সাগর-রুনি হত্যা
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার তদন্তে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ব্যর্থতা হত্যাকারীদের দক্ষতা ও ক্ষমতারই প্রমাণ দেয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যখন অনেক জটিল ও স্পর্শকাতর মামলার সুরাহা করছে, তখন জাতীয় দাবি হয়ে ওঠা প্রত্যাশিত বিচারের ব্যর্থতা কোনোভাবেই মার্জনা করা যায় না। সেই ভয়ংকর হূদয়বিদারক হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পরও সকলই গরল ভেল হয়েই আছে। এর মধ্যে নতুন সরকার এসেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তিনবার হাতবদল হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আসামিদের গ্রেপ্তার করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু মন্ত্রীবচন যতটা গর্জায় ততটা বর্ষায় না। এরপর মহীউদ্দীন খান আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে সিনেমার কায়দায় হত্যারহস্য উন্মোচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। সম্প্রতি নতুন প্রতিমন্ত্রীও শোনাচ্ছেন আশার বাণী। যথারীতি এসব অসার আশার বাণী জনগণকে ধোঁকা দেওয়ার শামিল। মঙ্গলবারের প্রথম আলোয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু পুনরায় আশার বাণী দিয়ে বলেছেন, ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতায় তিনি নারাজ এবং লজ্জিত।’ বিষয়টি লজ্জার নয়, নিষ্ঠা ও সৎসাহসের অভাবের সঙ্গে জড়িত। দেশকে আলোড়িত করেছে যে হত্যাকাণ্ড, সাংবাদিক সমাজসহ সব পরিবারকে যে ঘটনা আতঙ্কিত করেছে, সাংবাদিক দম্পতির শিশুসন্তানের করুণ কষ্টে যেখানে সবাই মর্মাহত, সেখানে মন্ত্রীদের কথার বরখেলাপ ও লোকদেখানো লজ্জায় না আছে যুক্তি না আছে সান্ত্বনা। সাগর-রুনির হত্যাকারী যারাই হোক, তারা পুলিশ-ডিবি ও র্যাবকে হয় নিরস্ত নয়তো বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছে। তদন্তকে একেকবার একেক খাতে প্রবাহিত করতে পারা,
আলামত নষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা এবং সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন রকম গুজব-অনুমান ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের তারা সুকৌশলেই আড়াল করতে পেরেছে। পাশাপাশি এটাও বলতে হয় যে, বিষয়টি নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের সদিচ্ছা নিয়েও প্রশ্ন জাগে। অনেকেরই বিশ্বাস, সরকার আন্তরিকভাবে চাইলে অপরাধীদের খুঁজে বের করার তৎপরতা সফল হতোই। তদন্তের ৬২ দিনের মাথায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আদালতে তাদের ব্যর্থতা স্বীকার করে। কিন্তু এ ধরনের ব্যর্থতার জন্য তাদের কি কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে? মামলাটি বর্তমানে র্যাবের দায়িত্বে এবং এই বিশেষ বাহিনীও হত্যারহস্য উন্মোচনে ব্যর্থ। এত সব ব্যর্থতার দায়ভার কোনো না কোনোভাবে সরকারের ওপরই বর্তায়। সাগর-রুনিকে যারাই হত্যা করুক, তারা সাংবাদিক সমাজকে হুমকির মধ্যে রেখেছে। এ ঘটনা জনগণের নিরাপত্তাদানে সরকারের ব্যর্থতাকে তুলে ধরেছে। বেডরুম পাহারা দেওয়া সম্ভব নয়— প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য অনেক সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। সাংবাদিক সমাজও জোরালো ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা চাই, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘোষিত সেই ৪৮ ঘণ্টা শেষ হোক। শিশু মাহীর সরওয়ার মেঘ তার পিতা-মাতা হত্যার বিচার পাক। ক্ষমতাবান খুনিদের দীর্ঘ অদৃশ্য হাত উন্মোচনের মাধ্যমে আইনের শাসন কায়েমের নজির স্থাপিত হোক। যত দিন তা না হবে, তত দিন সরকারকে এই লজ্জাজনক ব্যর্থতা ভুলতে দেওয়া যাবে না।
No comments