ড. কামালকে ফোন দেয়া গেল না by সাজেদুল হক
ইতিহাসের
শহর ঢাকা। বিচিত্র অভিজ্ঞতা এ শহরের মানুষের। তিন রাষ্ট্রের শাসন দেখেছেন
এমন মানুষও এখানে আছেন। কত রকম নির্বাচনই না তারা দেখেছেন। ভোট উৎসব। যুগের
পর যুগ ধরেই এটাই ছিল সাধারণ চিত্র। হাঙ্গামা, রক্তারক্তি, কেন্দ্র দখল,
জাল ব্যালটে বাক্স বোঝাই যে হয়নি তা নয়। সেসব ছিল ভোটের দিনের চিত্র।
কিন্তু এবারের দৃশ্যপট একেবারেই নতুন। ঢাকা এমন ভোট আগে কখনো দেখেনি।
ক’দিন আগে নির্বাচন কমিশনে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের একটি কথা কৌতূহল তৈরি করেছিল। নির্বাচন কমিশনারদের সম্ভবত, তিনি এটা বুঝিয়েছিলেন যে, ধানের শীষ প্রতীকের কোনো পোস্টার দেখলে তাকে যেন ফোন করা হয়। তিনি নিজে গিয়ে সেটা দেখে আসবেন। কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি নিজেই এই তথ্য জানান। এ রিপোর্টার অথবা সাংবাদিকদের তিনি ফোন দিতে বলেন নি। তবুও গতকাল তিন ঘণ্টার কিছু বেশি সময় সরজমিন অনুসন্ধানে তাকে ফোন দেয়ার কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি। কেননা, ধানের শীষের কোনো পোস্টার এ রিপোর্টারের চোখে পড়েনি।
দড়িতে টানানো সারি সারি পোস্টার। সবই নৌকার। কোদাল, হাতপাখা, কাস্তে হাতেগোনা। কে বলবে ছয় দিন পর ভোট। অন্তত ঢাকার চিত্র দেখলে বুঝা দায়। ভদ্রলোকের বয়স ৫০-এর কিছু বেশি। শেওড়াপাড়ায় একটি বহুতল ভবনে ব্যবস্থাপনার চাকরি করেন। এখানে আছেন ২২-২৩ বছর ধরে। জানতে চাইলাম, ভোট নিয়ে কী ভাবছেন। কিছুটা লম্বা উত্তরে যা বললেন তাতে বুঝা যায়, এ নিয়ে তার কোনো উৎসাহ নেই। শঙ্কা, চিন্তা ভর করেছে মনে। ঢাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাবনাও হয়তো এমনই। গতকাল সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, অংশগ্রহণমূলক, একতরফা নির্বাচনের চিত্র। চায়ের দোকানে, রাস্তায় ভোট নিয়ে কথা বলছেন খুব কম লোকই। অনেকেই বলছেন, এটা নজিরবিহীন এক পরিস্থিতি।
১২টার কিছু পর। শেওড়াপাড়ার বিভিন্ন এলাকা। ঢাকা-১৫ এর প্রান্তিক অংশ। মেট্রোরেলের কাজ চলছে। সর্বত্র নৌকার পোস্টার। প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার। হঠাৎ, হঠাৎ লাঙলের দুই/একটি পোস্টারের ঝলক। এখানে ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শফিকুর রহমান। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। কোথাও তার পোস্টারের দেখা মেলেনি। তবে এলাকার কয়েকজন জানালেন, ধানের শীষে ভোট চেয়ে তাদের মোবাইলে এসএমএস এসেছে।
শেওড়াপাড়া থেকে এগুতে থাকি আগারগাঁওয়ের দিকে। একইদৃশ্য। শুধুই নৌকার পোস্টার। মসজিদে আজান হচ্ছে। হাইয়া আলাল ফালা-হ। কল্যাণের জন্য এসো। কল্যাণের দিকে মানুষ যাচ্ছে কি-না কে জানে। কিছুদূর পর দেখা মিললো একটি মিছিলের। নৌকা, নৌকা। মিছিলে চিকিৎসক, নার্সরা। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটা কঠিন। দ্রুত হেঁটে সামনে গিয়ে ব্যানার দেখে বুঝা গেল মিছিলটি স্বাচিপের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল শাখার। মিছিলের পাশেই একজন তার সঙ্গীকে বলছেন, স্যার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী মিছিল করতে পারেন। তিনি কী জবাব দিলেন শোনা গেল না। বাংলাদেশে এখন এমন অনেক কিছুই শোনা যায় না। এটি অবশ্য অন্য একটি নির্বাচনী এলাকা। এবং এখানে নৌকা ছাড়াও কোদাল প্রতীকের কিছু পোস্টার আছে।
