বিভক্তির কবলে বিশ্বাস-৪ ‘বিভাজন ঘুচাতে পারে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া’ by উৎপল রায় ও সিরাজুস সালেকিন
রাজনীতির
মতো নাগরিক সমাজের বিভক্তিও এখন দৃশ্যমান বিষয়। পরিবেশ, পরিস্থিতি অনেকটাই
ছোট করে দিয়েছে নাগরিক সমাজের গণ্ডি। দলীয় রাজনীতি আর স্বার্থের দ্বন্দ্বে
সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার এ প্লাটফরমটিও এখন প্রশ্নবিদ্ধ। নাগরিক
সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে দলীয় রাজনীতির প্রভাবেই সুশীলসমাজে বিভক্তির
রেখা বড় হচ্ছে। দেশে সবক্ষেত্রে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা
হলে এ বিভাজন কমে আসবে। তারা মনে করছেন আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও মৌলিক
ক্ষেত্রে নাগরিক সমাজের মধ্যে কোন বিভাজন থাকা উচিত না।
সুশীল সমাজের মধ্যে যে বিভাজন দৃশ্যমান তা রুগ্ণ রাজনীতির ফল বলে মনে করেন সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আমরা যে দল করি না কেন মানুষ হিসেবে আমাদের মানবতা থাকা উচিত। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে আমাদের ঐক্য আছে। এই ঐক্য শক্তি হিসেবে প্রকাশ পাক তা অনেকেই চান না। এজন্য তারা বিভাজন সৃষ্টির ক্ষেত্রে তৎপরতা চালাচ্ছেন। রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে দলীয়করণ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলীয়করণের একটা প্রভাব সকল পেশার মানুষের মধ্যে পড়েছে। এর একটা প্রভাব নাগরিকদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। রাজনীতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে করতে বিভাজনটা আসল জায়গায় চলে এসেছে। আর গণতান্ত্রিক রাজনীতি কখনও মৌলিক বিষয়ে অনৈক্য সৃষ্টি করে না। নাগরিক সমাজকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে ড. কামাল বলেন, বর্তমানে সংলাপ, সংস্কার ও সুশীল শব্দগুলোকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা সংলাপ ও সংস্কার চান তাদের নানাভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও সুস্থ গণতন্ত্রের চর্চা জরুরি।
নিউজ টুডে’র সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, নাগরিক সমাজের মধ্যে বিভাজন মোটেই মঙ্গলজনক নয়। আমাদের সিভিল সোসাইটি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তবে তারা সরকারের ওপর যে কোন অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বিভাজনের মধ্য দিয়ে এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য সমাজটা রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। এটা শুধু সিভিল সোসাইটি তা না। পেশাজীবী, প্রশাসনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিভাজনের শিকার। একইভাবে সিভিল সোসাইটি বিভাজনের শিকার। এর ফলে আমাদের সমাজে সুন্দর পরিবেশ তৈরির জন্য সিভিল সোসাইটি যে ভূমিকা রাখতে পারতো সেটা পারছে না। যখনই কোন একটা বিশেষ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিতে চায় তখনই নিজেরা বিভক্ত হয়ে পড়ি।
এই বিভাজনের কারণে সিভিল সোসাইটি ব্যর্থ হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এভাবে সমাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হবে না। এটা ব্যাহত হবে। নাগরিক সমাজের বিভক্তি থেকে বের হয়ে আসতে গণতন্ত্রের চর্চাকে জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিভাজন সমাজের ঢুকে যাওয়ায় চট করে বের হয়ে আসা যাবে বলে আমি মনে করি না। এটার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করতে হবে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। যদি সমাজের সর্বস্তরে গণতন্ত্রের চর্চা হয় তবে এ বিভাজন থাকবে না। তখন হবে গণতান্ত্রিক বিভাজন। যেটা কাঙ্ক্ষিত। এখন যেটা হচ্ছে সেটা রাজনৈতিক বিভাজন। যেটা কাঙ্ক্ষিত নয়। সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চা ও সংস্কৃতি চালু করতে হবে। তাহলেই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
