আমদানি নিষিদ্ধ পুরনো ল্যাপটপের ডাম্পিং স্টেশন বাংলাদেশ? by হিটলার এ. হালিম
দেশে
পুরনো ও মানহীন প্রযুক্তি পণ্য দেদার বিক্রি হচ্ছে। ঠিকমতো নজরদারির অভাবে
ক্রেতাদের হাতে চলে যাচ্ছে চকচকে মোড়কে পুরনো পণ্য। অন্যদিকে, দেশে পুরনো
ল্যাপটপ, কম্পিউটার আমদানি নিষিদ্ধ হলেও মধ্যপ্রাচ্য ও সিঙ্গাপুর হয়ে ঢুকছে
এসব পণ্য। এর বড় একটা বাজারও গড়ে উঠেছে ঢাকায়। প্রতি মাসে ২ হাজারের বেশি
ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে এসব বাজার থেকে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের সবচেয়ে বাজার হলো রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনের বিসিএস কম্পিউটার সিটি। এই মার্কেটে তথ্যপ্রযুক্তির পুরনো পণ্য বিক্রির তেমন কোনও অভিযোগ নেই। পণ্য বিক্রিতে ‘ফেয়ার প্র্যাক্টিস’ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। নকল, পুরনো পণ্য বিক্রির সবচেয়ে বড় মার্কেট হলো এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টার। এখানে নতুন ব্র্যান্ডের পণ্যের পাশাপাশি মানহীন, পুরনো তথা রিফার্বিশ (পুরনো জিনিসকে সাজিয়ে গুছিয়ে নতুনের মতো করে তোলা) প্রযুক্তি পণ্যও বিক্রি হচ্ছে। এই মার্কেটেই অন্তত ১৫টি দোকানের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে পুরনো ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে। এমনকি এই মার্কেটে গ্রে চ্যানেলে (নন চ্যানেল পণ্য) আসা মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেমও বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে প্রযুক্তি মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে নকল মেমরি কার্ড, এসডি কার্ড, কি-বোর্ড, মাউস, এক্সটার্নাল স্পিকার, র্যা ম, পেনড্রাইভও। হার্ডডিস্ক ও মাদারবোর্ডের নকল না হলেও বাজারে এখনও অনেক দিন আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের হার্ডডিস্ক মিলছে। এছাড়া রিফার্বিশ, হার্ডডিস্ক, র্যাম, মাদারবোর্ডও মিলছে বাজারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য (এমআরপি)-নীতিমালা ও ওয়ারেন্টি নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন করা গেলে এসব অনেকাংশে বন্ধ করা সম্ভব।
বর্তমানে পিসি ও পোর্টেবল হার্ডডিস্ক দুটোই নতুনের পাশাপাশি রিফার্বিশও বিক্রি হচ্ছে। বেশি রিফার্বিশ হচ্ছে তোশিবার পোর্টেবল হার্ডডিস্ক। অন্যদিকে ওয়েস্টার্ন ডিজিটালের (ডাব্লিউডি) পোর্টেবল ও পিসি দুটোই রিফার্বিশ বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে ক্রেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাজারে এখনও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হার্ডডিস্ক বিক্রি হয় যেগুলোর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন আগে হার্ডডিস্ক উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা যায়, বর্তমানে হার্ডডিস্ক তৈরি করছে তোশিবা, ডাব্লিউডি (ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল)ও সিগেট। অন্যগুলোর এখন কোনও অস্তিত্ব নেই। হার্ডডিস্ক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিগেট ১৯৮৯ সালে সিডিসি, ১৯৯৬ সালে কোনার, ২০০৬ সালে ম্যাক্সটর (ম্যাক্সটর ২০০০ সালে কোয়ান্টাম ও ১৯৯০ সালে মিনি স্ক্রাইবকে কিনে নেয়) এবং ২০১১ সালে স্যামসাংয়ের হার্ডডিস্ক উৎপাদনকারী ইউনিটকে কিনে নেয়। এছাড়া ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল (ডাব্লিউডি) ১৯৮৮ সালে ট্যান্ডনকে অধিগ্রহণ করে। আইবিএমকে ২০০২ সালে হিটাচি ও হিটাচির একটি অংশকে ২০১১ সালে ডাব্লিউডি এবং অন্য একটি ইউনিটকে ২০১২ সালে তোশিবা কিনে নেয়। তোশিবা এর আগে ২০০৯ সালে কিনে নেয় ফুজিৎসুর হার্ডডিস্ক ইউনিটকে।
