ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আশার প্রদীপ নিভে গেল by রোবায়েত ফেরদৌস
২০১৮–এর
জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও সিটি নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার পর ডাকসু নির্বাচন
নিয়ে একটি আশা টিমটিম করে জ্বলছিল। ওই দুই নির্বাচনের পর নির্বাচনী
ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে
সেই আশার প্রদীপ এবার নিভে গেল কি না, সেই প্রশ্নের জন্ম হলো। ডাকসুর এই
নির্বাচন, নির্বাচনী ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেক কি না এবং এর মধ্য দিয়ে
আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি সংকটে পড়ে গেলাম কি না, সেই আশঙ্কাও দেখা দিল। এ
থেকে সহজ উত্তরণের পথ নেই। ভেবেছিলাম এরপর দেশের সব কটি বিশ্ববিদ্যালয় এবং
কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে। আর এর মধ্য দিয়ে দেশে একটি তরুণ নেতৃত্ব
বেরিয়ে আসবে। সেটি প্রথম ধাক্কা খেল এই ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।
অনেকে বলেন, ‘ডাকসু একটি মিনি পার্লামেন্ট। এটি দেশের গণতন্ত্রের সূতিকাগার’। এর মধ্যে হয়তো কিছুটা অতিশয়োক্তি আছে, কিন্তু কিছু সত্যও এর মধ্যে লুকিয়ে আছে। সেই সত্যটিও এর মধ্য দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেল। কয়েকটি হলে আমি দেখেছি ভোটারদের কৃত্রিম লাইন, যেটা অনেক ভোটারও অভিযোগ আকারে বলছিলেন। ভোট দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছেন। এক ছাত্রকে আমি দেখলাম, সে সাভার থেকে আসে। তিন-চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে সে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অনেকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিতে না পেরে ফিরেও গেছেন। রোকেয়া হলে আমরা দেখলাম দুই দফা ভোট হলো, আবার তা বাতিলও হলো। আর কুয়েত-মৈত্রী হলে যা ঘটল, তা খুবই ন্যক্কারজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এমন কলঙ্ক আর হতে পারে না। আমি মনে করি, এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।
কুয়েত-মৈত্রী হলের প্রভোস্টকে যখন সরিয়ে দেওয়া হলো, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা দেখে আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু এরপরে আবার যা হলো, তা আমাদের ব্যথিত করেছে। সুফিয়া কামাল হলে দেখলাম, একটি মেয়ে বৈধ কাগজপত্র দেখানোর পরেও তাকে ভোট দিতে দেওয়া হলো না। আমি মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তেমনি ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের দায়িত্ব থাকা প্রশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হলো। কাজেই শিক্ষক হিসেবে আমরা যে একটি উচ্চ নৈতিকতার কথা বলতাম, সেটি আর থাকল না। এর কারণ হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষের শিক্ষকেরাই হলসহ বিভিন্ন প্রশাসনের দায়িত্ব পান। ফলে তাঁদের ভেতরে কোথাও এমনটা থাকে যে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনকে জয়ী করতে হবে। এটা হয়তো সরকারপ্রধান চান না। তিনি হয়তো চান, সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।
কিন্তু এই যে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। যাঁরা একজন শিক্ষককে বড় পদ এনে দেন, তার বিনিময়ে তাঁর পক্ষে কাজ করার কোনো পূর্বশর্ত তৈরি হয় কি না, সেটা এবার সুস্পষ্টভাবে সামনে এল। প্রশাসনের বড় পদে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যেও এই ক্ষমতার সেতুবন্ধের ধারণা কাজ করে। এটা একধরনের অন্তর্গত দাসত্ব তৈরি করে।
