যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তদের গণজামিন -প্রধান বিচারপতির হস্তক্ষেপ কাম্য
প্রতি মিনিটে অন্তত একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে জামিন প্রদানের ঘটনায় আমরা স্তম্ভিত। এ বিষয়ে যদিও প্রথম আলোতে ২ ডিসেম্বর শীর্ষ প্রতিবেদন এবং সেদিনই বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা, অ্যাটর্নি জেনারেল প্রমুখ বৈঠক করেন এবং বৈঠকের পর অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন যে তিনি ওই সব জামিন আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি এমনকি ওই আদালতে আইন কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ানোর কথাও বলেছেন। কিন্তু আমরা মনে করি, বিষয়টি এতটাই অস্বাভাবিক, গুরুতর ও ব্যাপক যে এ ক্ষেত্রে প্রতিকারের আটপৌরে চিন্তাই শেষ কথা হতে পারে না।
হাইকোর্ট বিভাগের কোনো আদেশের বিরুদ্ধে যে-কেউ আপিল বিভাগে প্রতিকার চাইতে পারেন। এটা একটি রুটিন বিষয়। কিন্তু কখনো সময় আসে যখন অসাধারণ পরিস্থিতি অসাধারণ প্রতিকারের দাবি রাখে। গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বরেই কেবল নয়, হাইকোর্ট বিভাগের আলোচ্য দ্বৈত বেঞ্চ নভেম্বর মাসজুড়ে যে পরিমাণ মোট জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন তা দৃশ্যত বড়ই অস্বাভাবিক।
কোনো সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশের সব নাগরিক দ্রুত বিচারের অধিকার রাখেন। এটা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। দোষী ব্যক্তির অপরাধ যতই গুরুতর হোক, যখন তাঁর এই অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, তখন তিনি আসলে ওই সাংবিধানিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত হন। সুতরাং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির জামিন লাভের কারণে আমাদের বক্তব্য নেই। আমরা সবিনয়ে প্রশ্ন তুলছি বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। কী করে দুই দিনে অন্তত সাত শ জামিনের পৃথক আবেদন হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ নিষ্পত্তি করতে পারলেন। মানুষের ক্ষমতা তো অসীম নয়। এই ক্ষমতার প্রয়োগ আমাদের সাধারণ বিবেচনাবোধের বাইরে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের আগে পেন্ডিং ফৌজদারি আপিলের ততটা চাপ ছিল না। ওই সময়ে যেসব অপরাধী তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেতেন, তাঁরা তাঁদের আপিল চলাকালে যদিও বা জামিনের জন্য দরখাস্ত করতেন, কিন্তু আদালত তাঁদের জামিন দিতেন না। এমনকি উচ্চ আদালতও তাঁদের সহানুভূতি দেখাতেন না। স্বাধীনতা লাভের পরও যাঁরা পাঁচ বছরের বেশি দণ্ড পেতেন তাঁদের জামিন দিতেন না উচ্চ আদালত। ধীরে ধীরে পেন্ডিং ফৌজদারি আপিলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে উচ্চ আদালত শিথিল মনোভাব নিতে শুরু করেন। প্রথমে পাঁচ বছরের বেশি এবং সম্ভবত ১৯৯০ সালের পরে সীমিতভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের আদালত জামিন প্রদানের নীতি নেন। তবে জামিন প্রদান সাধারণভাবে সব সময়ই আদালতের ডিসক্রিশন বা বিশেষ অধিকার। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর উচ্চ আদালত জামিন প্রদানে মোটামুটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে থাকেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দোষী ব্যক্তিদের আপিলের আবেদন ঝুলে থাকাকালে জামিন প্রদানে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি একটি সর্বজনীন নীতি। আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধিতেও সে কারণে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চলতে আদালতের ওপর একটা বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। জামিন প্রদান বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ও ৪৯৭ ধারায় আদালতকে প্রকারান্তরে একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত, এমনকি যাঁরাই অজামিনযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত হবেন তাঁদের জামিন দিতে হলে নানা বিচার-বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে, জামিন প্রদানের কারণ নির্দিষ্টভাবে লিখতে হবে। কিন্তু প্রথম আলোর সীমিত অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, জামিন আদেশগুলো গত্বাঁধা। তাতে কারণ লেখা হয়নি। সুতরাং আমরা মনে করি, বিচারিক যথার্থতার প্রশ্ন ছাড়াও এখানে অন্য কোনো অনিয়মের বিষয় থাকতে পারে। তাই এখানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির একটি যথোচিত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। জনমনে আস্থাই বিচার বিভাগের প্রাণ। সেই আস্থা বজায় রাখার স্বার্থেই যথা পদক্ষেপ অপরিহার্য।
