উত্তরায় ফের সক্রিয় কিশোর গ্যাং ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে নাবিল by মরিয়ম চম্পা
ফেসবুকে
ঘোষণা দিয়েছিল হত্যার। এরপরই কিশোর নাবিলকে ডেকে নিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল
একটি কিশোর গ্যাং। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে এ স্কুলছাত্র। হত্যা
চেষ্টাকারী জীবন ঢালী দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী এবং উত্তরার একটি কিশোর
গ্যাং-এর সদস্য। ওই শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত বলে দাবি করেছে তার পরিবার।
অপরদিকে নাবিলকে হত্যা চেষ্টার প্রতিশোধ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে অন্য একটি
কিশোর গ্রুপ। গত ২০শে মার্চ ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে নাবিল মোবারক (১৪) নামে
ওই স্কুলছাত্রকে হত্যার চেষ্টা চালায় জীবন ঢালী। উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলের
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাবিলের মা নাজিহা চৌধুরী জানান, দুই ভাই ও দুই
বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। উত্তরা হাইস্কুলের পাশে প্রায় তিনটি কিশোর গ্যাং গড়ে
উঠেছে। হত্যাচেষ্টাকারী জীবন ঢালী তাদেরই একজন। উত্তরার স্কুলছাত্র আদনান
কবির হত্যার এক বছর হয়ে গেলেও সঠিক বিচার না হওয়ায় একই ধরনের ঘটনা দেখতে
হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ২০ বছর ধরে নাবিলের বাবাসহ পুরো পরিবার সৌদি আরবেই
ছিল। নাবিল ও তার ভাইবোন সৌদিতে বড় হয়েছে। ওরা বাংলায় খুব একটা কথা বলতে
পারতো না। বেশ কিছুদিন হলো আরবি ভাষার পাশাপাশি বাংলা শিখেছে। গত ২০ থেকে
একমাসের মতো নাবিলের সঙ্গে জীবনের সখ্য গড়ে ওঠে। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের
১০ এর বি ৮নং বাসার পাশেই স্থানীয় একটি পার্কে বিকালে খেলতে গিয়ে জীবনের
সঙ্গে নাবিলের পরিচয় হয়। তিনি বলেন, ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৮টায় হঠাৎ করে আমার
ফোনে জীবন ফোন দিয়ে নাবিলকে চাইলে এত রাতে ওকে দেয়া যাবে না বলে জানিয়ে
দিই। এর পরেও জীবন বলে প্লিজ আন্টি নাবিলের সঙ্গে মাত্র ১ মিনিট কথা বলবো।
এরপর নাবিল তার সঙ্গে কথা বলে নিচে চলে যায়। রাত ৯টার দিকে নাবিলের একজন
শিক্ষক ফোন করে জানান, নাবিল উত্তরার মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
ভর্তি আছে। পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি
করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও গ্রেপ্তার হয়নি হামলাকারী জীবন। এদিকে
হামলাকারী জীবনের বড় ভাই শাওন ও তার পরিবারের লোকজন ঘটনার রাতে
পারিবারিকভাবে মীমাংসা করতে চাইলেও আমরা তাদের প্রস্তাবে সাড়া দিই নি বলে
জানায় নাবিলের মা। এর পর থেকেই জীবন ও তার পরিবারের সদস্যরা পলাতক রয়েছে।
নাবিলের মা বলেন, ঘটনার পর দিন রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তি আমাদের বাসার দারোয়ানকে তার একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যায় যেখানে সাংবাদিক ক্লাব উত্তরা লেখা ছিল। এর কিছুক্ষণ পর আমাকে ফোন দিয়ে জানায় আমি জীবনের কাকু হই। যদি আপনারা প্রয়োজন মনে করেন তাহলে আমার এই নাম্বারে ফোন দিয়েন।
এদিকে নাবিলের বাবা মকছুদ আলী জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আন্দীউড়া গ্রামে তাদের বাড়ি। পরিবার নিয়ে সৌদি আরবে ছিলেন। তিন বছর আগে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য দেশে আসেন। উত্তরায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় সেখানেই ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে উঠেন। ছেলেমেয়ে সবাইকে স্কুলে ভর্তি করে দিই। ঘটনার দিন আমি পারিবারিক কাজে হবিগঞ্জ ছিলাম। ছেলের আহত হওয়ার ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসি। তখন পর্যন্তও আমার ছেলে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিল। এমনকি ঢামেকের ডাক্তাররা পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলতে পারেনি যে ও বাঁচবে নাকি মারা যাবে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সড়কের ৫৪ নম্বর বাড়ির ছাদে এ ঘটনা ঘটে। নাবিলের থুঁতনি, গাল, গলা, তলপেট, হাত ও পিঠে অসংখ্য ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার একদিন পর নাবিল মোবারকের বাবা মকছুদ আলী উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৩৭।
