আওয়ামী লীগ-বিএনপি দ্বন্দ্ব নিরসনের পথ -প্রতিক্রিয়া by মতলুব আনাম
৫ ডিসেম্বর ২০০৯ প্রথম আলোয় এম এম আকাশের ‘আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি: দ্বন্দ্ব নিরসনের পথ কী?’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ ছাপা হয়েছে। লেখক প্রথমে আধুনিক বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করে বলেছেন, উন্নত বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে বর্তমানে একটি দ্বিদলীয় ব্যবস্থাই প্রধান ধরন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তাঁর মতে, এসব রাষ্ট্রে দুটি দলই মৌলিক ধনতান্ত্রিক আদর্শের অনুসারী হয়েও রাষ্ট্রক্ষমতার প্রশ্নে বিভক্ত। একটি দল নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় গেলে অন্য দলটি প্রধান বিরোধী দলের ভূূমিকায় থাকে। বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করে না। ক্ষমতায় যেতে না পারলে তারা কারণে-অকারণে ১৯৯১ সালে স্বৈরাচারমুক্ত হওয়ার পর থেকেই সংসদ বর্জন করে চলেছে। তারা নির্বাচিত সরকারকে টেনে-হিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে পাঁচ বছর ব্যস্ত থাকে। সরকারও বিরোধী দলের প্রচেষ্টা ব্যর্থ করতেই পাঁচটি বছর ব্যয় করে। দেশে উন্নয়নের কাজ হয় না।
এম এম আকাশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায় হিসেবে দুটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন। এক. সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী শক্তিগুলো থেকে মুক্ত হয়ে দেশে একটি ভদ্র দ্বিদলীয় বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। দুই. জামায়াত ও স্বৈরাচারের বিচ্ছিন্নতা এবং পরাজয়ের কারণে বিএনপির শক্তিহানি, ক্রমবিলুপ্তি ও খণ্ডায়ন। তাঁর মতে, তখন দেশে একমাত্র দক্ষিণপন্থী দল হবে আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেরই কোনো না কোনো দল। অসংখ্য পরস্পরবিরোধী শক্তির টালমাটাল ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মাধ্যমে আবার বিশৃঙ্খলাও ফিরে আসতে পারে। বিশৃঙ্খলার কথাটা তাঁর সম্ভবত মনে হয়েছে এক-এগারোর পরবর্তী সার্বিক বিশৃঙ্খলা দেখে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায় খোঁজার আগে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলো কেন, তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া নাম করার মতো আর কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। যে কয়টা রাজনৈতিক দল ছিল, সেগুলো ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে ভোটে প্রায় নিঃশেষ হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সব ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করল। তারপর ১৯৭৫ সালে একমাত্র রাজনৈতিক জাতীয় দল, ‘বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ গঠিত হলো। রাজনীতি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জানানো হলো, রাজনীতি করতে হলে জাতীয় দলের সদস্য হতে হবে। বাকশালের গঠনতন্ত্রের ষষ্ঠ ধারার ১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘সদস্যপদ দানের ক্ষমতা জাতীয় দলের চেয়ারম্যানের উপর ন্যস্ত থাকিবে।’ জাতীয় দলের সদস্য হতে না পারলে চাকরি বা সংসদ সদস্যপদ থাকবে না।
এমন ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একদল অসন্তুষ্ট সেনাসদস্য কর্তৃক বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। জাতীয় দল বিলীন হয়ে যায়। আওয়ামী লীগেরই নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তাঁর মন্ত্রিসভার সব সদস্যই বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি সংসদও ভাঙেননি। তিনি সম্ভবত সংসদকেই ক্ষমতার উত্স করতে চেয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর সাহায্যে ক্ষমতা দখল করলেও তিনি যতদিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ততদিন চেষ্টা করেছেন, যাতে আওয়ামী লীগ তাঁকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ ক্ষণকালের জন্য ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী-সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ ভেঙে দেন। ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি যখন ক্ষমতায় বসেন, তখন তাঁর কোনো রাজনৈতিক বেশ ছিল না। দেশব্যাপী ছিল বিশৃঙ্খলা। খন্দকার মোশতাকের সামরিক আইন জারি করার ফলে সব রাজনৈতিক দল বাতিল হয়ে যায়। তাই জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে দলবিধি অর্ডিন্যান্স জারি করে সরকারের কাছ থেকে দল গঠনের অনুমোদন নেওয়ার ঘোষণা দেন। জিয়া চেয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ তাঁকে দলে গ্রহণ করুক।