ঈদের পরে কি হচ্ছে? by আমীর খসরু

নিশ্চিত মনে, শঙ্কাহীনভাবে ঈদ পালনের মতো অবস্থাও এখন আর নেই। কি হবে ঈদের পরে, কি হবে ২৫ অক্টোবরের পরে, একদলীয় নির্বাচন কি অনুষ্ঠিত হবেই - এমন সব প্রশ্ন সবার মাঝেই।
মানুষ আতঙ্কিত, যারপর নাই চিন্তিত দেশের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। সবার মনে আশার বিপরীতে এমন একটা প্রত্যাশা বাসা বেঁধেছিল যে, নিশ্চয়ই বিদ্যমান সঙ্কটের কোনো একটা সুরাহা হবে। কিন্তু যতোই দিন যাচ্ছে, ততোই সবাই বুঝতে পারছেন - সামনের দিনগুলো হবে ভয়াবহ সংঘাতের, সংঘর্ষের আর সঙ্কটের।

ইচ্ছাকৃতভাবেই সরকারের এদিকে কোনো নজর নেই। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীরা রাষ্ট্রীয় অর্থেই প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের একদলীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে। তারা এমন হুমকিও দিচ্ছেন যে, নির্বাচন বানচাল করা হলে কঠিন কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। অর্থাৎ একদলীয় নির্বাচনের পথেই পুরোপুরি হাঁটছে সরকার। সংলাপের যে উদ্যোগ দেশি-বিদেশি সব পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছিল, তাতে ক্ষমতাসীনদের সামান্যতম সায় নেই। তারা সরাসরি না-ই বলে দিয়েছে। সরকার এখন আগামী একদলীয় নির্বাচনে যাতে ছোটখাটো যতো বেশি দলকে অংশগ্রহণ করানো যায় তার চেষ্টা চালাচ্ছে। এরশাদসহ মহাজোটের কোন দল যাতে নির্বাচন বয়কট না করে তারও চেষ্টা চলছে। চেষ্টা চলছে বিএনপি’র প্রতীকের কাছাকাছি কোন প্রতীক দিয়ে কোন নতুন দল সৃষ্টি করার। ইতোমধ্যে তার একটি নমুনাও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা চাইছে - যতো বেশি সংখ্যক মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নেয়া যায় তার ব্যবস্থা করা। অন্তত পঞ্চাশ শতাংশের বেশি ভোটার ভোট দিয়েছে এমনটা দেখানো এবং সে মতো একটি অবস্থার সৃষ্টি করা। প্রশাসনকে এ লক্ষ্যে অলিখিত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের পরিকল্পনা অনুযায়ী - মধ্য নভেম্বর থেকে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে তাদের নেতাকর্মী সমর্থকসহ যতো বেশি সংখ্যক মানুষকে রাস্তায় নামানো যায় তারও চেষ্টা হচ্ছে। মধ্য নভেম্বর থেকে শুরু করে বিজয় দিবস পর্যন্ত থাকবে যুদ্ধাপরাধ ও স্বাধীনতা বিরোধীদের ইস্যুতে মাঠ গরম এবং রাজপথ দখল। এরপর ওই ‘জোয়ারে’ জানুয়ারিতে নির্বাচনটি সম্পন্ন করা। ক্ষমতাসীনরা চাচ্ছে যাতে রাজপথ তাদের দখলে থাকে। বিরোধী দল যেন কোনো প্রকারে রাজপথে নামতে না পারে। এ লক্ষ্যে একদিকে লোক সমাগম করা, আর অন্যদিকে ঈদের পর থেকেই বিরোধী দল ও মতের ব্যাপারে সরকার কঠিন ও কঠোর ব্যবস্থা নেবে - এমনটি পরিকল্পনা রয়েছে।

সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদী শক্তির কথিত উত্থানের ইস্যুটিকে প্রধান ইস্যু হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশে বিভিন্ন বক্তৃতায় এবং সমাবেশে তিনি ইতোমধ্যে বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আবার