ইতিহাসবিদ, গবেষক, ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন সিভিল সোসাইটির এই বিভাজনকে স্বাভাবিক বলে মনে করেন। তার মতে, সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজের মধ্যে বিভাজন বিভক্তি আগেও ছিল, এখনও আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটিতে বিভাজন, বিভক্তি সবসময়ই ছিল। ভবিষ্যতেও তা থাকবে। কেননা সুশীল সমাজতো কারও ডিক্টেটরের মাধ্যমে চলে না। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত, চিন্তা-চেতনা আলাদা। রাজনৈতিক আদর্শগত পার্থক্যও রয়েছে তাদের মধ্যে। তাই মত প্রকাশের ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে, এর মধ্যে যেটির প্রাধান্য সেটিই টিকে থাকবে। তিনি বলেন, পুরো পৃথিবীজুড়েই সুশীল সমাজের মধ্যে বিভক্তি আছে। ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের সুশীল সমাজের মধ্যেও বিভক্তি রয়েছে। তাদের দেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আছে। এ কারণে তাদের সুশীল সমাজেও মতপার্থক্য রয়েছে। যে মতামত বেশি প্রাধান্য পায় তারাই টিকে যায়।
বাংলাদেশের সুশীল সমাজে বিভক্তি ও বিভাজনের জন্য সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী সরাসরি দায়ী করেন দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবক্ষেত্রেই এখন বিভাজন তৈরি হয়েছে। সুশীল সমাজেও এই বিভাজন, বিভক্তি তৈরি হয়েছে। আর এর জন্য দায়ী দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল বা জোট। তাদের বিভাজনই অন্যদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে। দুই বড় দল যতদিন না বিভাজনের রাজনীতি থেকে সরে না আসবে ততদিন সুশীল সমাজসহ সকল ক্ষেত্রে বিভক্তি বিভাজন চলতেই থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, আমরা যাদেরকে সিভিল সোসাইটি বলি রাজনৈতিকভাবে এদের মধ্যে বিভক্তি এসে গেছে। এটা স্পষ্ট। তারা মূলত দুটি বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত। এর কারণ হচ্ছে আমাদের সুশীল সমাজের মধ্যে এক ধরনের সুবিধাবাদী প্রবণতার জন্ম হয়েছে। এরা সুবিধা নিতে চান। যেমন শিক্ষকরা, সাংবাদিকরা মনে করেন সরকারের সঙ্গে থাকলে একটা সুবিধা পাওয়া যাবে। কিংবা বিরোধী দলে থাকলে ভবিষ্যতে আখের গুছিয়ে নেয়া সহজ হবে। এই বিবেচনায় সুশীল সমাজের মধ্যে এক ধরনের সরকারের তোষণের প্রবণতা। অন্যদিকে আরেক গ্রুপের বিরোধী দলের সঙ্গে থেকে সুযোগ-সুবিধা নেয়ার প্রবণতা। আসলে এটা হওয়া উচিত ছিল না। উচিত ছিল জাতির ক্রান্তিলগ্নে নিরপেক্ষ থেকে একটা সমাধানের পথ বাতলে দেয়া। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এই কাজটি হচ্ছে না। এটি একটি দিক। অপর একটি দিকে দেখা যাচ্ছে বিদেশী বেশকিছু সংস্থা এক ধরনের স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের প্রমোট করছে। এরা তথাকথিত গবেষণা বা কনসালটেন্সির নামে তারা দেখা যায় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে। এটা মূলত বিশ্বব্যাংকের একটা কৌশল কিন্তু এটা ভুল কৌশল। এরা সুশীলদের প্রমোট করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়। এসব সাধারণ মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
নাগরিক সমাজের এই বিভাজন থেকে বের আসা কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যাদের সুশীল বলছি তাদের মধ্যে সুযোগ-সুবিধা নেয়ার প্রবণতা এত বেশি যে তারা এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা কম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আমেনা মহসিন এ বিষয়ে বলেন, সিভিল সোসাইটি ও সুশীল সমাজে মতপার্থক্য বা বিভাজন থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তারাতো আর রাজনৈতিক দল নয় যে, সবকিছুতে একমত হবে। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, সুশীল সমাজের মধ্যে বিভক্তি ও বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। তিনি বলেন, আমাদের জায়গাগুলো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। রাষ্ট্রের কোন ইনস্টিটিউট এখন নিরপেক্ষ না। স্বাভাবিক অবস্থাকে মনে হচ্ছে অস্বাভাবিক। আর অস্বাভাবিককে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দলীয় পরিচয় না থাকলে নাগরিকরা তাদের প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছে না। এমনও দেখছি অনেক নিরপেক্ষ মানুষও দলীয় আশ্রয়লাভের জন্য সচেষ্ট। কিন্তু এতে করে রাষ্ট্র আরও দুর্বল হবে। অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা চালু না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনের পরিস্থিতি চলতেই থাকবে।
