মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে ব্যর্থ হয়েছে জাতিসংঘ; এখন দায়িত্ব নেয়া উচিত তাদের by মাউং জারনি
জাতিসংঘ
সম্প্রতি ৩৬ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট গ্রহণ করেছে, যেখানে মিয়ানমারে ২০১০
থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের ভূমিকা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের নির্বাহী গার্ট রোজেনথালের প্রণীত ওই রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে যে, মিয়ানমারে সঙ্কটে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে জাতিসংঘ ‘পদ্ধতিগত দিক থেকে ব্যর্থ’ হয়েছে।
রোজেনথাল রিপোর্টে (২৯ মে প্রকাশিত) বলা হয়েছে যে, মিয়ানমারে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল অকার্যকর, এবং সেখানে সংস্থাটির নেতৃত্ব ও ভূমিকা ছিল ‘তুলনামূলকভাবে বন্ধ্যা’। এই সব সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণ হলো বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিজস্ব সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, যাদের মধ্যে সাংঘর্ষিক মত এবং স্বার্থগত দ্বন্দ্বও ছিল।
সিকিউরিটি কাউন্সিলের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব জাতিসংঘের অবস্থানকে দুর্বল করে ফেললেও, রোজেনথাল উল্লেখ করেছেন যে, রোহিঙ্গাদের নিগ্রহ বন্ধে সংস্থাটির আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক বাজারে মিয়ানমারের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারতো। কিন্তু জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটরের অধীনস্থ মিয়ানমার টিম এবং মহাসচিব ও তার নিউ ইয়র্কের সিনিয়র নির্বাহী টিম যে সব নীতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেখান থেকে এই ভুল ধারণা এসেছে যে, জাতিসংঘ মিয়ানমারের সাথে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে।
আসলে, ইউএন ডেভলপমেন্ট প্রগ্রাম (ইউএনডিপি) পুরোদমে দেশের উন্নয়ন কর্মসূচিতে রূপ নেয়ায়, সেটা মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধন অভিযান চালাতে শক্তি যুগিয়েছে।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের গণহত্যা থেকে কয়েক প্রজন্মের যারা বেঁচে গেছেন, তারা বহুদিন ধরে যে সত্যটা জেনে আসছেন, রোজেনথাল রিপোর্টে শেষ পর্যন্ত এটাকে স্বীকার করা হয়েছে। সেটা হলো: জাতিসংঘ তাদেরকে শুধু ২০১০ সালেই ব্যর্থ করেনি, বরং ১৯৭৮ সালে যখন মিয়ানমারের গণহত্যার প্রচেষ্টা শুরু হয়, তখন থেকেই জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছে।
জাতিসংঘের নিজেদের কূটনীতিক ও কর্মকর্তা কর্তৃক তাদের ভুল চিহ্নিত করার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নিধনের ব্যাপারে এ ধরনের ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছে জাতিসংঘ।
২০১২ সালে সাবেক অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল চার্লস পেটরি – যিনি ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন – তিনিও একই ধরনের অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন: জাতিসংঘ কার্যকরভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং শ্রীলংকায় মানুষের সুরক্ষা ও সমঝোতার ব্যাপারে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
মিয়ানমারে ব্যর্থতার ব্যাপারে জাতিসংঘের স্বীকারোক্তিকে স্বাগত জানানো যায়। কিন্তু এটা উদ্বেগজনক যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরকার পর্যায়ের সংস্থা – যারা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য কাজ করছে, তারা তাদের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের সংশোধন করতে পারছে না।
মহাসচিব অ্যান্টনিও গুটেরাস যখন রোজেনথালের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেন, তখন সেটা নিয়ে তীব্র সন্দেহ দেখা দিয়েছে। গুটেরাস যখন ইউএন হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন মিয়ানমারের তৎকালিন প্রেসিডেন্ট থিন সিনের আয়োজন করা এক বৈঠকে তাকে বলা হয়েছিল যে, দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চায়।
২০১২ সাল থেকেই তাই জাতিসংঘের নেতৃবৃন্দের কাছে আন্তর্জাতিক অপরাধ সঙ্ঘটিত করার ব্যাপারে মিয়ানমারের উদ্দেশ্যের বিষয়টি পরিস্কার ছিল। কিন্তু কার্যকর কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি।
সংস্থাটির আরও বেশি কিছু করা উচিত ছিল। গণহত্যার ব্যাপারে আগাম সতর্কবার্তা সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন ছিল। এ ব্যাপারে জরুরি রেসপন্স টিম গঠন ও পরিকল্পনা নেয়া দরকার ছিল। এবং স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অব দ্য সেক্রেটারি-জেনারেল ফর চিলড্রেন অ্যান্ড আর্মড কনফ্লিক্ট এবং অফিস অন জেনোসাইড প্রিভেনশান অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটি টু প্রটেক্টের একসাথে কাজ করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি।