রিফার্বিশ মাদারবোর্ড এখন বাজার সয়লাব। বাজারে এখন কমনট্রেন্ড হলো অষ্টম ও নবম জেনারেশনের মাদারবোর্ড। ডিডিআর-ফোর মানের নতুন মাদারবোর্ড বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকা থেকে। অন্যদিকে ডিডিআর-ফোর পুরনো মাদারবোর্ড রিফার্বিশ করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। এগুলোতে চিপসেট আপগ্রেড করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের পক্ষে অনেক সময় বোঝা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে এন্ট্রি লেভেলের মাদারবোর্ডও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, যা এখন পাওয়ার কথা নয় বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
সময় অনুসারে বাজারে এখন চলছে ডিডিআর-ফোর মানের র্যা ম। এটা কমন ট্রেন্ড হলেও বাজারে ডিডিআর-টু, থ্রি র্যা ম আসছে রিফার্বিশ হয়ে, চ্যানেলের বাইরে। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টারেই অন্তত ৫টি দোকানের খোঁজ পাওয়া গেছে, যারা নন চ্যানেলে আসা মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ-১০ অপারেটিং সিস্টেম বিক্রি করছে ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। অথচ যার দাম ১১ হাজার ৫০০ টাকা। এমআরপি নীতিমালা থাকলে কমদামে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হতো না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোডেই আরও কিছু ছোট মার্কেটে রয়েছে যেখানে পুরনো ও মানহীন পণ্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার মতো আইনগত ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে এ বিষয়ে প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলো উদ্যোগ নিতে পারে। সেখানে কোনও ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করা হবে।’
বিসিএস সভাপতির বক্তব্য
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি মো. শাহিদ উল মুনীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব দেখার জন্য আমাদের বিভিন্নমুখী উদ্যোগ রয়েছে। নিয়মিতভাবে সেসব উদ্যোগ সাম্প্রতিকীকরণ করা হয়ে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমআরপি নীতিমালা কার্যকর থাকলে নতুন পণ্য ছাড়া আরও কোনও পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হতো না। কিন্তু এমআরপি নীতিমালা বাস্তবায়ন পুরোপুরি সম্ভব না হওয়ায় এগুলো এখনও চলছে।’
বিসিএস সভাপতি বলেন, ‘প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীরা শতভাগ আন্তরিক হলে এমআরপি নীতিমালা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তখন নতুন পণ্যের গায়ে লেখার চেয়ে কম দামে বিক্রি করা যাবে না, পুরনো পণ্য তো বিক্রির প্রশ্নই উঠবে না। পণ্যে ওয়ারেন্টি দেওয়ার নীতিমালা শক্ত হাতে দেখভাল করা গেলে এসব আরও কমে আসবে।’
আমদানি নিষিদ্ধ পুরোনো মার্কেট মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টার!
