মার্কিনদের ফুটবল-প্রেম
বিল ক্লিনটনের নাকি গলা ভেঙে গেছে। বক্তৃতা দিতে গিয়ে নয়, ক্লিনটনের গলা ভেঙেছে যুক্তরাষ্ট্রের জয়ে চিৎকার করতে গিয়ে। আলজেরিয়ার বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নাটকীয় জয়ের দিন মাঠে ছিলেন বিল ক্লিনটন। আজ ঘানার বিপক্ষে দ্বিতীয় পর্বের ম্যাচেও মাঠে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট। মাঠে থাকার জন্য কিছু কর্মসূচি বাতিল-টাতিলও করেছেন।
শুধু ক্লিনটনের কথা বলি কেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও তো ফোন করে যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়েছেন, শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন। ল্যান্ডন ডনোভানরা অভিনন্দন পেয়েছেন হলিউড তারকা ডেমি মুরের কাছ থেকেও। তিনি টুইটার-এ লিখেছেন—‘গো ইউএসএ! ইয়াহহহহহহ!!!!!’
ফুটবলটা কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে শেকড় গেড়েই ফেলল? কদিন আগেও ‘ফুটবল’ বলতে যে দেশটির লোকজন ‘আমেরিকান ফুটবল’ নামে হাতের এক খেলার কথা বুঝত, তারা ফুটবলপ্রেমী হয়ে গেল! এখনো যাদের কাছে ফুটবলের নাম ‘সকার’ তারা মজে গেল পায়ের বলের খেলায়!
হিসেবনিকেশ বলে, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক আগেই ফুটবলের শেকড় তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। দেশটির ফুটবল ইতিহাস আজকের নয়। সেই ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপেও খেলেছে যুক্তরাষ্ট্র, বাছাই দল হিসেবেই খেলেছে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে আটবার বিশ্বকাপ খেলেছে তারা। মনে রাখবেন, ফুটবলীয় শক্তি বলে কথায় কথায় যাদের নাম আসে, সেই হল্যান্ডও বিশ্বকাপ খেলেছে আটবার।
তবে ১৯৫০-এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে একটা বিরাট ‘অন্ধকার যুগ’ গেছে। কিন্তু ফুটবলকে দেশটিতে জনপ্রিয় করার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। সত্তরের দশকে ফুটবলকে জনপ্রিয় করার জন্য পেলে-ক্রুইফদের নিয়ে আসা হয়েছিল মার্কিন ঘরোয়া ফুটবল খেলার জন্য। তাতেও কাজ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের লোকজন বেসবল, আমেরিকান ফুটবল, আইস হকি, বাস্কেটবল ছেড়ে মোটেও সকারপ্রেমী হয়নি। ১৯৯৪ সালে ফিফা যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়িত্ব দিল বিশ্বকাপ আয়োজন করার। উদ্দেশ্য, পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটিতে ফুটবলকে জনপ্রিয় করা।
তাৎক্ষণিকভাবে মনে হয়েছিল, ফিফার উদ্দেশ্য দারুণ সফল। সব মিলিয়ে সে বিশ্বকাপে ৩৫ লাখ টিকিট বিক্রি হয়েছিল, যেটি এখনো যেকোনো বিশ্বকাপের জন্য রেকর্ড হয়ে আছে। প্রতিটি ম্যাচে সমর্থকদের উপস্থিতি দেখে মনে হলো, এবার মার্কিনরা ফুটবলপ্রেমী না হয়ে ছাড়ছে না।
কিন্তু কিসের কী! যেই না বিশ্বকাপ শেষ, ফুটবল নিয়ে তাবৎ আগ্রহও শেষ মার্কিনদের। দর্শকপ্রীতি তৈরি করতে না পারলেও ১৯৯৪ বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলের ‘নবজন্ম’ ঘটিয়ে দিয়ে গেল। এর দু বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলো পেশাদার লিগ।
আর ১৯৫৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ বাছাইপর্বই পার হতে না পারা দলটি ২০০৬ সালে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বর দল হয়ে গেল! এখন তারা বিশ্বের ১৪ নম্বর র্যাঙ্কিংধারী। এর মধ্যে গত কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে উঠে গিয়েছিল স্পেনকে সেমিফাইনালে হারিয়ে। ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ২ গোলে এগিয়েও গিয়েছিল, কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারেনি তারা। তার পরও ইদানীংকালে দেশটিকে দারুণ সফল ফুটবলীয় দেশ বলা চলে।
কিন্তু লাভ কী! ফুটবল জনপ্রিয় তো হচ্ছে না। মার্কিনদের এখনো এমন অবস্থা যে খোদ ডেভিড বেকহাম সে দেশে পেশাদার ফুটবল খেলতে গিয়ে পরিচয়-সংকটে ভোগেন। যুক্তরাষ্ট্রে লোকজন তাঁকে চেনে ‘স্পাইস গার্ল ভিক্টোরিয়ার স্বামী’ হিসেবে!