সুশীল সমাজের মধ্যে যে বিভাজন দৃশ্যমান তা রুগ্ণ রাজনীতির ফল বলে মনে করেন সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আমরা যে দল করি না কেন মানুষ হিসেবে আমাদের মানবতা থাকা উচিত। কতগুলো মৌলিক বিষয়ে আমাদের ঐক্য আছে। এই ঐক্য শক্তি হিসেবে প্রকাশ পাক তা অনেকেই চান না। এজন্য তারা বিভাজন সৃষ্টির ক্ষেত্রে তৎপরতা চালাচ্ছেন। রাষ্ট্রের সবক্ষেত্রে দলীয়করণ চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দলীয়করণের একটা প্রভাব সকল পেশার মানুষের মধ্যে পড়েছে। এর একটা প্রভাব নাগরিকদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। রাজনীতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে করতে বিভাজনটা আসল জায়গায় চলে এসেছে। আর গণতান্ত্রিক রাজনীতি কখনও মৌলিক বিষয়ে অনৈক্য সৃষ্টি করে না। নাগরিক সমাজকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে ড. কামাল বলেন, বর্তমানে সংলাপ, সংস্কার ও সুশীল শব্দগুলোকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। যারা সংলাপ ও সংস্কার চান তাদের নানাভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বচ্ছতা ও সুস্থ গণতন্ত্রের চর্চা জরুরি।
নিউজ টুডে’র সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন আহমেদ বলেন, নাগরিক সমাজের মধ্যে বিভাজন মোটেই মঙ্গলজনক নয়। আমাদের সিভিল সোসাইটি যদি ঐক্যবদ্ধ থাকে তবে তারা সরকারের ওপর যে কোন অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বিভাজনের মধ্য দিয়ে এটা কোনভাবেই সম্ভব নয়। দুঃখজনক হলেও সত্য সমাজটা রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হয়ে গেছে। এটা শুধু সিভিল সোসাইটি তা না। পেশাজীবী, প্রশাসনসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিভাজনের শিকার। একইভাবে সিভিল সোসাইটি বিভাজনের শিকার। এর ফলে আমাদের সমাজে সুন্দর পরিবেশ তৈরির জন্য সিভিল সোসাইটি যে ভূমিকা রাখতে পারতো সেটা পারছে না। যখনই কোন একটা বিশেষ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্ত নিতে চায় তখনই নিজেরা বিভক্ত হয়ে পড়ি।
এই বিভাজনের কারণে সিভিল সোসাইটি ব্যর্থ হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এভাবে সমাজের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হবে না। এটা ব্যাহত হবে। নাগরিক সমাজের বিভক্তি থেকে বের হয়ে আসতে গণতন্ত্রের চর্চাকে জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিভাজন সমাজের ঢুকে যাওয়ায় চট করে বের হয়ে আসা যাবে বলে আমি মনে করি না। এটার জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করতে হবে। প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সর্বপ্রথম গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে। যদি সমাজের সর্বস্তরে গণতন্ত্রের চর্চা হয় তবে এ বিভাজন থাকবে না। তখন হবে গণতান্ত্রিক বিভাজন। যেটা কাঙ্ক্ষিত। এখন যেটা হচ্ছে সেটা রাজনৈতিক বিভাজন। যেটা কাঙ্ক্ষিত নয়। সর্বক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক চর্চা ও সংস্কৃতি চালু করতে হবে। তাহলেই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।
ইতিহাসবিদ, গবেষক, ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসির মামুন সিভিল সোসাইটির এই বিভাজনকে স্বাভাবিক বলে মনে করেন। তার মতে, সিভিল সোসাইটি বা সুশীল সমাজের মধ্যে বিভাজন বিভক্তি আগেও ছিল, এখনও আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটিতে বিভাজন, বিভক্তি সবসময়ই ছিল। ভবিষ্যতেও তা থাকবে। কেননা সুশীল সমাজতো কারও ডিক্টেটরের মাধ্যমে চলে না। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত, চিন্তা-চেতনা আলাদা। রাজনৈতিক আদর্শগত পার্থক্যও রয়েছে তাদের মধ্যে। তাই মত প্রকাশের ভিন্নতা থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে, এর মধ্যে যেটির প্রাধান্য সেটিই টিকে থাকবে। তিনি বলেন, পুরো পৃথিবীজুড়েই সুশীল সমাজের মধ্যে বিভক্তি আছে। ইংল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রের সুশীল সমাজের মধ্যেও বিভক্তি রয়েছে। তাদের দেশেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আছে। এ কারণে তাদের সুশীল সমাজেও মতপার্থক্য রয়েছে। যে মতামত বেশি প্রাধান্য পায় তারাই টিকে যায়।