দেশে পুরনো ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার আমাদানি নিষিদ্ধ। তারপরও থেমে নেই এসবের আমাদানি। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টারে গড়ে উঠেছে অন্তত ১৫টি পুরনো ল্যাপটপ বিক্রির দোকান। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোডের অন্য মার্কেটে রয়েছে আরও অন্তত ৫টি দোকার। যেসব দোকানে সবার চোখের সামনে বিক্রি হচ্ছে আমদানি নিষিদ্ধ পুরোনো ল্যাপটপ। এই এলাকার অন্যান্য মার্কেটেও বিক্রি হচ্ছে পুরনো কম্পিউটার।
অথচ আমদানি নীতি-২০১৮-২০২১ –এ যে ২১ ক্যাটাগরির পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে রিকন্ডিশন্ড অফিস ইক্যুইপমেন্ট (ফটোকপিয়ার, টাইপরাইটার, টেলেক্স, ফোন, ফ্যাক্স, পুরনো কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী ও পুরনো ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী)। সম্প্রতি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (একনেক) বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৮-২০২১ তিন বছর মেয়াদি আমদানি নীতি উপস্থাপন করলে তা পর্যালোচনা শেষে অনুমোদন দেওয়া হয়। তারপরও থেমে নেই এসবের আমদানি।
সম্প্রতি মাল্টিপ্ল্যান সিটি সেন্টারের ৯, ১০ ও ১১ তলা ঘুরে পুরনো ল্যাপটপ বিক্রির দোকান দেখা গেছে। এসব দোকানে বিভিন্ন তাকে সাজানো রয়েছে পুরনো কম্পিউটার। এসব দোকানের মধ্যে ফরাজী কম্পিউটার্সসহ বেশ কটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফরাজী কম্পিউটার্সের একজন বিক্রেতা জানান, তারা দুবাই ও সিঙ্গাপুর থেকে এসব ল্যাপটপ সংগ্রহ করেন। তাদের দাবি ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডার শাট ডাউন প্রজেক্টের (২, ৬ মাস মেয়াদি প্রকল্প) ল্যাপটপ। বিক্রি হয় নতুন মডেলের অর্ধেক দামে। কখনও কখনও অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি হয় ল্যাপটপ।
জানা যায়, এসব ল্যাপটপ বিভিন্ন প্রকল্পর মেয়াদ শেষে সংগ্রহ করে রাখা হয় দুবাই বা সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন স্টোরে। সেখানে ল্যাপটপগুলো ওয়াশ করে, পলিশ করে নতুনের মতো গেটআপ দেওয়া হয়। সেখান থেকে যাত্রীদের হাতে হাতে, কখনও লাগেজে হয়ে এসব পুরনো ল্যাপটপ দেশে ঢুকছে। বিক্রির জন্য উঠছে মাল্টিপ্ল্যানের কম্পিউটার সিটি সেন্টারের মতো এসব মার্কেটে।
মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন দোকানের তাকে শোভা পাচ্ছে এসব ল্যাপটপ। এইচপি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপই বেশি চোখে পড়লো। এরপরই রয়েছে ডেল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ। বাজারে এই দুটো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের চাহিদা বেশি থাকায় পুরনো ল্যাপটপ বিক্রিতেও শীর্ষে রয়েছে ব্র্যান্ড দুটো। আরও রয়েছে এসার, লেনোভোসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড।
আইটি মার্কেট সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশে প্রতিমাসে নতুন ল্যাপটপ বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার। অন্যদিকে পুরনো ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মাসে ২ হাজারের বেশি। দিন দিন এই হার বাড়ছে। পুরনো ল্যাপটপের ৭০ শতাংশ এইচপি, ডেল ১৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ রয়েছে ১৫ শতাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরনো ল্যাপটপ বিক্রেতা একটি প্রতিষ্ঠানের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ডেল ব্র্যান্ডের কোর আই-৫ এলিট সিরিজের নতুন ল্যাপটপের দাম ৬৭ বা ৬৮ হাজার টাকা। আমরা একই ল্যাপটপ (পুরনো) ল্যাপটপ বিক্রি করছি ৩৫ হাজার টাকায়। অনেক সময় ৩০ হাজার টাকায়ও আমরা বিক্রি করে থাকি।
