একুশ বছর পর...
একুশ
বছর পরে মায়ের সঙ্গে ছেলের সাক্ষাত। সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হলো আবেগঘন এক
পরিবেশ। দু’জনে একে অন্যকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন দীর্ঘসময়। যে মা আশা
ছেড়ে দিয়েছিলেন ২১ বছর আগে অপহরণ হওয়া তার ছেলে আর কোনদিন ফিরে আসবে, তিনি
সত্যি সত্যি ছেলেকে ফিরে পেয়ে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। তার বুক উতলে
উঠছে কান্না। ছেলে স্টিভ হার্নান্ডেজকে সর্বশেষ দেখেছিলেন তিনি ১৯৯৫ সালে।
তখন স্টিভের বয়স ছিল মাত্র দেড় বছর। ক্যালিফোর্নিয়ার এই মায়ের নাম মারিয়া
মানসিয়া (৪২)। তার বাড়ি সেখানকার র্যানচো কুকামোঙ্গাতে। সেই বাড়ি ভেঙেচুড়ে
দেয়া হয়েছিল। সেখানে ফিরে গিয়ে দেখেন স্টিভ নিখোঁজ। তাকে অপহরণ করেছিলেন
স্টিভেনের পিতা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন হাফিংটন পোস্ট। এতে বলা হয়েছে, ছেলেকে
হারিয়ে মারিয়া সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষের কাছে অপহরণের অভিযোগ করেছিলেন।
কিন্তু তার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যাওয়ায় সেই মামলা শীতল হয়ে পড়ে। তখন থেকেই
স্টিভেনের একটি ছবিই সম্বল মারিয়ার। বাকি সব ছবি নিয়ে যায় স্টিভেনের পিতা। এ
মামলার তদন্তকারী কারেন ক্রেগ বলেছেন, মারিয়ার কাছে গত ২১টি বছর ওই একটি
ছবিই সম্বল। এই নিয়েই তিনি বেঁচে আছেন। ফেব্রুয়ারিতে ক্রেগ ও তার সহকর্মী
মিশেল ফ্যাক্সন একটি ক্লু পান। তারা জানতে পারেন স্টিভেনের বয়স এখন ২২ বছর।
সে এখন তার পিতার সঙ্গে মেক্সিকোর পুয়েবলায় বসবাস করছে। এ সময় তার সঙ্গে
যোগাযোগ করেন ক্রেগ। তিনি বলেন, আমরা তাকে তখন বলেছি, আমরা তার পিতা
নিখোঁজ হয়েছেন এটা তদন্ত করছি। এ জন্য তার ডিএনএ পরীক্ষা করা দরকার। তাতে
আমাদের তদন্তে সহায়ক হবে। কোন ভীতি সৃষ্টি হোক এমনটা আমরা করতে চাই নি।
আমরা আসলে নিশ্চিতও ছিলাম না যে, সেখানে আসলে কি পরিস্থিতি বিরাজমান। ফলে
আমাদেরকে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। মে মাসে তার ডিএনএর সঙ্গে মারিয়ার
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা পাঠানো হয় ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিসে। তবে এ
বিষয়ে স্টিভেন বা মারিয়া কাউকে জানতে দেয়া হয় নি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই
রিপোর্ট হাতে আসে। তাতে তাদের ডিএনএ মিলে যায়। ক্রেগ ও ফ্যাক্সন দ্রুত চলে
যান মারিয়ার বাড়িতে খুশির খবর শোনাতে। এ খবর শুনে কিছুতেই বিশ্বাস করতে
পারছিলেন না মারিয়া। তিনি শুরু করেন কান্না। মারিয়া বলেন, স্টিভেন এখনও
বেঁচে আছে এটা তিনি বিশ্বাস করেন না। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার মা-ছেলের মিলন
হয়। মারিয়া কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি চিৎকার দিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলেন,
আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। তার জন্য গত ২১টি বছর আমি অপেক্ষায় ছিলাম।
No comments