গাজীপুরে ফ্যাক্টর মান্নান-আজমত by কাফি কামাল
গাজীপুর
সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলই মেয়র পদে এনেছে পরিবর্তন।
অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দিয়েছে বিএনপি। অন্যদিকে তারুণ্যের ওপর ভরসা রেখেছে
আওয়ামী লীগ। গাজীপুরের বর্তমান মেয়র বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান
প্রফেসর এমএ মান্নান। স্বাভাবিকভাবে প্রার্থী হিসেবে তিনিই ছিলেন প্রথম
পছন্দ। কিন্তু বারবার কারাভোগের কারণে মেয়র মান্নান শারীরিক অসুস্থ হয়ে
পড়ায় বিএনপিকে বেছে নিতে হয়েছে বিকল্প। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন
বোর্ডকে চুলের ওপর দিয়ে হাঁটতে হয়েছে প্রার্থী বাছাইয়ে। একদিকে অভিজ্ঞ ও
সবমহলে গ্রহণযোগ্য আজমত উল্লাহ, অন্যদিকে তারুণ্যের প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর
আলম। বিগত নির্বাচনে লক্ষাধিক ভোটে পরাজিত আজমতের চেয়ে হাল আমলের
প্রভাবশালী জাহাঙ্গীরকেই বেছে নেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র দুই
পুরনো প্রার্থীই মনোনয়ন চেয়েছিলেন এবারের নির্বাচনে। শারীরিক অসুস্থতা
উপেক্ষা করে দলের মনোনয়ন বোর্ডেও হাজির হয়েছিলেন মেয়র মান্নান। বর্ষীয়ান এ
দুই নেতা মনোনয়ন না পাওয়ায় গাজীপুরে মান্নান অনুসারী বিএনপি নেতাকর্মী ও
আজমত অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হতাশ হন। তবে দুই বর্ষীয়ান নেতাই মেনে
নিয়েছেন দলের সিদ্ধান্ত। প্রার্থিতায় পরিবর্তন এলেও গাজীপুরের সিটি
নির্বাচনে অন্যতম ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে বর্তমান মেয়র এমএ মান্নান ও
আওয়ামী লীগ নেতা আজমত উল্লাহর ভূমিকা। অতীতে নানা নির্বাচনে কাউলতিয়া ইউপি
চেয়ারম্যান, সদর আসনের এমপি, চারদলীয় জোট সরকারের মন্ত্রী এবং সর্বশেষ
গাজীপুর সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন এমএ মান্নান। ফলে গাজীপুর সিটির
উত্তরাংশের সাবেক পৌর এলাকাসহ কাউলতিয়া ইউনিয়নে ব্যাপক প্রভাব এবং
জনপ্রিয়তা রয়েছে তার।
ওই এলাকায় তার নিজস্ব ভোটব্যাংক থাকার প্রমাণ দিয়েছেন বিগত নির্বাচনে। এছাড়া মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে বারবার কারাগারে পাঠানো এবং মেয়রের দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটানোর কারণে তার প্রতি সহানুভূতি রয়েছে নগরবাসীর। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে প্রথম ব্যাচের ছাত্র আজমত উল্লাহ খানের রাজনীতি এক সুতোয় গাঁথা। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন সক্রিয়ভাবে। গাজীপুরের প্রতিটি অলি-গলি ও রাজপথ ঘুরে সংগঠনকে গড়ে তুলেছেন তিনি। তরুণ বয়সে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন পরপর তিনবার। নগরীর প্রতিটি পাড়া ও অলিগলিতে আছে তার অবাধ বিচরণ। তিনবার গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী এ নেতা বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। সর্বোপরি বিগত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তিনি। ফলে নির্বাচনে প্রবীণ এ দুই নেতার অনুসারীরা পুরোমাত্রায় সক্রিয় না হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোটের চিত্রে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের প্রার্থীর জন্যই তাদের পূর্বসূরিদের সমর্থন আদায় জরুরি। এ ক্ষেত্রে যিনি সফল হবেন বিজয়ী হওয়ার সুযোগ বাড়বে তার। এদিকে মেয়র পদে থাকায় নির্বাচনী বিধির কারণে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারছেন না মেয়র মান্নান। তবে তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত বিএনপি নেতারা দলের নানা কমিটিতে যুক্ত হয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আজমত উল্লাহকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধান এজেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি সে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে এই দুই নেতাকে নিয়ে এখনও নানা গুঞ্জন চলছে রাজনৈতিক মহলে। তাদের আন্তরিকতা এবং তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা নিয়ে আলোচনা থামেনি। বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। আজমত উল্লাহ নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় হলেও নির্বাচনী আচরণ বিধির কারণে মেয়র মান্নান একদম চুপ।
গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক: মান্নান
নির্বাচনী বিধির কারণে কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়ার সুযোগ নেই গাজীপুরের মেয়র এমএ মান্নানের। নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন এড়াতে ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন তিনি। প্রচারণায় সরাসরি অংশ নিতে বাধা থাকলেও অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনার ক্ষেত্রে সে বাধা নেই। কিন্তু দিনের বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে তার মোবাইল ফোন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি দলীয় নেতাকর্মী বা গণমাধ্যম কারও সঙ্গে কথা বলেন না। কয়েকদিন ধরে অব্যাহত চেষ্টার পর গতকাল দৈনিক মানবজমিন-এর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মেয়র মান্নান বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আমার কোনো ভূমিকাই নেই। নির্বাচনী বিধির কারণে কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগও নেই। আমি চাই, গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, নগরবাসী ভোট দেয়ার সুযোগ পাক। নির্বাচনের