তিস্তা প্রশ্নের সমাধান হতে হবে রাজনৈতিক
পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বর্তমানে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ছিলেন আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ ইউনিয়নের (আইইউসিএন) বাংলাদেশ প্রতিনিধি। এর আগে তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পানিসম্পদ কৌশল বিভাগে অধ্যাপনা করেন। ১৯৮১ সালে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুরকৌশলে পিএইচডি ডিগ্রি নেন। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে পানিসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা, নদী ব্যবস্থাপনা ও নদীশাসন, উপকূলীয় অঞ্চল ও জলাভূমি সংরক্ষণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে কর্মরত। তিনি বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং অর্ডার প্রণয়ন, গঙ্গা পানি চুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সরকারের কর্মপরিকল্পনা থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছেন
প্রথম আলো : তিস্তার পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আইনুন নিশাত : তিস্তায় ডালিয়া ব্যারাজে উজান থেকে আসা পানিপ্রবাহ প্রায় শূন্য। এখন ৬০০-৭০০ কিউসেক পানি যা আসছে তা, ধারণা করি, ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের ভাটির উপনদী থেকে। আসল কথা হলো তিস্তার মূল প্রবাহ ভারত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এটা কোনো সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ নয়। অতীতেও এ রকম সর্বাত্মক প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেনি। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি ছিল না। ভারত সে সময় বলত, চুক্তি না থাকলেও কাছাকাছি পরিমাণ পানি পাবে। চুক্তি সম্পাদনের পর গঙ্গার পানিপ্রবাহের বড় রকমের পরিবর্তন হয়নি।
প্রথম আলো : চুক্তি সম্পাদনের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এখন বাংলাদেশ কী করবে?
আইনুন নিশাত : ভারতে পানিসম্পদ পুরোপুরি প্রাদেশিক ব্যাপার। ভারতের প্রতিটি প্রদেশই মনে করে, তাদের অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানি পুরোপুরি তাদেরই। দক্ষিণ ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অপর রাজ্যের বৈরী আচরণের বিরুদ্ধে অনশন করেছিলেন। রাজধানীতে পানির ঘাটতি মেটাতে মুখ্যমন্ত্রীকে অপর রাজ্যের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়েছিল। ভারতের ১৯৫৮-এর আইন নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুচারু ফ্রেমওয়ার্ক। একটি নদী দুই বা ততোধিক স্বাধীন দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে অথবা ফেডারেল ধরনের কোনো রাষ্ট্রের দুটি রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে একই ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত রীতি হলো অন্য দেশের ক্ষতি না করা। তিস্তার বেলায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত মূল পানিপ্রবাহের বড় অংশ বাংলাদেশে এসেছে। তিস্তার পানিপ্রবাহ গজলডোবায় ভাগ হতে হবে, কারিগরিভাবে এর কোনো বিকল্প নেই। কাজেই গজলডোবায় প্রবাহের পরিমাণ কত, তা জানা দরকার। প্রবাহের ধারা দেখে অনুমান করি যে শুকনো মৌসুমে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে হয়তো পাঁচ-ছয় হাজার কিউসেক পানি থাকে। প্রাকৃতিকভাবে মে মাস থেকে পানি বাড়বে এবং জুলাই থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রচুর পানি থাকবে। গজলডোবায় এই প্রবাহ আড়াই লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ কিউসেকে উঠে যেতে পারে। অতীতে বর্ষাকালে কিংবা শুকনো মৌসুমে গজলডোবা ও ডালিয়ার প্রবাহে তেমন একটা পার্থক্য থাকত না। আশির দশকের শেষে ভারতে ব্যারাজ চালু হওয়ার পর শুকনো মৌসুমে পানি অর্ধেকের মতো হয়ে গেছে। বর্ষাকালেও কমেছে। এই কথাগুলো মনে রেখে বাংলাদেশে তিস্তা ব্যারাজের ব্যাপারে আরও কিছু আলোচনা প্রয়োজন। প্রথমত, দুই দেশের ব্যারাজেরই উদ্দেশ্য সম্পূরক সেচ দেওয়ার প্রকল্প চালানো। ভারতের ব্যারাজের ডান তীরের চাহিদা হলো ১৬ হাজার কিউসেক পানি। বাঁ তীরের চাহিদা আনুমানিক ছয় হাজার কিউসেক। ভারতের একার চাহিদাই ২২ হাজার কিউসেক। আর বাংলাদেশের ডান তীরের চাহিদা আট হাজার কিউসেক। অর্থাৎ তিস্তা থেকে সর্বমোট ৩০ হাজার কিউসেক পানি দরকার। এই পরিমাণ পানি ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত নদীতে থাকে না। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেও ঘাটতি থাকে। বাংলাদেশের জন্য এ সময়টায় পানি পাওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ, তাতে করে তিস্তার প্রায় ৭.৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় চাষ দেওয়া সম্ভব হবে। আমাদের জুলাই থেকে অক্টোবরে আমন মৌসুমে সম্পূরক সেচ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে টিকে থাকার জন্য নদীর নিজেরও পানি প্রয়োজন। তার জন্য ডালিয়া ব্যারাজের কিছুটা প্রবাহ ছাড়তেই হবে। সবার আগে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা নদীর জন্য যে চুক্তিটির খসড়া অনুস্বাক্ষরিত হয়েছে, তা এখন কার্যকর করা দরকার
প্রথম আলো : চাহিদার তুলনায় এত কম পানি থাকা অবস্থায় ভাগাভাগি হবে কীভাবে?
আইনুন নিশাত : আমি সব সময় অববাহিকাভিত্তিক ও নদীভিত্তিক ব্যবস্থাপনার কথা বলে থাকি। বর্ষাকালে নদীর পানি সুবিধাজনক স্থানে ধরে রেখে শুকনো মৌসুমে ছাড়তে হবে। তিস্তা অববাহিকায় ভারতের ছোট-বড় অনেক প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে তথ্যপ্রবাহে স্বচ্ছতা এনে সহযোগিতার পথ অবলম্বন করতে হবে। তার জন্য বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহের বড় অংশ।
প্রথম আলো : তিস্তার পানিপ্রবাহ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
আইনুন নিশাত : তিস্তায় ডালিয়া ব্যারাজে উজান থেকে আসা পানিপ্রবাহ প্রায় শূন্য। এখন ৬০০-৭০০ কিউসেক পানি যা আসছে তা, ধারণা করি, ভারতের গজলডোবা ব্যারাজের ভাটির উপনদী থেকে। আসল কথা হলো তিস্তার মূল প্রবাহ ভারত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। এটা কোনো সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ নয়। অতীতেও এ রকম সর্বাত্মক প্রত্যাহারের ঘটনা ঘটেনি। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে চুক্তি ছিল না। ভারত সে সময় বলত, চুক্তি না থাকলেও কাছাকাছি পরিমাণ পানি পাবে। চুক্তি সম্পাদনের পর গঙ্গার পানিপ্রবাহের বড় রকমের পরিবর্তন হয়নি।
প্রথম আলো : চুক্তি সম্পাদনের লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। এখন বাংলাদেশ কী করবে?
