ক্রাইস্টচার্চ হামলা: দুই মিনিট স্তব্ধ নিউজিল্যান্ড, সংহতি অস্ট্রেলিয়ারও
শ্বেতাঙ্গ
আধিপত্যবাদে বিশ্বাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট ক্রাইস্টচার্চের যে মসজিদে হামলা
করে মুসলিম-বিদ্বেষ উস্কে দিতে চেয়েছিলেন, মাত্র সাতদিনের ব্যবধানে সেই
মসজিদেই নতুন উদ্যমে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়েছেন হাজারো মানুষ। ধর্ম, বর্ণ
নির্বিশেষে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ গতকাল ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদ
প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে মুসলিমদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। নিজেরা পাহারা
দিয়ে হাজারো মুসল্লিকে নির্বিঘ্নে জুমার নামাজ আদায় করার সুযোগ দিয়েছেন।
এমনকি মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসে কিউই বাইকারদের একটি
দল। তারা নামাজরত মুসল্লিদের ঘিরে টহল দিতে থাকে। প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা
আরডেনসহ শোক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া নারীরা মুসলিম বিধান অনুসারে তাদের মাথা
ঢেকে রাখেন। ক্রাইস্টচার্চে নিহতদের প্রতি সম্মান দেখাতে পুরো দেশে ২ মিনিট
নীরবতা পালন করা হয়। শুধু নিউজিল্যান্ডই না, একই রকম শোক পালন করা হয়েছে
অস্ট্রেলিয়াতেও।
গতকাল অস্ট্রেলিয়ার মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীরা ক্রাইস্টচার্চে নিহতদের সম্মানে দাঁড়িয়ে যান। এমনকি যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তারাও নিউজিল্যান্ডের অনুকরণে ২ মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর গতকাল সেখানে হাজার হাজার মুসল্লি জুমার নামাজে অংশ নিয়ে সে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শুধু মুসল্লিরা নয় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সহমর্মিতা জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিল নিউজিল্যান্ডের হাজারো অধিবাসী। গত শুক্রবার নিহত হওয়া ৫০ জনের স্মরণে ২ মিনিট নীরবতা পালন করেন তারা। উপস্থিত প্রায় ২০ হাজার মানুষের মধ্যে হ্যাগলি পার্কে বক্তৃতা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন। আল-নুর মসজিদের সামনে যখন তিনি বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন সেই সমাবেশ জুড়ে ছিল পিনপতন নীরবতা।
নিউজিল্যান্ডের ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই ছিল শরণার্থী কিংবা অভিবাসী। তাদের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, সোমালিয়া, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের নাগরিক। বক্তব্যের শুরুতেই নিহতদের পরিবারের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরডেন বলেন, নিউজিল্যান্ডের সব মানুষ আপনাদের সঙ্গে শোকাহত। আমরা আজ এক।
নামাজের ইমামতি করা ইমাম গামাল ফৌদা সমাবেশে বলেন, আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা এখনো বেঁচে আছি, একসঙ্গে। আমরা কাউকে আমাদের মাঝের এ বন্ধন ভাঙতে দেব না। তার বক্তব্যের সমর্থনে উপস্থিত মানুষ সবাই হাত তুলে ঐক্য প্রদর্শন করে। তিনি আরো বলেন, যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের বলতে চাই আপনি যাকে ভালোবাসতেন তাদের রক্ত বৃথা যায়নি। সেই রক্ত আশার বীজ রোপণ করেছে। জুমার নামাজ হতে শুরু করে সমাবেশ ও নীরবতা পালন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় চ্যানেল ও রেডিওতে সমপ্রচার করা হয়েছে।