বিভিন্ন সময়ে তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের বলতে শোনা গেছে, বাংলাদেশকে কোনোভাবেই পুরনো তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন হতে দেওয়া হবে না। অথচ দেশে পুরনো ল্যাপটপের বাজার বড় হচ্ছে। জমজমাট হয়ে উঠছে। শক্ত হাতে এসব দমন না করলে একদিনই পুরনো ল্যাপটপের মার্কেটই বড় হয়ে উঠবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টারের মহাসচিব ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, ‘মার্কেটে পুরনো ল্যাপটপ বিক্রি আমরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছি। তবে কেউ যদি পুরনো ল্যাপটপ এক্সচেঞ্জ (পুরনো ল্যাপটপ বদলে স্বল্প পুরনো ল্যাপটপ বদলে নেওয়া) করতে চায়, তাহলে সেটা করতে পারবে। সেটার অনুমতি আমরা দিয়েছি।’
তারা যা বলেন
দেশে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের বৃহৎ আমদানিকারক ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিসের অন্যতম পরিচালক মুজাহিদ আল-বেরুনী সুজন বলেন, ‘অনেক মানহীন ও পুরনো প্রযুক্তিপণ্য দেশে প্রবেশ করছে। এসব পণ্য ক্রেতারা বুঝে-না বুঝে কিনে কম্পিউটারের ক্ষতি করছেন। দীর্ঘদিন সুফল না পাওয়ায় তাদের বদনামের ভাগ নিতে হচ্ছে আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে গ্রে মার্কেটে (অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করা প্রযুক্তি পণ্য) প্রসেসরের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। বৈধভাবে আমদানিকারকদের দখলে মাত্র ১৫ শতাংশ প্রসেসরের বাজার রয়েছে। বৈধভাবে আমদানি করছে ৬ থেকে ৭টা প্রতিষ্ঠান। বাজার এখন ইন্টেল ও এএমডি প্রসেসর এগিয়ে আছে। অন্যদিকে ৮৫ শতাংশের বেশি রয়েছে গ্রে মার্কেটের দখলে। বাজারে এখন সপ্তম, অষ্টম ও নবম প্রজন্মের প্রসেসর কমন প্রোডাক্ট (বাজারে প্রচলিত) হলেও গ্রে মার্কেটে সেকেন্ড, থার্ড ও ফোর্থ জেনারেশনের প্রসেসর আসছে চীন থেকে। চীন থেকে খুঁজে খুঁজে এগুলোই আনা হচ্ছে। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা এগুলো কিনছেন। বাজারে এসব পণ্য বৈষম্য তৈরি করছে। মানের দিক দিয়ে ক্রেতারা ঠকছেন।’
গিগাবাইটের কান্ট্রি ম্যানেজার খাজা আনাস খান বলেন, ‘গিগাবাইটের মাদারবোর্ড নকল হয়নি। নকলের খবরও শোনা যায়নি। তবে কাছাকাছি নাম দিয়ে কিছু ব্র্যান্ড বাজারে ছাড়া হয়েছিল। এর মধ্যে একটি গিগাটেক। প্রায় একইরকম লোগো হওয়াতে নকলবাজরা ক্রেতাদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পেরেছিল। মানের দিক থেকেও ছিল নিম্ন। এটা কোনওভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, ব্র্যান্ডের মাদারমোর্ড ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হলেও এ ধরনের নিম্নমানের মাদারবোর্ড বিক্রি হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে। অনেক সময় আরও কম দামেও বিক্রি হয়।’
