সাক্ষ্য দিতে ভারত যাচ্ছেন ফেলানীর বাবা by মিজানুর রহমান মিন্টু
কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত আলোচিত ফেলানী হত্যার বিচার পুনরায় শুরু হয়েছে ভারতের বিশেষ আদালতে। আজ থেকে এ বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। ভারতের কুচবিহারে বিএসএফ’র সেক্টর হেড কোয়ার্টারের বিশেষ এ আদালতে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রাম ৪৫ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ। তিনি জানান, ভারতের কুচবিহারের বিএসএফ’র সদর দপ্তরে স্থাপিত বিশেষ আদালতের স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে এ বিচার কাজ শুরু হয়েছে। আগামী দুই একদিনের মধ্যেই সাক্ষ্য দিতে এবং আদালতকে সহযোগিতা করতে ভারত যাবেন ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম, মামা আব্দুল হানিফ, ৪৫ বিজিবি অধিনায়ক লে. কর্ণেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ ও কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এস এম আব্রাহাম লিংকন। এ ব্যাপারে ভারত সরকারের পক্ষে বিএসএফ পক্ষ থেকে যে কোন সময় আমন্ত্রণ জানাবে বলে জানা গেছে। ফেলানী হত্যার সঠিক বিচার না পেয়ে ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারত সরকারের নিকট পুনঃ বিচারের আবেদন করেন ফেলানীর বাবা। এর পর শুরু হয় কুটনৈতিক ও বৈদেশিক চাপ। পরে বিজিবি-বিএসএফ’র দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ফেলানী হত্যার পুনর্বিচরে সম্মত হয় বিএসএফ। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার পুণরায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রনে বিচার কার্যক্রমে অংশ নিতে তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। ৪ সদস্যের ভিসাসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে রাজশাহীর ভারতীয় হাই কমিশন থেকে। সব কিছু ঠিক থাকলে দুই/তিন দিনের মধ্যে ভারতের কুচবিহারের বিএসএফ’র বিশেষ আদালতে পুণরায় ফেলানী হত্যা মামলার কার্যক্রমে তারা অংশ নেবেন। বিচার কার্যক্রমে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম, মামা আবু হানিফ সাক্ষী দেবেন। এছাড়া কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট এস এম আব্রহাম লিংকন বাংলাদেশের আইনজীবি হিসাবে সাক্ষী ও আদালতকে সহায়তা করবেন। সার্বিক সহযোগিতা এবং বিচার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে ৪৫ বিজিবি’ কমান্ডিং অফিসার লেফটেনেন্ট কর্ণেল মোফাজ্জল হোসেন আকন্দ এই টিমকে নেতৃত্ব দিবেন। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারী শুক্রবার ভোর সোয়া ৬টার দিকে দালালের মাধ্যমে মই বেয়ে কাটাতারের বেড়া পাড় হবার সময় ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বিদ্ধ হয়ে আধাঘন্টা ধরে ছটফট করে নির্মমভাবে মৃত্যু হয় কিশোরী ফেলানীর। ভারত থেকে কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ীর অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে বাড়ী ফেরার সময় এ নৃশংসতার শিকার হয় ফেলানী। এর পর সকাল পৌনে ৭টার থেকে নিথর দেহ কাঁটাতাঁরের উপর ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘন্টা। পরে বিএসএফ লাশ নামিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়। এরপর বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে মৃত্যুর ৩০ ঘন্টা পর ৮ জানুয়ারী শনিবার লাশ ফেরত দেয় বিএসএফ। বাংলাদেশে আর এক দফা ময়না তদন্ত শেষে লাশ দাফন হয় ৭৩ ঘন্টা পর। মানাধিকার সংস্থাগুলোর অব্যাহত চাপের মূখে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন কুড়িগ্রামে এসে ফেলানীর মা ও ভাই-বোনদের ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেন। আর ১৫ ফেব্রুয়ারী নিচ্ছিদ্রু নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তায় সারাদিন লুকোচুরি খেলা শেষে বিকেলে মা ও ভাই-বোনদের বাংলাদেশে ফেরত দেয় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনাটি দেশ-বিদেশের গনমাধ্যম ও মানবাধিকার কর্মীদের কাছে ব্যাপকভাবে সমালোচনার ঝর তোলে। খোদ ভারতের গনমাধ্যমগুলোর সোচ্চার ভূমিকায় কোচবিহারের বিএসএফ’র বিশেষ আদালতে ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট বিচারিক কার্যক্রম শুরু করে ভারত সরকার। আদালতে স্বাক্ষী দেন প্রত্যক্ষদর্শী বাবা নুর ইসলাম ও মামা আব্দুল হানিফ। কিন্তু অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমীয় ঘোষকে ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বেকসুর খালাস দেয় বিশেষ আদালত। পরে ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় ভারতীয় হাইকমিশনারের নিকট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার। দেশী-বিদেশী চাপে ভারত বিচার কার্যক্রম রিভিউ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসাবে সোমবার পুনরায় শুরু হয় ফেলানী হত্যা মামলার বিচার কাজ।
No comments