এক একটি শ্রেণিকক্ষে বিতর্কের আসর বসে। প্রথম পর্বে ১৬টি দল অংশ নেয়। প্রতি পর্বে নকআউটের মাধ্যমে দুটি দল চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছায়। দুপুরে খাবারের বিরতি দিয়ে বিকেল পর্যন্ত প্রতিযোগিতা চলে। চূড়ান্ত পর্বের বিতর্কের বিষয় ছিল ‘সারা বছরজুড়ে বইমেলা হওয়া উচিত’। কলেজ ভবনের মিলনায়তনে চূড়ান্ত পর্বের বিতর্ক উপভোগ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী-অভিভাবক-অতিথিরা। বিষয়ের পক্ষে ছিল মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের মেয়েরা।
তাদের হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বিষয়ের বিপক্ষ দল জিরাবো ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ। বিকেলে পুরস্কার বিতরণী পর্বে অতিথি ছিলেন গবেষক-প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ। খুদে বিতার্কিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এই জীবনে যুক্তিশীলতা ছাড়া প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় না।’ তিনি বলেন, যেকোনো প্রতিযোগিতার উপযোগিতা আছে। বিতর্কের উপযোগিতা হলো, এখানে যারা অংশগ্রহণ করে তারা নিজেদের যোগ্যতা বিচার করতে পারে। পুরস্কার বিতরণী পর্বে বারোয়ারি বিতর্কের তিন সেরা বক্তাকে পদক এবং বিজয়ী ও রানারআপ দলকে স্মারক ও পদক তুলে দেন অতিথিরা। উৎসবের আয়োজক প্রথম আলো বন্ধুসভা জাতীয় কমিটি। সমাপনী পর্বে আয়োজকদের পক্ষ থেকে সাইদুজ্জামান রওশন সবাইকে ধন্যবাদ জানান। এ বছর ঢাকা মহানগরকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করে স্কুল বিতর্ক উৎসব হচ্ছে। গত সপ্তাহে উৎসব শুরু হয় ধানমন্ডি অঞ্চলের লালমাটিয়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয় প্রাঙ্গণ থেকে। এরপর রামপুরা, উত্তরা ও পুরান ঢাকায় এ বিতর্ক উৎসব চলবে।
No comments