ফিলিস্তিনিদের আশঙ্কা: গাজার মতো পরিস্থিতি হবে পশ্চিম তীরে
গাজার পর পশ্চিমতীর। অধিবাসীদের মধ্যে নীরব এক আতঙ্ক। ভয়ে আছেন তারা। গাজার মতো সেখান থেকে ফিলিস্তিনিদের উৎখাতের পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। বর্তমানে কার্যত ফাঁকা করে ফেলা হয়েছে জেনিন শরনার্থী শিবির। এর বড় এলাকা বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করেছে ইসরাইল। প্রশস্ত জনাকীর্ণ ওই এলাকার মধ্য দিয়ে তারা রাস্তা তৈরি করছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী সেখানে দীর্ঘ মেয়াদে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দীর্ঘ ১৫ মাসের যুদ্ধের পর য্দ্ধুবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ও ইসরাইল। তবে ওই চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার একদিন পরই পশ্চিমতীরে অপারেশন পরিচালনা শুরু করে ইসরাইল। এতে আতঙ্কিত হয়ে পশ্চিমতীরের তুলকারেম শহর ও জেনিনের কমপক্ষে ৪০ হাজার ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন। জেনিন পৌরসভার মুখপাত্র বশির মাতাহেন বলেন, জাবালিয়াতে যা হয়েছে তারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে পশ্চিমতীরের জেনিনে। এসময় তিনি গাজার উত্তারঞ্চলের একটি শরণার্থী শিবিরের কথা উল্লেখ করেন, যা ১ সপ্তাহের তিক্ত লড়াইয়ের পর ইসরাইলি সেনাবাহিনী ফাঁকা করে ফেলে। ওই শরণার্থী শিবির বর্তমানে বসবাসের অযোগ্য। তিনি বলেন, বাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংসের জন্য কমপক্ষে ১২টি বুলডোজার ব্যবহার করা হয় সেখানে। ১৯৪৮ সালের ‘নাকবা’ বা মহাবিপর্যয়ের পর ঘরছাড়া ফিলিস্তিনিদের বসবাসের জায়গা হয় ওই শরণার্থী শিবিরে। তিনি আরো বলেন, সেখানে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারদের একটি টিম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা দীর্ঘ মেয়াদে সেখানে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রায় ১ একরের মতো জায়গাজুড়ে তারা পানির ট্যাংক ও জেনারেটর এনে রেখেছে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর তরফ থেকে অবশ্য এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে রোববার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ সেনাদেরকে দীর্ঘ মেয়াদে সেখানে অবস্থানের আদেশ দেন। কাৎজ বলেন, ওই ক্যাম্প দীর্ঘ সময়ের জন্য ফাঁকা করা হয়েছে। সেখানে যারা বসবাস করতেন তাদের ফিরে আসার কোনো অনুমতি নেই। ২০ বছর আগে হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদার পর পশ্চিমতীরের উত্তরাঞ্চলে চলা মাসব্যাপী ইসরাইলি অপারেশন নজিরবিহীন এক ঘটনা। ড্রোন, হেলিকপ্টারসহ ইসরাইলি সেনারা পশ্চিমতীরে আক্রমণ চালায়। এছাড়া কয়েকযুগের মধ্যে প্রথমবার ভারী ট্যাংক নিয়ে হামলা চালায় তারা। এ বিষয়ে সাবেক সামরিক গোয়েন্দা মিকায়েল মিলশটেইন বলেন, তুলকারেম ও জেনিনে উচ্ছেদ চলমান আছে। তিনি বলেন, আমরা জানি না তাদের কৌশল কী? তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই ইতিপূর্বে পশ্চিমতীরে এমন কোনো পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও ইরান সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী দমনের উদ্দেশে ওই অপারেশন পরিচালনা করা হয় বলে দাবি ইসরাইলের। তারা দাবি করে- কয়েক যুগ ধরে শরণার্থী শিবিরে ওই সব গোষ্ঠীর সদস্যদের বসবাস। তবে ফিলিস্তিনিরা বলছেন- তাদের বসতবাড়ি ধ্বংস করে ওই জায়গা বসবাসের অনুপযোগী করাই ইসরাইলের উদ্দেশ্য। ৮৫ বছর বয়সী হাসান-আলি-কাতিব, যিনি ২০ জন সন্তান নিয়ে জেনিনের শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছেন, তিনি বলেন- ইসরাইল, শরণার্থী শিবির ও সেখানকার স্মৃতি মুছে ফেলতে চায়। ইসরাইল ইতিমধ্যে ত্রাণ সংস্থাকে (ইউএনডব্লিউআরএ) দুর্বল করতে প্রচারণা চালিয়েছে। পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত এর সাবেক সদর দপ্তর থেকে এটিকে নিষিদ্ধ করা ও জেনিনে অপারেশন পরিচালনা স্থগিত করতে আদেশ দেয় দেশটি। ইউএনআরডব্লিউএ’র মুখপাত্র জুলিয়েট টওমা বলেন, আমরা জানি না ইসরাইলের আসল উদ্দেশ্য কী? তবে আমরা এটা জানি আমাদের শরণার্থী শিবির থেকে অনেক বেশি মানুষকে উৎখাত করা হয়েছে।

No comments