মোহাম্মদপুরে প্রবেশ করে দেখা গেল সাদেক খানের পোস্টারের রাজত্ব। ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে নামকরণ করা হয়েছে সড়কগুলোর। সাদাকালো পোস্টারে উজ্জ্বল প্রচারণা আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদেক খানের। শুরুতে মনোনয়ন নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে তার টানাপড়েন ছিল। এ এলাকায় কিছু পোস্টার আছে হাত-পাখা ও কাস্তের। এ তিনটি নির্বাচনী এলাকায় ভিন্ন প্রতীকের কিছু পোস্টার চোখে পড়লেও ঢাকা-১০ এর চিত্র আরো কিছুটা ব্যতিক্রম। ধানমণ্ডি, ঝিগাতলা সর্বত্র শুধু শেখ ফজলে নূর তাপসের ছবি, পোস্টার। একদিন আগে প্রচারণা শুরু করা বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মান্নানের পোস্টারের দেখা মেলেনি কোথাও। ধানমণ্ডি এলাকার ফুটপাথে দুটি চায়ের স্টলে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা। এইসব দোকানগুলো সাধারণত রাজনৈতিক আড্ডার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু কোথাও রাজনীতি নিয়ে মানুষকে আড্ডায় আগ্রহী দেখা গেল না। জায়গাটায় আগে আজকের কাগজের অফিস ছিল। এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। পাশেই চায়ের দোকানে একজনকে শুধু বলতে শোনা গেল, সুস্থ একটা নির্বাচন দিয়ে দিলেই হয়। পাশেই আরেকজন বলে উঠলেন, ‘হ। দিবো। তোমরা অসুস্থ নাকি?’
১৯৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতিটি নির্বাচনই দেখেছেন লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এরকম একপক্ষীয় প্রচারণা আগে কখনো ঘটেনি। এটা একেবারেই নজিরবিহীন। যদিও তিনি জানিয়েছেন, টিভিতে ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার তিনি দেখেছেন। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, এখন পর্যন্ত প্রচারণায় আওয়ামী লীগ অনেক এগিয়ে। আওয়ামী লীগ তো একবছর আগে থেকেই প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এখন বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সংসদীয় রাজনীতিতে ফেরা। আর আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা। উন্নয়ন ও সুশাসনের সমন্বয় কীভাবে হয় সেটাই হবে দেখার।
ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় আসন রয়েছে ১৫টি। এর প্রতিটিতে নৌকার পাশাপাশি ধানের শীষের প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপি প্রার্থীদের দাবি, পুলিশ আর সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বাধার কারণে তারা পোস্টার লাগাতে পারছেন না। লাগালেও ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাসের প্রচারণায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
কিন্তু এবারের দৃশ্যপট একেবারেই নতুন। ঢাকা এমন ভোট আগে কখনো দেখেনি।
ক’দিন আগে নির্বাচন কমিশনে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের একটি কথা কৌতূহল তৈরি করেছিল। নির্বাচন কমিশনারদের সম্ভবত, তিনি এটা বুঝিয়েছিলেন যে, ধানের শীষ প্রতীকের কোনো পোস্টার দেখলে তাকে যেন ফোন করা হয়। তিনি নিজে গিয়ে সেটা দেখে আসবেন। কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি নিজেই এই তথ্য জানান। এ রিপোর্টার অথবা সাংবাদিকদের তিনি ফোন দিতে বলেন নি। তবুও গতকাল তিন ঘণ্টার কিছু বেশি সময় সরজমিন অনুসন্ধানে তাকে ফোন দেয়ার কোনো সুযোগ তৈরি হয়নি। কেননা, ধানের শীষের কোনো পোস্টার এ রিপোর্টারের চোখে পড়েনি।
দড়িতে টানানো সারি সারি পোস্টার। সবই নৌকার। কোদাল, হাতপাখা, কাস্তে হাতেগোনা। কে বলবে ছয় দিন পর ভোট। অন্তত ঢাকার চিত্র দেখলে বুঝা দায়। ভদ্রলোকের বয়স ৫০-এর কিছু বেশি। শেওড়াপাড়ায় একটি বহুতল ভবনে ব্যবস্থাপনার চাকরি করেন। এখানে আছেন ২২-২৩ বছর ধরে। জানতে চাইলাম, ভোট নিয়ে কী ভাবছেন। কিছুটা লম্বা উত্তরে যা বললেন তাতে বুঝা যায়, এ নিয়ে তার কোনো উৎসাহ নেই। শঙ্কা, চিন্তা ভর করেছে মনে। ঢাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাবনাও হয়তো এমনই। গতকাল সরজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, অংশগ্রহণমূলক, একতরফা নির্বাচনের চিত্র। চায়ের দোকানে, রাস্তায় ভোট নিয়ে কথা বলছেন খুব কম লোকই। অনেকেই বলছেন, এটা নজিরবিহীন এক পরিস্থিতি।