আর এই নির্বাচনে যাঁরা বিরোধী ছিলেন, তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, এই নির্বাচনে তাঁরা জয়ী হয়ে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যে প্রশ্নগুলো উঠেছিল, তা আবারও তাঁরা তুলবেন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জাতীয় পর্যায়ের সংগ্রাম আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে গড়ে তুলবেন তাঁরা। সেই ভয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে বাড়তি ভয় হিসেবে কাজ করেছিল বলে আমার মনে হয়। কাজেই শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতির লেজুড়বৃত্তি এর মধ্য দিয়ে এক হয়ে গেল।
এই ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতির কোনো গুণগত পরিবর্তন হবে না বলে আমার মনে হয়। আমরা এই নির্বাচনকে নিয়ে দেশের গুণগত পরিবর্তনের যে আশা দেখেছিলাম, তা এবার বাস্তবতায় এসে হোঁচট খেল।
অনেকে বলেন, ‘ডাকসু একটি মিনি পার্লামেন্ট। এটি দেশের গণতন্ত্রের সূতিকাগার’। এর মধ্যে হয়তো কিছুটা অতিশয়োক্তি আছে, কিন্তু কিছু সত্যও এর মধ্যে লুকিয়ে আছে। সেই সত্যটিও এর মধ্য দিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেল। কয়েকটি হলে আমি দেখেছি ভোটারদের কৃত্রিম লাইন, যেটা অনেক ভোটারও অভিযোগ আকারে বলছিলেন। ভোট দিতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছেন। এক ছাত্রকে আমি দেখলাম, সে সাভার থেকে আসে। তিন-চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে সে ভোট দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অনেকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিতে না পেরে ফিরেও গেছেন। রোকেয়া হলে আমরা দেখলাম দুই দফা ভোট হলো, আবার তা বাতিলও হলো। আর কুয়েত-মৈত্রী হলে যা ঘটল, তা খুবই ন্যক্কারজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এমন কলঙ্ক আর হতে পারে না। আমি মনে করি, এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।
কুয়েত-মৈত্রী হলের প্রভোস্টকে যখন সরিয়ে দেওয়া হলো, তখন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা দেখে আমরা আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু এরপরে আবার যা হলো, তা আমাদের ব্যথিত করেছে। সুফিয়া কামাল হলে দেখলাম, একটি মেয়ে বৈধ কাগজপত্র দেখানোর পরেও তাকে ভোট দিতে দেওয়া হলো না। আমি মনে করি, জাতীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে, তেমনি ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনের দায়িত্ব থাকা প্রশাসন প্রশ্নবিদ্ধ হলো। কাজেই শিক্ষক হিসেবে আমরা যে একটি উচ্চ নৈতিকতার কথা বলতাম, সেটি আর থাকল না। এর কারণ হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষের শিক্ষকেরাই হলসহ বিভিন্ন প্রশাসনের দায়িত্ব পান। ফলে তাঁদের ভেতরে কোথাও এমনটা থাকে যে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনকে জয়ী করতে হবে। এটা হয়তো সরকারপ্রধান চান না। তিনি হয়তো চান, সুষ্ঠু নির্বাচন হোক।
কিন্তু এই যে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে একটি মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। যাঁরা একজন শিক্ষককে বড় পদ এনে দেন, তার বিনিময়ে তাঁর পক্ষে কাজ করার কোনো পূর্বশর্ত তৈরি হয় কি না, সেটা এবার সুস্পষ্টভাবে সামনে এল। প্রশাসনের বড় পদে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যেও এই ক্ষমতার সেতুবন্ধের ধারণা কাজ করে। এটা একধরনের অন্তর্গত দাসত্ব তৈরি করে।
আর এই নির্বাচনে যাঁরা বিরোধী ছিলেন, তাঁরা হয়তো ভেবেছিলেন, এই নির্বাচনে তাঁরা জয়ী হয়ে জাতীয় নির্বাচন ঘিরে যে প্রশ্নগুলো উঠেছিল, তা আবারও তাঁরা তুলবেন। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জাতীয় পর্যায়ের সংগ্রাম আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে গড়ে তুলবেন তাঁরা। সেই ভয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে বাড়তি ভয় হিসেবে কাজ করেছিল বলে আমার মনে হয়। কাজেই শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতির লেজুড়বৃত্তি এর মধ্য দিয়ে এক হয়ে গেল।
