‘ঐক্য হলে সরকার হেরে যাবে’ by কাফি কামাল
রাজনীতিতে
পরিবর্তন ও ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা জাতীয় ঐক্যের অন্যতম লক্ষ্য বলে
জানিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের মধ্যে গড়া ঐক্য প্রক্রিয়ায় বিএনপিসহ আরো রাজনৈতিক
দলগুলোকে যুক্ত করায় ভূমিকা রাখছেন তিনি। গতকাল ঐক্য প্রক্রিয়ার বিষয়ে
মানবজমিনের সঙ্গে আলাপে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকারীরা মনে করেন, ঐক্য হলে সরকার হেরে যাবে। কারণ দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। পরিবর্তনের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। একবার নয়, ভবিষ্যতেও যেন সুষ্ঠু নির্বাচন হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে এখন সুশাসন নেই, সুবিচার নেই। মামলার ফ্যাক্ট ডিসাইড করে আইনমন্ত্রী। বা অন্য জায়গা থেকে। উল্টোদিকে এই জাতীয় ঐক্য যদি নির্বাচনে জিতে তারাও কী ১ লাখ লোককে কারাগারে পাঠিয়ে দেবে? তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কোনোরকম জিঘাংসা হবে না। ন্যায়বিচারের ব্যত্যয় ঘটবে না। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন যখন আইনমন্ত্রী ছিলেন তখন দেশে লোক ছিল ৭ কোটি এবং অ্যাটর্নি জেনারেলসহ তার অফিসে ছিল একজন ডেপুটি ও একজন সহকারী। এখন দেশের লোক ১৬ কোটি। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে ১০০ জন লোক। আর একশ’জন থাকায় তারা মামলা তৈরি করে, হয়রানি তৈরি করে। আগে কখনও কোনো সরকারই খুন-খারাবির আসামি ছাড়া রাজনৈতিক কেসে হাইকোর্টে ফাইট করতো, সুপ্রিম কোর্টে নয়। যেটা এখন খালেদা জিয়া ও শহিদুলের ক্ষেত্রে করছে।
এ ধরনের জিঘাংসা হবে না। পুলিশ ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয় ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করা হবে না। তারা এসব প্রতিশ্রুতি দিতে চায়। এই যে কোটা আন্দোলন, এখানে কোটা উঠিয়ে দিলেই হবে না। সেখানে সংস্কারের দরকার আছে। সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের মূল লক্ষ্য- নিরপেক্ষতা ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা। জনগণ যেন দ্রুত বিচার ও নায্যবিচারটা পায়। সব ব্যাপারেই উনারা ওয়ার্ক করছেন। সে ওয়ার্কের ভিত্তিতে পরিবর্তন করতে চান। ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, সবাই একত্রে না হলে কিছুই হবে না। এটা তো আইনের সরকার নয়, আইন দিয়ে তো চলে না। সবাই সম্মিলিত না হলে দেশের মঙ্গল হবে না, নিজেদেরও মঙ্গল হবে না। দেশের স্বার্থেই আজকে সবাইকে সম্মিলিত হয়ে, যৌথভাবে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, তারা বিশ্বাস করেন- জনগণ পরিবর্তন চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সম্মিলিত জাতীয় ঐক্য নির্বাচিত হবে। তখন অবশ্যই এ সম্মিলিত ঐক্য প্রক্রিয়া সংবিধানসহ সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারবে। তারা নির্বাচিত হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। এখন যে নিবর্তনমূলক আইন আছে তা থাকবে না। পুলিশ ও প্রশাসনকে দলীয়করণের অবসান করবেন। ছাত্ররা যে আন্দোলন করেছেন তারা সে আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করেন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি ও ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করবেন। কেন্দ্রিকতা কমাবেন। সংবিধানের ১৫, ৫৯, ৬০ বিধিগুলো বাস্তবায়ন করবেন। এ জন্য তারা একটি গ্রুপ করেছেন। সে গ্রুপ জনগণ কি চায়, কোথায় কোথায় কি কাজ করতে হবে তা ঠিক করবে।