লজিটেক ব্র্যান্ডের বাংলাদেশের চ্যানেল ম্যানেজার তারেকুল হক নিপু বলেন, ‘লজিটেকেরও কিছু পণ্য কপি হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি নকল হচ্ছে মাউস।’ তিনি জানান, আসল মাউসের ভেতরে থাকে ব্যাটারি। অন্যদিকে নকল মাউসের পেছনের দিকে বাইরে থাকে ব্যাটারি। এটা দিয়েই আসল নকল চেনা যাবে।’ তবে, লজিটেক মাউসের নকলের পরিমাণ আগের চেয়ে কমেছে বলেও তিনি জানান।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের সবচেয়ে বাজার হলো রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনের বিসিএস কম্পিউটার সিটি। এই মার্কেটে তথ্যপ্রযুক্তির পুরনো পণ্য বিক্রির তেমন কোনও অভিযোগ নেই। পণ্য বিক্রিতে ‘ফেয়ার প্র্যাক্টিস’ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। নকল, পুরনো পণ্য বিক্রির সবচেয়ে বড় মার্কেট হলো এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টার। এখানে নতুন ব্র্যান্ডের পণ্যের পাশাপাশি মানহীন, পুরনো তথা রিফার্বিশ (পুরনো জিনিসকে সাজিয়ে গুছিয়ে নতুনের মতো করে তোলা) প্রযুক্তি পণ্যও বিক্রি হচ্ছে। এই মার্কেটেই অন্তত ১৫টি দোকানের খোঁজ পাওয়া গেছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে পুরনো ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে। এমনকি এই মার্কেটে গ্রে চ্যানেলে (নন চ্যানেল পণ্য) আসা মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেমও বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমানে প্রযুক্তি মার্কেটে বিক্রি হচ্ছে নকল মেমরি কার্ড, এসডি কার্ড, কি-বোর্ড, মাউস, এক্সটার্নাল স্পিকার, র্যা ম, পেনড্রাইভও। হার্ডডিস্ক ও মাদারবোর্ডের নকল না হলেও বাজারে এখনও অনেক দিন আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের হার্ডডিস্ক মিলছে। এছাড়া রিফার্বিশ, হার্ডডিস্ক, র্যাম, মাদারবোর্ডও মিলছে বাজারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্য (এমআরপি)-নীতিমালা ও ওয়ারেন্টি নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়ন করা গেলে এসব অনেকাংশে বন্ধ করা সম্ভব।
বর্তমানে পিসি ও পোর্টেবল হার্ডডিস্ক দুটোই নতুনের পাশাপাশি রিফার্বিশও বিক্রি হচ্ছে। বেশি রিফার্বিশ হচ্ছে তোশিবার পোর্টেবল হার্ডডিস্ক। অন্যদিকে ওয়েস্টার্ন ডিজিটালের (ডাব্লিউডি) পোর্টেবল ও পিসি দুটোই রিফার্বিশ বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে ক্রেতাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া বাজারে এখনও বিভিন্ন ব্র্যান্ডের হার্ডডিস্ক বিক্রি হয় যেগুলোর মধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন আগে হার্ডডিস্ক উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে বা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা যায়, বর্তমানে হার্ডডিস্ক তৈরি করছে তোশিবা, ডাব্লিউডি (ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল)ও সিগেট। অন্যগুলোর এখন কোনও অস্তিত্ব নেই। হার্ডডিস্ক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিগেট ১৯৮৯ সালে সিডিসি, ১৯৯৬ সালে কোনার, ২০০৬ সালে ম্যাক্সটর (ম্যাক্সটর ২০০০ সালে কোয়ান্টাম ও ১৯৯০ সালে মিনি স্ক্রাইবকে কিনে নেয়) এবং ২০১১ সালে স্যামসাংয়ের হার্ডডিস্ক উৎপাদনকারী ইউনিটকে কিনে নেয়। এছাড়া ওয়েস্টার্ন ডিজিটাল (ডাব্লিউডি) ১৯৮৮ সালে ট্যান্ডনকে অধিগ্রহণ করে। আইবিএমকে ২০০২ সালে হিটাচি ও হিটাচির একটি অংশকে ২০১১ সালে ডাব্লিউডি এবং অন্য একটি ইউনিটকে ২০১২ সালে তোশিবা কিনে নেয়। তোশিবা এর আগে ২০০৯ সালে কিনে নেয় ফুজিৎসুর হার্ডডিস্ক ইউনিটকে।