আগে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। ক্ষমা করবেন। তার ঘনিষ্ঠ নেতা বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে মেয়র হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ ও গণমাধ্যমে কথা বলতে পারছেন না এমএ মান্নান। তবে তার লোকজন বসে নেই। দলের তরফে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেভাবে তারা কাজ করছেন। বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, জেলা বিএনপি নেতাদের মধ্যে মেয়র মান্নানের অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয়। বিশেষ করে টঙ্গীতে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, গাজীপুর সদর থানা বিএনপির সভাপতি নাজিম আহমেদ চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক বশির আহমেদ বাচ্চু দিনরাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
দলের অর্পিত দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করব: আজমত
আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্ব পেয়েছেন আজমত উল্লাহ। যিনি বিগত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী করেছিলেন। আসন্ন নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলের মনোনয়ন, প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণাসহ সার্বিক বিষয়ে তিনি দৈনিক মানবজমিন-এর কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর এখন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তার ভূমিকা কেমন হবে- এ প্রশ্নে আজমত উল্লাহ বলেন, আমি মনোনয়ন পেলে যেভাবে কাজ করতাম, এখনও তেমনটিই করব। এ অঙ্গীকার আমি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সামনে করে এসেছি। সে অনুযায়ীই দায়িত্ব পালন করছি। তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম, কিন্তু দল যাকে সুইটেবল মনে করেছে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। নেত্রীর নেতৃত্বে আমাদের দলের মনোনয়ন বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সমর্থন আছে। সেটা আমি মেনে নিয়েছি। আজমত উল্লাহ বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, দলের সাধারণ সদস্য হলে দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে একটি অঙ্গীকার করি। দলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও আনুগত্য রয়েছে, তাই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আজমত উল্লাহ বলেন, আমাকে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্ব দিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব। আমি সে দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে দলের সমন্বিত প্রচারণা জোরদার না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আজমত উল্লাহ বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নামেনি বা জেলা আওয়ামী লীগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে না- এসব আসলে অপপ্রচার। আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই এমপি বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। নির্বাচনী আচরণবিধি মান্য করার কারণে তারা গণসংযোগে নামছেন না। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের নিয়মিত পরামর্শ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। আহমদ হোসেন, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, অসীম কুমার উকিলসহ শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা প্রচারণার মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আমাদের দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কোনভাবেই যেন নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘিত না হয়। দেখুন, গাজীপুরের মেয়র বিএনপি নেতা এমএ মান্নানও কিন্তু এ বিধির কারণে প্রচারণার মাঠে নামতে পারেননি। গাজীপুরের রাজনীতিতে সরকার পরিবারের প্রভাব ও বিএনপি’র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের অভিজ্ঞতার বিপরীতে আওয়ামী লীগ দলীয় তরুণ প্রার্থী ভোটের মাঠে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন এমন প্রশ্ন রয়েছে নগরজুড়ে। এ ব্যাপারে আজমত উল্লাহ বলেন, জাহাঙ্গীর আলম তারুণ্যের প্রতিনিধি। এছাড়া সিটি করপোরেশনের মধ্যেই তার নিজের এবং মামাবাড়ি। ফলে নির্বাচনী লড়াইয়ে আমাদের প্রার্থী কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। আজমত উল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে দেশ সর্বক্ষেত্রে সামনের দিকে এগোচ্ছে। আগে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়নি, এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন।
ফলে বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রভাব অবশ্যই গাজীপুর সিটি নির্বাচনে পড়বে। উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের অসন্তুষ্টি রয়েছে- এমন গুঞ্জনের ব্যাপারে তিনি বলেন, মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মধ্যে যারা আমাদের সমমনা বা নিরপেক্ষ তাদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি। তারা সাড়া দিচ্ছেন। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের ভূমিকা কেমন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আজমত উল্লাহ বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কিন্তু গাজীপুরে বিরাজমান। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তারা পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে পারবে। তারপরও নির্বাচন কমিশন কোন সহায়তা চাইলে আওয়ামী লীগ, আমাদের প্রার্থী এবং আমরা সে সহায়তা করব। শান্তিপূর্ণভাবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ইতিহাস গড়তে চাই। তিনি বলেন, আমরা গাজীপুরকে একটি পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আমাদের প্রার্থী বিজয়ী হলে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় নগরকে তিনটি জোনে ভাগ করে, নগরবাসী এবং নগরবিদদের মতামতের ভিত্তিতে সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পদক্ষেপ নেয়া হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে, সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে বসবাস উপযোগী একটি নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
ওই এলাকায় তার নিজস্ব ভোটব্যাংক থাকার প্রমাণ দিয়েছেন বিগত নির্বাচনে। এছাড়া মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে বারবার কারাগারে পাঠানো এবং মেয়রের দায়িত্ব পালনে বিঘ্ন ঘটানোর কারণে তার প্রতি সহানুভূতি রয়েছে নগরবাসীর। অন্যদিকে স্বাধীনতার পর গাজীপুরে আওয়ামী লীগের ইতিহাস আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে প্রথম ব্যাচের ছাত্র আজমত উল্লাহ খানের রাজনীতি এক সুতোয় গাঁথা। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন সক্রিয়ভাবে। গাজীপুরের প্রতিটি অলি-গলি ও রাজপথ ঘুরে সংগঠনকে গড়ে তুলেছেন তিনি। তরুণ বয়সে টঙ্গী পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন পরপর তিনবার। নগরীর প্রতিটি পাড়া ও অলিগলিতে আছে তার অবাধ বিচরণ। তিনবার গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী এ নেতা বর্তমানে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। সর্বোপরি বিগত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন তিনি। ফলে নির্বাচনে প্রবীণ এ দুই নেতার অনুসারীরা পুরোমাত্রায় সক্রিয় না হলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোটের চিত্রে। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলের প্রার্থীর জন্যই তাদের পূর্বসূরিদের সমর্থন আদায় জরুরি। এ ক্ষেত্রে যিনি সফল হবেন বিজয়ী হওয়ার সুযোগ বাড়বে তার। এদিকে মেয়র পদে থাকায় নির্বাচনী বিধির কারণে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারছেন না মেয়র মান্নান। তবে তার অনুসারী হিসেবে পরিচিত বিএনপি নেতারা দলের নানা কমিটিতে যুক্ত হয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে আজমত উল্লাহকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধান এজেন্টের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি সে দায়িত্ব পালন করছেন।
তবে এই দুই নেতাকে নিয়ে এখনও নানা গুঞ্জন চলছে রাজনৈতিক মহলে। তাদের আন্তরিকতা এবং তাদের অনুসারী নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা নিয়ে আলোচনা থামেনি। বিশেষ করে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ভূমিকা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। আজমত উল্লাহ নির্বাচনের মাঠে সক্রিয় হলেও নির্বাচনী আচরণ বিধির কারণে মেয়র মান্নান একদম চুপ।
গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক: মান্নান
নির্বাচনী বিধির কারণে কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেয়ার সুযোগ নেই গাজীপুরের মেয়র এমএ মান্নানের। নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন এড়াতে ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঢাকাতেই অবস্থান করছেন তিনি। প্রচারণায় সরাসরি অংশ নিতে বাধা থাকলেও অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনার ক্ষেত্রে সে বাধা নেই। কিন্তু দিনের বেশির ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে তার মোবাইল ফোন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি দলীয় নেতাকর্মী বা গণমাধ্যম কারও সঙ্গে কথা বলেন না। কয়েকদিন ধরে অব্যাহত চেষ্টার পর গতকাল দৈনিক মানবজমিন-এর সঙ্গে কথা বলেন তিনি। মেয়র মান্নান বলেন, গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আমার কোনো ভূমিকাই নেই। নির্বাচনী বিধির কারণে কোনো ভূমিকা রাখার সুযোগও নেই। আমি চাই, গাজীপুরে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক, নগরবাসী ভোট দেয়ার সুযোগ পাক। নির্বাচনের আগে এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। ক্ষমা করবেন। তার ঘনিষ্ঠ নেতা বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে মেয়র হিসেবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ ও গণমাধ্যমে কথা বলতে পারছেন না এমএ মান্নান। তবে তার লোকজন বসে নেই। দলের তরফে যে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেভাবে তারা কাজ করছেন। বিএনপি প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, জেলা বিএনপি নেতাদের মধ্যে মেয়র মান্নানের অনুসারী হিসেবে পরিচিতরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় সক্রিয়। বিশেষ করে টঙ্গীতে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, গাজীপুর সদর থানা বিএনপির সভাপতি নাজিম আহমেদ চেয়ারম্যান, সাধারণ সম্পাদক সুরুজ আহমেদ ও সাংগঠনিক সম্পাদক বশির আহমেদ বাচ্চু দিনরাত নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
দলের অর্পিত দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করব: আজমত
আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্ব পেয়েছেন আজমত উল্লাহ। যিনি বিগত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী করেছিলেন। আসন্ন নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। দলের মনোনয়ন, প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণাসহ সার্বিক বিষয়ে তিনি দৈনিক মানবজমিন-এর কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর এখন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তার ভূমিকা কেমন হবে- এ প্রশ্নে আজমত উল্লাহ বলেন, আমি মনোনয়ন পেলে যেভাবে কাজ করতাম, এখনও তেমনটিই করব। এ অঙ্গীকার আমি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনার সামনে করে এসেছি। সে অনুযায়ীই দায়িত্ব পালন করছি। তিনি বলেন, আমি মনোনয়ন চেয়েছিলাম, কিন্তু দল যাকে সুইটেবল মনে করেছে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। নেত্রীর নেতৃত্বে আমাদের দলের মনোনয়ন বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সমর্থন আছে। সেটা আমি মেনে নিয়েছি। আজমত উল্লাহ বলেন, আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি, দলের সাধারণ সদস্য হলে দলের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে একটি অঙ্গীকার করি। দলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও আনুগত্য রয়েছে, তাই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছি। আজমত উল্লাহ বলেন, আমাকে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও প্রধান নির্বাচনী এজেন্টের দায়িত্ব দিয়েছে শীর্ষ নেতৃত্ব। আমি সে দায়িত্ব অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে দলের সমন্বিত প্রচারণা জোরদার না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে আজমত উল্লাহ বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে নামেনি বা জেলা আওয়ামী লীগ সমন্বিতভাবে কাজ করছে না- এসব আসলে অপপ্রচার। আমাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই এমপি বা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। নির্বাচনী আচরণবিধি মান্য করার কারণে তারা গণসংযোগে নামছেন না। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা আমাদের নিয়মিত পরামর্শ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। আহমদ হোসেন, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান নওফেল, আফজাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, অসীম কুমার উকিলসহ শ্রমিক লীগ, যুবলীগ, মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, তাঁতীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা এবং মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা প্রচারণার মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আমাদের দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, কোনভাবেই যেন নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘিত না হয়। দেখুন, গাজীপুরের মেয়র বিএনপি নেতা এমএ মান্নানও কিন্তু এ বিধির কারণে প্রচারণার মাঠে নামতে পারেননি। গাজীপুরের রাজনীতিতে সরকার পরিবারের প্রভাব ও বিএনপি’র প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের অভিজ্ঞতার বিপরীতে আওয়ামী লীগ দলীয় তরুণ প্রার্থী ভোটের মাঠে কতটা প্রভাব ফেলতে পারবেন এমন প্রশ্ন রয়েছে নগরজুড়ে। এ ব্যাপারে আজমত উল্লাহ বলেন, জাহাঙ্গীর আলম তারুণ্যের প্রতিনিধি। এছাড়া সিটি করপোরেশনের মধ্যেই তার নিজের এবং মামাবাড়ি। ফলে নির্বাচনী লড়াইয়ে আমাদের প্রার্থী কোনভাবেই পিছিয়ে নেই। আজমত উল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে দেশ সর্বক্ষেত্রে সামনের দিকে এগোচ্ছে। আগে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হয়নি, এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন।
ফলে বর্তমান সরকারের আমলে ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রভাব অবশ্যই গাজীপুর সিটি নির্বাচনে পড়বে। উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের অসন্তুষ্টি রয়েছে- এমন গুঞ্জনের ব্যাপারে তিনি বলেন, মানুষের ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থাকতেই পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের মধ্যে যারা আমাদের সমমনা বা নিরপেক্ষ তাদের সঙ্গে আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি। তারা সাড়া দিচ্ছেন। নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের ভূমিকা কেমন হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে আজমত উল্লাহ বলেন, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কিন্তু গাজীপুরে বিরাজমান। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতি আমাদের আস্থা রয়েছে। তারা পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে পারবে। তারপরও নির্বাচন কমিশন কোন সহায়তা চাইলে আওয়ামী লীগ, আমাদের প্রার্থী এবং আমরা সে সহায়তা করব। শান্তিপূর্ণভাবে গাজীপুর সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা ইতিহাস গড়তে চাই। তিনি বলেন, আমরা গাজীপুরকে একটি পরিকল্পিত নগর হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। আমাদের প্রার্থী বিজয়ী হলে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় নগরকে তিনটি জোনে ভাগ করে, নগরবাসী এবং নগরবিদদের মতামতের ভিত্তিতে সার্বিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের পদক্ষেপ নেয়া হবে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিকল্পিত উপায়ে, সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে বসবাস উপযোগী একটি নগর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হবে।
No comments