যুক্তরাষ্ট্র তাহলে কি বিশ্বকাপের বাইরে ফুটবলকে আর আপন করে নেবেই না? না, এবার অন্তত একটু আশার আলো দেখছেন দেশটির ফুটবল-সংশ্লিষ্ট লোকজন। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি ম্যাচে গড়ে টেলিভিশন দর্শকসংখ্যা ছিল এক কোটি ১১ লাখ, যা গত বিশ্বকাপের চেয়ে শতকরা ৬৮ ভাগ বেশি!
দর্শকেরা স্রেফ টিভির সামনে বসে ‘দুর্বোধ্য’ খেলা দেখে গেছে, তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের জয়ে ওয়াশিংটনে আক্ষরিক অর্থেই মিছিল হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন বার-পাব ভরে গিয়েছিল ফুটবল-দর্শকে। দর্শকদের এই আগ্রহ দেখে একটা পরিবর্তন টের পাচ্ছেন মার্টিন ভাসকুয়েজ।
মেক্সিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন ফুটবলার ভাসকুয়েজ ছিলেন ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পেশাদার লিগের খেলোয়াড়। ফলে পরিবর্তনটা তাঁর চোখে ভালোই ধরা পড়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলের জন্য সময়টা নিঃসন্দেহে অনেক ভালো যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দল এখন যে কভারেজ পাচ্ছে, সেটা অবিশ্বাস্য।’
অবশ্য মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল কোচ সাচো চিরোভস্কি বলছেন, বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই, ‘তৃণমূল পর্যায়ে যে কঠোর পরিশ্রম করা হয়েছে তারই ফল আসছে এখন।’ চিরোভস্কি এবারের বিশ্বকাপকে দেখছেন ‘এক শুরু’ হিসেবে।
শুরুটা তো করতেই হবে। ২০১৮ অথবা ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজনের জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেই বিড কমিটির চেয়ারম্যান বিল ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্রে এর পরও ফুটবল-শেকড় তৈরি করতে না পারলে লোকেরা ক্লিনটনদের ফুটবল-প্রেমে শুধু স্বার্থই খুঁজে পাবে!
শুধু ক্লিনটনের কথা বলি কেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও তো ফোন করে যুক্তরাষ্ট্রের খেলোয়াড়দের অভিনন্দন জানিয়েছেন, শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজ নিয়েছেন। ল্যান্ডন ডনোভানরা অভিনন্দন পেয়েছেন হলিউড তারকা ডেমি মুরের কাছ থেকেও। তিনি টুইটার-এ লিখেছেন—‘গো ইউএসএ! ইয়াহহহহহহ!!!!!’
ফুটবলটা কি তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে শেকড় গেড়েই ফেলল? কদিন আগেও ‘ফুটবল’ বলতে যে দেশটির লোকজন ‘আমেরিকান ফুটবল’ নামে হাতের এক খেলার কথা বুঝত, তারা ফুটবলপ্রেমী হয়ে গেল! এখনো যাদের কাছে ফুটবলের নাম ‘সকার’ তারা মজে গেল পায়ের বলের খেলায়!
