শেরপুরে গারো পাহাড়ে যত্রতত্র বালু উত্তোলন, রাজস্ববঞ্চিত সরকার by মুগনিউর রহমান মনি
শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে যত্রতত্র চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।
শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার অন্তত ১০টি স্থানের পাহাড়ি ছড়া,
খাল ও নদীতে শ্যালো মেশিন বসিয়ে দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
সেই সাথে বনের গাছপালা ও পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করে প্রতিদিন ট্রাক, ট্রলি
ভর্তি করে এসব বালু দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছে প্রভাবশালী
সিন্ডিকেট। বন ও পরিবেশের ক্ষতি হলেও এদের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ
নেই। প্রভাবশালী মহল হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতেও সাহস দেখায় না কেউ।
এদিকে যত্রতত্র অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছেন
বালুমহাল ইজারাদাররা।
সরেজমিন দেখা গেছে, গারো পাহাড়ের সোমেশ্বরী, মহারশি, কালঘোষা, ভোগাই চেল্লাখালী নদীসহ বিভিন্ন নদী ও ছড়ায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া, বাবেলাকোনা এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা, ছোট গজনী, রামেরকুড়া, বাকাকুড়া, ফুলহারী, গান্ধিগাঁওসহ অন্তত ১০টি স্পটে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় নদী তীরবর্তী এলাকার বসতি, শাল গজারি বনের গাছপালা ও আবাদি জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে। সেই সাথে দিনরাত শ্যালো মেশিনের বিকট আওয়াজে বন্যপ্রাণী ও পাখিসহ পাহাড়ি পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। কিছু এলাকার গ্রামীণ সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার সন্ধ্যাকুড়ায় মহারশি নদীর সেতু, বাকাকুড়া সেতুসহ কয়েকটি সেতু-কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
গারো পাহাড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং ইরি-বোরো মওসুমে নদীর উজানে বাঁধ দেয়ায় বালু উত্তোলন করতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়েছে সওদ বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপনসহ বালুমহালের ইজারাদাররা। ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপন জানান, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করে কম দামে বিক্রি করায় তাদের বালু অবিক্রিত পড়ে রয়েছে। তিনি জানান, গত বছর ঝিনাইগাতীর সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকুচা এলাকায় ৬.৫১ একর জমির বালুমহাল ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় ইজারা নিয়ে মাত্র ৬০ লাখ টাকার বালু বিক্রি করতে পেরেছিলেন। এ বছর ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশী নদীর ফাখরাবাদ বালু মহাল ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা নেয়া হলেও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে তাদের বালু অবিক্রিত রয়ে যাচ্ছে। এবারো তিনিসহ ইজারাদাররা লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন। এ বালুমহালটি ইতঃপূর্বে ছামিউল ফকির মাত্র ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে আদালতে একটি রিটের দোহাই দিয়ে ১৪ বছর ধরে বালু উত্তোলন করায় সরকার প্রায় ৬ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ছামিউল ফকিরের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা হয় এবং তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন রিট নিষ্পত্তির ভিত্তিতে সওদ বিল্ডার্সকে ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বালুমহাল ইজারা দিলে সওদ বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান স্বপন হাইকোর্টে ছামিউল ফকিরের রিটের নিষ্পত্তি চাইলে আদালতের নির্দেশে তা নিষ্পত্তি হয়।
বালুমহাল ইজারাদার স্বপন আরো জানান, গত বছর তাওয়াকুচায় বালুমহাল ইজারা নিয়ে ৬০ লাখ টাকা লোকসান গুনে জেলা প্রশাসনের কাছে সুবিচার না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়াও তিনি মহারশী নদীর ফাখরাবাদে বালু মহাল ইজারা পেয়েছেন; কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এবারো তাদের লোকসান গুনতে হবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কেউ আর বালুমহাল ইজারা নিতে আসবে না বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গান্ধিগাঁও, ভালুকা, পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের অনেকে জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বনের ক্ষতি এবং তারা নিজেরাও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনার উল্লাহ জানান, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে পাহাড়ের বিভিন্ন ছড়া ও নদী থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন করছে। এতে করে সংরক্ষিত গজারি বন, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ইলিছুর রহমান বলেন, বন বিভাগে লোকবল কম থাকায় রাতের বেলায় গহিন বনে অভিযান চালানো অনেকটাই অসম্ভব। তবে দিনের বেলায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি শ্যালো ইঞ্জিন জব্দও করা হয়েছে। বর্তমানে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ জানান, তাদের কাছে অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর এলেই তারা তা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে কেউ ছাড় পাবে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, গারো পাহাড়ের সোমেশ্বরী, মহারশি, কালঘোষা, ভোগাই চেল্লাখালী নদীসহ বিভিন্ন নদী ও ছড়ায় শ্যালো মেশিন বসিয়ে বালু তোলা হচ্ছে। শ্রীবরদী উপজেলার কর্ণঝোড়া, বাবেলাকোনা এবং ঝিনাইগাতী উপজেলার তাওয়াকুচা, ছোট গজনী, রামেরকুড়া, বাকাকুড়া, ফুলহারী, গান্ধিগাঁওসহ অন্তত ১০টি স্পটে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় নদী তীরবর্তী এলাকার বসতি, শাল গজারি বনের গাছপালা ও আবাদি জমি ভাঙনের কবলে পড়েছে। সেই সাথে দিনরাত শ্যালো মেশিনের বিকট আওয়াজে বন্যপ্রাণী ও পাখিসহ পাহাড়ি পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে। কিছু এলাকার গ্রামীণ সড়ক হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়া উপজেলার সন্ধ্যাকুড়ায় মহারশি নদীর সেতু, বাকাকুড়া সেতুসহ কয়েকটি সেতু-কালভার্ট ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
গারো পাহাড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এবং ইরি-বোরো মওসুমে নদীর উজানে বাঁধ দেয়ায় বালু উত্তোলন করতে না পেরে লোকসানের মুখে পড়েছে সওদ বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপনসহ বালুমহালের ইজারাদাররা। ইজারাদার আসাদুজ্জামান স্বপন জানান, অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করে কম দামে বিক্রি করায় তাদের বালু অবিক্রিত পড়ে রয়েছে। তিনি জানান, গত বছর ঝিনাইগাতীর সোমেশ্বরী নদীর তাওয়াকুচা এলাকায় ৬.৫১ একর জমির বালুমহাল ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় ইজারা নিয়ে মাত্র ৬০ লাখ টাকার বালু বিক্রি করতে পেরেছিলেন। এ বছর ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশী নদীর ফাখরাবাদ বালু মহাল ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় ইজারা নেয়া হলেও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে তাদের বালু অবিক্রিত রয়ে যাচ্ছে। এবারো তিনিসহ ইজারাদাররা লোকসানের মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন। এ বালুমহালটি ইতঃপূর্বে ছামিউল ফকির মাত্র ১ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় লিজ নিয়ে আদালতে একটি রিটের দোহাই দিয়ে ১৪ বছর ধরে বালু উত্তোলন করায় সরকার প্রায় ৬ কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে ছামিউল ফকিরের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা হয় এবং তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন রিট নিষ্পত্তির ভিত্তিতে সওদ বিল্ডার্সকে ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টাকায় বালুমহাল ইজারা দিলে সওদ বিল্ডার্সের স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান স্বপন হাইকোর্টে ছামিউল ফকিরের রিটের নিষ্পত্তি চাইলে আদালতের নির্দেশে তা নিষ্পত্তি হয়।
বালুমহাল ইজারাদার স্বপন আরো জানান, গত বছর তাওয়াকুচায় বালুমহাল ইজারা নিয়ে ৬০ লাখ টাকা লোকসান গুনে জেলা প্রশাসনের কাছে সুবিচার না পেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন, যা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এ ছাড়াও তিনি মহারশী নদীর ফাখরাবাদে বালু মহাল ইজারা পেয়েছেন; কিন্তু অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে এবারো তাদের লোকসান গুনতে হবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কেউ আর বালুমহাল ইজারা নিতে আসবে না বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গান্ধিগাঁও, ভালুকা, পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের অনেকে জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় বনের ক্ষতি এবং তারা নিজেরাও ক্ষতির মুখে পড়েছে।
কাংশা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনার উল্লাহ জানান, বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় একটি প্রভাবশালী মহল অবৈধভাবে পাহাড়ের বিভিন্ন ছড়া ও নদী থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন করছে। এতে করে সংরক্ষিত গজারি বন, বন্যপ্রাণী ও পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা ইলিছুর রহমান বলেন, বন বিভাগে লোকবল কম থাকায় রাতের বেলায় গহিন বনে অভিযান চালানো অনেকটাই অসম্ভব। তবে দিনের বেলায় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি শ্যালো ইঞ্জিন জব্দও করা হয়েছে। বর্তমানে বালু উত্তোলন বন্ধ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ জানান, তাদের কাছে অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর এলেই তারা তা বন্ধ করে দিচ্ছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দেয়া হবে না। এ বিষয়ে কেউ ছাড় পাবে না।
ঝিনাইগাতীর শইরাচালি এলাকার গজারি বনের ভেতরে শ্যালো মেশিনে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে বালু :নয়া দিগন্ত |
No comments