জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টায় হাসপাতালে ২১ মাস
জীবন বাঁচাতে হাসপাতালের মেঝেতে দিন কাটছে
রসুল মিয়ার। একদিন দু’দিন নয়, মাসের পর মাস এভাবেই নিজেকে লোকচক্ষুর
অন্তরালে রেখে জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টা করছেন এই বৃদ্ধ। লক্ষ্য খুনিরা যেন
তাকে হত্যা করতে না পারে। তারপরও রাত হলেই মৃত্যুযন্ত্রণা তাকে তাড়া করে
ফিরছে। বিদ্যুৎ অফ হলেই রসুল মিয়া দৌড়ে টয়লেটে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে
থাকেন।
মনে
হয় এই বুঝি সন্ত্রাসীরা এলো তাকে হত্যা করতে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে
ভাই-বোনের নৃশংস খুনের দৃশ্য। মুহূর্তে আত্মা খাঁচাছাড়া হয়ে যায় বৃদ্ধ রসুল
মিয়ার। মাঝেমধ্যে নামাজের পাটিতে বসে তিনি মৃত্যু কামনা করেন। তবে সেটা
যেন স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। রসুল মিয়া স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চান। কোন
আততায়ীর হাতে তিনি নিজের জীবন বিসর্জন দিতে চান না। পুলিশ প্রশাসনকে বলেও
কোন ফল না পেয়ে বৃদ্ধ রসুল মিয়া জীবন বাঁচাতে এই অভিনব পন্থা বেছে নিয়েছেন।
যশোর সদর হাসপাতালের দোতলার একটি ওয়ার্ডে দীর্ঘ ২১ মাস রোগী না হয়েও শুয়ে
বসে পার করেছেন রসুল মিয়া। স্বজনহারা এ মানুষটির একটিই প্রত্যাশা, ‘আমাকে
বাঁচতে দাও; সম্পত্তির কোন প্রয়োজন নেই আমার, আমি স্বাভাবিক মৃত্যুর
নিশ্চয়তা চাই’।
ঝিকরগাছার মিশরি দেয়াড়া গ্রামের মৃত চান আলী মিয়ার ছেলে রসুল মিয়া। স্থানীয়ভাবে তিনি রসুল নামেই পরিচিত। ৪ সন্তানের জনক এই বৃদ্ধ এখন কয়েকশ’ বিঘা জমির মালিক। এছাড়া সব মিলে তার পরিবারের অন্য সব সদস্য গ্রামের সিংহভাগ জমির মালিক। এই জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে ইতিমধ্যে তার পিতা, বড় ভাই ও একমাত্র বোন খুন হয়েছেন। সহায়-সম্পত্তিই কাল হয়েছে রসুল মিয়ার পরিবারে। কারণে-অকারণে জমিজমা নিয়ে প্রতিবেশী ও আশপাশের গ্রামবাসীর সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো রসুল মিয়ার পরিবারের। এরই জের ধরে গত ২০ বছরে ওই পরিবারের ৭ জন মানুষ খুন হয়েছে। তবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এসব হত্যাকাণ্ডকে খুন বলতে নারাজ। তাদের দাবি, সবাই আত্মহত্যা করেছে। তবে রসুল মিয়ার বক্তব্য হচ্ছে, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধেই তার পরিবারের এসব সদস্যকে কখনও গলায় রশি দিয়ে, আবার কখনও শ্বাসরোধ বা কখনও পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। এই হত্যাকাণ্ড সিরিজের শেষ সংযুক্তি তার বড় ভাই ও একমাত্র বোন। লক্ষ্য তাদের অংশের জমি আত্মসাৎ করা। হামলা হয়েছে রসুল মিয়ার ওপরও। বার কয়েক সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করতে চেয়েছে। সর্বশেষ ২০১২ সালের মাঝের দিকে সন্ত্রাসীরা রসুল মিয়াকে অপহরণ করে। হত্যার উদ্দেশ্যে বেদম মারপিট করে সন্ত্রাসীরা তাকে যশোর শহরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মৃত ভেবে একটি রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। পরে স্থানীয়রা দেখে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ মাস রসুল মিয়া হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে বসবাস করছেন। রোগী না হয়েও কিভাবে এতোদিন হাসপাতালে আছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলী মোল্যা জানান, ‘কি করবো বলুন, তাকে বহুবার হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেছি। পুলিশকে বলেছি। কিন্তু বৃদ্ধ মানুষটির চোখের পানি শেষ পর্যন্ত আমাকে আপোষ করবে বাধ্য করেছে।