লোকসভায় গোলমাল, ধাক্কাধাক্কি

ভারতের তেলেগু দেশম পার্টির (টিডিপি) সদস্যরা
পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য বিলের প্রতিবাদে গতকাল
ব্যানার-পোস্টার নিয়ে পার্লামেন্টে
বিক্ষোভ করেন ছবি: এএফপি।
অন্ধ্র প্রদেশকে দুই টুকরা করে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভারতের পার্লামেন্টে গতকাল বুধবার বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষুব্ধ পার্লামেন্ট সদস্যরা ওয়েলে নেমে প্ল্যাকার্ড-পোস্টার নিয়ে স্লোগান দেন, সভার কাগজপত্র ছিঁড়ে উড়িয়ে দেন, এমনকি পক্ষে-বিপক্ষের সদস্যদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কিও হয়েছে। পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার মধ্যে রেলমন্ত্রী অন্তর্বর্তী রেল বাজেট পেশ করলেও তা পড়া শেষ করতে পারেননি।
বিরোধীদের ক্ষোভের হাত থেকে বাঁচাতে সোনিয়া গান্ধী, শারদ পাওয়ার, কমলনাথ, লাল সিং রেলমন্ত্রীকে আড়াল করে রাখেন। অধিবেশন মুলতবি করার পর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বললেন, ‘আমার হূদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। গণতন্ত্রের পক্ষে আজ অত্যন্ত বেদনার দিন।’ তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের প্রশ্নে লোকসভার উভয় কক্ষই কয়েক দিন ধরে উত্তাল। দুই কক্ষের কোনোটিতেই কোনো কাজ হচ্ছে না। ২১ ফেব্রুয়ারি এই অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা। এর মধ্যে তেলেঙ্গানা বিল দুই কক্ষে পাস করানো না গেলে রাজ্য ভাগ করা সম্ভব হবে না। কংগ্রেসদলীয় অন্ধ্র প্রদেশের পার্লামেন্ট সদস্যরাও এই বিষয়ে দলের বিরোধিতা করছেন। গতকাল অন্তর্বর্তী রেল বাজেট পেশ করানোর বিষয়ে বিরোধী দলগুলো রাজি হওয়ায় মনে করা হচ্ছিল, অন্তত এদিনের অধিবেশন নির্বিঘ্ন হবে। কিন্তু তেলেঙ্গানাবিরোধীদের প্রবল বিরোধিতায় রেলমন্ত্রী মল্লিকার্জুন খারগে তাঁর বাজেট ভাষণ শেষ করতে পারলেন না। বিরোধীদের ক্রোধের হাত থেকে তাঁকে আড়াল করতে এই প্রথম লোকসভার প্রথম সারিতে না দাঁড়িয়ে রেলমন্ত্রী দ্বিতীয় সারিতে দাঁড়িয়ে ভাষণ শুরু করেন। প্রথম সারিতে তাঁর সামনে বসে থাকলেন সোনিয়া গান্ধী, কৃষিমন্ত্রী শারদ পাওয়ার ও সংসদীয় মন্ত্রী কমলনাথ। কংগ্রেসদলীয় সদস্য লাল সিং দুহাতে রেলমন্ত্রীকে আড়াল করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলেন। রেলমন্ত্রীর ভাষণের পাশাপাশি দেখা গেল অন্ধ্র প্রদেশের চার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কে এস রাও, কে সূর্যপ্রকাশ, ডি পুরান্ডেশ্বরী ও অভিনেতা রাজনীতিবিদ চিরঞ্জীবী তেলেঙ্গানার বিরোধিতায় হাতে পোস্টার নিয়ে ওয়েলে নেমে স্লোগান দিচ্ছেন।
রাজ্যের অন্য দুই মন্ত্রী এম পাল্লাম রাজু ও কৃপারিনী নিজেদের আসনের সামনে দাঁড়িয়ে তাঁদের সমর্থন দিতে থাকেন। তেলেঙ্গানার পক্ষের পার্লামেন্ট সদস্যরা এই সময় প্রতিরোধে নামেন। কংগ্রেসের এম জগন্নাথের সঙ্গে তেলুগু দেশমের এন শিবপ্রসাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। তাঁদের নিবৃত্ত করতে ওয়েলে নেমে আসেন জনতা দলের নেতা শারদ যাদব, তৃণমূল কংগ্রেসের সৌগত রায় ও কংগ্রেসের জগদম্বিকা পাল। ব্যাপক গোলমালে রেলমন্ত্রীর ভাষণের কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। একসময় সোনিয়া তাঁকে পুরো ভাষণ না পড়ে পার্লামেন্টে পেশ করতে বলেন। কিন্তু এর আগেই তেলেঙ্গানাবিরোধীরা বিলি করা বাজেট-ভাষণ ছিঁড়ে উড়িয়ে দিতে থাকেন। কেউ কেউ লোকসভার সচিবদের জন্য রাখা চেয়ারে উঠে পড়েন। এ পরিস্থিতিতে অধিবেশন মুলতবি করা হয়। প্রধানমন্ত্রী দুপুরেই প্রধান বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। কীভাবে তেলেঙ্গানা বিল পাস করানো যায়, সেটাই সরকারের সবচেয়ে বড় চিন্তা। সরকার প্রথমে ভেবেছিল, বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করাবে, যাতে বিলটি পরবর্তী পার্লামেন্টেও প্রাসঙ্গিক থাকে। কিন্তু বিলটিতে আর্থিক প্রসঙ্গ থাকায় রাজ্যসভার চেয়ারম্যান সেটি লোকসভায় পেশের পক্ষে মত দেন। এর ফলে কংগ্রেসের সংকট বাড়ল। কারণ, লোকসভায় বিল পেশ করা হলে তা এই অধিবেশনেই রাজ্যসভায়ও পাস করাতে হবে। তা না হলে বিলটি খারিজ হয়ে যাবে। তেলেঙ্গানাবিরোধীদের যা মনোভাব, তাতে এই কঠিন কাজ কীভাবে কংগ্রেস করবে, সেটাই চিন্তার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.