হাইকোর্ট বিভাগের কোনো আদেশের বিরুদ্ধে যে-কেউ আপিল বিভাগে প্রতিকার চাইতে পারেন। এটা একটি রুটিন বিষয়। কিন্তু কখনো সময় আসে যখন অসাধারণ পরিস্থিতি অসাধারণ প্রতিকারের দাবি রাখে। গত ১৮ ও ১৯ নভেম্বরেই কেবল নয়, হাইকোর্ট বিভাগের আলোচ্য দ্বৈত বেঞ্চ নভেম্বর মাসজুড়ে যে পরিমাণ মোট জামিন আবেদন নিষ্পত্তি করেছেন তা দৃশ্যত বড়ই অস্বাভাবিক।
কোনো সন্দেহ নেই যে বাংলাদেশের সব নাগরিক দ্রুত বিচারের অধিকার রাখেন। এটা প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। দোষী ব্যক্তির অপরাধ যতই গুরুতর হোক, যখন তাঁর এই অধিকার ক্ষুণ্ন হয়, তখন তিনি আসলে ওই সাংবিধানিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত হন। সুতরাং যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির জামিন লাভের কারণে আমাদের বক্তব্য নেই। আমরা সবিনয়ে প্রশ্ন তুলছি বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে। কী করে দুই দিনে অন্তত সাত শ জামিনের পৃথক আবেদন হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চ নিষ্পত্তি করতে পারলেন। মানুষের ক্ষমতা তো অসীম নয়। এই ক্ষমতার প্রয়োগ আমাদের সাধারণ বিবেচনাবোধের বাইরে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের আগে পেন্ডিং ফৌজদারি আপিলের ততটা চাপ ছিল না। ওই সময়ে যেসব অপরাধী তিন থেকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পেতেন, তাঁরা তাঁদের আপিল চলাকালে যদিও বা জামিনের জন্য দরখাস্ত করতেন, কিন্তু আদালত তাঁদের জামিন দিতেন না। এমনকি উচ্চ আদালতও তাঁদের সহানুভূতি দেখাতেন না। স্বাধীনতা লাভের পরও যাঁরা পাঁচ বছরের বেশি দণ্ড পেতেন তাঁদের জামিন দিতেন না উচ্চ আদালত। ধীরে ধীরে পেন্ডিং ফৌজদারি আপিলের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সঙ্গে উচ্চ আদালত শিথিল মনোভাব নিতে শুরু করেন। প্রথমে পাঁচ বছরের বেশি এবং সম্ভবত ১৯৯০ সালের পরে সীমিতভাবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের আদালত জামিন প্রদানের নীতি নেন। তবে জামিন প্রদান সাধারণভাবে সব সময়ই আদালতের ডিসক্রিশন বা বিশেষ অধিকার। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর উচ্চ আদালত জামিন প্রদানে মোটামুটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করে থাকেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দোষী ব্যক্তিদের আপিলের আবেদন ঝুলে থাকাকালে জামিন প্রদানে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়টি একটি সর্বজনীন নীতি। আমাদের ফৌজদারি কার্যবিধিতেও সে কারণে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে চলতে আদালতের ওপর একটা বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে। জামিন প্রদান বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ ও ৪৯৭ ধারায় আদালতকে প্রকারান্তরে একটি গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। এতে স্পষ্ট যে মৃত্যুদণ্ড, যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত, এমনকি যাঁরাই অজামিনযোগ্য ধারায় অভিযুক্ত হবেন তাঁদের জামিন দিতে হলে নানা বিচার-বিবেচনা করতে হবে। বিশেষ করে, জামিন প্রদানের কারণ নির্দিষ্টভাবে লিখতে হবে। কিন্তু প্রথম আলোর সীমিত অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, জামিন আদেশগুলো গত্বাঁধা। তাতে কারণ লেখা হয়নি। সুতরাং আমরা মনে করি, বিচারিক যথার্থতার প্রশ্ন ছাড়াও এখানে অন্য কোনো অনিয়মের বিষয় থাকতে পারে। তাই এখানে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির একটি যথোচিত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। জনমনে আস্থাই বিচার বিভাগের প্রাণ। সেই আস্থা বজায় রাখার স্বার্থেই যথা পদক্ষেপ অপরিহার্য।
No comments