সেতুর অভাবে চার জেলার মানুষের ভোগান্তি
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় বাসুপাড়া ইউনিয়নে ফকিন্নী নদীর সেতুর কাছ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক সিরাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে গত দুই দিন রাতের বেলায় সেখান থেকে বালু তোলা হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ওই সেতুর পাশে নদীর জমি দখল করে তাঁরা ভবনও নির্মাণ করছেন। গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা যায়, দেউলা-ভবানীগঞ্জ সংযোগস্থলে ফকিন্নী নদীর সেতু থেকে ২০-২৫ গজ দূরে একটি শ্যালো মেশিন (অগভীর নলকূপ) পড়ে আছে। পাইপের এক প্রান্ত নদীর মধ্যে। আরেক প্রান্ত তীরের ওপর। শ্যালো মেশিনের ১০-১৫ গজের মধ্যে রয়েছে একটি নির্মাণাধীন ভবন। ভবনটির পাশেই ওই পাইপের মাধ্যমে তোলা বালু তুলে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। কিছুটা দূরে রয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর, আবাদি জমি, দোকানপাট ও উপজেলা ভূমি কার্যালয়।
বাসুপাড়া ইউনিয়ন ও ভবানীগঞ্জ পৌরসভা এলাকার অন্তত ২০ জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বৃহস্পতি ও গতকাল শুক্রবার রাতে বাসুপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ও শিক্ষক সিরাজ উদ্দিন মেশিন বসিয়ে সেতুর কাছ থেকে বালু উত্তোলন করছেন। দিনের বেলা সমস্যা হতে পারে, এ জন্য রাতে বালু তোলা হয়েছে। সন্ধ্যার পর তাঁদের কার্যক্রম শুরু হয়। স্থানীয় লোকজন নিষেধ করলেও তাঁরা শোনেননি। উল্টো বলেছেন, তাঁদের ভাষায়, ‘ক্ষতি হলে প্রশাসন দেখবে।’ এর আগে নদী দখল করে তাঁরা ভবন নির্মাণ শুরু করেন। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো কাজ হয়নি। কয়েক দিন নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল, আবারও তা শুরু হয়েছে। বাসুপাড়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি লুৎফর রহমান বলেন, নদী দখল করে ভবন নির্মাণ এবং সেতুকে হুমকিতে ফেলে বালু উত্তোলন করা ঠিক হচ্ছে না। প্রশাসন দেখার পরেও কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটা রহস্যজনক। সিরাজ উদ্দিন ও আমজাদ হোসেন বলেন, তাঁরা সেতুর কাছ থেকে আর বালু উত্তোলন করবেন না।
তাঁদের দাবি—নিজেদের জমিতেই ভবন নির্মাণ করছেন তাঁরা। এই কাজে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সময় বাধা দেওয়া হয়নি। স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাগমারা কার্যালয়ের প্রকৌশলী সানোয়ার হোসেন বলেন, সেতুর নিচ থেকে মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি তিনি জানেন না। এভাবে বালু উত্তোলন করলে সেতু, আশপাশের বাড়িঘর ও আবাদি জমির ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে সেতুঘেঁষে ভবন নির্মাণ করার সময়ও তিনি বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু কোনো ফল পাননি। সেতুর কাছে থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি জানেন না বলে জানান বাগমারার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, বিষয়টি খোঁজ করে দেখা হবে। নদী দখল করে ভবন নির্মাণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভাঙনে নদী সামনের দিকে এগিয়ে আসাতে মনে হয়েছে, নদী দখল করা হয়েছে। তবে জায়গাটি তাঁদের নিজস্ব। এরপরও নদীর ভেতরে ভবন করা ঠিক হয়নি।
No comments