ঘটনার বিষয়ে নাবিল জানায়, জীবনের সঙ্গে মাসখানিক ধরে আমার বন্ধুত্ব। সে আমার চেয়ে বয়সে বড়। দশম শ্রেণিতে পরলেও সে ক্লাসে ছিল অনিয়মিত। তবে সে আমাকে খুব পছন্দ করতো। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের পার্কে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর সে প্রায়ই ফোন দিতো। মঙ্গলবার ফোন দিয়ে আমাকে তার বাসায় ডাকে। জীবনের বাবার একটি মোটরসাইকেল আছে, সেটি চালানোর জন্য আমাকে যেতে বলে। এরপর আমি যাই। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরার পর সে আমাকে বলে, ‘এখানে বাবা দেখে ফেলবে, আমাদের ছাদে চলো।’ এরপর আমি জীবনের সঙ্গে ওই বাসার ছাদে যাই। কিছুক্ষণ থাকার পর সে আমাকে ছাদে বসিয়ে রেখে ট্যাব আনার কথা বলে বাসায় যায়। বাসা থেকে আসার পর আমার হাতে ট্যাবটি দিলে আমি পানির ট্যাংকির ওপর বসে ট্যাবটি খুলে চালাতে থাকি। হঠাৎ করে জীবন পেছন থেকে আমার গলায় ছুরি দিয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ বার আঘাত করে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছাদে শুয়ে পড়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকলে জীবনের বড় ভাই এসে আমাকে উদ্ধার করেন। এ সময় জীবনের হাতে দুইটি ছুরি দেখতে পাই। পরে জীবনের ভাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় জীবনকে মাদকাসক্ত মনে হয়েছে। আমাকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে আসার সময় জীবন তার বাসায় প্রবেশ করে। এ সময় সে ‘সবকে খুন করে ফেলবো’ বলে আমাকে আবারও হুমকি দেয়। তবে কী কারণে তার ওপরে হামলা করেছে জীবন, সে বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানায় নাবিল। নাবিল বলে, ‘আমি বুঝতে পারছি না কেন আমাকে সে হত্যা করতে চেয়েছিল।
নাবিলের ভাই নাইফ আহমেদ বলেন, নাবিলকে হামলার আগে নিজের ফেসবুকে খুনের হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেয় জীবন ঢালী (সায়ান আহমেদ)। ঘটনার পর ২৫শে মার্চ রোববার দুপুর ৩.৩৩ মিনিটে মেহেদি হাসান হিরা নামে জীবনের বড় ভাই তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জীবনের ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে জীবনকে হাসপাতালের বেডে সাদা চাদর গায়ে অচেতন অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘আমার ছোট ভাই, জীবন বেশ কিছুদিন যাবৎ গুরুতর মানসিক অসুস্থ। মেডিকেলে ভর্তি আছে। সবাই আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।’ এ সময় তার কমেন্ট বক্সে অনেকেই তার সুস্থতা কামনা করলেও একজন জানতে চেয়েছে যে জীবন এখন কোন হাসপাতালে ভর্তি আছে। কমেন্টের কোন রিপলাই দেন নি জীবনের বড় ভাই মেহেদী হাসান হিরা।
নাবিল হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নাবিল ও জীবন পূর্বপরিচত। তাদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। কোনো একটি ঘটনা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। এরই জেরে হয়তো এই ঘটনা ঘটেছে। তবে ভিকটিম নাবিল এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। সে সুস্থ হলে এর রহস্য জানা যাবে।’ অভিযুক্ত জীবন ঢালী (১৭) উত্তরার একটি স্কুলের দশম শ্রেণির অনিয়মিত শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির নাগেরকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম শাহিন মিয়া। ঘটনার রাত ৮টা ৩২ মিনিটে জীবন তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেয়। সেখানে সে ইংরেজি বর্ণে লেখে ‘সব শালারে খুন কইরা লামু’। এরপরই নাবিলকে তার বাসার ছাদে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। ঘটনার পর থেকে জীবন পলাতক রয়েছে। পুলিশ একাধিকবার তার বাসাসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালালেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এদিকে, উত্তরার কোনো গ্রুপের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে নাবিল। তাকে হত্যাচেষ্টার পর উত্তরার ‘ডিস্কো বয়েজ বাংলাদেশ’ গ্রুপ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে। যেখানেই জীবনকে পাওয়া যাবে, সেখানেই তাকে দাফন করার কথা বলা হয়েছে ওই গ্রুপে। নাবিলের পরিবারের কোনো সহযোগিতা লাগবে কিনা, তাও জানতে চেয়েছে ওই গ্রুপের সদস্যরা। তবে ওই গ্রুপের সঙ্গে নাবিলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছে নাবিলের পরিবার।