রিফার্বিশ মাদারবোর্ড এখন বাজার সয়লাব। বাজারে এখন কমনট্রেন্ড হলো অষ্টম ও নবম জেনারেশনের মাদারবোর্ড। ডিডিআর-ফোর মানের নতুন মাদারবোর্ড বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকা থেকে। অন্যদিকে ডিডিআর-ফোর পুরনো মাদারবোর্ড রিফার্বিশ করে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৭০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। এগুলোতে চিপসেট আপগ্রেড করে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ক্রেতাদের পক্ষে অনেক সময় বোঝা সম্ভব হয় না। অন্যদিকে এন্ট্রি লেভেলের মাদারবোর্ডও বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, যা এখন পাওয়ার কথা নয় বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
সময় অনুসারে বাজারে এখন চলছে ডিডিআর-ফোর মানের র্যা ম। এটা কমন ট্রেন্ড হলেও বাজারে ডিডিআর-টু, থ্রি র্যা ম আসছে রিফার্বিশ হয়ে, চ্যানেলের বাইরে। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টারেই অন্তত ৫টি দোকানের খোঁজ পাওয়া গেছে, যারা নন চ্যানেলে আসা মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ-১০ অপারেটিং সিস্টেম বিক্রি করছে ৬ হাজার ৫০০ টাকায়। অথচ যার দাম ১১ হাজার ৫০০ টাকা। এমআরপি নীতিমালা থাকলে কমদামে পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হতো না বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোডেই আরও কিছু ছোট মার্কেটে রয়েছে যেখানে পুরনো ও মানহীন পণ্য বিক্রির অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার মতো আইনগত ও প্রশাসনিক ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে এ বিষয়ে প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলো উদ্যোগ নিতে পারে। সেখানে কোনও ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে করা হবে।’
বিসিএস সভাপতির বক্তব্য
জানতে চাইলে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি মো. শাহিদ উল মুনীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এসব দেখার জন্য আমাদের বিভিন্নমুখী উদ্যোগ রয়েছে। নিয়মিতভাবে সেসব উদ্যোগ সাম্প্রতিকীকরণ করা হয়ে থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমআরপি নীতিমালা কার্যকর থাকলে নতুন পণ্য ছাড়া আরও কোনও পণ্য বিক্রি করা সম্ভব হতো না। কিন্তু এমআরপি নীতিমালা বাস্তবায়ন পুরোপুরি সম্ভব না হওয়ায় এগুলো এখনও চলছে।’
বিসিএস সভাপতি বলেন, ‘প্রযুক্তি পণ্য ব্যবসায়ীরা শতভাগ আন্তরিক হলে এমআরপি নীতিমালা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তখন নতুন পণ্যের গায়ে লেখার চেয়ে কম দামে বিক্রি করা যাবে না, পুরনো পণ্য তো বিক্রির প্রশ্নই উঠবে না। পণ্যে ওয়ারেন্টি দেওয়ার নীতিমালা শক্ত হাতে দেখভাল করা গেলে এসব আরও কমে আসবে।’
আমদানি নিষিদ্ধ পুরোনো মার্কেট মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টার!