জঙ্গিবাদী, মৌলবাদী শক্তির উত্থান হবে। সরকার আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন প্রভাবশালী দেশের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ জঙ্গিবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদী শক্তিকে যেভাবে দমন করতে পেরেছে অতীতের বিএনপি সরকার বা কোন সরকারই তা পারেনি। কাজেই আওয়ামী লীগ হচ্ছে একটি ‘বেটার অপশন’। বিভিন্ন সূত্র বলছে, ভারত ইতোমধ্যে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ওই দেশটির মনোভাব এমন যে, আগামীতে বাংলাদেশে এমন একটি সরকার থাকা উচিত যারা জঙ্গিবাদ, ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী ও মৌলবাদী শক্তিকে কঠিনভাবে মোকাবেলা করতে পারবে। তাছাড়া একটি ‘ধর্ম নিরপেক্ষ’ শক্তি বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকুক তারা তা-ই চাইছে।

অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোকেও এটা বোঝানোর যাবতীয় চেষ্টা চলছে। তবে প্রভাবশালী দেশগুলোর পক্ষ থেকে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু সরকার এ প্রশ্নে অনঢ়। কারণ সরকার এবং ক্ষমতাসীনরা ভালো করেই জানে - একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে তাদের ভাগ্যে কি ঘটতে পারে। ক্ষমতাসীন ও তাদের মিত্র বর্হিদেশীয় শক্তি নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার কি হাল-হকিকত। এ অবস্থায় সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনে যাওয়া সরকারের জন্য বিপজ্জনক বলেই তারা মনে করছে। কাজেই যে করেই হোক, সরকার একদলীয় নির্বাচন করে বিএনপিসহ অপরাপর শক্তিকে রাজনীতির ময়দান থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। ক্ষমতাসীনদের বিভিন্ন সূত্র বলছে, এটা একটা সামগ্রিক পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়ন করা না যায় তাহলে ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করা হবে।

অন্যদিকে, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি মনে করছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিলে তা হবে তাদের জন্য আত্মঘাতী। যদিও পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়লাভের পরে বিএনপির একটি অংশ যে কোন অবস্থায়ই হোক নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত - এমন একটা বিশ্বাস পোষণ করতো। কিন্তু খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন নয় - এই প্রশ্নে অনঢ় ছিলেন এবং সে ব্যাপারে তিনি এখনো অনঢ় রয়েছেন। বিএনপি চেষ্টা করছে, ঈদের পরে ঢাকা মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে সেখান থেকে স্বল্পমেয়াদী সময়ের আলটিমেটাম দিয়ে রাজপথ দখলে রেখে একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে, যাতে সরকার তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা কিংবা অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা মেনে নিতে বাধ্য হয়। এ লক্ষ্যে কর্মসূচির নানা বিকল্পও চিন্তা করা হচ্ছে। বিএনপিসহ বিরোধী দলের জন্য এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ এ দফায় যদি তারা ব্যর্থ হয় তাহলে পুরো পরিস্থিতিই তাদের আয়ত্বের বাইরে চলে যাবে। বিএনপির নেতারা তাদের অস্তিত্বের এবং বিজয়ের প্রশ্নটি নিয়ে দারুনভাবে চিন্তিত।

সরকার ও বিরোধী দল এমন মুখোমুখি অবস্থানে গেলে দেশ তখন আরো ভয়াবহ সংঘাত, সংঘর্ষের মধ্যে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় সুশীল নামধারী পক্ষ এবং আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী মহল বিকল্প কি পথ বের করা যায় সে বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে অনেক দিন ধরে। দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে, সলা-পরামর্শ চলছে। বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে তাদের মধ্যে চিন্তা-ভাবনা আছে। সামগ্রিক পরিস্থিতিতে তারা হাল ছেড়ে দিয়েছেন এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বিভিন্ন সূত্র বলছে, তাদের মাইনাস-প্লাসের পুরনো তত্ত্ব বাতিল হয়ে গেছে - তাও ভাবার কোনো কারণ নেই। তবে পুরো বিষয়টিই তারা করতে চান বেসামরিক মোড়কে।

পুরো বিষয় বিবেচনায় এখন দুটো বিষয় নিয়ে সবাই চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন। বারে বারে প্রশ্ন উঠছে, একদলীয় নির্বাচন কি আদৌ অনুষ্ঠিত হতে পারবে? আর ঈদের পরেই বা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? মোট কথা, নিশ্চিত ত্ত শঙ্কাহীনভাবে ঈদ উৎসবটি আর আনন্দমুখর হচ্ছে না কারো জন্যই।

amaderbudhbar.com এর সৌজন্যে

No comments

Powered by Blogger.