১২টার কিছু পর। শেওড়াপাড়ার বিভিন্ন এলাকা। ঢাকা-১৫ এর প্রান্তিক অংশ। মেট্রোরেলের কাজ চলছে। সর্বত্র নৌকার পোস্টার। প্রার্থী কামাল আহমেদ মজুমদার। হঠাৎ, হঠাৎ লাঙলের দুই/একটি পোস্টারের ঝলক। এখানে ধানের শীষের প্রার্থী ডা. শফিকুর রহমান। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। কোথাও তার পোস্টারের দেখা মেলেনি। তবে এলাকার কয়েকজন জানালেন, ধানের শীষে ভোট চেয়ে তাদের মোবাইলে এসএমএস এসেছে।
শেওড়াপাড়া থেকে এগুতে থাকি আগারগাঁওয়ের দিকে। একইদৃশ্য। শুধুই নৌকার পোস্টার। মসজিদে আজান হচ্ছে। হাইয়া আলাল ফালা-হ। কল্যাণের জন্য এসো। কল্যাণের দিকে মানুষ যাচ্ছে কি-না কে জানে। কিছুদূর পর দেখা মিললো একটি মিছিলের। নৌকা, নৌকা। মিছিলে চিকিৎসক, নার্সরা। তাদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাঁটা কঠিন। দ্রুত হেঁটে সামনে গিয়ে ব্যানার দেখে বুঝা গেল মিছিলটি স্বাচিপের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল শাখার। মিছিলের পাশেই একজন তার সঙ্গীকে বলছেন, স্যার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কী মিছিল করতে পারেন। তিনি কী জবাব দিলেন শোনা গেল না। বাংলাদেশে এখন এমন অনেক কিছুই শোনা যায় না। এটি অবশ্য অন্য একটি নির্বাচনী এলাকা। এবং এখানে নৌকা ছাড়াও কোদাল প্রতীকের কিছু পোস্টার আছে।
মোহাম্মদপুরে প্রবেশ করে দেখা গেল সাদেক খানের পোস্টারের রাজত্ব। ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে নামকরণ করা হয়েছে সড়কগুলোর। সাদাকালো পোস্টারে উজ্জ্বল প্রচারণা আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাদেক খানের। শুরুতে মনোনয়ন নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর কবীর নানকের সঙ্গে তার টানাপড়েন ছিল। এ এলাকায় কিছু পোস্টার আছে হাত-পাখা ও কাস্তের। এ তিনটি নির্বাচনী এলাকায় ভিন্ন প্রতীকের কিছু পোস্টার চোখে পড়লেও ঢাকা-১০ এর চিত্র আরো কিছুটা ব্যতিক্রম। ধানমণ্ডি, ঝিগাতলা সর্বত্র শুধু শেখ ফজলে নূর তাপসের ছবি, পোস্টার। একদিন আগে প্রচারণা শুরু করা বিএনপি প্রার্থী আব্দুল মান্নানের পোস্টারের দেখা মেলেনি কোথাও। ধানমণ্ডি এলাকার ফুটপাথে দুটি চায়ের স্টলে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা। এইসব দোকানগুলো সাধারণত রাজনৈতিক আড্ডার জন্য বিখ্যাত। কিন্তু কোথাও রাজনীতি নিয়ে মানুষকে আড্ডায় আগ্রহী দেখা গেল না। জায়গাটায় আগে আজকের কাগজের অফিস ছিল। এখন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। পাশেই চায়ের দোকানে একজনকে শুধু বলতে শোনা গেল, সুস্থ একটা নির্বাচন দিয়ে দিলেই হয়। পাশেই আরেকজন বলে উঠলেন, ‘হ। দিবো। তোমরা অসুস্থ নাকি?’
১৯৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতিটি নির্বাচনই দেখেছেন লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, এরকম একপক্ষীয় প্রচারণা আগে কখনো ঘটেনি। এটা একেবারেই নজিরবিহীন। যদিও তিনি জানিয়েছেন, টিভিতে ধানের শীষ প্রতীকের পোস্টার তিনি দেখেছেন। নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, এখন পর্যন্ত প্রচারণায় আওয়ামী লীগ অনেক এগিয়ে। আওয়ামী লীগ তো একবছর আগে থেকেই প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এখন বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সংসদীয় রাজনীতিতে ফেরা। আর আওয়ামী লীগের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা। উন্নয়ন ও সুশাসনের সমন্বয় কীভাবে হয় সেটাই হবে দেখার।
ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকায় আসন রয়েছে ১৫টি। এর প্রতিটিতে নৌকার পাশাপাশি ধানের শীষের প্রার্থী রয়েছেন। বিএনপি প্রার্থীদের দাবি, পুলিশ আর সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বাধার কারণে তারা পোস্টার লাগাতে পারছেন না। লাগালেও ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাস ও আফরোজা আব্বাসের প্রচারণায় হামলার ঘটনাও ঘটেছে।
No comments