মাহে রমজানে সম্পদের জাকাত -সিয়াম সাধনার মাস ধর্ম by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
মাহে রমজানের রোজাকে দেহের জাকাতস্বরূপ বলা হয়েছে। জাকাত আদায় করলে যেমন মানুষের উপার্জিত সব ধনসম্পদ পবিত্র হয়, তেমনি রমজান মাসে রোজা পালন করলে সারা শরীর পবিত্র হয়ে যায়। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘যে ব্যক্তি তার সম্পদের জাকাত প্রদান করে, তার সম্পদের দোষ দূর হয়।’ বস্তুর পবিত্রতা হাসিলের জন্য যেমন জাকাত প্রদান করতে হয়, তেমনি মানুষের শরীর তথা আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য সত্যিকারের সিয়াম পালন করতে হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি বস্তুরই একটি জাকাত রয়েছে, আর মানুষের দেহের জাকাত হলো রোজা।’ (ইবনে মাজা)
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম প্রধান ভিত্তি ও বাধ্যতামূলক আর্থিক ইবাদত জাকাত সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণের একটি বিরাট উপকরণ। ইসলামে কোনো ব্যক্তির উপার্জিত অর্থের পুরোটাই এককভাবে তাকে ভোগ করার অধিকার দেওয়া হয়নি, বরং বছরান্তে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদ হলে এর দ্বারা তার গরিব আত্মীয়স্বজন এবং নিঃস্ব, হতদরিদ্র লোকজনকে সাহায্য করতে হয়, যাতে তারাও উপার্জনক্ষম হতে পারে। সম্পদের জাকাত প্রদান করলে জাকাতদাতার সম্পত্তি কিছু কমে না, বরং আল্লাহ এতে অনেক বরকত দান করেন এবং তা বহু গুণ বেড়ে যায়। ইসলামে সর্বপ্রকার ধন-সম্পদ বণ্টনের মূলনীতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘ধন-সম্পদ যেন শুধু তোমাদের ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।’ (সূরা আল-হাশর, আয়াত-৭)
সম্পদের জাকাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়ের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও রমজান মাসই জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম সময়। রমজান মাসে যেকোনো ধরনের দান-সাদকা করলে অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি নেকি হাসিল হয়। তাই রমজান মাসে রোজাদার মুমিন বান্দারা একসঙ্গে জাকাত ও ফিতরা আদায়—এ দুটি আর্থিক ইবাদত করে থাকেন।
দারিদ্র্য দূরীকরণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে রমজান মাসেই অধিক সওয়াবপ্রাপ্তির জন্য ধন-সম্পদের জাকাত দেওয়ার উপযুক্ত ও শ্রেষ্ঠ সময়। রমজান মাস ও অন্যান্য সময় রোজাদার ধনী লোকেরা গরিবদের জাকাত প্রদান করার ফলে সমাজের গরিব-নিঃস্ব ব্যক্তিরা দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে অনেকটা রেহাই পান এবং সমাজের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। ধনী মুসলমানদের অর্থ-সম্পদের মধ্যে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী অপরের নির্দিষ্ট পরিমাণ আংশিক অধিকার রয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘জাকাত ইসলামের সেতু।’ (মুসলিম)
মাহে রমজানসহ সারা বছর নিজের ও পরিবারের যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে যদি কোনো মুসলমানের কাছে নিসাব পরিমাণ অর্থাৎ বছরের আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যদি কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য অথবা সমমূল্যের ধন-সম্পদ থাকে, তবে তার উদ্বৃত্ত সম্পদের শতকরা আড়াই টাকা হিসেবে আল্লাহর নির্ধারিত খাতে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করতে হয়, আর এটাই হলো জাকাত। যার ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তাকে অবশ্যই জাকাত আদায় করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো এবং জাকাত প্রদান করো।’ (সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত-২০)
আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ধন-সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ অসহায় গরিব-দুঃখীদের জাকাত প্রদান করে রোজাদার আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে থাকেন। জাকাত গরিবের প্রতি ধনীর অনুগ্রহ নয়, বরং তা গরিবের ন্যায্য অধিকার। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আর তাদের (সম্পদশালীদের) ধন-সম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা আল-যারিআত, আয়াত-১৯)
