কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অধ্যাপকসহ নিহত দশ



জম্মু-কাশ্মিরে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে গেরিলাসহ ১০ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে এক অধ্যাপকসহ পাঁচ গেরিলা ও পাঁচ বেসামরিক ব্যক্তি রয়েছে।
সংঘর্ষে সামরিক বাহিনীর দুই সদস্য-সহ এক ডজনেরও বেশি বেসামরিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। আহত সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ঘটনাস্থল থেকে বের করে দ্রুত শ্রীনগরের বাদামীবাগ সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ (রোববার) দক্ষিণ কাশ্মিরের সোপিয়ান জেলায় বাডিগাম জৈনপোরায় ওই সংঘর্ষ হয়। জম্মু-কাশ্মির পুলিশের মহাপরিচালক এস পি বৈদ ওই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ৫ সন্ত্রাসীর লাশ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন। তিনি এ ব্যাপারে সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফ এবং জম্মু-কাশ্মির পুলিশ সদস্যদের বাহবা দিয়েছেন।
এদিকে, নিরাপত্তা বাহিনী ও গেরিলাদের মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুই প্রতিবাদী যুবক নিহত হয়েছেন।
আজ সকাল থেকে নিরাপত্তা বাহিনী ও গেরিলাদের মধ্যে তুমুল বন্দুক যুদ্ধ হয়। কয়েক ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষের পর ৫ গেরিলা নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে কাশ্মির বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রফি ভাটসহ অন্যরা রয়েছেন। কয়েকদিন আগেই সমাজবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ রফি ভাট গেরিলা দলে যোগ দিয়েছিলেন। গত (শুক্রবার) বিকেল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। ওই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
আজ সংঘর্ষের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে গেরিলাদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হলেও তারা ওই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে গুলিবর্ষণ শুরু করে।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রতিবাদী জনতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে এক ডজনেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন।
কাশ্মিরে গেরিলাদের নির্মূলের জন্য সেখানে নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে অপারেশন অলআউট চালানো হচ্ছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৫৯ গেরিলা সংঘর্ষে নিহত হয়েছে।
এদিকে, কাশ্মিরে এক অধ্যাপকসহ ৫ গেরিলা ও ৫ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হওয়া প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ‘বন্দি মুক্তি কমিটি’র সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ভানু সরকার আজ  (রোববার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বহু অধ্যাপক, বহু ছাত্র তারা ভালো প্রতিষ্ঠিত হওয়া সত্ত্বেও ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন। এ ব্যাপারে ভগৎ সিং, আশফাক উল্লাহ খান, সূর্য সেনের কথা ভাবলেই বোঝা যাবে। আসলে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা কোনো অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাপকাঠি দিয়ে মাপা যায় না। আমি স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই –এই দাবিকে কোনো অর্থনৈতিক দাবি, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি বা প্রকৃত উন্নয়ন ঘটিয়েও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা, দাবি মেটানো সম্ভব নয়। এটা কোনোদিনই সম্ভব নয়। কাশ্মিরের মানুষ স্বাধীনতা চায় এবং সেই স্বাধীনতাকে তারা যেকোনো মূল্যে চায়- এটা তাদের দাবি। কারো কাছে  তারা সন্ত্রাসবাদী মনে হতে পারে। যেমন ভগৎ সিংহরা ব্রিটিশদের কাছে সন্ত্রাসবাদী ছিল। কিন্তু ভগৎ সিং কী সন্ত্রাসবাদী? সূর্য সেন কী ভারতের কাছে সন্ত্রাসবাদী?  মানবাধিকারকর্মী হিসেবে আমরা মনে করি, মানবাধিকারের ঘোষণা হল- আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার। যেকোনো মানুষের, যেকোনো জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার চাওয়া মানবাধিকার সম্মত দাবি। এরমধ্যে কোনো অন্যায় বা ভুল আমরা মানবাধিকার কর্মীরা দেখি না।’

No comments

Powered by Blogger.