সম্মিলিত ঐক্য নির্বাচিত হলে সে সরকারের নেতৃত্বে নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলের গুঞ্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, বি. চৌধুরী বলেছেন- উনি কোনোটাই হতে চান না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো পদ-পদবির দাবি করেননি। তিনি ক্ষমতার ভারসাম্য চান। বিএনপি যদি এ প্রক্রিয়ায় আসে এবং তারা যদি নির্বাচনে ১৫০টির বেশি আসন পায় তাহলে বাকিদের পরোয়া করবে না, ভুলে যাবে, তখন কি হবে? তবে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে বি. চৌধুরীর প্রস্তাব গৃহীত বা আলোচিত হয়নি। অতএব এটা নিয়ে এখন আর কথা না বলাই ভালো। আর ড. কামাল হোসেন তো এ প্রসঙ্গে কোনো কথাই বলেননি। জাফরুল্লাহ বলেন, ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেটা হচ্ছে- প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর। আর ভারসাম্য হচ্ছে সেটা, যেখানে ১০ জনের মন্ত্রিসভা হলে বিএনপিরই ৮ জন থাকবে না।
কিন্তু নির্বাচনে না জিতলে কিছুই করা যাবে না। আসন বণ্টন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসন বন্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কথা হয়েছে, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে। যারা রাজনীতিকে ব্যবসা নয়, সেবা হিসেবে দেখেন। সেক্ষেত্রে রাজি হলে রাজনীতির বাইরে থাকা কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিও রাজনীতিতে আসতে পারেন, বিভিন্ন দলের প্রার্থী হতে পারেন। তবে এটা প্রাক আলোচনায় এসেছে যে, বিএনপি ২০০ আসনে নির্বাচন করুক, অন্যদের ১০০টি আসন ছেড়ে দিক। সেক্ষেত্রে বিএনপি ১৪০টিও পেতে পারে। আর আওয়ামী লীগও সিট পাবে। তবে এভাবে ভাগ বাটোয়ারা করে কোনো লাভ হবে না।
আগামী নির্বাচন কাদের অধীনে চায় জাতীয় ঐক্যের অংশীজনেরা- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ এ পেশাজীবী বলেন, একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত। জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকারীরাও বলেছেন নিয়ম অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিতে হবে। একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আলোচনা করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গোঁ-ধরে বসে আছেন- তিনি সংবিধানের মধ্যেই থাকবেন। উনি উনার কথা বলছেন না, উনি বলছেন, আমি সংবিধানের বাইরে কিছু করবো না। সংবিধান হলে আউটগোয়িং প্রাইম মিনিস্টার থাকেই। এটাই হচ্ছে উনার চালাকি। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনকালীন একটি ক্ষুদ্র মন্ত্রিসভা হবে। সেখানে টেকনিক্যাল কারণে বিএনপির মতো যারা সংসদে নেই তাদের মনোনীত ব্যক্তিরাও থাকতে পারেন, বাইরে থেকে কয়েকজন উপদেষ্টাও নেয়া যেতে পারে।
তবে তাদের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান ও প্রমাণিত হতে হবে। আর যদি শেখ হাসিনার অধীনে না হয়, আবার বিদ্যমান সংবিধানও রক্ষা করতে হয় সেক্ষেত্রে বর্তমান সংসদের মধ্য থেকেই কেউ একজন সে সরকারের নেতৃত্ব দিতে পারেন। ধরেন, তোফায়েল আহমেদ বা অন্য কেউ একজন। এতে আওয়ামী লীগেরই কথাও থাকলো। আপাতত, এ সংবিধানে বাইরে যাবার সুযোগ নেই। আর সংবিধান পরিবর্তন করে বিকল্প কিছু করার সময়ও কম। যদি আরো আগে থেকে আন্দোলনের মাধ্যমে সেটা হতো তাহলে অন্য কথা ছিল।
জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো দাবি আদায়ে কবে আন্দোলনে যেতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তায় কবে নামবে সেটা এখনো জাতীয় ঐক্য ঠিক করতে পারেনি। যুগপৎ আন্দোলনটা কখন হবে? নির্বাচন তো গায়ে এসে গেছে। আন্দোলন আর বেশি করার সময় নেই। আন্দোলনের সময় আছে মাত্র এক থেকে দুই মাস। বড়জোর দুই মাস। তারপর তো নির্বাচনের জন্য প্রত্যেককেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে। এই দুই মাসে তাদের জনগণকে জানাতে হবে, তারা কি চায় এবং কীভাবে চায়।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম যে আহ্বান জানিয়েছে সেখানে জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধী দল ছাড়া সবার অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। বিএনপির সে প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই সেটা চায়। এছাড়া জামায়াতকেও বাস্তবতা বুঝতে হবে। আমি মনে করি, জামায়াতকে ছাড়া ঐক্য হলেও তাদের অখুশি হওয়ার কিছু নেই। বরং তাদের এ প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানানো উচিত। তারা বলতে পারে, যদি আমাদের কারণে ঐক্যপ্রক্রিয়ায় অন্তরায় তৈরি হয় তবে আমাদের বাদ দেন। আমাদের সঙ্গে না নিলেও আমরা চাই আপনাদের এ যাত্রা সফল হোক। জামায়াত এটাও বলতে পারে যে, ক্ষমতায় গেলে আপনারা আমাদের প্রতিও ন্যায়বিচার করবেন। আবার পরিবর্তনের আন্দোলনে অংশ নেয়ার অধিকার তো তাদের আছেই। সেক্ষেত্রে তারা এ ঐক্যপ্রক্রিয়ার বাইরে তাদের মতো আন্দোলন করতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যের মনোভাব সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি সব সময় বলি- সুষ্ঠু বিচার হলে খালেদা জিয়া খালাস পাবেন। সরকার উনাকে হয়রানি করছে। তার মানে এটা নয় যে, উনি গণতন্ত্রের জন্য কারাভোগ করছেন। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কেউ তার মুক্তির ব্যাপারে দ্বিমত নয়। তারা সবাই বলছে, খালেদা জিয়ার প্রতি ন্যায়বিচার হোক, সুবিচার হোক। এছাড়া যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের বৈঠকে যে ৭ দফা প্রস্তাব উঠে এসেছে সেখানে কিন্তু পরিষ্কার বলা আছে, নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক মামলার আসামিদের মুক্তি দেয়া হোক এবং নির্বাচনের আগে নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি যেন না করা হয়।
নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যের বিজয় হলে যে সংসদ গঠন হবে তাতে কে নেতৃত্ব দেবে- বিএনপি নাকি অন্য দল? এমন প্রশ্নের উত্তরে ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এগুলো এখন পর্যন্ত আলোচনায় আসেনি। তবে বিশ্বে এখন বহু নজির তৈরি হচ্ছে। ভারতের কর্ণাটকে কংগ্রেস মেজরিটি পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে। মালয়েশিয়ায় আনোয়ার ইবরাহীমের দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ছাড় দেয়ায় মাহাথির মুহাম্মদ ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এসব আসলে পরের ধাপ। আগে আন্দোলন, আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবি আদায় এবং নির্বাচনে বিজয়ের পর বাকি সব।
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দিল্লি বা ওয়াশিংটন নয়, আমি মনে করি- আমাদের মূল ফ্যাক্টর হলো জনগণ। দিল্লি বা ওয়াশিংটনের দিকে চেয়ে থেকে লাভ নেই। আমাদের ঘর যদি ঠিক থাকে তারা কেউ কিছু করতে পারবে না। আমাদের উচিত সবার আগে জনগণকেই মর্যাদা দেয়া এবং তাদের সঙ্গে কথা বলা। কেবল ভারত ও আমেরিকাকে না ধরে থেকে সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক গড়তে হবে। বিশেষ করে আমাদের ওআইসির দেশগুলোর সঙ্গে আরো ভালো এবং বেশি সম্পর্ক থাকা দরকার। সর্বোপরি আমাদের মূলশক্তি জনগণ।
ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকারীরা মনে করেন, ঐক্য হলে সরকার হেরে যাবে। কারণ দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। পরিবর্তনের জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দরকার। একবার নয়, ভবিষ্যতেও যেন সুষ্ঠু নির্বাচন হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। দেশে এখন সুশাসন নেই, সুবিচার নেই। মামলার ফ্যাক্ট ডিসাইড করে আইনমন্ত্রী। বা অন্য জায়গা থেকে। উল্টোদিকে এই জাতীয় ঐক্য যদি নির্বাচনে জিতে তারাও কী ১ লাখ লোককে কারাগারে পাঠিয়ে দেবে? তারা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে, কোনোরকম জিঘাংসা হবে না। ন্যায়বিচারের ব্যত্যয় ঘটবে না। তিনি বলেন, ড. কামাল হোসেন যখন আইনমন্ত্রী ছিলেন তখন দেশে লোক ছিল ৭ কোটি এবং অ্যাটর্নি জেনারেলসহ তার অফিসে ছিল একজন ডেপুটি ও একজন সহকারী। এখন দেশের লোক ১৬ কোটি। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে ১০০ জন লোক। আর একশ’জন থাকায় তারা মামলা তৈরি করে, হয়রানি তৈরি করে। আগে কখনও কোনো সরকারই খুন-খারাবির আসামি ছাড়া রাজনৈতিক কেসে হাইকোর্টে ফাইট করতো, সুপ্রিম কোর্টে নয়। যেটা এখন খালেদা জিয়া ও শহিদুলের ক্ষেত্রে করছে।
এ ধরনের জিঘাংসা হবে না। পুলিশ ও রাষ্ট্রযন্ত্রকে দলীয় ক্যাডার হিসেবে ব্যবহার করা হবে না। তারা এসব প্রতিশ্রুতি দিতে চায়। এই যে কোটা আন্দোলন, এখানে কোটা উঠিয়ে দিলেই হবে না। সেখানে সংস্কারের দরকার আছে। সম্মিলিত জাতীয় ঐক্যের মূল লক্ষ্য- নিরপেক্ষতা ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা। জনগণ যেন দ্রুত বিচার ও নায্যবিচারটা পায়। সব ব্যাপারেই উনারা ওয়ার্ক করছেন। সে ওয়ার্কের ভিত্তিতে পরিবর্তন করতে চান। ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, সবাই একত্রে না হলে কিছুই হবে না। এটা তো আইনের সরকার নয়, আইন দিয়ে তো চলে না। সবাই সম্মিলিত না হলে দেশের মঙ্গল হবে না, নিজেদেরও মঙ্গল হবে না। দেশের স্বার্থেই আজকে সবাইকে সম্মিলিত হয়ে, যৌথভাবে অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, তারা বিশ্বাস করেন- জনগণ পরিবর্তন চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সম্মিলিত জাতীয় ঐক্য নির্বাচিত হবে। তখন অবশ্যই এ সম্মিলিত ঐক্য প্রক্রিয়া সংবিধানসহ সর্বক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে পারবে। তারা নির্বাচিত হলে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। এখন যে নিবর্তনমূলক আইন আছে তা থাকবে না। পুলিশ ও প্রশাসনকে দলীয়করণের অবসান করবেন। ছাত্ররা যে আন্দোলন করেছেন তারা সে আন্দোলনকে যৌক্তিক মনে করেন। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি ও ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠা করবেন। কেন্দ্রিকতা কমাবেন। সংবিধানের ১৫, ৫৯, ৬০ বিধিগুলো বাস্তবায়ন করবেন। এ জন্য তারা একটি গ্রুপ করেছেন। সে গ্রুপ জনগণ কি চায়, কোথায় কোথায় কি কাজ করতে হবে তা ঠিক করবে।