নিউজিল্যান্ড জুড়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ মানববন্ধন করে মুসল্লিদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দেশটির স্কুল, ক্যাফে এমনকি অফিসেও নিহতদের জন্য আলাদা আলাদা প্রার্থনা করা হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চে ৩০ মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মুসল্লি বলেন, এটি এক বিশেষ বেহেস্ত। এখানে আমরা প্রতিদিন লাশ দাফন করি না। প্রতিদিন আমরা আমাদের ২৭ ভাই-বোনকে কবর দেই না। প্রথমে কবর দেয়া হয় নায়িম রাশিদ নামের একজনকে। তিনি ওই হামলাকারীকে আটকাতে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন।
হামলাকারী ব্রেনটন ট্যারেন্ট (২৮) একজন সন্দেহভাজন শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী। বর্তমানে সে রিমান্ডে রয়েছে। আগামী ৫ই এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে তখন তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আনা হবে।
টিভি-রেডিওতে আজান ও নামাজ সরাসরি প্রচার, ২ মিনিট নীরবতা পালন: গতকাল ক্রাইস্টচার্চের সেই মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নামে। এ সময় মুসলিমদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে আজান এবং জুমার নামাজ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং রেডিওতে সরাসরি সমপ্রচার করা হয়েছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই মিনিট নীরবতাও পালন করেছে নিউজিল্যান্ডের মানুষ। এমনকি রেডিও, টেলিভিশনেও দুই মিনিট সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়। গতকাল আল নুর মসজিদের কাছে হ্যাগলি পার্কে সমবেত হন হাজার হাজার মানুষ। তারা মুসলিমদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সেখানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেনও। মুসলিম সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ড আপনাদের দুঃখে ব্যথিত।
জুমার নামাজের ইমামতি করেন ইমাম গামাল ফৌদা। ওই সময় তিনি বলেন, বন্দুকধারী বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আজ একই জায়গা থেকে তাকিয়ে মানুষের ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখতে পাচ্ছি। আমাদের হৃদয় ভেঙেছে। কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি, আমরা একসঙ্গে আছি। আমাদের মধ্যে বিভক্তি আনতে দেব না কাউকে।
প্রধানমন্ত্রীর হাদিস পাঠ: গতকাল ক্রাইস্টচার্চে আবেগঘন বক্তৃতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন। মুসলিমদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে তিনি মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর হাদিসের উদ্ধৃতি দেন। মাথায় ওড়না পরিহিতা আরডেন পাঠ করেন- ‘নবী মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, মুসলিমরা এক শরীরের মতো। যখন শরীরের কোনো অংশ আক্রান্ত হয়, পুরো শরীর তার ব্যথা অনুভব করে।’ তেমনি আপনাদের ওপর হামলায় গোটা নিউজিল্যান্ড শোকাহত। আমরা আজ এক। প্রধানমন্ত্রীর এই আবেগঘন বক্তৃতা বিশ্ববাসীর হৃদয়ে দাগ কেটেছে। স্থানীয় অধিবাসী জন ক্লার্ক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বার্তা খুবই পরিষ্কার। আমরা নিজেদের উদার সম্প্রদায় মনে করি। কিন্তু আমরা জানি যে, এখানে অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশও আছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা এর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশ্বকে এখনো অনেক কিছু দেয়ার আছে।
৩০ জনের দাফন: আল নুর মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় নিহতের এক সপ্তাহ পর গতকাল ৩০ জনের মরদেহ দাফন করা হয়। গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের দাফন প্রক্রিয়া চলছিল। এদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সর্বকনিষ্ঠ শিকার তিন বছরের মুকাদ ইবরাহীদের মরদেহও রয়েছে।
