আলেপ্পোর শিশুরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত: ইউনিসেফ
আলেে্প্পাতে বিমান হামলায় ধসে পড়া ভবন থেকে শিশুদের উদ্ধার করার ফাইল ছবি। এএফপি |
সিরিয়ার যুদ্ধবিধ্বস্ত আলেপ্পোর সব শিশুই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত (ট্রমা আক্রান্ত) বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ। কয়েক বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধ সিরিয়ার সবচেয়ে বড় ও ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া শহরটির শিশুদের মনে বড় ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি করেছে বলে মনে করে সংস্থাটি। আলেপ্পোয় ইউনিসেফের প্রধান মাঠ কর্মকর্তা রাদোসওয়াফ আরজেহাক বলেন, আলেপ্পোর সব শিশুই ভীতসন্ত্রস্ত। এই কর্মকর্তা ১৫ বছর ধরে ইউনিসেফে কর্মরত।
তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবনে এ ধরনের পরিস্থিতি কখনো দেখিনি। আলেপ্পোর শিশুদের বেলায় যা হয়েছে, তা এককথায় বর্ণনাতীত।’ সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এ শহরের লাখো শিশু প্রায় ছয় বছর ধরে অন্যতম ভয়ংকর ও রক্তাক্ত লড়াইয়ের সাক্ষী হয়ে আছে। রাদোসওয়াফ বলেন, শহরের পাঁচ লাখ শিশুর মানসিক ও সামাজিক সহযোগিতা লাগবে সামনের দিনগুলোতে। এর মধ্যে এক লাখ শিশুর স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য বিশেষ সহযোগিতার একান্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চল থেকে আসা শিশুদের মানসিক অবস্থা প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে আমরা দেখেছি, তারা আত্মরক্ষার সহজাত প্রবণতাটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। শিশুদের মধ্যে যাদের বয়স পাঁচ থেকে ছয়, তারা যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্যেই জন্মগ্রহণ করেছে এবং বেড়ে উঠেছে। তারা কেবল যুদ্ধই দেখেছে, বোমা হামলাই দেখেছে—এটাই তাদের পৃথিবী!’
ইউনিসেফের কর্মকর্তা বলেন, বোমা হামলা হবে। তার থেকে বাঁচার জন্য দৌড়াতে হবে, বাংকারে গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে, অভুক্ত থাকতে হবে—এই শিশুদের জন্য এটাই যেন স্বাভাবিক ঘটনা। এ ধরনের বিপর্যস্তকর মানসিক পরিস্থিতি তাদের দীর্ঘ সময় ধরে ভোগাবে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে যাচ্ছে যে বোমা বর্ষণের সময় শিশুরা দৌড়ে গিয়ে নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেওয়ার মানসিক সক্ষমতাটুকুও হারিয়ে ফেলেছে। এ অবস্থা তাদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই আতঙ্কের বিষয়। ইউনিসেফ কর্মকর্তারা বলেন, পশ্চিম আলেপ্পোর শিশুদের অভিজ্ঞতাও কম উদ্বেগজনক নয়। সেখানে স্কুলে বোমা হামলার ফলে চোখের সামনে শিক্ষক ও সহপাঠীদের মরতে দেখছে শিশুরা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিশুদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা হওয়ার কথা, অথচ তা-ও হয়ে গেছে তাদের মৃত্যুকূপ। অব্যাহত যুদ্ধের ফলে শিশুদের মা-বাবারাও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে তাঁরাও সন্তানদের দেখভাল ঠিকমতো করতে পারছেন না।
No comments