প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর
দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে এশিয়ার দুটি প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি জাপান ও চীনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর কূটনৈতিক দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করি৷ কিন্তু এই সফরের বহিরাঙ্গের উচ্ছ্বাস ঝেড়ে ফেলে বাংলাদেশের সত্যিকার অর্জন কতটা হয়েছে, তাও আলোচনার দাবি রাখে৷ প্রধানমন্ত্রীর বেইজিং সফরের সময় পটুয়াখালীতে বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট নির্মাণ, কর্নফুলী নদীর তলদেশে টানেল তৈরিসহ পঁাচটি প্রকল্পে সহায়তা চুক্তি সই হয়েছে৷ যদিও বহুলা আলোচিত সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়ে যে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, শেষ মুহূর্তে তা আটকে যায়৷ প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীনের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত জুড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ চুক্তি সইয়ে সম্মত হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁর সফরের সময়ে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যবৈষম্য কমানোর অনুরোধের পাশাপাশি দেশটির ব্যবসায়ীদের প্রতি বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগেরও আহ্বান জানিয়েছেন৷ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরস্পর সম্পর্কযুক্ত৷ চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হলে সেখানে যেসব পণ্যের চাহিদা আছে সেগুলোর জোগান বাড়াতে হবে, বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে বিদ্যুৎ সুবিধাসহ অবকাঠামো উন্নয়নও নিশ্চিত করতে হবে৷
চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে আমরা যে কৌশলগত সহযোগিতার অংশীদারি বাড়িয়ে চলেছি, তার প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার না করেও দেখতে হবে এতে আমাদের কী লাভ হচ্ছে, জটিল ও বিবদমান বিশ্বে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়তে বাংলাদেশ কোনোভাবেই তৃতীয় পক্ষের সন্দেহের লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না৷ দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ক্ষেত্রে দেবে আর নেবে নীতি যেমন জরুরি, তেমনি সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ আমরা প্রতিবেশীসহ সব দেশের সঙ্গে সহযোগিতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাই৷ কিন্তু সেই সহযোগিতা কেবল প্রকল্পভিত্তিক হলে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেওয়া স্বাভাবিক৷ বড় প্রকল্প মানে বড় কমিশন—এই ধারণা অপনোদনের জন্যই বিদেশি ঋণের চেয়ে বিদেশি বিনিয়োগের দিকেই মনোযোগ বাড়াতে হবে৷ আর সে জন্য চাই রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা৷ গত ৫ জানুয়ারি বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে আপত্তি জানিয়েও জাপান যে পরিমাণ ঋণ ও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে, নির্বাচনের সমর্থক চীনের কাছ থেকেও তা পাওয়া যায়নি৷ এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো কূটনৈতিক ঘাটতি ছিল কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন৷
No comments