দেশে পুরনো ল্যাপটপ, ডেস্কটপ কম্পিউটার আমাদানি নিষিদ্ধ। তারপরও থেমে নেই এসবের আমাদানি। ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টারে গড়ে উঠেছে অন্তত ১৫টি পুরনো ল্যাপটপ বিক্রির দোকান। এছাড়া এলিফ্যান্ট রোডের অন্য মার্কেটে রয়েছে আরও অন্তত ৫টি দোকার। যেসব দোকানে সবার চোখের সামনে বিক্রি হচ্ছে আমদানি নিষিদ্ধ পুরোনো ল্যাপটপ। এই এলাকার অন্যান্য মার্কেটেও বিক্রি হচ্ছে পুরনো কম্পিউটার।
অথচ আমদানি নীতি-২০১৮-২০২১ –এ যে ২১ ক্যাটাগরির পণ্য আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে রিকন্ডিশন্ড অফিস ইক্যুইপমেন্ট (ফটোকপিয়ার, টাইপরাইটার, টেলেক্স, ফোন, ফ্যাক্স, পুরনো কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী ও পুরনো ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী)। সম্প্রতি অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (একনেক) বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৮-২০২১ তিন বছর মেয়াদি আমদানি নীতি উপস্থাপন করলে তা পর্যালোচনা শেষে অনুমোদন দেওয়া হয়। তারপরও থেমে নেই এসবের আমদানি।
সম্প্রতি মাল্টিপ্ল্যান সিটি সেন্টারের ৯, ১০ ও ১১ তলা ঘুরে পুরনো ল্যাপটপ বিক্রির দোকান দেখা গেছে। এসব দোকানে বিভিন্ন তাকে সাজানো রয়েছে পুরনো কম্পিউটার। এসব দোকানের মধ্যে ফরাজী কম্পিউটার্সসহ বেশ কটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফরাজী কম্পিউটার্সের একজন বিক্রেতা জানান, তারা দুবাই ও সিঙ্গাপুর থেকে এসব ল্যাপটপ সংগ্রহ করেন। তাদের দাবি ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডার শাট ডাউন প্রজেক্টের (২, ৬ মাস মেয়াদি প্রকল্প) ল্যাপটপ। বিক্রি হয় নতুন মডেলের অর্ধেক দামে। কখনও কখনও অর্ধেকেরও কম দামে বিক্রি হয় ল্যাপটপ।
জানা যায়, এসব ল্যাপটপ বিভিন্ন প্রকল্পর মেয়াদ শেষে সংগ্রহ করে রাখা হয় দুবাই বা সিঙ্গাপুরের বিভিন্ন স্টোরে। সেখানে ল্যাপটপগুলো ওয়াশ করে, পলিশ করে নতুনের মতো গেটআপ দেওয়া হয়। সেখান থেকে যাত্রীদের হাতে হাতে, কখনও লাগেজে হয়ে এসব পুরনো ল্যাপটপ দেশে ঢুকছে। বিক্রির জন্য উঠছে মাল্টিপ্ল্যানের কম্পিউটার সিটি সেন্টারের মতো এসব মার্কেটে।
মার্কেট ঘুরে দেখা গেল, বিভিন্ন দোকানের তাকে শোভা পাচ্ছে এসব ল্যাপটপ। এইচপি ব্র্যান্ডের ল্যাপটপই বেশি চোখে পড়লো। এরপরই রয়েছে ডেল ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ। বাজারে এই দুটো ব্র্যান্ডের ল্যাপটপের চাহিদা বেশি থাকায় পুরনো ল্যাপটপ বিক্রিতেও শীর্ষে রয়েছে ব্র্যান্ড দুটো। আরও রয়েছে এসার, লেনোভোসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ড।
আইটি মার্কেট সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে দেশে প্রতিমাসে নতুন ল্যাপটপ বিক্রি হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার। অন্যদিকে পুরনো ল্যাপটপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি মাসে ২ হাজারের বেশি। দিন দিন এই হার বাড়ছে। পুরনো ল্যাপটপের ৭০ শতাংশ এইচপি, ডেল ১৫ শতাংশ এবং অন্যান্য ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ রয়েছে ১৫ শতাংশ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুরনো ল্যাপটপ বিক্রেতা একটি প্রতিষ্ঠানের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, ডেল ব্র্যান্ডের কোর আই-৫ এলিট সিরিজের নতুন ল্যাপটপের দাম ৬৭ বা ৬৮ হাজার টাকা। আমরা একই ল্যাপটপ (পুরনো) ল্যাপটপ বিক্রি করছি ৩৫ হাজার টাকায়। অনেক সময় ৩০ হাজার টাকায়ও আমরা বিক্রি করে থাকি।