হিজাব পরে সংহতি প্রকাশ: গতকাল দর্শনার্থীদের জন্য আল নুর মসজিদ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেখানে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। তারা শোকাহত ও আতঙ্কিত মুসলিমদের সমবেদনা জানান। মুসলিম না হওয়ার পরেও অনেক নারী ইসলামী বিধান অনুসরণ করে মাথায় ওড়না বা হিজাব পরে আসেন। আর খোদ প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন তো বেশিরভাগ সময়ই মাথায় ওড়না পরছেন। শোক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া মেলোডি নামের এক নারী বলেন, ‘একাত্মতা প্রকাশের জন্য আজ এটা পরেছি। শুধু আমি না, আমার মতো আরো হাজারো নারী মাথা ঢেকে এসেছেন। আমরা মুসলিমদের সঙ্গে সমব্যথী।’
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শহর থেকে মানুষ ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এমনকি অনেকে নিউজিল্যান্ডের বাইরে বিভিন্ন দেশ থেকেও এসছেন। গতকাল সেখানে জুমার নামাজের সময় মুসল্লিদের ঘিরে একটি বড় বেষ্টনী তৈরি করা হয়। মুসল্লিদের জুতা দিয়ে জমায়েতের চতুর্পাশে অস্থায়ী রেখা তৈরি করা হয়। মুসল্লি ব্যতীত বাকি সবাই জুতা দিয়ে তৈরি ওই রেখার বাইরে অবস্থান করে। এর মাধ্যমে বার্তা দেয়া হয়- আপনারা নামাজ আদায় করুন। আমরা আপনাদের নিরাপত্তায় আছি।
অকল্যান্ড থেকে গতকালের নামাজ ও এর পূর্ববর্তী শোক সভায় যোগদানকারী ইমরান খান জানান, তার বন্ধু আশরাফ আজাদ নিহত ৫০ জনের একজন। যারা সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন। তার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য এখানে আসা জরুরি ছিল। তিনি বলেন, অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে আমরা যে সহানুভূতি পাচ্ছি, এটা অবিশ্বাস্য। এতে প্রমাণ হয় যে, ধর্মই সব না। ভালোবাসা ও একতাই বড় বিষয়, যার ওপর মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্থানীয় মুসলিম অধিবাসী আহমেদ ওসমানসহ অন্যরা বলছেন, গতকালের বিশাল অনুষ্ঠান ও গণজমায়েতই প্রমাণ করে যে, বন্দুকধারী আসলে ব্যর্থ হয়েছেন। সামাজিক বিভেদ তৈরির যে উদ্দেশ্য নিয়ে সে হামলা চালিয়েছে, তা সে অর্জন করতে পারেনি। আমাদের জন্য আজ বিশেষ দিন। ক্রাইস্টচার্চের মানুষ একতাবদ্ধ থাকবে।
গতকাল অস্ট্রেলিয়ার মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি আসার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীরা ক্রাইস্টচার্চে নিহতদের সম্মানে দাঁড়িয়ে যান। এমনকি যারা বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তারাও নিউজিল্যান্ডের অনুকরণে ২ মিনিট নীরবতা পালন করেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর গতকাল সেখানে হাজার হাজার মুসল্লি জুমার নামাজে অংশ নিয়ে সে ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। শুধু মুসল্লিরা নয় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সহমর্মিতা জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিল নিউজিল্যান্ডের হাজারো অধিবাসী। গত শুক্রবার নিহত হওয়া ৫০ জনের স্মরণে ২ মিনিট নীরবতা পালন করেন তারা। উপস্থিত প্রায় ২০ হাজার মানুষের মধ্যে হ্যাগলি পার্কে বক্তৃতা দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন। আল-নুর মসজিদের সামনে যখন তিনি বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তখন সেই সমাবেশ জুড়ে ছিল পিনপতন নীরবতা।
