শহিদুল আলমের গ্রেপ্তার দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি সম্পর্কে কী বার্তা দেয় by আদিত্য অধিকারী
বাসচাপায়
রাজপথে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে যে ছাত্রবিক্ষোভ সৃষ্টি হয়
তা নিয়ে ৫ই আগস্ট আল জাজিরা টেলিভিশনকে সাক্ষাৎকার দেন বাংলাদেশি আর্টিস্ট,
লেখক ও সংগঠক শহিদুল আলম। তিনি বলেন, তরুণ ছাত্রদের এই বিক্ষোভ শুধু
পরিবহন খাত নিয়েই নয়, দেশের করুণ অবস্থাও এ ক্ষোভে রশদ যুগিয়েছে। বাংলাদেশে
যেসব অনিয়ম হচ্ছে তিনি তার সবকিছু তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ব্যাংক লুট
হচ্ছে। মিডিয়ার গলা চেপে ধরা হয়েছে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। গুম
হচ্ছে। সব স্তরে ঘুষ চলছে। শিক্ষায় দুর্নীতি হচ্ছে।
ওইদিনই সাদা পোশাকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা মধ্যরাতে তার ঢাকার বাসায় হাজির হন। কোনো ব্যাখ্যা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাকে তুলে নিয়ে যান। যখন তাকে আদালতে হাজির করা হয় তখন তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন অন্যের ওপর ভর করে।
তাকে অবশ্যই নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী প্রচারণা ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অধীনে অভিযোগ গঠন করা হয়। তার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। যদি তিনি অভিযুক্ত হন তাহলে তার সাত বছরের জেল হতে পারে।
শহিদুল আলমকে অশোভন, অন্যায়ভাবে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশ্বের সব স্থান থেকে তার মুক্তি দাবি করা হচ্ছে। এই মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে শহিদুল আলমের ব্যতিক্রমী অর্জন ও তার আন্তর্জাতিক খ্যাতির জন্য। একজন ফটোসাংবাদিক হিসেবে তিনি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন।
তিনি তুলে ধরেছেন ভিকটিমরা নয়, সক্রিয় এজেন্ট হলেন প্রান্তিক মানুষ। এ ছাড়া তিনি রাষ্ট্রীয় নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি সমানভাবে একজন ইনস্টিটিউট বিল্ডার ও তরুণ ফটো সাংবাদিকদের প্রদর্শক। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ফটো বিষয়ক এজেন্সি দৃক পিকচার লাইব্রেরি, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অভিজাত ছবির উৎসব ছবিমেলা ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট। পাঠশালায় নেপালিসহ শত শত ফটোগ্রাফারকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
একজন শহিদুল আলমকে অতিক্রম করে এমনকি বাংলাদেশের বাইরেও এ ঘটনার বড় প্রভাব রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতার দিকে দৃষ্টিপাত করে, যার প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশসহ বিশ্বের বড় অংশগুলোতে।
আরো খোলামেলাভাবে বলতে গেলে, এটা করেছে রাষ্ট্র, যারা মাঝে মাঝেই মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরকারের যেকোনো সমালোচককে ক্রিমিনালাইজ বা অপরাধী হিসেবে নিয়ে তাদের বিচার করছে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো। তার মধ্যে রয়েছে সুপরিচিত ব্যক্তি এবং সামাজিক মিডিয়ায় ব্যক্তিগত মত প্রকাশকারী নাগরিকরা।
ফেসবুকে সরকারের সমালোচনামূলক পোস্ট অথবা মন্তব্য শেয়ার করার কারণে বেশ কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাংলাদেশে। এখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের পরিবর্তে আরো কঠোর একটি লেজিসলেশন আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ভারতে বেশ কিছু উচ্চ মাপের অধিকারকর্মী ও বোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা সুস্পষ্টভাবে সরকারের প্রতিশোধ। নেপালেও সরকার একটি প্রস্তাব পাস করেছে, যার ফলে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতে পারবেন না।
