আশঙ্কা বাড়াচ্ছে মার্কিন শুল্ক, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার মধ্যে শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনে নজর দিচ্ছে ভারত ও ইইউ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বারবার ইইউর সাথে বাণিজ্য যুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন যদি না এই ব্লক আরও আমেরিকান তেল ও গ্যাস কেনে। ভারতের উচ্চ শুল্কের সমালোচনাও শোনা গেছে ট্রাম্পের মুখে। এই মাসের শুরুতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওয়াশিংটন সফর করেন, সেই সময় উভয়পক্ষ দ্বিমুখী বাণিজ্য সম্প্রসারণের বিষয়ে সম্মত হয়। কিন্তু ট্রাম্পের স্বভাবের কারণে, বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে দিল্লির উচিত তার অংশীদারিত্বকে একজায়গায় না আটকে রেখে বৈচিত্র্যময় করা।
কুমার বলেন, সাম্প্রতিককালে ভূ-রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে বিশ্বব্যাপী দৃশ্যপট বদলেছে। কোভিড-১৯ মহামারীর পর শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন ও হামাসের সাথে ইসরায়েলের যুদ্ধ। অধ্যাপক মোহন কুমারের কথায়, 'যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের সম্পর্ক ভালোভাবেই শুরু হয়েছে, তবে তাদের বৈশ্বিক সম্পর্ক আরও উন্নত করতে হবে এবং কৌশলগত সমন্বয়ের জন্য ইইউর দিকে তাকাতে হবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে একটি মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে হবে। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব একই দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত। তবে যে গতিতে সেই কাজ এগোচ্ছে তাতে হতাশা প্রকাশ করেছেন অধ্যাপক কুমার। শক্তিশালী বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা হলো আগামী বছর থেকে শুরু হওয়া কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকানিজম বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ইইউর পরিকল্পনা, যা কার্বনসমৃদ্ধ পণ্য উৎপাদনের সময় নির্গত কার্বনের উপর চার্জ আরোপ করবে।
ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা এই পরিকল্পনাটিকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন, কারণ দেশটি তার ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা মেটাতে কয়লা এবং জীবাশ্ম জ্বালানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যদিও তার পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিচাহিদা উল্লেখযোগ্যভাবে প্রসারিত হয়েছে। কুমার বলেন, ইইউ ভারতকে নির্গমন কমাতে আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু ব্লকের আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা ছাড়া এটি সম্ভব হতে পারে না কারণ দিল্লির ৫০ কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারত, ক্রমবর্ধমান খরচ সত্ত্বেও পরিবেশ-বান্ধব ইস্পাত তৈরি করে এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য চার্জিং অবকাঠামোর সমন্বয় সাধনের ক্ষেত্রে ইইউ-এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পরিবেশগত মান পূরণ করতে চেয়েছে। কুমার ইইউকে কার্বন নির্গমন সম্পর্কিত চার্জের বিষয়ে ভারতকে আরও সময় দেওয়ার আহ্বান জানান যাতে একটি এফটিএ দ্রুত সম্পন্ন করা যায় ।
অন্যরা বলেছেন যে, ভারত এবং ইইউ জলবায়ু লক্ষ্যগুলির উপর মনোযোগ দিয়ে তাদের অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করার একটি অনন্য সুযোগ পেয়েছে, যা গবেষণা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে প্রসারিত করতে পারে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রর পিছিয়ে থাকার কারণে।
ক্লিন টেকনোলজিতে সম্ভাব্য সহযোগিতা
বুলগেরিয়ার প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী জুলিয়ান পপভ উল্লেখ করেছেন যে, নবায়নযোগ্য জ্বালানির খরচ কমে যাওয়ার ফলে এটি কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় সস্তা হয়ে উঠেছে, যা ভারতকে ক্লিন এনার্জির দিকে ঝুঁকতে উৎসাহ প্রদান করে।
জুলিয়ান বলেন, ‘আমাদের কেবল বাণিজ্যকে উৎসাহিত করলে চলবে না, শিল্প বিনিয়োগকেও উৎসাহিত করতে হবে। বিশেষ করে ক্লিন এনার্জিতে। এটিই ভবিষ্যৎ যার মধ্যে ইইউ এবং ভারত উভয়ের স্বার্থ নিহিত।’
তিনি আরও বলেন, ক্লিন এনার্জিতে চীন যে দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করেছে, তার সাথে তাল মেলাতে ভারত এবং ইইউর মধ্যে সহযোগিতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। ভারতের ইস্পাত মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব অরুণা শর্মা একমত পোষণ করেন যে, গবেষণা ও উন্নয়নে সহযোগিতার সম্ভাবনা অপরিসীম। কারণ ভারতে বিপুল সংখ্যক প্রতিভা রয়েছে যা এই দেশকে প্রযুক্তিগত পরিষেবার জন্য একটি বিশ্বব্যাপী কেন্দ্র করে তুলেছে।
তিনি বলেন, এই সহযোগিতা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো অগ্রণী প্রযুক্তিতেও প্রসারিত হতে পারে। শর্মার মতে, ইইউ ভারতে শিল্প যন্ত্রপাতির একটি প্রধান সরবরাহকারী। আসন্ন আলোচনায় উভয় পক্ষের মধ্যে বৃহত্তর সমন্বয়কে উৎসাহিত করার জন্য পরিবেশগত পণ্যের সরবরাহ সম্প্রসারণের উপর আলোকপাত করা হতে পারে। হাইড্রোজেন জ্বালানির মতো পণ্য তৈরি করা যেতে পারে। ভারতে সেই মস্তিষ্ক রয়েছে। ভারত একটি সফটওয়্যার হাব, অন্যদিকে চীন একটি হার্ডওয়্যার হাব।
সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
No comments