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৬ই জানুয়ারি প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যদের হামলায় মারা যায় আদনান কবির নামে এক কিশোর। ওই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া কিশোররা স্বীকারোক্তি দেয় আদনান হত্যাকাণ্ডের আগে উত্তরার গ্যাংগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩রা জানুয়ারি ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইন স্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার রাজুকে মারধর করে। ৬ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির সামনে ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইন স্টারের আদনান কবিরকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। আসামিরা দাবি করে, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল নাইনস্টার গ্রুপর রাজু। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিরা জামিনে রয়েছে।
নাবিলের মা বলেন, ঘটনার পর দিন রাজু আহমেদ নামে এক ব্যক্তি আমাদের বাসার দারোয়ানকে তার একটি ভিজিটিং কার্ড দিয়ে যায় যেখানে সাংবাদিক ক্লাব উত্তরা লেখা ছিল। এর কিছুক্ষণ পর আমাকে ফোন দিয়ে জানায় আমি জীবনের কাকু হই। যদি আপনারা প্রয়োজন মনে করেন তাহলে আমার এই নাম্বারে ফোন দিয়েন।
এদিকে নাবিলের বাবা মকছুদ আলী জানান, হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আন্দীউড়া গ্রামে তাদের বাড়ি। পরিবার নিয়ে সৌদি আরবে ছিলেন। তিন বছর আগে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার জন্য দেশে আসেন। উত্তরায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকায় সেখানেই ফ্ল্যাট কিনে পরিবার নিয়ে উঠেন। ছেলেমেয়ে সবাইকে স্কুলে ভর্তি করে দিই। ঘটনার দিন আমি পারিবারিক কাজে হবিগঞ্জ ছিলাম। ছেলের আহত হওয়ার ঘটনা শুনে সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসি। তখন পর্যন্তও আমার ছেলে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিল। এমনকি ঢামেকের ডাক্তাররা পর্যন্ত নিশ্চিত করে বলতে পারেনি যে ও বাঁচবে নাকি মারা যাবে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের চার নম্বর সড়কের ৫৪ নম্বর বাড়ির ছাদে এ ঘটনা ঘটে। নাবিলের থুঁতনি, গাল, গলা, তলপেট, হাত ও পিঠে অসংখ্য ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ঘটনার একদিন পর নাবিল মোবারকের বাবা মকছুদ আলী উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৩৭।
ঘটনার বিষয়ে নাবিল জানায়, জীবনের সঙ্গে মাসখানিক ধরে আমার বন্ধুত্ব। সে আমার চেয়ে বয়সে বড়। দশম শ্রেণিতে পরলেও সে ক্লাসে ছিল অনিয়মিত। তবে সে আমাকে খুব পছন্দ করতো। উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের পার্কে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। এরপর সে প্রায়ই ফোন দিতো। মঙ্গলবার ফোন দিয়ে আমাকে তার বাসায় ডাকে। জীবনের বাবার একটি মোটরসাইকেল আছে, সেটি চালানোর জন্য আমাকে যেতে বলে। এরপর আমি যাই। কিছুক্ষণ ঘোরাফেরার পর সে আমাকে বলে, ‘এখানে বাবা দেখে ফেলবে, আমাদের ছাদে চলো।’ এরপর আমি জীবনের সঙ্গে ওই বাসার ছাদে যাই। কিছুক্ষণ থাকার পর সে আমাকে ছাদে বসিয়ে রেখে ট্যাব আনার কথা বলে বাসায় যায়। বাসা থেকে আসার পর আমার হাতে ট্যাবটি দিলে আমি পানির ট্যাংকির ওপর বসে ট্যাবটি খুলে চালাতে থাকি। হঠাৎ করে জীবন পেছন থেকে আমার গলায় ছুরি দিয়ে প্রায় ৮ থেকে ১০ বার আঘাত করে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই ছাদে শুয়ে পড়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকলে জীবনের বড় ভাই এসে আমাকে উদ্ধার করেন। এ সময় জীবনের হাতে দুইটি ছুরি দেখতে পাই। পরে জীবনের ভাই আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় জীবনকে মাদকাসক্ত মনে হয়েছে। আমাকে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে আসার সময় জীবন তার বাসায় প্রবেশ করে। এ সময় সে ‘সবকে খুন করে ফেলবো’ বলে আমাকে আবারও হুমকি দেয়। তবে কী কারণে তার ওপরে হামলা করেছে জীবন, সে বিষয়ে কিছু জানে না বলে জানায় নাবিল। নাবিল বলে, ‘আমি বুঝতে পারছি না কেন আমাকে সে হত্যা করতে চেয়েছিল।
