সংলাপ নিয়ে রশি টানাটানি by কাজী সোহাগ
আর কত লাশ পড়লে, আর কত ধ্বংসজ্ঞ চললে, আর
কত রক্ত ঝরলে বোধোদয় হবে আমাদের রাজনীতিবিদদের? ওই মাঠের খেলোয়াড়দের? আগে
কোনটি-দেশের স্বার্থ নাকি মারামরি, হানাহানি, অনমনীয় অবস্থান? প্রশ্নের শেষ
নেই। স্বস্থির কোন সম্ভাবনাও নেই।
দেশে এত দল এত
দেশপ্রেমিক নেতা-নেত্রী থাকতে আজ কেন আমাদের এই পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে
হচ্ছে? মুখে গণতন্ত্র, কাজে স্বৈরতন্ত্র-একসঙ্গে কি চলতে পারে? নিঃসন্দেহে
পারে না। জনজীবন আজ অতিষ্ঠ। একের পর এক হরতালে ভেঙ্গে পড়েছে দেশের
অর্থনৈতিক অবস্থা। এর মধ্যে ৬ জুন সংসদে পেশ হতে যাচ্ছে মহাজোট সরকারের শেষ
বাজেট। সাধারণ মানুষের কোন মাথাব্যথা নেই এ বাজেট নিয়ে। প্রত্যাশাও নেই।
নেই উচ্ছ্বাস কিংবা আকাঙ্খা। আছে কেবলই হতাশা আর উদ্বেগ। রাজনীতির মাঠে এখন
সবচেয়ে বেশি আলোচিত সংলাপ ইস্য্।ু সবাই এ নিয়ে কথা বলছেন। কাজের কাজ কেউই
করছেন না। মুখের সামনে নেতারা মাইক্রোফোন পেলেই আওড়াচ্ছেন সংলাপের বুলি। এ
নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য, মন্তব্য। কেউ বলছেন লিখিত দিতে, আবার কেউ
বলছেন পরিবেশ তৈরি করতে। সবাই কেবল বলছেন, করছেন না কেউই। এ টানাটানিতে
মাঝে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ
নাগরিকদের। বিদেশিরাও আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রকাশ্যে এটা তারা
বলেছেন। রাজনীতিবিদদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কিংবা অনানুষ্ঠিক বৈঠকে মনে করিয়ে
দিয়েছেন। কোন লাভ হয়েছে? গত এক মাস এই সংলাপ নিয়ে চলছে রশি টানাটানি। আমার
সবচেয়ে বেশি আপত্তি বিদেশীদের পরামর্শ নিয়ে। এই রাজনীতিবিদদের কাছে যদি
সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাহলে সেই গৎবাধা উত্তর পাওয়া যাবে-দেশের
অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়ে কারও হস্তক্ষেপ মেনে নেয়া যাবে না। কারও বক্তব্য দেয়া
কুটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভুত। এসবই শুধু কথার কথা। দেশ যখন স্থিতিশীল থাকে
তখন কিন্তু বিদেশিরা মাথা ঘামান না। গণতন্ত্রের শিক্ষার ঝুলি নিয়ে
রাজনীতিবিদদের সামনে হাজির হন না। এখন আসছেন, বলছেন। আশংকা প্রকাশ করছেন।
কারণ-আমাদের রাজনীবিদদের দৈন্যতা। তারা দেশকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন অজানা
গন্তব্যে। সামনে মরুভূমির মতো ধু ধু বালিকন্া দেখে অনেকের মনে জাগছে নানা
আশংকা। ডালপালা ছড়াচ্ছে গুজব। এমন কথাও শোনা গেছে-দুই দলের ব্যর্থতায় দেশ
যাবে জাতিসংঘের অধীনে। নিয়োগ হবে আন্তর্জাতিক শান্তি রক্ষী বাহিনী। এই
গুজবের আবার সমর্থকও রয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আজ আমাদের এ
ধরনের গুজবও শুনতে হচ্ছে। এতে কি লাভবান হবেন আমাদের দুই নেত্রী? তারা
নিজেদের অবস্থান থেকে একচুলও নড়ছেন না। তারা দেশ নিয়ে রাজনীতি করেন। তবে
দেশের স্বার্থ নিয়ে এই মুহুর্তে ভাবছেন কি? রাজনীতির কর্মী-সমর্থকরা চাতক
পাখির মতো চেয়ে আছেন দুই নেত্রীর মধুর সংলাপ মিলনের। তারা এক হলেই কেবল দেশ
পারে এগিয়ে যেতে। বিশ্বাস না হয় পরীক্ষামুলকভাবে হলেও একবার এটা বাস্তবায়ন
করে দেখুন না কেন। দুই নেত্রী যদি দেশের স্বার্থ নিয়ে একবার আলোচনার
টেবিলে বসেন তাহলে রাজনীতির অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে কোন ধরনের
রক্তপাত ছাড়াই। কারণ আমরা বাংলাদেশিরা দেশকে ভালোবাসি নিজের মায়ের মত করে।
শ্রদ্ধা করি সর্বোচ্চ সম্মান দিয়ে। তাই দেশের যে কোন সেক্টর থেকে যে কোন
ক্ষুদ্র সফলতায় আমরা মাতামাতি করি চোখে পড়ার মতো।
No comments