এই ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতির কোনো গুণগত পরিবর্তন হবে না বলে আমার মনে হয়। আমরা এই নির্বাচনকে নিয়ে দেশের গুণগত পরিবর্তনের যে আশা দেখেছিলাম, তা এবার বাস্তবতায় এসে হোঁচট খেল।
সুষ্ঠু
নির্বাচন হলে সাধারণ শিক্ষার্থী সংরক্ষণ পরিষদ প্যানেল থেকে সবাই
নির্বাচিত হতেন বলে মন্তব্য করেছেন নবনির্বাচিত ভিপি নুরল হক নুর। ফেসবুকে
দেয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ দাবি করেন। নুর এই প্যানেল থেকে তার প্রধান
প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীর চেয়ে প্রায় ২ হাজার
বেশি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।
নবনির্বাচিত ভিপি দাবি তার স্ট্যাটাসে বলেন, ‘রাতে ব্যালটে সিল মেরে বক্স ভর্তি, বাইরের শিক্ষার্থীরা যেন ভোট দিতে না পারে সেজন্য গণরুমের শিক্ষার্থী এবং নিজেদের লেজুরবৃত্তিক অপরাজনীতি করা নেতা-কর্মীদের দিয়ে বিশাল লাইন করানো। এতো কারচুপি, অনিয়ম, রাতভর ইঞ্জিনিয়ারিং করেও নুর এবং আখতারকে হারাতে পারেনি।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের পুরো প্যানেল জিততো। তার অন্যতম উদাহরণ সুফিয়া কামাল, শামসুন্নাহার ও কুয়েত মৈত্রী হল।
নবনির্বাচিত ভিপি দাবি তার স্ট্যাটাসে বলেন, ‘রাতে ব্যালটে সিল মেরে বক্স ভর্তি, বাইরের শিক্ষার্থীরা যেন ভোট দিতে না পারে সেজন্য গণরুমের শিক্ষার্থী এবং নিজেদের লেজুরবৃত্তিক অপরাজনীতি করা নেতা-কর্মীদের দিয়ে বিশাল লাইন করানো। এতো কারচুপি, অনিয়ম, রাতভর ইঞ্জিনিয়ারিং করেও নুর এবং আখতারকে হারাতে পারেনি।
সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের পুরো প্যানেল জিততো। তার অন্যতম উদাহরণ সুফিয়া কামাল, শামসুন্নাহার ও কুয়েত মৈত্রী হল।
আলোচিত
নির্বাচনে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ
পরিষদের নুরুল হক নুর। ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানী সাধারণ সম্পাদক (জিএস)
পদে নির্বাচিত হয়েছেন। সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামান এই ফলাফল ঘোষণা
করেন। ঘোষিত ফলাফল অনুসারে সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে জয়ী হয়েছেন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন। ডাকসুর ২৫
পদের মধ্যে ২৩টিতেই ছাত্রলীগের প্রার্থীরা নির্বাচিত হন। সমাজসেবা সম্পাদক
পদে নির্বাচিত হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্রার্থী আখতার
হোসেন। ভিপি পদে নুরুল হক পান ১১ হাজার ৬২ ভোট। ছাত্রলীগ সভাপতি শোভন
পেয়েছেন ৯ হাজার ১২৯ ভোট।
ফল ঘোষণার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নুরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা তার বহিস্কারের দাবি করেন। গতকাল নির্বাচন চলাকালে ভোট কেন্দ্রে অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যান নুর। যদিও দুপুরের পরই ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সব প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে।
ফল ঘোষণার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নুরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা তার বহিস্কারের দাবি করেন। গতকাল নির্বাচন চলাকালে ভোট কেন্দ্রে অনিয়মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে যান নুর। যদিও দুপুরের পরই ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি সব প্যানেল নির্বাচন বর্জন করে।
No comments