মাউং জারনি ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশানের বার্মিজ সমন্বয়ক। সংস্থাটি রোহিঙ্গা শরণার্থী ও মানবাধিকার কর্মীদের একটি আমব্রেলা নেটওয়ার্ক।
গুয়াতেমালার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং জাতিসংঘের নির্বাহী গার্ট রোজেনথালের প্রণীত ওই রিপোর্টে স্বীকার করা হয়েছে যে, মিয়ানমারে সঙ্কটে ভূমিকা রাখার ব্যাপারে জাতিসংঘ ‘পদ্ধতিগত দিক থেকে ব্যর্থ’ হয়েছে।
রোজেনথাল রিপোর্টে (২৯ মে প্রকাশিত) বলা হয়েছে যে, মিয়ানমারে জাতিসংঘের ভূমিকা ছিল অকার্যকর, এবং সেখানে সংস্থাটির নেতৃত্ব ও ভূমিকা ছিল ‘তুলনামূলকভাবে বন্ধ্যা’। এই সব সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণ হলো বিভিন্ন কর্মকর্তাদের নিজস্ব সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, যাদের মধ্যে সাংঘর্ষিক মত এবং স্বার্থগত দ্বন্দ্বও ছিল।
সিকিউরিটি কাউন্সিলের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাব জাতিসংঘের অবস্থানকে দুর্বল করে ফেললেও, রোজেনথাল উল্লেখ করেছেন যে, রোহিঙ্গাদের নিগ্রহ বন্ধে সংস্থাটির আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিল।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক বাজারে মিয়ানমারের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারতো। কিন্তু জাতিসংঘের রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেটরের অধীনস্থ মিয়ানমার টিম এবং মহাসচিব ও তার নিউ ইয়র্কের সিনিয়র নির্বাহী টিম যে সব নীতি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেখান থেকে এই ভুল ধারণা এসেছে যে, জাতিসংঘ মিয়ানমারের সাথে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে পারে।
আসলে, ইউএন ডেভলপমেন্ট প্রগ্রাম (ইউএনডিপি) পুরোদমে দেশের উন্নয়ন কর্মসূচিতে রূপ নেয়ায়, সেটা মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধন অভিযান চালাতে শক্তি যুগিয়েছে।
রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের গণহত্যা থেকে কয়েক প্রজন্মের যারা বেঁচে গেছেন, তারা বহুদিন ধরে যে সত্যটা জেনে আসছেন, রোজেনথাল রিপোর্টে শেষ পর্যন্ত এটাকে স্বীকার করা হয়েছে। সেটা হলো: জাতিসংঘ তাদেরকে শুধু ২০১০ সালেই ব্যর্থ করেনি, বরং ১৯৭৮ সালে যখন মিয়ানমারের গণহত্যার প্রচেষ্টা শুরু হয়, তখন থেকেই জাতিসংঘ রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছে।
জাতিসংঘের নিজেদের কূটনীতিক ও কর্মকর্তা কর্তৃক তাদের ভুল চিহ্নিত করার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নিধনের ব্যাপারে এ ধরনের ব্যর্থতার মুখোমুখি হয়েছে জাতিসংঘ।
২০১২ সালে সাবেক অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি জেনারেল চার্লস পেটরি – যিনি ২০০৩ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মিয়ানমারে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন – তিনিও একই ধরনের অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছেছিলেন: জাতিসংঘ কার্যকরভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং শ্রীলংকায় মানুষের সুরক্ষা ও সমঝোতার ব্যাপারে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারেনি।
মিয়ানমারে ব্যর্থতার ব্যাপারে জাতিসংঘের স্বীকারোক্তিকে স্বাগত জানানো যায়। কিন্তু এটা উদ্বেগজনক যে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সরকার পর্যায়ের সংস্থা – যারা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য কাজ করছে, তারা তাদের অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের সংশোধন করতে পারছে না।
মহাসচিব অ্যান্টনিও গুটেরাস যখন রোজেনথালের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিলেন, তখন সেটা নিয়ে তীব্র সন্দেহ দেখা দিয়েছে। গুটেরাস যখন ইউএন হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন, তখন মিয়ানমারের তৎকালিন প্রেসিডেন্ট থিন সিনের আয়োজন করা এক বৈঠকে তাকে বলা হয়েছিল যে, দেশটির সরকার রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের মধ্যে আবদ্ধ রাখতে চায়।
২০১২ সাল থেকেই তাই জাতিসংঘের নেতৃবৃন্দের কাছে আন্তর্জাতিক অপরাধ সঙ্ঘটিত করার ব্যাপারে মিয়ানমারের উদ্দেশ্যের বিষয়টি পরিস্কার ছিল। কিন্তু কার্যকর কোন পদক্ষেপই নেয়া হয়নি।
সংস্থাটির আরও বেশি কিছু করা উচিত ছিল। গণহত্যার ব্যাপারে আগাম সতর্কবার্তা সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন ছিল। এ ব্যাপারে জরুরি রেসপন্স টিম গঠন ও পরিকল্পনা নেয়া দরকার ছিল। এবং স্পেশাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অব দ্য সেক্রেটারি-জেনারেল ফর চিলড্রেন অ্যান্ড আর্মড কনফ্লিক্ট এবং অফিস অন জেনোসাইড প্রিভেনশান অ্যান্ড রেসপন্সিবিলিটি টু প্রটেক্টের একসাথে কাজ করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা সেটা করেনি।
মাউং জারনি ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশানের বার্মিজ সমন্বয়ক। সংস্থাটি রোহিঙ্গা শরণার্থী ও মানবাধিকার কর্মীদের একটি আমব্রেলা নেটওয়ার্ক।
No comments