নিউজিল্যান্ডের ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগই ছিল শরণার্থী কিংবা অভিবাসী। তাদের মধ্যে রয়েছে পাকিস্তান, ভারত, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, সোমালিয়া, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের নাগরিক। বক্তব্যের শুরুতেই নিহতদের পরিবারের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী আরডেন বলেন, নিউজিল্যান্ডের সব মানুষ আপনাদের সঙ্গে শোকাহত। আমরা আজ এক।
নামাজের ইমামতি করা ইমাম গামাল ফৌদা সমাবেশে বলেন, আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা এখনো বেঁচে আছি, একসঙ্গে। আমরা কাউকে আমাদের মাঝের এ বন্ধন ভাঙতে দেব না। তার বক্তব্যের সমর্থনে উপস্থিত মানুষ সবাই হাত তুলে ঐক্য প্রদর্শন করে। তিনি আরো বলেন, যারা স্বজন হারিয়েছেন তাদের বলতে চাই আপনি যাকে ভালোবাসতেন তাদের রক্ত বৃথা যায়নি। সেই রক্ত আশার বীজ রোপণ করেছে। জুমার নামাজ হতে শুরু করে সমাবেশ ও নীরবতা পালন পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় চ্যানেল ও রেডিওতে সমপ্রচার করা হয়েছে।
নিউজিল্যান্ড জুড়ে প্রায় ১০ হাজার মানুষ মানববন্ধন করে মুসল্লিদের প্রতি সংহতি জানিয়েছেন। একইসঙ্গে দেশটির স্কুল, ক্যাফে এমনকি অফিসেও নিহতদের জন্য আলাদা আলাদা প্রার্থনা করা হয়েছে। ক্রাইস্টচার্চে ৩০ মৃতদেহ দাফন করা হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মুসল্লি বলেন, এটি এক বিশেষ বেহেস্ত। এখানে আমরা প্রতিদিন লাশ দাফন করি না। প্রতিদিন আমরা আমাদের ২৭ ভাই-বোনকে কবর দেই না। প্রথমে কবর দেয়া হয় নায়িম রাশিদ নামের একজনকে। তিনি ওই হামলাকারীকে আটকাতে গিয়ে নিহত হয়েছিলেন।
হামলাকারী ব্রেনটন ট্যারেন্ট (২৮) একজন সন্দেহভাজন শেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী। বর্তমানে সে রিমান্ডে রয়েছে। আগামী ৫ই এপ্রিল তাকে আদালতে হাজির করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে তখন তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ আনা হবে।
টিভি-রেডিওতে আজান ও নামাজ সরাসরি প্রচার, ২ মিনিট নীরবতা পালন: গতকাল ক্রাইস্টচার্চের সেই মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নামে। এ সময় মুসলিমদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টার দিকে আজান এবং জুমার নামাজ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এবং রেডিওতে সরাসরি সমপ্রচার করা হয়েছে। একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয়ভাবে হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই মিনিট নীরবতাও পালন করেছে নিউজিল্যান্ডের মানুষ। এমনকি রেডিও, টেলিভিশনেও দুই মিনিট সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়। গতকাল আল নুর মসজিদের কাছে হ্যাগলি পার্কে সমবেত হন হাজার হাজার মানুষ। তারা মুসলিমদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন। সেখানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেনও। মুসলিম সম্প্রদায়কে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, নিউজিল্যান্ড আপনাদের দুঃখে ব্যথিত।
জুমার নামাজের ইমামতি করেন ইমাম গামাল ফৌদা। ওই সময় তিনি বলেন, বন্দুকধারী বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আজ একই জায়গা থেকে তাকিয়ে মানুষের ভালোবাসা ও সহানুভূতি দেখতে পাচ্ছি। আমাদের হৃদয় ভেঙেছে। কিন্তু আমরা ভেঙে পড়িনি। আমরা বেঁচে আছি, আমরা একসঙ্গে আছি। আমাদের মধ্যে বিভক্তি আনতে দেব না কাউকে।