নাবিলের ভাই নাইফ আহমেদ বলেন, নাবিলকে হামলার আগে নিজের ফেসবুকে খুনের হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেয় জীবন ঢালী (সায়ান আহমেদ)। ঘটনার পর ২৫শে মার্চ রোববার দুপুর ৩.৩৩ মিনিটে মেহেদি হাসান হিরা নামে জীবনের বড় ভাই তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জীবনের ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে জীবনকে হাসপাতালের বেডে সাদা চাদর গায়ে অচেতন অবস্থায় শুয়ে থাকতে দেখা যায়। ক্যাপশনে লেখা ছিল ‘আমার ছোট ভাই, জীবন বেশ কিছুদিন যাবৎ গুরুতর মানসিক অসুস্থ। মেডিকেলে ভর্তি আছে। সবাই আমার ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।’ এ সময় তার কমেন্ট বক্সে অনেকেই তার সুস্থতা কামনা করলেও একজন জানতে চেয়েছে যে জীবন এখন কোন হাসপাতালে ভর্তি আছে। কমেন্টের কোন রিপলাই দেন নি জীবনের বড় ভাই মেহেদী হাসান হিরা।
নাবিল হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নাবিল ও জীবন পূর্বপরিচত। তাদের মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। কোনো একটি ঘটনা নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়েছে। এরই জেরে হয়তো এই ঘটনা ঘটেছে। তবে ভিকটিম নাবিল এখনও পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। সে সুস্থ হলে এর রহস্য জানা যাবে।’ অভিযুক্ত জীবন ঢালী (১৭) উত্তরার একটি স্কুলের দশম শ্রেণির অনিয়মিত শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির নাগেরকান্দি গ্রামে। তার বাবার নাম শাহিন মিয়া। ঘটনার রাত ৮টা ৩২ মিনিটে জীবন তার ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি দিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেয়। সেখানে সে ইংরেজি বর্ণে লেখে ‘সব শালারে খুন কইরা লামু’। এরপরই নাবিলকে তার বাসার ছাদে নিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। ঘটনার পর থেকে জীবন পলাতক রয়েছে। পুলিশ একাধিকবার তার বাসাসহ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালালেও তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এদিকে, উত্তরার কোনো গ্রুপের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে নাবিল। তাকে হত্যাচেষ্টার পর উত্তরার ‘ডিস্কো বয়েজ বাংলাদেশ’ গ্রুপ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দিয়েছে। যেখানেই জীবনকে পাওয়া যাবে, সেখানেই তাকে দাফন করার কথা বলা হয়েছে ওই গ্রুপে। নাবিলের পরিবারের কোনো সহযোগিতা লাগবে কিনা, তাও জানতে চেয়েছে ওই গ্রুপের সদস্যরা। তবে ওই গ্রুপের সঙ্গে নাবিলের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছে নাবিলের পরিবার।
উল্লেখ্য, গত বছরের ৬ই জানুয়ারি প্রতিপক্ষ গ্রুপের সদস্যদের হামলায় মারা যায় আদনান কবির নামে এক কিশোর। ওই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া কিশোররা স্বীকারোক্তি দেয় আদনান হত্যাকাণ্ডের আগে উত্তরার গ্যাংগুলোর মধ্যে কিছু বিষয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩রা জানুয়ারি ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইন স্টার গ্রুপের গ্যাং লিডার রাজুকে মারধর করে। ৬ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় ১৩ নম্বর সেক্টরের ১৭ নম্বর রোডের ১৫ নম্বর বাড়ির সামনে ডিস্কো বয়েজ গ্রুপ ও বিগবস গ্রুপের সদস্যরা নাইন স্টারের আদনান কবিরকে ধারালো অস্ত্র ও হকিস্টিক দিয়ে আঘাত করলে তার মৃত্যু হয়। আসামিরা দাবি করে, তাদের মূল লক্ষ্য ছিল নাইনস্টার গ্রুপর রাজু। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিরা জামিনে রয়েছে।
No comments