‘ ডা. ইয়াকুব আলী জানান, বৃদ্ধ রসুল মিয়া এখন আর হাসপাতালের বিছানায় থাকেন না। তিনি হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝের এক কোনায় নিজে একটি কম্বল বিছিয়ে থাকেন। খাবার-দাবার তার দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে আসে। রসুল মিয়ার স্বজনরা জানান, ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে রসুল মিয়া। সম্পত্তির কারণে বেশ কয়েকবার শত্রুরা রসুল মিয়াকে হত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রতিবারই তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের জুন মাসে ঝিকরগাছা থেকে বাড়ি ফেরার সময় প্রতিপক্ষের ক্যাডাররা রসুল মিয়াকে অপহরণ করে। পরে তাকে মারপিট করে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে যায়। তারা জানান, সম্পত্তিই কাল হয়েছে রসুল আলী সরদারের। তার অভিযোগ, সম্পত্তির কারণে গত ২০ বছরে তার পরিবারের ৭ জন মানুষ খুন হয়েছে। এ তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে তার বড় ভাই ও বোন। সন্ত্রাসীরা তাদের দুই ভাইবোনকে রাতের আঁধারে গলা টিপে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর থানা পুলিশ হলেও আজ পর্যন্ত তারা এর সুবিচার পাননি। এরপর খুনিরা রসুল মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে। শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে রসুল মিয়া আশ্রয় নেন হাসপাতালে। আর স্ত্রী সন্তানকে পাঠিয়ে দেন দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। পৈতৃক সূত্রে বিপুল জমির মালিক এই রসুল আলী সরদার। তার দাবি, নিজের জীবনের নিরাপত্তায় পরবর্তীতে প্রশাসনের কাছে বার বার আবেদন নিবেদন করেও কোন সহায়তা পাননি তিনি। আবারও হামলার আশঙ্কায় অবশেষে স্ত্রী-সন্তানদের অন্যত্র রেখে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। এদিকে হাসপাতালে বন্দি জীবনযাপন করার কারণে অনেকটায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন রসুল মিয়া। এখন সারা দিন আপন মনে বকবক করেন। নিজের মতো করে খাওয়া দাওয়া করেন। আর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে বেড়ান। রোগীদের খোঁজ খবর নেন। তবে তা সবই অস্বাভাবিক পন্থায়। এদিকে রসুল মিয়ার নিরাপত্তা ও অভিযোগ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে যশোরের নবাগত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। তবে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানায় খোঁজ নেবেন। প্রয়োজনে তার ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সাধ্যমতো সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
ঝিকরগাছার মিশরি দেয়াড়া গ্রামের মৃত চান আলী মিয়ার ছেলে রসুল মিয়া। স্থানীয়ভাবে তিনি রসুল নামেই পরিচিত। ৪ সন্তানের জনক এই বৃদ্ধ এখন কয়েকশ’ বিঘা জমির মালিক। এছাড়া সব মিলে তার পরিবারের অন্য সব সদস্য গ্রামের সিংহভাগ জমির মালিক। এই জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে ইতিমধ্যে তার পিতা, বড় ভাই ও একমাত্র বোন খুন হয়েছেন। সহায়-সম্পত্তিই কাল হয়েছে রসুল মিয়ার পরিবারে। কারণে-অকারণে জমিজমা নিয়ে প্রতিবেশী ও আশপাশের গ্রামবাসীর সঙ্গে ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো রসুল মিয়ার পরিবারের। এরই জের ধরে গত ২০ বছরে ওই পরিবারের ৭ জন মানুষ খুন হয়েছে। তবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এসব হত্যাকাণ্ডকে খুন বলতে নারাজ। তাদের দাবি, সবাই আত্মহত্যা করেছে। তবে রসুল মিয়ার বক্তব্য হচ্ছে, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধেই তার পরিবারের এসব সদস্যকে কখনও গলায় রশি দিয়ে, আবার কখনও শ্বাসরোধ বা কখনও পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। এই হত্যাকাণ্ড সিরিজের শেষ সংযুক্তি তার বড় ভাই ও একমাত্র বোন। লক্ষ্য তাদের অংশের জমি আত্মসাৎ করা। হামলা হয়েছে রসুল মিয়ার ওপরও। বার কয়েক সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করতে চেয়েছে। সর্বশেষ ২০১২ সালের মাঝের দিকে সন্ত্রাসীরা রসুল মিয়াকে অপহরণ করে। হত্যার উদ্দেশ্যে বেদম মারপিট করে সন্ত্রাসীরা তাকে যশোর শহরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মৃত ভেবে একটি রাস্তার পাশে ফেলে রাখে। পরে স্থানীয়রা দেখে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। সেই থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ মাস রসুল মিয়া হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে বসবাস করছেন। রোগী না হয়েও কিভাবে এতোদিন হাসপাতালে আছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলী মোল্যা জানান, ‘কি করবো বলুন, তাকে বহুবার হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়ার চেষ্টা করেছি। পুলিশকে বলেছি। কিন্তু বৃদ্ধ মানুষটির চোখের পানি শেষ পর্যন্ত আমাকে আপোষ করবে বাধ্য করেছে।‘ ডা. ইয়াকুব আলী জানান, বৃদ্ধ রসুল মিয়া এখন আর হাসপাতালের বিছানায় থাকেন না। তিনি হাসপাতালের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝের এক কোনায় নিজে একটি কম্বল বিছিয়ে থাকেন। খাবার-দাবার তার দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়ের বাসা থেকে আসে। রসুল মিয়ার স্বজনরা জানান, ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে রসুল মিয়া। সম্পত্তির কারণে বেশ কয়েকবার শত্রুরা রসুল মিয়াকে হত্যার চেষ্টা করেছে। কিন্তু প্রতিবারই তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছেন। সর্বশেষ ২০১২ সালের জুন মাসে ঝিকরগাছা থেকে বাড়ি ফেরার সময় প্রতিপক্ষের ক্যাডাররা রসুল মিয়াকে অপহরণ করে। পরে তাকে মারপিট করে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে যায়। তারা জানান, সম্পত্তিই কাল হয়েছে রসুল আলী সরদারের। তার অভিযোগ, সম্পত্তির কারণে গত ২০ বছরে তার পরিবারের ৭ জন মানুষ খুন হয়েছে। এ তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছে তার বড় ভাই ও বোন। সন্ত্রাসীরা তাদের দুই ভাইবোনকে রাতের আঁধারে গলা টিপে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডের পর থানা পুলিশ হলেও আজ পর্যন্ত তারা এর সুবিচার পাননি। এরপর খুনিরা রসুল মিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করে। শেষ পর্যন্ত জীবন বাঁচাতে রসুল মিয়া আশ্রয় নেন হাসপাতালে। আর স্ত্রী সন্তানকে পাঠিয়ে দেন দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে। পৈতৃক সূত্রে বিপুল জমির মালিক এই রসুল আলী সরদার। তার দাবি, নিজের জীবনের নিরাপত্তায় পরবর্তীতে প্রশাসনের কাছে বার বার আবেদন নিবেদন করেও কোন সহায়তা পাননি তিনি। আবারও হামলার আশঙ্কায় অবশেষে স্ত্রী-সন্তানদের অন্যত্র রেখে যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। এদিকে হাসপাতালে বন্দি জীবনযাপন করার কারণে অনেকটায় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন রসুল মিয়া। এখন সারা দিন আপন মনে বকবক করেন। নিজের মতো করে খাওয়া দাওয়া করেন। আর হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে বেড়ান। রোগীদের খোঁজ খবর নেন। তবে তা সবই অস্বাভাবিক পন্থায়। এদিকে রসুল মিয়ার নিরাপত্তা ও অভিযোগ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে যশোরের নবাগত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, তিনি বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। তবে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট থানায় খোঁজ নেবেন। প্রয়োজনে তার ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সাধ্যমতো সব পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
No comments