প্রধানমন্ত্রীর হাদিস পাঠ: গতকাল ক্রাইস্টচার্চে আবেগঘন বক্তৃতা করেছেন প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন। মুসলিমদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে তিনি মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) এর হাদিসের উদ্ধৃতি দেন। মাথায় ওড়না পরিহিতা আরডেন পাঠ করেন- ‘নবী মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, মুসলিমরা এক শরীরের মতো। যখন শরীরের কোনো অংশ আক্রান্ত হয়, পুরো শরীর তার ব্যথা অনুভব করে।’ তেমনি আপনাদের ওপর হামলায় গোটা নিউজিল্যান্ড শোকাহত। আমরা আজ এক। প্রধানমন্ত্রীর এই আবেগঘন বক্তৃতা বিশ্ববাসীর হৃদয়ে দাগ কেটেছে। স্থানীয় অধিবাসী জন ক্লার্ক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বার্তা খুবই পরিষ্কার। আমরা নিজেদের উদার সম্প্রদায় মনে করি। কিন্তু আমরা জানি যে, এখানে অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশও আছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা এর ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশ্বকে এখনো অনেক কিছু দেয়ার আছে।
৩০ জনের দাফন: আল নুর মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় নিহতের এক সপ্তাহ পর গতকাল ৩০ জনের মরদেহ দাফন করা হয়। গতকাল এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের দাফন প্রক্রিয়া চলছিল। এদের মধ্যে হত্যাকাণ্ডের সর্বকনিষ্ঠ শিকার তিন বছরের মুকাদ ইবরাহীদের মরদেহও রয়েছে।
হিজাব পরে সংহতি প্রকাশ: গতকাল দর্শনার্থীদের জন্য আল নুর মসজিদ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেখানে জড়ো হন হাজার হাজার মানুষ। তারা শোকাহত ও আতঙ্কিত মুসলিমদের সমবেদনা জানান। মুসলিম না হওয়ার পরেও অনেক নারী ইসলামী বিধান অনুসরণ করে মাথায় ওড়না বা হিজাব পরে আসেন। আর খোদ প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডেন তো বেশিরভাগ সময়ই মাথায় ওড়না পরছেন। শোক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া মেলোডি নামের এক নারী বলেন, ‘একাত্মতা প্রকাশের জন্য আজ এটা পরেছি। শুধু আমি না, আমার মতো আরো হাজারো নারী মাথা ঢেকে এসেছেন। আমরা মুসলিমদের সঙ্গে সমব্যথী।’
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শহর থেকে মানুষ ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদ প্রাঙ্গণে জড়ো হন। এমনকি অনেকে নিউজিল্যান্ডের বাইরে বিভিন্ন দেশ থেকেও এসছেন। গতকাল সেখানে জুমার নামাজের সময় মুসল্লিদের ঘিরে একটি বড় বেষ্টনী তৈরি করা হয়। মুসল্লিদের জুতা দিয়ে জমায়েতের চতুর্পাশে অস্থায়ী রেখা তৈরি করা হয়। মুসল্লি ব্যতীত বাকি সবাই জুতা দিয়ে তৈরি ওই রেখার বাইরে অবস্থান করে। এর মাধ্যমে বার্তা দেয়া হয়- আপনারা নামাজ আদায় করুন। আমরা আপনাদের নিরাপত্তায় আছি।
অকল্যান্ড থেকে গতকালের নামাজ ও এর পূর্ববর্তী শোক সভায় যোগদানকারী ইমরান খান জানান, তার বন্ধু আশরাফ আজাদ নিহত ৫০ জনের একজন। যারা সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছেন। তার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের জন্য এখানে আসা জরুরি ছিল। তিনি বলেন, অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষের কাছ থেকে আমরা যে সহানুভূতি পাচ্ছি, এটা অবিশ্বাস্য। এতে প্রমাণ হয় যে, ধর্মই সব না। ভালোবাসা ও একতাই বড় বিষয়, যার ওপর মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্থানীয় মুসলিম অধিবাসী আহমেদ ওসমানসহ অন্যরা বলছেন, গতকালের বিশাল অনুষ্ঠান ও গণজমায়েতই প্রমাণ করে যে, বন্দুকধারী আসলে ব্যর্থ হয়েছেন। সামাজিক বিভেদ তৈরির যে উদ্দেশ্য নিয়ে সে হামলা চালিয়েছে, তা সে অর্জন করতে পারেনি। আমাদের জন্য আজ বিশেষ দিন। ক্রাইস্টচার্চের মানুষ একতাবদ্ধ থাকবে।
No comments