আইনুন নিশাত : ভারতে পানিসম্পদ পুরোপুরি প্রাদেশিক ব্যাপার। ভারতের প্রতিটি প্রদেশই মনে করে, তাদের অঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানি পুরোপুরি তাদেরই। দক্ষিণ ভারতের একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অপর রাজ্যের বৈরী আচরণের বিরুদ্ধে অনশন করেছিলেন। রাজধানীতে পানির ঘাটতি মেটাতে মুখ্যমন্ত্রীকে অপর রাজ্যের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়েছিল। ভারতের ১৯৫৮-এর আইন নদী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সুচারু ফ্রেমওয়ার্ক। একটি নদী দুই বা ততোধিক স্বাধীন দেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে অথবা ফেডারেল ধরনের কোনো রাষ্ট্রের দুটি রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হলে একই ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক স্বীকৃত রীতি হলো অন্য দেশের ক্ষতি না করা। তিস্তার বেলায় ২০১৩ সাল পর্যন্ত মূল পানিপ্রবাহের বড় অংশ বাংলাদেশে এসেছে। তিস্তার পানিপ্রবাহ গজলডোবায় ভাগ হতে হবে, কারিগরিভাবে এর কোনো বিকল্প নেই। কাজেই গজলডোবায় প্রবাহের পরিমাণ কত, তা জানা দরকার। প্রবাহের ধারা দেখে অনুমান করি যে শুকনো মৌসুমে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে হয়তো পাঁচ-ছয় হাজার কিউসেক পানি থাকে। প্রাকৃতিকভাবে মে মাস থেকে পানি বাড়বে এবং জুলাই থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রচুর পানি থাকবে। গজলডোবায় এই প্রবাহ আড়াই লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ কিউসেকে উঠে যেতে পারে। অতীতে বর্ষাকালে কিংবা শুকনো মৌসুমে গজলডোবা ও ডালিয়ার প্রবাহে তেমন একটা পার্থক্য থাকত না। আশির দশকের শেষে ভারতে ব্যারাজ চালু হওয়ার পর শুকনো মৌসুমে পানি অর্ধেকের মতো হয়ে গেছে। বর্ষাকালেও কমেছে। এই কথাগুলো মনে রেখে বাংলাদেশে তিস্তা ব্যারাজের ব্যাপারে আরও কিছু আলোচনা প্রয়োজন। প্রথমত, দুই দেশের ব্যারাজেরই উদ্দেশ্য সম্পূরক সেচ দেওয়ার প্রকল্প চালানো। ভারতের ব্যারাজের ডান তীরের চাহিদা হলো ১৬ হাজার কিউসেক পানি। বাঁ তীরের চাহিদা আনুমানিক ছয় হাজার কিউসেক। ভারতের একার চাহিদাই ২২ হাজার কিউসেক। আর বাংলাদেশের ডান তীরের চাহিদা আট হাজার কিউসেক। অর্থাৎ তিস্তা থেকে সর্বমোট ৩০ হাজার কিউসেক পানি দরকার। এই পরিমাণ পানি ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত নদীতে থাকে না। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেও ঘাটতি থাকে। বাংলাদেশের জন্য এ সময়টায় পানি পাওয়াটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ, তাতে করে তিস্তার প্রায় ৭.৫ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় চাষ দেওয়া সম্ভব হবে। আমাদের জুলাই থেকে অক্টোবরে আমন মৌসুমে সম্পূরক সেচ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে টিকে থাকার জন্য নদীর নিজেরও পানি প্রয়োজন। তার জন্য ডালিয়া ব্যারাজের কিছুটা প্রবাহ ছাড়তেই হবে। সবার আগে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তা নদীর জন্য যে চুক্তিটির খসড়া অনুস্বাক্ষরিত হয়েছে, তা এখন কার্যকর করা দরকার
প্রথম আলো : চাহিদার তুলনায় এত কম পানি থাকা অবস্থায় ভাগাভাগি হবে কীভাবে?
আইনুন নিশাত : আমি সব সময় অববাহিকাভিত্তিক ও নদীভিত্তিক ব্যবস্থাপনার কথা বলে থাকি। বর্ষাকালে নদীর পানি সুবিধাজনক স্থানে ধরে রেখে শুকনো মৌসুমে ছাড়তে হবে। তিস্তা অববাহিকায় ভারতের ছোট-বড় অনেক প্রকল্প রয়েছে। এ প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে তথ্যপ্রবাহে স্বচ্ছতা এনে সহযোগিতার পথ অবলম্বন করতে হবে। তার জন্য বর্ষা মৌসুমে পানিপ্রবাহের বড় অংশ।
No comments