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর স্বভাবতই আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সংকট ছিল। সম্ভবত জিয়া নেতৃত্বের সেই শূন্যপদ লাভে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাঁকে দলে নেয়নি। অনেকেই মনে করেন, সে সময় আওয়ামী লীগ জিয়াকে গ্রহণ করলে বিএনপির জন্ম হতো না এবং পরবর্তী সময়ে দলটি আওয়ামী লীগবিরোধী বিরাট শক্তিতে পরিণত হতো না। আওয়ামী লীগে জায়গা না পেয়ে জিয়া প্রথমে বিচারপতি সাত্তারের মাধ্যমে জাগদল এবং পরে ১৯৭৮ সালের ৩১ আগস্ট নিজ নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। জেনারেল জিয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব স্থায়ী করার জন্যই সম্ভবত শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সালে দেশে আসার অনুমতি দেন। তবে তাঁর সঙ্গে রাজনীতি করা তাঁর হয়ে ওঠেনি। শেখ হাসিনা দেশে এলেন, আর ওই মাসেই জেনারেল জিয়া চট্টগ্রামে ক্ষমতালোভী একদল সেনাসদস্য কর্তৃক নিহত হলেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য এম এম আকাশের প্রথম উপায় হিসেবে উপস্থাপিত সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী শক্তিমুক্ত একটি ভদ্র দ্বিদলীয় বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। মহাজোটে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উপস্থিতিই তার প্রমাণ। দ্বিতীয় উপায় তথা জামায়াত ও স্বৈরাচারের বিচ্ছিন্নতা ও পরাজয়ের কারণে বিএনপির শক্তিহানি ক্রমবিলুপ্তি ও খণ্ডায়ন—তার সম্ভাবনাও কম। বিএনপির সদ্যসমাপ্ত পঞ্চম কাউন্সিলে বিপুল জন-উপস্থিতিই এর প্রমাণ। বর্তমানের মহাজোটে স্বৈরাচার আরও বেশি করে ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার জন্য এখন হুমকিও দিচ্ছেন। সর্বশেষ হুমকি হচ্ছে, ক্ষমতা না পেলে আগামী জানুয়ারি থেকে ভিন্ন পথ ও মত অবলম্বন করার ঘোষণা। ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল জামায়াতে ইসলামী। এবারের নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করেছিল। এ দেশে ভোটের রাজনীতি চলছে। জামায়াতের ভোটের জন্য বড় দুই দল সর্বদাই তাদের সমর্থন চায়। অপর দল যাতে জামায়াতের সমর্থন নিতে না পারে, সে জন্য আগেভাগেই জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে। মন্ত্রিত্বও দেয়।
বর্তমানে জাতীয়তাবাদী শক্তি অনেক দলে-উপদলে বিভক্ত। এম এম আকাশের ধারণা মতো বিএনপির যদি ক্রমবিলুপ্তি ঘটে এবং সে জায়গা যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো অপেক্ষাকৃত রেডিক্যাল রাজনৈতিক দল নেয়, তবে এর অর্থ হবে, আওয়ামী লীগে ভাঙন। সে সম্ভাবনা খুব কম। দুই দলের দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য হাসিনা-খালেদার সদিচ্ছাই যথেষ্ট। জনগণ জানে, বাংলাদেশের উন্নতি এই দুই দলের মধ্যে মিলনেই সম্ভব। দুই দলের সমঝোতাই স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছ থেকে মুক্তির উপায়।
মতলুব আনাম: রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
এম এম আকাশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায় হিসেবে দুটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন। এক. সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী শক্তিগুলো থেকে মুক্ত হয়ে দেশে একটি ভদ্র দ্বিদলীয় বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। দুই. জামায়াত ও স্বৈরাচারের বিচ্ছিন্নতা এবং পরাজয়ের কারণে বিএনপির শক্তিহানি, ক্রমবিলুপ্তি ও খণ্ডায়ন। তাঁর মতে, তখন দেশে একমাত্র দক্ষিণপন্থী দল হবে আওয়ামী লীগ এবং প্রধান বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষেরই কোনো না কোনো দল। অসংখ্য পরস্পরবিরোধী শক্তির টালমাটাল ক্রিয়া-বিক্রিয়ার মাধ্যমে আবার বিশৃঙ্খলাও ফিরে আসতে পারে। বিশৃঙ্খলার কথাটা তাঁর সম্ভবত মনে হয়েছে এক-এগারোর পরবর্তী সার্বিক বিশৃঙ্খলা দেখে।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বন্দ্ব নিরসনের উপায় খোঁজার আগে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হলো কেন, তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ সৃষ্টির সময় দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া নাম করার মতো আর কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। যে কয়টা রাজনৈতিক দল ছিল, সেগুলো ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে ভোটে প্রায় নিঃশেষ হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে সব ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করল। তারপর ১৯৭৫ সালে একমাত্র রাজনৈতিক জাতীয় দল, ‘বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ গঠিত হলো। রাজনীতি করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জানানো হলো, রাজনীতি করতে হলে জাতীয় দলের সদস্য হতে হবে। বাকশালের গঠনতন্ত্রের ষষ্ঠ ধারার ১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ‘সদস্যপদ দানের ক্ষমতা জাতীয় দলের চেয়ারম্যানের উপর ন্যস্ত থাকিবে।’ জাতীয় দলের সদস্য হতে না পারলে চাকরি বা সংসদ সদস্যপদ থাকবে না।