ইসলামি বিধান অনুসারে জাকাত প্রদানের ফলে সমাজের অসহায় গরিব-দুঃখী, অনাথ, বিধবা, বৃদ্ধ, রুগ্ণ, পঙ্গু, অক্ষম ও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিরা মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে অভাব মোচন করতে পারে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা জাকাত আদায় করে তখন ফেরেশতাগণ তার জন্য এই দোয়া করে—হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি তোমার পথে খরচ করছে, তাকে তুমি আরও দান করো; আর যে ব্যক্তি সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে, তোমার পথে খরচ করে না তুমি তার সম্পদকে ধ্বংস করে দাও!’ (বুখারি)
মাহে রমজানে যে জাকাত-ফিতরা প্রদান করা হয়, কতিপয় ধনী লোক গরিবদের প্রতি তা দয়া বা অনুগ্রহ বলে মনে করেন। আর গরিব-দুঃখীদের মনে করা হয় করুণার পাত্র। কিন্তু ধনীর অর্থ-সম্পদে দরিদ্র-অসহায়দের অধিকার রয়েছে। রমজান মাসে ধনী লোকেরা জাকাত-ফিতরা দিয়ে সেই দায়িত্বমুক্ত হচ্ছেন মাত্র। আর জাকাত-ফিতরা আদায় না করলে তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করেননি বলে দোষী সাব্যস্ত হবেন। জাকাত-ফিতরা বা দান-খয়রাত করুণার বিষয় নয়, এগুলো হলো হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর সাদকা (জাকাত) অপরিহার্য করেছেন, যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
রোজা পালনকারী প্রত্যেক ধনী ব্যক্তিরই আল্লাহকে ভয় করে কড়ায়-গণ্ডায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের জাকাত আদায় করা উচিত। জাকাতের প্রকৃত হকদার হচ্ছে তারা, যারা কর্মক্ষমতাহীন এবং যারা কর্মক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উপার্জনহীন অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণে উপার্জন করতে পারছে না। এমতাবস্থায় ধনী লোকেরা যদি রমজান মাসে অগ্রিমও জাকাত আদায় করেন, তাহলে সব ধরনের অভাবী, দুর্দশাগ্রস্ত, দুর্গত মানুষের অভাব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান ও পুনর্বাসন করা সহজ হতে পারে। মাহে রমজানে জাকাতকে সঠিক খাতে এবং সহায়-সম্বলহীন গরিব-মিসকিন ও দুস্থ লোকদের পুনর্বাসনের কাজে ব্যবহার করতে পারলে সমাজ থেকে সহজেই অভাব-অনটন ও দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হবে।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
dr.munimkhan@yahoo.com
ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম প্রধান ভিত্তি ও বাধ্যতামূলক আর্থিক ইবাদত জাকাত সমাজে ধনী ও গরিবের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণের একটি বিরাট উপকরণ। ইসলামে কোনো ব্যক্তির উপার্জিত অর্থের পুরোটাই এককভাবে তাকে ভোগ করার অধিকার দেওয়া হয়নি, বরং বছরান্তে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নিসাব পরিমাণ ধন-সম্পদ হলে এর দ্বারা তার গরিব আত্মীয়স্বজন এবং নিঃস্ব, হতদরিদ্র লোকজনকে সাহায্য করতে হয়, যাতে তারাও উপার্জনক্ষম হতে পারে। সম্পদের জাকাত প্রদান করলে জাকাতদাতার সম্পত্তি কিছু কমে না, বরং আল্লাহ এতে অনেক বরকত দান করেন এবং তা বহু গুণ বেড়ে যায়। ইসলামে সর্বপ্রকার ধন-সম্পদ বণ্টনের মূলনীতি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ঘোষিত হয়েছে, ‘ধন-সম্পদ যেন শুধু তোমাদের ধনীদের মধ্যেই আবর্তিত না হয়।’ (সূরা আল-হাশর, আয়াত-৭)
সম্পদের জাকাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময়ের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও রমজান মাসই জাকাত আদায়ের সর্বোত্তম সময়। রমজান মাসে যেকোনো ধরনের দান-সাদকা করলে অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি নেকি হাসিল হয়। তাই রমজান মাসে রোজাদার মুমিন বান্দারা একসঙ্গে জাকাত ও ফিতরা আদায়—এ দুটি আর্থিক ইবাদত করে থাকেন।