সরকারগুলো দাবি করেছে যে, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এসব পদক্ষেপ জরুরি। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এ অঞ্চলের শাসকরা জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী সেন্টিমেন্ট জাগিয়ে তেলার চেষ্টা করেছে। যেসব সংগঠন অধিকতর সুবিচারের জন্য প্রচারণা চালায় তাদেরকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর চর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
এসব উদ্দেশের নেপথ্য কারণ স্পষ্ট। সরকারগুলো তাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণাকে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের সামনে যে ইভেন্ট আছে তাকেই একমাত্র বৈধ বলে মনে করে। নিরপেক্ষ নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলোর সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে তারা মুক্তভাবে তাদের সিদ্ধান্তকে দমিয়ে রাখতে চায়। এ প্রক্রিয়ায় তারা চেষ্টা করছে একটি আতঙ্কগ্রস্ত, নিজেদের দিকে তাকিয়ে থাকা ও বিদেশাতঙ্ক জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করতে।
শহিদুল আলমকে মুক্তির যে প্রচারণা শুরু হয়েছে তা শুধু একজন ব্যক্তির নয়, যাকে অন্যায়ভাবে বিচার করা হচ্ছে। আরো বেশি করে বলা যায়, সমগ্র অঞ্চলজুড়ে গণতান্ত্রিক স্পেসের ওপর যে আগ্রাসন তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ। এটা হলো সংকীর্ণ মানসিকতার জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। খেয়াল-খুশিমতো ক্ষমতার ব্যবহারের প্রতিবাদ। এই প্রচারণার উদ্দেশ্য হলো সহনশীলতা, আইনের শাসন ও বেশির ভাগ প্রান্তিক মানুষের অধিকার।
বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো অনুধাবন করে থাকবেন শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করে তার সরকার শুধুই আন্তর্জাতিক বৈধতা হারিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃস্থাপনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে শহিদুল আলমের মুক্তি।
নেপাল সফরে থাকা অন্য সরকারগুলোর প্রধানদের একই বিষয়ে স্বীকৃতি দেয়া উচিত। তাহলো সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সদস্যদের ওপর হামলা বড় ধরনের শত্রুতা ও ক্ষমতাসীনদের প্রতি ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধা এমন যেসব লেজিসলেশন আছে তা বাতিল করা হবে জরুরি, যদি রাষ্ট্রগুলো তাদের জনগণের আস্থা ফিরে পেতে চায়।
(নেপাল টাইমসে প্রকাশিত ‘দ্য ডেথ অব ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ)
ওইদিনই সাদা পোশাকে নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা মধ্যরাতে তার ঢাকার বাসায় হাজির হন। কোনো ব্যাখ্যা বা ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাকে তুলে নিয়ে যান। যখন তাকে আদালতে হাজির করা হয় তখন তিনি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলেন অন্যের ওপর ভর করে।
তাকে অবশ্যই নিরাপত্তা হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে সরকারবিরোধী প্রচারণা ও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার অধীনে অভিযোগ গঠন করা হয়। তার জামিন আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। যদি তিনি অভিযুক্ত হন তাহলে তার সাত বছরের জেল হতে পারে।
শহিদুল আলমকে অশোভন, অন্যায়ভাবে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এতে তীব্র নিন্দা প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশ্বের সব স্থান থেকে তার মুক্তি দাবি করা হচ্ছে। এই মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে শহিদুল আলমের ব্যতিক্রমী অর্জন ও তার আন্তর্জাতিক খ্যাতির জন্য। একজন ফটোসাংবাদিক হিসেবে তিনি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন।
তিনি তুলে ধরেছেন ভিকটিমরা নয়, সক্রিয় এজেন্ট হলেন প্রান্তিক মানুষ। এ ছাড়া তিনি রাষ্ট্রীয় নৃশংসতার চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি সমানভাবে একজন ইনস্টিটিউট বিল্ডার ও তরুণ ফটো সাংবাদিকদের প্রদর্শক। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন ফটো বিষয়ক এজেন্সি দৃক পিকচার লাইব্রেরি, দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অভিজাত ছবির উৎসব ছবিমেলা ও পাঠশালা সাউথ এশিয়ান মিডিয়া ইনস্টিটিউট। পাঠশালায় নেপালিসহ শত শত ফটোগ্রাফারকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
একজন শহিদুল আলমকে অতিক্রম করে এমনকি বাংলাদেশের বাইরেও এ ঘটনার বড় প্রভাব রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার একটি উদ্বেগজনক প্রবণতার দিকে দৃষ্টিপাত করে, যার প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশসহ বিশ্বের বড় অংশগুলোতে।
আরো খোলামেলাভাবে বলতে গেলে, এটা করেছে রাষ্ট্র, যারা মাঝে মাঝেই মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সরকারের যেকোনো সমালোচককে ক্রিমিনালাইজ বা অপরাধী হিসেবে নিয়ে তাদের বিচার করছে দক্ষিণ এশিয়ার সরকারগুলো। তার মধ্যে রয়েছে সুপরিচিত ব্যক্তি এবং সামাজিক মিডিয়ায় ব্যক্তিগত মত প্রকাশকারী নাগরিকরা।
ফেসবুকে সরকারের সমালোচনামূলক পোস্ট অথবা মন্তব্য শেয়ার করার কারণে বেশ কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাংলাদেশে। এখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের পরিবর্তে আরো কঠোর একটি লেজিসলেশন আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে রিপোর্ট করার কারণে দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেট আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত সপ্তাহে ভারতে বেশ কিছু উচ্চ মাপের অধিকারকর্মী ও বোদ্ধাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা সুস্পষ্টভাবে সরকারের প্রতিশোধ। নেপালেও সরকার একটি প্রস্তাব পাস করেছে, যার ফলে রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকরা রিপোর্ট করতে পারবেন না।
সরকারগুলো দাবি করেছে যে, জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এসব পদক্ষেপ জরুরি। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য এ অঞ্চলের শাসকরা জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদী সেন্টিমেন্ট জাগিয়ে তেলার চেষ্টা করেছে। যেসব সংগঠন অধিকতর সুবিচারের জন্য প্রচারণা চালায় তাদেরকে বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর চর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
এসব উদ্দেশের নেপথ্য কারণ স্পষ্ট। সরকারগুলো তাদের নিজস্ব ধ্যান-ধারণাকে ইতিহাসে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাদের সামনে যে ইভেন্ট আছে তাকেই একমাত্র বৈধ বলে মনে করে। নিরপেক্ষ নাগরিক সমাজের গ্রুপগুলোর সঙ্গে সংঘাতে না গিয়ে তারা মুক্তভাবে তাদের সিদ্ধান্তকে দমিয়ে রাখতে চায়। এ প্রক্রিয়ায় তারা চেষ্টা করছে একটি আতঙ্কগ্রস্ত, নিজেদের দিকে তাকিয়ে থাকা ও বিদেশাতঙ্ক জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করতে।
শহিদুল আলমকে মুক্তির যে প্রচারণা শুরু হয়েছে তা শুধু একজন ব্যক্তির নয়, যাকে অন্যায়ভাবে বিচার করা হচ্ছে। আরো বেশি করে বলা যায়, সমগ্র অঞ্চলজুড়ে গণতান্ত্রিক স্পেসের ওপর যে আগ্রাসন তার বিরুদ্ধে একটি প্রতিরোধ। এটা হলো সংকীর্ণ মানসিকতার জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। খেয়াল-খুশিমতো ক্ষমতার ব্যবহারের প্রতিবাদ। এই প্রচারণার উদ্দেশ্য হলো সহনশীলতা, আইনের শাসন ও বেশির ভাগ প্রান্তিক মানুষের অধিকার।
বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হয়তো অনুধাবন করে থাকবেন শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করে তার সরকার শুধুই আন্তর্জাতিক বৈধতা হারিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃস্থাপনের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে শহিদুল আলমের মুক্তি।
নেপাল সফরে থাকা অন্য সরকারগুলোর প্রধানদের একই বিষয়ে স্বীকৃতি দেয়া উচিত। তাহলো সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের সদস্যদের ওপর হামলা বড় ধরনের শত্রুতা ও ক্ষমতাসীনদের প্রতি ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাধা এমন যেসব লেজিসলেশন আছে তা বাতিল করা হবে জরুরি, যদি রাষ্ট্রগুলো তাদের জনগণের আস্থা ফিরে পেতে চায়।
(নেপাল টাইমসে প্রকাশিত ‘দ্য ডেথ অব ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক লেখার অনুবাদ)
No comments