সম্মিলিত ঐক্য নির্বাচিত হলে সে সরকারের নেতৃত্বে নিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলের গুঞ্জন সম্পর্কে তিনি বলেন, বি. চৌধুরী বলেছেন- উনি কোনোটাই হতে চান না। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো পদ-পদবির দাবি করেননি। তিনি ক্ষমতার ভারসাম্য চান। বিএনপি যদি এ প্রক্রিয়ায় আসে এবং তারা যদি নির্বাচনে ১৫০টির বেশি আসন পায় তাহলে বাকিদের পরোয়া করবে না, ভুলে যাবে, তখন কি হবে? তবে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে বি. চৌধুরীর প্রস্তাব গৃহীত বা আলোচিত হয়নি। অতএব এটা নিয়ে এখন আর কথা না বলাই ভালো। আর ড. কামাল হোসেন তো এ প্রসঙ্গে কোনো কথাই বলেননি। জাফরুল্লাহ বলেন, ঐক্যপ্রক্রিয়ায় যে ক্ষমতার ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেটা হচ্ছে- প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর। আর ভারসাম্য হচ্ছে সেটা, যেখানে ১০ জনের মন্ত্রিসভা হলে বিএনপিরই ৮ জন থাকবে না।
কিন্তু নির্বাচনে না জিতলে কিছুই করা যাবে না। আসন বণ্টন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসন বন্টন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। কথা হয়েছে, যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে। যারা রাজনীতিকে ব্যবসা নয়, সেবা হিসেবে দেখেন। সেক্ষেত্রে রাজি হলে রাজনীতির বাইরে থাকা কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিও রাজনীতিতে আসতে পারেন, বিভিন্ন দলের প্রার্থী হতে পারেন। তবে এটা প্রাক আলোচনায় এসেছে যে, বিএনপি ২০০ আসনে নির্বাচন করুক, অন্যদের ১০০টি আসন ছেড়ে দিক। সেক্ষেত্রে বিএনপি ১৪০টিও পেতে পারে। আর আওয়ামী লীগও সিট পাবে। তবে এভাবে ভাগ বাটোয়ারা করে কোনো লাভ হবে না।
আগামী নির্বাচন কাদের অধীনে চায় জাতীয় ঐক্যের অংশীজনেরা- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রবীণ এ পেশাজীবী বলেন, একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হওয়া উচিত। জাতীয় ঐক্যের আহ্বানকারীরাও বলেছেন নিয়ম অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিতে হবে। একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আলোচনা করতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গোঁ-ধরে বসে আছেন- তিনি সংবিধানের মধ্যেই থাকবেন। উনি উনার কথা বলছেন না, উনি বলছেন, আমি সংবিধানের বাইরে কিছু করবো না। সংবিধান হলে আউটগোয়িং প্রাইম মিনিস্টার থাকেই। এটাই হচ্ছে উনার চালাকি। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচন হবে। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনকালীন একটি ক্ষুদ্র মন্ত্রিসভা হবে। সেখানে টেকনিক্যাল কারণে বিএনপির মতো যারা সংসদে নেই তাদের মনোনীত ব্যক্তিরাও থাকতে পারেন, বাইরে থেকে কয়েকজন উপদেষ্টাও নেয়া যেতে পারে।
তবে তাদের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান ও প্রমাণিত হতে হবে। আর যদি শেখ হাসিনার অধীনে না হয়, আবার বিদ্যমান সংবিধানও রক্ষা করতে হয় সেক্ষেত্রে বর্তমান সংসদের মধ্য থেকেই কেউ একজন সে সরকারের নেতৃত্ব দিতে পারেন। ধরেন, তোফায়েল আহমেদ বা অন্য কেউ একজন। এতে আওয়ামী লীগেরই কথাও থাকলো। আপাতত, এ সংবিধানে বাইরে যাবার সুযোগ নেই। আর সংবিধান পরিবর্তন করে বিকল্প কিছু করার সময়ও কম। যদি আরো আগে থেকে আন্দোলনের মাধ্যমে সেটা হতো তাহলে অন্য কথা ছিল।
জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলো দাবি আদায়ে কবে আন্দোলনে যেতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাস্তায় কবে নামবে সেটা এখনো জাতীয় ঐক্য ঠিক করতে পারেনি। যুগপৎ আন্দোলনটা কখন হবে? নির্বাচন তো গায়ে এসে গেছে। আন্দোলন আর বেশি করার সময় নেই। আন্দোলনের সময় আছে মাত্র এক থেকে দুই মাস। বড়জোর দুই মাস। তারপর তো নির্বাচনের জন্য প্রত্যেককেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তে হবে। এই দুই মাসে তাদের জনগণকে জানাতে হবে, তারা কি চায় এবং কীভাবে চায়।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম যে আহ্বান জানিয়েছে সেখানে জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধী দল ছাড়া সবার অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। বিএনপির সে প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ আছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই সেটা চায়। এছাড়া জামায়াতকেও বাস্তবতা বুঝতে হবে। আমি মনে করি, জামায়াতকে ছাড়া ঐক্য হলেও তাদের অখুশি হওয়ার কিছু নেই। বরং তাদের এ প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানানো উচিত। তারা বলতে পারে, যদি আমাদের কারণে ঐক্যপ্রক্রিয়ায় অন্তরায় তৈরি হয় তবে আমাদের বাদ দেন। আমাদের সঙ্গে না নিলেও আমরা চাই আপনাদের এ যাত্রা সফল হোক। জামায়াত এটাও বলতে পারে যে, ক্ষমতায় গেলে আপনারা আমাদের প্রতিও ন্যায়বিচার করবেন। আবার পরিবর্তনের আন্দোলনে অংশ নেয়ার অধিকার তো তাদের আছেই। সেক্ষেত্রে তারা এ ঐক্যপ্রক্রিয়ার বাইরে তাদের মতো আন্দোলন করতে পারে।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির প্রসঙ্গে জাতীয় ঐক্যের মনোভাব সম্পর্কে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমি সব সময় বলি- সুষ্ঠু বিচার হলে খালেদা জিয়া খালাস পাবেন। সরকার উনাকে হয়রানি করছে। তার মানে এটা নয় যে, উনি গণতন্ত্রের জন্য কারাভোগ করছেন। জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত কেউ তার মুক্তির ব্যাপারে দ্বিমত নয়। তারা সবাই বলছে, খালেদা জিয়ার প্রতি ন্যায়বিচার হোক, সুবিচার হোক। এছাড়া যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরামের বৈঠকে যে ৭ দফা প্রস্তাব উঠে এসেছে সেখানে কিন্তু পরিষ্কার বলা আছে, নির্বাচনের আগেই রাজনৈতিক মামলার আসামিদের মুক্তি দেয়া হোক এবং নির্বাচনের আগে নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি যেন না করা হয়।
নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যের বিজয় হলে যে সংসদ গঠন হবে তাতে কে নেতৃত্ব দেবে- বিএনপি নাকি অন্য দল? এমন প্রশ্নের উত্তরে ঐক্যপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, এগুলো এখন পর্যন্ত আলোচনায় আসেনি। তবে বিশ্বে এখন বহু নজির তৈরি হচ্ছে। ভারতের কর্ণাটকে কংগ্রেস মেজরিটি পেয়েও ছেড়ে দিয়েছে। মালয়েশিয়ায় আনোয়ার ইবরাহীমের দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও ছাড় দেয়ায় মাহাথির মুহাম্মদ ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু এসব আসলে পরের ধাপ। আগে আন্দোলন, আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনের দাবি আদায় এবং নির্বাচনে বিজয়ের পর বাকি সব।
আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের ভূমিকা প্রসঙ্গে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দিল্লি বা ওয়াশিংটন নয়, আমি মনে করি- আমাদের মূল ফ্যাক্টর হলো জনগণ। দিল্লি বা ওয়াশিংটনের দিকে চেয়ে থেকে লাভ নেই। আমাদের ঘর যদি ঠিক থাকে তারা কেউ কিছু করতে পারবে না। আমাদের উচিত সবার আগে জনগণকেই মর্যাদা দেয়া এবং তাদের সঙ্গে কথা বলা। কেবল ভারত ও আমেরিকাকে না ধরে থেকে সকল রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক গড়তে হবে। বিশেষ করে আমাদের ওআইসির দেশগুলোর সঙ্গে আরো ভালো এবং বেশি সম্পর্ক থাকা দরকার। সর্বোপরি আমাদের মূলশক্তি জনগণ।
No comments