দারিদ্র্য দূরীকরণ ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে রমজান মাসেই অধিক সওয়াবপ্রাপ্তির জন্য ধন-সম্পদের জাকাত দেওয়ার উপযুক্ত ও শ্রেষ্ঠ সময়। রমজান মাস ও অন্যান্য সময় রোজাদার ধনী লোকেরা গরিবদের জাকাত প্রদান করার ফলে সমাজের গরিব-নিঃস্ব ব্যক্তিরা দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে অনেকটা রেহাই পান এবং সমাজের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। ধনী মুসলমানদের অর্থ-সম্পদের মধ্যে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী অপরের নির্দিষ্ট পরিমাণ আংশিক অধিকার রয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘জাকাত ইসলামের সেতু।’ (মুসলিম)
মাহে রমজানসহ সারা বছর নিজের ও পরিবারের যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে যদি কোনো মুসলমানের কাছে নিসাব পরিমাণ অর্থাৎ বছরের আয় থেকে ব্যয় বাদ দিয়ে যদি কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্য অথবা সমমূল্যের ধন-সম্পদ থাকে, তবে তার উদ্বৃত্ত সম্পদের শতকরা আড়াই টাকা হিসেবে আল্লাহর নির্ধারিত খাতে গরিব-মিসকিনদের মধ্যে বণ্টন করতে হয়, আর এটাই হলো জাকাত। যার ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে, তাকে অবশ্যই জাকাত আদায় করতে হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা নামাজ প্রতিষ্ঠা করো এবং জাকাত প্রদান করো।’ (সূরা আল-মুয্যাম্মিল, আয়াত-২০)
আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক ধন-সম্পদের ৪০ ভাগের এক ভাগ অসহায় গরিব-দুঃখীদের জাকাত প্রদান করে রোজাদার আত্মিক প্রশান্তি লাভ করে থাকেন। জাকাত গরিবের প্রতি ধনীর অনুগ্রহ নয়, বরং তা গরিবের ন্যায্য অধিকার। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আর তাদের (সম্পদশালীদের) ধন-সম্পদে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের অধিকার রয়েছে।’ (সূরা আল-যারিআত, আয়াত-১৯)
ইসলামি বিধান অনুসারে জাকাত প্রদানের ফলে সমাজের অসহায় গরিব-দুঃখী, অনাথ, বিধবা, বৃদ্ধ, রুগ্ণ, পঙ্গু, অক্ষম ও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিরা মৌলিক চাহিদা পূরণের মাধ্যমে অভাব মোচন করতে পারে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যখন কোনো বান্দা জাকাত আদায় করে তখন ফেরেশতাগণ তার জন্য এই দোয়া করে—হে আল্লাহ! যে ব্যক্তি তোমার পথে খরচ করছে, তাকে তুমি আরও দান করো; আর যে ব্যক্তি সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখে, তোমার পথে খরচ করে না তুমি তার সম্পদকে ধ্বংস করে দাও!’ (বুখারি)
মাহে রমজানে যে জাকাত-ফিতরা প্রদান করা হয়, কতিপয় ধনী লোক গরিবদের প্রতি তা দয়া বা অনুগ্রহ বলে মনে করেন। আর গরিব-দুঃখীদের মনে করা হয় করুণার পাত্র। কিন্তু ধনীর অর্থ-সম্পদে দরিদ্র-অসহায়দের অধিকার রয়েছে। রমজান মাসে ধনী লোকেরা জাকাত-ফিতরা দিয়ে সেই দায়িত্বমুক্ত হচ্ছেন মাত্র। আর জাকাত-ফিতরা আদায় না করলে তিনি নিজের দায়িত্ব পালন করেননি বলে দোষী সাব্যস্ত হবেন। জাকাত-ফিতরা বা দান-খয়রাত করুণার বিষয় নয়, এগুলো হলো হক্কুল ইবাদ বা বান্দার হক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের ওপর সাদকা (জাকাত) অপরিহার্য করেছেন, যা তাদের ধনীদের কাছ থেকে আদায় করে দরিদ্রদের মধ্যে বণ্টন করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
রোজা পালনকারী প্রত্যেক ধনী ব্যক্তিরই আল্লাহকে ভয় করে কড়ায়-গণ্ডায় প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের জাকাত আদায় করা উচিত। জাকাতের প্রকৃত হকদার হচ্ছে তারা, যারা কর্মক্ষমতাহীন এবং যারা কর্মক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও উপার্জনহীন অথবা পর্যাপ্ত পরিমাণে উপার্জন করতে পারছে না। এমতাবস্থায় ধনী লোকেরা যদি রমজান মাসে অগ্রিমও জাকাত আদায় করেন, তাহলে সব ধরনের অভাবী, দুর্দশাগ্রস্ত, দুর্গত মানুষের অভাব দূরীকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান ও পুনর্বাসন করা সহজ হতে পারে। মাহে রমজানে জাকাতকে সঠিক খাতে এবং সহায়-সম্বলহীন গরিব-মিসকিন ও দুস্থ লোকদের পুনর্বাসনের কাজে ব্যবহার করতে পারলে সমাজ থেকে সহজেই অভাব-অনটন ও দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব হবে।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হজরত মুহাম্মদ (সা.)।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments