কে নেবে দায়, কে করবে বিচার? by মোর্শেদ নোমান
‘মন্টু তো কোনো রাজনীতি করত না, কিন্তু রাজনীতির শিকার হলো। কে এর বিচার করবে?’ বেশ ক্ষোভের সঙ্গে বললেন পরেশ পাল।
হরতালের
আগুনে দগ্ধ মন্টুলালের শ্বশুর তিনি। মন্টুলালকে (৪০) আজ সোমবার দুপুরে
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের নিবিড়
পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। চিকিৎসকেরা তাঁকে বাঁচিয়ে
রাখার আশা ছেড়ে দিয়েছেন।
গত
রোববার রাতে পুরান ঢাকার কবি নজরুল কলেজের সামনে চলন্ত লেগুনার ওপর
হরতাল-সমর্থকদের ছোড়া পেট্রলবোমার আঘাতে গুরুতর আহত হন মন্টুলাল। পরে তাঁকে
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিত্সকেরা জানান, তাঁর শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে
গেছে।
আইসিইউতে নেওয়ার আগে অবজারভেশন ইউনিটের শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন মন্টু। পাশে পরিবারের সদস্যরা। টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মন্টু স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন নারায়ণগঞ্জে। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে স্বর্ণের দোকানে কারিগরের কাজ করেন তিনি। রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলেন মন্টু। কিন্তু বাড়ি ফেরা হলো না তাঁর। হরতালের আগুনে পুড়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
পরেশ পাল বলেন, ‘হরতালের আগুনে মন্টুর পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো পরিবারের স্বপ্নও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
তিনি প্রথম আলো ডটকমকে জানান, স্ত্রী, মা, দুই ভাই ও ভাইয়ের মেয়ে নিয়ে মন্টুর পরিবার। নিম্নবিত্ত এ পরিবারটি এখন কী করবে, ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। তিনি জানান, ওষুধ কেনার মতো টাকাও তাঁদের কাছে নেই। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পার্থ শংকর পাল জানান, মন্টুলালের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তিনি কোনো আশার আলো দেখছেন না।
একই ঘটনায় আগুনে দগ্ধ মোক্তার (২৬) ও কামাল (৩৫) বার্ন ইউনিটের অবজারভেশন ইউনিটে চিকিত্সা নিচ্ছেন। কামালের শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁর স্ত্রী পলি বেগম জানান, বিক্রমপুরের ছেলে কামাল সদরঘাট এলাকায় দরজির দোকানে কাজ করেন। এই আয়েই চলে তাঁদের সংসার। স্ত্রী পলি, ছেলে আসিফ ও মেয়ে লামিয়াকে নিয়ে চারজনের পরিবার। গ্রামে তিন ভাই, এক বোন ও মায়ের ভরণপোষণও করে আসছিলেন কামাল। দুর্ঘটনার পর পরিবারটির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। পলি বলেন, ‘মাস শেষে বাসাভাড়া, ছেলের স্কুলের বেতন দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হতো। এখন কী করব, ভেবে পাচ্ছি না।’ পলির কান্নার সঙ্গে ঝরে পড়ে ক্ষোভ, ‘আমার স্বামী কেন, আমাদের পরিবারের আর কেউ রাজনীতি করেন না। তাহলে কেন আমার সুখের সংসারে এই দুর্যোগ এল? আমি বা আমার পরিবারের কেউই তো অন্যায় করিনি!’ সংসার ও স্বামীর চিকিত্সার ব্যয় এখন কীভাবে মেটাবেন, তা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন পলি। নারায়ণগঞ্জে একটি কারখানায় কাজ করেন মোক্তার হোসেন। বন্ধুর সঙ্গে সদরঘাট এসেছিলেন। ফেরার পথে বোমার আগুনে পুড়ে গেছে তাঁর শরীরের ১৫ শতাংশ। মোক্তারের বন্ধু সজীবও ছিলেন এই লেগুনায়। তিনি জানান, লেগুনার পেছন দিকে থাকায় তিনি অক্ষত রয়েছেন। বন্ধুর এই দুর্দশায় তিনি এখন অপরাধ বোধে ভুগছেন। ক্ষোভের সঙ্গে সজীব বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার লড়াইয়ে সাধারণ মানুষ কেন দুর্ভোগ পোহাবে? মোক্তারের পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার দায় কে নেবে?’ গত কয়েক দিনের হরতালে বোমা হামলায় আহত ও আগুনে পুড়ে যাওয়া আরও বেশ কয়েকজন বার্ন ইউনিটে চিকিত্সা নিচ্ছেন। গাজীপুরের কিশোর মনির হোসেন ও সাভারের মোস্তাফিজুর রহমান এরই মধ্যে মারা গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে হরতালে পোড়া মানুষ ও তাঁদের স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ বেশ ভারী। চিকিত্সকেরাও এখনকার পোড়ার ধরনে বেশ উদ্বিগ্ন। সেখানকার আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল বলেন, ‘এ ধরনের পোড়া বেশ বিপজ্জনক। যানবাহনে আগুন দেওয়ার পর ভেতর থেকে সঙ্গে সঙ্গে কেউ বের হতে পারে না। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে অনেক ধোঁয়া শরীরের ভেতর ঢোকে। এতে শ্বাসনালিও পুড়ে যায়। তখন জীবনটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।’
হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের প্রশ্ন, রাজনীতির নামে পেট্রলবোমা, ককটেল, গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কোন ধরনের রাজনীতি? এর জবাব কে দেবে—সেটাও তাঁরা জানেন না।
আইসিইউতে নেওয়ার আগে অবজারভেশন ইউনিটের শয্যায় শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন মন্টু। পাশে পরিবারের সদস্যরা। টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মন্টু স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন নারায়ণগঞ্জে। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে স্বর্ণের দোকানে কারিগরের কাজ করেন তিনি। রোববার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলেন মন্টু। কিন্তু বাড়ি ফেরা হলো না তাঁর। হরতালের আগুনে পুড়ে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
পরেশ পাল বলেন, ‘হরতালের আগুনে মন্টুর পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো পরিবারের স্বপ্নও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
তিনি প্রথম আলো ডটকমকে জানান, স্ত্রী, মা, দুই ভাই ও ভাইয়ের মেয়ে নিয়ে মন্টুর পরিবার। নিম্নবিত্ত এ পরিবারটি এখন কী করবে, ভেবে পাচ্ছেন না তিনি। তিনি জানান, ওষুধ কেনার মতো টাকাও তাঁদের কাছে নেই। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা পার্থ শংকর পাল জানান, মন্টুলালের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তিনি কোনো আশার আলো দেখছেন না।
একই ঘটনায় আগুনে দগ্ধ মোক্তার (২৬) ও কামাল (৩৫) বার্ন ইউনিটের অবজারভেশন ইউনিটে চিকিত্সা নিচ্ছেন। কামালের শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁর স্ত্রী পলি বেগম জানান, বিক্রমপুরের ছেলে কামাল সদরঘাট এলাকায় দরজির দোকানে কাজ করেন। এই আয়েই চলে তাঁদের সংসার। স্ত্রী পলি, ছেলে আসিফ ও মেয়ে লামিয়াকে নিয়ে চারজনের পরিবার। গ্রামে তিন ভাই, এক বোন ও মায়ের ভরণপোষণও করে আসছিলেন কামাল। দুর্ঘটনার পর পরিবারটির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। পলি বলেন, ‘মাস শেষে বাসাভাড়া, ছেলের স্কুলের বেতন দিয়ে সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হতো। এখন কী করব, ভেবে পাচ্ছি না।’ পলির কান্নার সঙ্গে ঝরে পড়ে ক্ষোভ, ‘আমার স্বামী কেন, আমাদের পরিবারের আর কেউ রাজনীতি করেন না। তাহলে কেন আমার সুখের সংসারে এই দুর্যোগ এল? আমি বা আমার পরিবারের কেউই তো অন্যায় করিনি!’ সংসার ও স্বামীর চিকিত্সার ব্যয় এখন কীভাবে মেটাবেন, তা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন পলি। নারায়ণগঞ্জে একটি কারখানায় কাজ করেন মোক্তার হোসেন। বন্ধুর সঙ্গে সদরঘাট এসেছিলেন। ফেরার পথে বোমার আগুনে পুড়ে গেছে তাঁর শরীরের ১৫ শতাংশ। মোক্তারের বন্ধু সজীবও ছিলেন এই লেগুনায়। তিনি জানান, লেগুনার পেছন দিকে থাকায় তিনি অক্ষত রয়েছেন। বন্ধুর এই দুর্দশায় তিনি এখন অপরাধ বোধে ভুগছেন। ক্ষোভের সঙ্গে সজীব বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার লড়াইয়ে সাধারণ মানুষ কেন দুর্ভোগ পোহাবে? মোক্তারের পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার দায় কে নেবে?’ গত কয়েক দিনের হরতালে বোমা হামলায় আহত ও আগুনে পুড়ে যাওয়া আরও বেশ কয়েকজন বার্ন ইউনিটে চিকিত্সা নিচ্ছেন। গাজীপুরের কিশোর মনির হোসেন ও সাভারের মোস্তাফিজুর রহমান এরই মধ্যে মারা গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে হরতালে পোড়া মানুষ ও তাঁদের স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ বেশ ভারী। চিকিত্সকেরাও এখনকার পোড়ার ধরনে বেশ উদ্বিগ্ন। সেখানকার আবাসিক সার্জন পার্থ শংকর পাল বলেন, ‘এ ধরনের পোড়া বেশ বিপজ্জনক। যানবাহনে আগুন দেওয়ার পর ভেতর থেকে সঙ্গে সঙ্গে কেউ বের হতে পারে না। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে অনেক ধোঁয়া শরীরের ভেতর ঢোকে। এতে শ্বাসনালিও পুড়ে যায়। তখন জীবনটাই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।’
হাসপাতালে চিকিত্সা নিতে আসা রোগীর স্বজনদের প্রশ্ন, রাজনীতির নামে পেট্রলবোমা, ককটেল, গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কোন ধরনের রাজনীতি? এর জবাব কে দেবে—সেটাও তাঁরা জানেন না।
No comments