বাংলাদেশের সুশীল সমাজে বিভক্তি ও বিভাজনের জন্য সাবেক ছাত্রনেতা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী সরাসরি দায়ী করেন দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলকে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবক্ষেত্রেই এখন বিভাজন তৈরি হয়েছে। সুশীল সমাজেও এই বিভাজন, বিভক্তি তৈরি হয়েছে। আর এর জন্য দায়ী দেশের দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল বা জোট। তাদের বিভাজনই অন্যদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করছে। দুই বড় দল যতদিন না বিভাজনের রাজনীতি থেকে সরে না আসবে ততদিন সুশীল সমাজসহ সকল ক্ষেত্রে বিভক্তি বিভাজন চলতেই থাকবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. তারেক শামসুর রেহমান বলেন, আমরা যাদেরকে সিভিল সোসাইটি বলি রাজনৈতিকভাবে এদের মধ্যে বিভক্তি এসে গেছে। এটা স্পষ্ট। তারা মূলত দুটি বড় রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পর্কিত। এর কারণ হচ্ছে আমাদের সুশীল সমাজের মধ্যে এক ধরনের সুবিধাবাদী প্রবণতার জন্ম হয়েছে। এরা সুবিধা নিতে চান। যেমন শিক্ষকরা, সাংবাদিকরা মনে করেন সরকারের সঙ্গে থাকলে একটা সুবিধা পাওয়া যাবে। কিংবা বিরোধী দলে থাকলে ভবিষ্যতে আখের গুছিয়ে নেয়া সহজ হবে। এই বিবেচনায় সুশীল সমাজের মধ্যে এক ধরনের সরকারের তোষণের প্রবণতা। অন্যদিকে আরেক গ্রুপের বিরোধী দলের সঙ্গে থেকে সুযোগ-সুবিধা নেয়ার প্রবণতা। আসলে এটা হওয়া উচিত ছিল না। উচিত ছিল জাতির ক্রান্তিলগ্নে নিরপেক্ষ থেকে একটা সমাধানের পথ বাতলে দেয়া। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এই কাজটি হচ্ছে না। এটি একটি দিক। অপর একটি দিকে দেখা যাচ্ছে বিদেশী বেশকিছু সংস্থা এক ধরনের স্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের প্রমোট করছে। এরা তথাকথিত গবেষণা বা কনসালটেন্সির নামে তারা দেখা যায় দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে প্রভাব ফেলছে। এটা মূলত বিশ্বব্যাংকের একটা কৌশল কিন্তু এটা ভুল কৌশল। এরা সুশীলদের প্রমোট করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে নেয়। এসব সাধারণ মানুষের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।
নাগরিক সমাজের এই বিভাজন থেকে বের আসা কঠিন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা যাদের সুশীল বলছি তাদের মধ্যে সুযোগ-সুবিধা নেয়ার প্রবণতা এত বেশি যে তারা এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা কম।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আমেনা মহসিন এ বিষয়ে বলেন, সিভিল সোসাইটি ও সুশীল সমাজে মতপার্থক্য বা বিভাজন থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তারাতো আর রাজনৈতিক দল নয় যে, সবকিছুতে একমত হবে। তবে শঙ্কার বিষয় হলো, সুশীল সমাজের মধ্যে বিভক্তি ও বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। তিনি বলেন, আমাদের জায়গাগুলো ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। রাষ্ট্রের কোন ইনস্টিটিউট এখন নিরপেক্ষ না। স্বাভাবিক অবস্থাকে মনে হচ্ছে অস্বাভাবিক। আর অস্বাভাবিককে মনে হচ্ছে স্বাভাবিক। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, দলীয় পরিচয় না থাকলে নাগরিকরা তাদের প্রাপ্য অধিকার পাচ্ছে না। এমনও দেখছি অনেক নিরপেক্ষ মানুষও দলীয় আশ্রয়লাভের জন্য সচেষ্ট। কিন্তু এতে করে রাষ্ট্র আরও দুর্বল হবে। অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা চালু না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনের পরিস্থিতি চলতেই থাকবে।
No comments