এমন ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একদল অসন্তুষ্ট সেনাসদস্য কর্তৃক বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন। জাতীয় দল বিলীন হয়ে যায়। আওয়ামী লীগেরই নেতা খন্দকার মোশতাক আহমদ দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তাঁর মন্ত্রিসভার সব সদস্যই বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি সংসদও ভাঙেননি। তিনি সম্ভবত সংসদকেই ক্ষমতার উত্স করতে চেয়েছিলেন। সেনাবাহিনীর সাহায্যে ক্ষমতা দখল করলেও তিনি যতদিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন, ততদিন চেষ্টা করেছেন, যাতে আওয়ামী লীগ তাঁকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফ ক্ষণকালের জন্য ক্ষমতা দখল করে আওয়ামী-সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ ভেঙে দেন। ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। তিনি যখন ক্ষমতায় বসেন, তখন তাঁর কোনো রাজনৈতিক বেশ ছিল না। দেশব্যাপী ছিল বিশৃঙ্খলা। খন্দকার মোশতাকের সামরিক আইন জারি করার ফলে সব রাজনৈতিক দল বাতিল হয়ে যায়। তাই জিয়াউর রহমান ১৯৭৬ সালে দলবিধি অর্ডিন্যান্স জারি করে সরকারের কাছ থেকে দল গঠনের অনুমোদন নেওয়ার ঘোষণা দেন। জিয়া চেয়েছিলেন, আওয়ামী লীগ তাঁকে দলে গ্রহণ করুক।
বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর স্বভাবতই আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সংকট ছিল। সম্ভবত জিয়া নেতৃত্বের সেই শূন্যপদ লাভে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাঁকে দলে নেয়নি। অনেকেই মনে করেন, সে সময় আওয়ামী লীগ জিয়াকে গ্রহণ করলে বিএনপির জন্ম হতো না এবং পরবর্তী সময়ে দলটি আওয়ামী লীগবিরোধী বিরাট শক্তিতে পরিণত হতো না। আওয়ামী লীগে জায়গা না পেয়ে জিয়া প্রথমে বিচারপতি সাত্তারের মাধ্যমে জাগদল এবং পরে ১৯৭৮ সালের ৩১ আগস্ট নিজ নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন। জেনারেল জিয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব স্থায়ী করার জন্যই সম্ভবত শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সালে দেশে আসার অনুমতি দেন। তবে তাঁর সঙ্গে রাজনীতি করা তাঁর হয়ে ওঠেনি। শেখ হাসিনা দেশে এলেন, আর ওই মাসেই জেনারেল জিয়া চট্টগ্রামে ক্ষমতালোভী একদল সেনাসদস্য কর্তৃক নিহত হলেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যকার দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য এম এম আকাশের প্রথম উপায় হিসেবে উপস্থাপিত সাম্প্রদায়িক ও স্বৈরাচারী শক্তিমুক্ত একটি ভদ্র দ্বিদলীয় বুর্জোয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। মহাজোটে স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উপস্থিতিই তার প্রমাণ। দ্বিতীয় উপায় তথা জামায়াত ও স্বৈরাচারের বিচ্ছিন্নতা ও পরাজয়ের কারণে বিএনপির শক্তিহানি ক্রমবিলুপ্তি ও খণ্ডায়ন—তার সম্ভাবনাও কম। বিএনপির সদ্যসমাপ্ত পঞ্চম কাউন্সিলে বিপুল জন-উপস্থিতিই এর প্রমাণ। বর্তমানের মহাজোটে স্বৈরাচার আরও বেশি করে ক্ষমতার ভাগ পাওয়ার জন্য এখন হুমকিও দিচ্ছেন। সর্বশেষ হুমকি হচ্ছে, ক্ষমতা না পেলে আগামী জানুয়ারি থেকে ভিন্ন পথ ও মত অবলম্বন করার ঘোষণা। ১৯৯৫ সালে বিএনপি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল জামায়াতে ইসলামী। এবারের নির্বাচনে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করেছিল। এ দেশে ভোটের রাজনীতি চলছে। জামায়াতের ভোটের জন্য বড় দুই দল সর্বদাই তাদের সমর্থন চায়। অপর দল যাতে জামায়াতের সমর্থন নিতে না পারে, সে জন্য আগেভাগেই জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করে। মন্ত্রিত্বও দেয়।
বর্তমানে জাতীয়তাবাদী শক্তি অনেক দলে-উপদলে বিভক্ত। এম এম আকাশের ধারণা মতো বিএনপির যদি ক্রমবিলুপ্তি ঘটে এবং সে জায়গা যদি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো অপেক্ষাকৃত রেডিক্যাল রাজনৈতিক দল নেয়, তবে এর অর্থ হবে, আওয়ামী লীগে ভাঙন। সে সম্ভাবনা খুব কম। দুই দলের দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য হাসিনা-খালেদার সদিচ্ছাই যথেষ্ট। জনগণ জানে, বাংলাদেশের উন্নতি এই দুই দলের মধ্যে মিলনেই সম্ভব। দুই দলের সমঝোতাই স্বৈরাচার ও সাম্প্রদায়িক শক্তির কাছ থেকে মুক্তির উপায়।
মতলুব আনাম: রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
No comments