বিভিন্ন সময়ে তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের বলতে শোনা গেছে, বাংলাদেশকে কোনোভাবেই পুরনো তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের ডাম্পিং স্টেশন হতে দেওয়া হবে না। অথচ দেশে পুরনো ল্যাপটপের বাজার বড় হচ্ছে। জমজমাট হয়ে উঠছে। শক্ত হাতে এসব দমন না করলে একদিনই পুরনো ল্যাপটপের মার্কেটই বড় হয়ে উঠবে বলে সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্ল্যান কম্পিউটার সিটি সেন্টারের মহাসচিব ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি সুব্রত সরকার বলেন, ‘মার্কেটে পুরনো ল্যাপটপ বিক্রি আমরা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দিয়েছি। তবে কেউ যদি পুরনো ল্যাপটপ এক্সচেঞ্জ (পুরনো ল্যাপটপ বদলে স্বল্প পুরনো ল্যাপটপ বদলে নেওয়া) করতে চায়, তাহলে সেটা করতে পারবে। সেটার অনুমতি আমরা দিয়েছি।’
তারা যা বলেন
দেশে তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের বৃহৎ আমদানিকারক ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠান স্মার্ট টেকনোলজিসের অন্যতম পরিচালক মুজাহিদ আল-বেরুনী সুজন বলেন, ‘অনেক মানহীন ও পুরনো প্রযুক্তিপণ্য দেশে প্রবেশ করছে। এসব পণ্য ক্রেতারা বুঝে-না বুঝে কিনে কম্পিউটারের ক্ষতি করছেন। দীর্ঘদিন সুফল না পাওয়ায় তাদের বদনামের ভাগ নিতে হচ্ছে আমাদের।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে গ্রে মার্কেটে (অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করা প্রযুক্তি পণ্য) প্রসেসরের উপস্থিতি বেড়ে গেছে। বৈধভাবে আমদানিকারকদের দখলে মাত্র ১৫ শতাংশ প্রসেসরের বাজার রয়েছে। বৈধভাবে আমদানি করছে ৬ থেকে ৭টা প্রতিষ্ঠান। বাজার এখন ইন্টেল ও এএমডি প্রসেসর এগিয়ে আছে। অন্যদিকে ৮৫ শতাংশের বেশি রয়েছে গ্রে মার্কেটের দখলে। বাজারে এখন সপ্তম, অষ্টম ও নবম প্রজন্মের প্রসেসর কমন প্রোডাক্ট (বাজারে প্রচলিত) হলেও গ্রে মার্কেটে সেকেন্ড, থার্ড ও ফোর্থ জেনারেশনের প্রসেসর আসছে চীন থেকে। চীন থেকে খুঁজে খুঁজে এগুলোই আনা হচ্ছে। দাম কম হওয়ায় ক্রেতারা এগুলো কিনছেন। বাজারে এসব পণ্য বৈষম্য তৈরি করছে। মানের দিক দিয়ে ক্রেতারা ঠকছেন।’
গিগাবাইটের কান্ট্রি ম্যানেজার খাজা আনাস খান বলেন, ‘গিগাবাইটের মাদারবোর্ড নকল হয়নি। নকলের খবরও শোনা যায়নি। তবে কাছাকাছি নাম দিয়ে কিছু ব্র্যান্ড বাজারে ছাড়া হয়েছিল। এর মধ্যে একটি গিগাটেক। প্রায় একইরকম লোগো হওয়াতে নকলবাজরা ক্রেতাদের মনে বিভ্রান্তি তৈরি করতে পেরেছিল। মানের দিক থেকেও ছিল নিম্ন। এটা কোনওভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। তিনি জানান, ব্র্যান্ডের মাদারমোর্ড ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার উপরে বিক্রি হলেও এ ধরনের নিম্নমানের মাদারবোর্ড বিক্রি হয় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার মধ্যে। অনেক সময় আরও কম দামেও বিক্রি হয়।’
লজিটেক ব্র্যান্ডের বাংলাদেশের চ্যানেল ম্যানেজার তারেকুল হক নিপু বলেন, ‘লজিটেকেরও কিছু পণ্য কপি হচ্ছে। এর মধ্যে বেশি নকল হচ্ছে মাউস।’ তিনি জানান, আসল মাউসের ভেতরে থাকে ব্যাটারি। অন্যদিকে নকল মাউসের পেছনের দিকে বাইরে থাকে ব্যাটারি। এটা দিয়েই আসল নকল চেনা যাবে।’ তবে, লজিটেক মাউসের নকলের পরিমাণ আগের চেয়ে কমেছে বলেও তিনি জানান।
No comments