ফিরে এল ভারত

হতাশায় মাথায় হাত দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন জহির খান। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বলটি ছেড়ে দিয়েছিলেন মার্কাস নর্থ। রিভার্স সুইং করে ভেতরে ঢুকে স্টাম্পের ওপরের দিকের কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় উইকেটকিপারের হাতে। জহির ভেবেছিলেন, বল স্টাম্প ছুঁলেও বেল পড়েনি। কিন্তু সতীর্থদের উল্লাস দেখে একটু পরই বুঝতে পারলেন কী ঘটেছে। একটা মাত্র বেল পড়েছে একটু দেরিতেই। জহিরের হতাশামাখা চেহারায় হঠাৎ হাসি—দৃশ্যটা ছিল দেখার মতো।
এই দৃশ্যটাতেই পেয়ে যাবেন কালকের পুরো দিনের ছবি। মোহালির প্রথম দিনটিকে পরিষ্কার দুটি ভাগে আলাদা করা যায়। প্রথম ভাগটা অস্ট্রেলিয়ার, টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দিনটাকে নিজেদের করে নেওয়ার পথে এগোচ্ছিল রিকি পন্টিংয়ের দল। কিন্তু প্রথমভাগের হতাশা মুছে ভারত এমনভাবেই ফিরে এসেছে যে দ্বিতীয় ভাগটা তো বটেই, দিন শেষেও কিছুটা এগিয়ে রাখতে হচ্ছে তাদেরকেই।
কিছুটা এগিয়ে না বলে বলা যেত ‘দিনটা ভারতেরই’, যদি শেষ বিকেলে জহিরের বলে টিম পেইনের সহজ ক্যাচটি না ছাড়তেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। দিন শেষে অবশ্য ধোনির কাছে এই আক্ষেপের চেয়েও বড় হয়ে থাকবে ম্যাচে ফিরতে পারার স্বস্তি। ক্যাচ ছাড়ার যে ‘দক্ষতা’ দেখিয়েছেন ভারত অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক, দিনটা তাঁদের জন্য হতে পারত পুরোপুরিই আক্ষেপময়। দিনের দ্বিতীয় বলেই জহিরের বলে গালিতে ওয়াটসনের ক্যাচ ছাড়েন বীরেন্দর শেবাগ। পরে প্রজ্ঞান ওঝার বলে এই ওয়াটসনেরই আরও সহজ ক্যাচ ফেলেছেন ধোনি। ০ ও ৩৭ রানে ‘জীবন’ পাওয়া ওয়াটসন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি করে ভারতের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে এখনো উইকেটে। তবে আরেক প্রান্তে অন্তত ভারত ফিরিয়ে দিতে পেরেছে পাঁচ অস্ট্রেলিয়ানকে। ভারতের কৃতিত্বটা বেড়ে যাচ্ছে আরেকটা কারণে। চোট পেয়ে ইশান্ত শর্মা বাইরে চলে যাওয়ায় দিনের অর্ধেকেরও বেশি সময় ভারতকে খেলতে হয়েছে তিন স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে।
ভারতের দুর্দান্ত ‘ফিরে আসা’ একটু আড়াল করে দিয়েছে, না হলে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় থাকার কথা ওয়াটসনের। এমনিতে আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান, তবে কাল সহজাত প্রবৃত্তিটাকে দমিয়েই রেখেছিলেন। ধৈর্যের চূড়ান্ত প্রদর্শনী দেখিয়ে দিন শেষ করেছেন ১০১ রানে অপরাজিত থেকে। পন্টিংয়ের সঙ্গে তাঁর জুটিটার অসহায় মনে হচ্ছিল ভারতকেই। দলীয় ১৩ রানে সাইমন ক্যাটিচ আউট হওয়ার পর ১৪১ রানের জুটি। ভারতের মাটিতে রান না পাওয়ার আক্ষেপ মুছে দেওয়ার মিশনে আসা অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক খেলেছেন দুর্দান্ত, কিন্তু সুরেশ রায়নার নিখুঁত থ্রো শেষ করে দেয় তাঁর সম্ভাবনাময় ইনিংস। ইশান্তের বলে একবার উইকেটের পেছনে ধরা পড়েও অবশ্য বেঁচে গেছেন নো বল হওয়ায়।
অধিনায়ককে হারানোর পর নিয়ন্ত্রণটাও হারাতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। সেই দায়ও নিজেদেরই নিতে হবে তাঁদের। অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যানরা হঠাৎ করেই নিজেদের এতটাই গুটিয়ে নিলেন যে, মন্থর হতে হতে একপর্যায়ে প্রায় থেমেই গেল রানের গতি। প্রথম সেশনে যেখানে ২৮ ওভারে রান এসেছিল ১০১, পরের সেশনে সেখানে ২৯ ওভারে ৭৮, শেষ সেশনে ৩৩ ওভারে ৪৫! তাতে লাভ কিছু হয়নি। রানও ওঠেনি, উইকেটও পড়েছে। জহিরের রিভার্স সুইংয়ে শেষ বিকেলে হারিয়েছে তারা দুই বাঁহাতি মাইক হাসি ও নর্থকে।
‘জীবন’ পাওয়া ওয়াটসন আজ এলোমেলো ইনিংসটা গোছাতে চাইবেন ‘জীবন’ পাওয়া আরেক ব্যাটসম্যান পেইনকে নিয়ে।

No comments

Powered by Blogger.