হিসেবনিকেশ বলে, যুক্তরাষ্ট্রে অনেক আগেই ফুটবলের শেকড় তৈরি হয়ে যাওয়ার কথা। দেশটির ফুটবল ইতিহাস আজকের নয়। সেই ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপেও খেলেছে যুক্তরাষ্ট্র, বাছাই দল হিসেবেই খেলেছে। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে আটবার বিশ্বকাপ খেলেছে তারা। মনে রাখবেন, ফুটবলীয় শক্তি বলে কথায় কথায় যাদের নাম আসে, সেই হল্যান্ডও বিশ্বকাপ খেলেছে আটবার।
তবে ১৯৫০-এর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে একটা বিরাট ‘অন্ধকার যুগ’ গেছে। কিন্তু ফুটবলকে দেশটিতে জনপ্রিয় করার চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। সত্তরের দশকে ফুটবলকে জনপ্রিয় করার জন্য পেলে-ক্রুইফদের নিয়ে আসা হয়েছিল মার্কিন ঘরোয়া ফুটবল খেলার জন্য। তাতেও কাজ হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের লোকজন বেসবল, আমেরিকান ফুটবল, আইস হকি, বাস্কেটবল ছেড়ে মোটেও সকারপ্রেমী হয়নি। ১৯৯৪ সালে ফিফা যুক্তরাষ্ট্রকেই দায়িত্ব দিল বিশ্বকাপ আয়োজন করার। উদ্দেশ্য, পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটিতে ফুটবলকে জনপ্রিয় করা।
তাৎক্ষণিকভাবে মনে হয়েছিল, ফিফার উদ্দেশ্য দারুণ সফল। সব মিলিয়ে সে বিশ্বকাপে ৩৫ লাখ টিকিট বিক্রি হয়েছিল, যেটি এখনো যেকোনো বিশ্বকাপের জন্য রেকর্ড হয়ে আছে। প্রতিটি ম্যাচে সমর্থকদের উপস্থিতি দেখে মনে হলো, এবার মার্কিনরা ফুটবলপ্রেমী না হয়ে ছাড়ছে না।
কিন্তু কিসের কী! যেই না বিশ্বকাপ শেষ, ফুটবল নিয়ে তাবৎ আগ্রহও শেষ মার্কিনদের। দর্শকপ্রীতি তৈরি করতে না পারলেও ১৯৯৪ বিশ্বকাপ যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলের ‘নবজন্ম’ ঘটিয়ে দিয়ে গেল। এর দু বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হলো পেশাদার লিগ।
আর ১৯৫৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বকাপ বাছাইপর্বই পার হতে না পারা দলটি ২০০৬ সালে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের চার নম্বর দল হয়ে গেল! এখন তারা বিশ্বের ১৪ নম্বর র্যাঙ্কিংধারী। এর মধ্যে গত কনফেডারেশনস কাপের ফাইনালে উঠে গিয়েছিল স্পেনকে সেমিফাইনালে হারিয়ে। ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ২ গোলে এগিয়েও গিয়েছিল, কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারেনি তারা। তার পরও ইদানীংকালে দেশটিকে দারুণ সফল ফুটবলীয় দেশ বলা চলে।
কিন্তু লাভ কী! ফুটবল জনপ্রিয় তো হচ্ছে না। মার্কিনদের এখনো এমন অবস্থা যে খোদ ডেভিড বেকহাম সে দেশে পেশাদার ফুটবল খেলতে গিয়ে পরিচয়-সংকটে ভোগেন। যুক্তরাষ্ট্রে লোকজন তাঁকে চেনে ‘স্পাইস গার্ল ভিক্টোরিয়ার স্বামী’ হিসেবে!
যুক্তরাষ্ট্র তাহলে কি বিশ্বকাপের বাইরে ফুটবলকে আর আপন করে নেবেই না? না, এবার অন্তত একটু আশার আলো দেখছেন দেশটির ফুটবল-সংশ্লিষ্ট লোকজন। চলতি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি ম্যাচে গড়ে টেলিভিশন দর্শকসংখ্যা ছিল এক কোটি ১১ লাখ, যা গত বিশ্বকাপের চেয়ে শতকরা ৬৮ ভাগ বেশি!
দর্শকেরা স্রেফ টিভির সামনে বসে ‘দুর্বোধ্য’ খেলা দেখে গেছে, তা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের জয়ে ওয়াশিংটনে আক্ষরিক অর্থেই মিছিল হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন বার-পাব ভরে গিয়েছিল ফুটবল-দর্শকে। দর্শকদের এই আগ্রহ দেখে একটা পরিবর্তন টের পাচ্ছেন মার্টিন ভাসকুয়েজ।
মেক্সিকান বংশোদ্ভূত মার্কিন ফুটবলার ভাসকুয়েজ ছিলেন ১৯৯৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম পেশাদার লিগের খেলোয়াড়। ফলে পরিবর্তনটা তাঁর চোখে ভালোই ধরা পড়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলের জন্য সময়টা নিঃসন্দেহে অনেক ভালো যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় দল এখন যে কভারেজ পাচ্ছে, সেটা অবিশ্বাস্য।’
অবশ্য মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটবল কোচ সাচো চিরোভস্কি বলছেন, বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই, ‘তৃণমূল পর্যায়ে যে কঠোর পরিশ্রম করা হয়েছে তারই ফল আসছে এখন।’ চিরোভস্কি এবারের বিশ্বকাপকে দেখছেন ‘এক শুরু’ হিসেবে।
শুরুটা তো করতেই হবে। ২০১৮ অথবা ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজনের জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। আর সেই বিড কমিটির চেয়ারম্যান বিল ক্লিনটন। যুক্তরাষ্ট্রে এর পরও ফুটবল-শেকড় তৈরি করতে না পারলে লোকেরা ক্লিনটনদের ফুটবল-প্রেমে শুধু স্বার্থই খুঁজে পাবে!
No comments