৪১ বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাচ্ছে না by মোশতাক আহমেদ
আগামী
সেপ্টেম্বরের মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে
হবে। তিন দফায় সময় বাড়ানোর পর মাত্র ১১টি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গভাবে
নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। বাকি ৪১টি পুরোনো
বিশ্ববিদ্যালয় এই সময়ের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারছে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
* তিন দফায় বাড়ানোর পর সেপ্টেম্বরই শেষ সময় * কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী না পাওয়ার আশঙ্কায় ঢাকা শহরের বাইরে যাচ্ছে না...
নতুন ৩১টিসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ৮৩। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী না পাওয়ার আশঙ্কায় ঢাকা শহরের বাইরে যাচ্ছে না। ‘জমি কিনেছি’, ‘নির্মাণকাজ করছি’ ‘যাচ্ছি’ —এ জাতীয় তথ্য দিয়ে ও অঙ্গীকার করে সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে, যা আগে ছিল পাঁচ বছর। এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া ১১টির বাইরে অন্য ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরি করলেও শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি স্থানান্তর করেনি।
আপস করছে মন্ত্রণালয়!: অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন অমান্যকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও কার্যত আপস করছে। বারবার আইন ভঙ্গ করলেও ব্যবস্থা নিতে পারছে না। গত ছয় বছরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো নিয়মই মানত না। কিন্তু চাপের মুখে অনেকগুলোই নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে, অনেকে উদ্যোগ নিয়েছে। এর পরও বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। প্রথমে ২০১২ সালের মধ্যে, দ্বিতীয়বার ২০১৩ সালের মধ্যে এবং সর্বশেষ এক লাফে দুই বছর বাড়িয়ে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।
কিন্তু ইউজিসির কর্মকর্তারা এখন বলছেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও নির্ধারিত সময়ে ২০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারবে না।
নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় এক একর জমি ও অন্যান্য এলাকায় দুই একর নিষ্কণ্টক, অখণ্ড ও দায়মুক্ত জমি থাকতে হবে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়, সে জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠার পর ১০ বছর পার হয়েছে। কোনোটির বয়স দুই দশক। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা করছে না তারা।
জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেনজীর আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘ভালো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে চলে গেছে, কয়েকটি যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। বাকিগুলোর বিষয়ে বাস্তবতার নিরিখে মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে যারা: ১১টির মধ্যে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেলেও সব শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ফলে মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী সনদ পেয়েছে। এ দুটি হলো আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিটি বিশ্ববিদ্যালয় সাভারের বিরুলিয়ার খাগানে নিজস্ব ক্যাম্পাস করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এখনো তারা রাজধানীর ১৩/এ পান্থপথে ভাড়া করা বাড়িতে ‘সিটি ক্যাম্পাস’ খুলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়া নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো: নর্থ সাউথ, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-চট্টগ্রাম, ইনডিপেনডেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও গণবিশ্ববিদ্যালয়।
আংশিক নিজস্ব ক্যাম্পাসে: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আশুলিয়ায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এখনো অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়ছেন ঢাকার শুক্রাবাদে। এ ছাড়া নিজস্ব ক্যাম্পাস করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও এখনো ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মহাখালীতে, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি মিরপুর-২-এ আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর বিজিসি ট্রাস্ট চট্টগ্রামের চন্দনাইশে নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকলেও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে দুটি ক্যাম্পাস চালাচ্ছে।
নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলেও নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নির্মাণাধীন ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মরিয়ম ইউনিভার্সিটি, সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইউআইটিএস। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন ইউজিসির কর্মকর্তারা।
ফাউন্ডেশনের জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়: আইনানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি থাকার কথা থাকলেও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা না করে ফাউন্ডেশনের নামে কেনা আরও কম পরিমাণ জমিতে অবকাঠামো নির্মাণ করে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এগুলো হলো: মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল, দি মিলেনিয়াম, পিপলস ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।
অন্যগুলোর হালচাল: নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম জমিতে নির্মিত ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা দিচ্ছে স্টেট ইউনিভার্সিটি। আর নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ও রয়েল ইউনিভার্সিটি।
নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় নকশা অনুমোদন করেছে। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি। এগুলো হলো গ্রিন ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি। এর মধ্যে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির নামে অননুমোদিত ক্যাম্পাস রয়েছে বলে ইউজিসি জানিয়েছে।
নির্ধারিত পরিমাণ জমি কিনলেও ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে নকশা অনুমোদন পায়নি এবং জমি ব্যবহারের অনুমতি অর্জন করেনি, এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ইস্টার্ন, ইউনাইটেড, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অব সায়েন্সেস, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস ও অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এ ছাড়া ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, আশা ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি জমি কিনলেও নির্মাণকাজ শুরু করেনি।
দ্বন্দ্ব: দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় চার ভাগে বিভক্ত হয়ে কথিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং এর প্রায় দেড় শ শাখার নামে শিক্ষা-বাণিজ্য চলছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সনদ বিক্রি করা ঠেকাতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
ইবাইস ইউনিভার্সিটিতে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে মামলা চলছে। চট্টগ্রামে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে।
এর মধ্যে আবার অনুমোদনহীন ক্যাম্পাস পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে প্রাইম ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন, নর্দান, দি পিপলস, বিজিসি ট্রাস্ট, ইবাইস, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।
যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয়: ব্যস্ততম সড়ক ও আবাসিক এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা যাবে না, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস থাকা যাবে না—এগুলো আইনের কথা ও সরকারের সিদ্ধান্ত। কিন্তু আইন ভঙ্গ করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যত্রতত্র ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রচুর অভিযোগ আছে।
গত ২৪ জুন ও ১২ জুলাই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেট এলাকার মাঝামাঝি এলাকায় কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের মতো ব্যস্ততম সড়কের ঠিক পাশেই গড়ে উঠেছে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাস। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস বনানীতে। আর স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ চলছে গাজীপুরের কাশিমপুরে।
কারওয়ান বাজারের এই ক্যাম্পাস থেকে কিছু দূর পূর্বদিকে ৭১ কারওয়ান বাজারে চলছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির একটি ক্যাম্পাসের কার্যক্রম। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষে বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলানো। উত্তর পাশের দেয়াল ঘেঁষে ঠেলাগাড়ি গ্যারেজ। দক্ষিণ পাশেই বাজারের অংশ। শুধু পশ্চিম পাশের রাস্তাটি কিছুটা পরিষ্কার। ওপরে গিয়ে শ্রেণিকক্ষের ঘিঞ্জি পরিবেশ দেখা যায়।
পান্থপথ এলাকায় দেখা যায়, পাশাপাশি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। পান্থপথ সড়কের উত্তর পাশে ১৩/এ ঠিকানায় সিটি ইউনিভার্সিটির সিটি ক্যাম্পাস। সড়কটির বিপরীত পাশে তিনটি ভবনে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। পাশেই অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। ইউজিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, অতীশ দীপঙ্করের এই ক্যাম্পাসটি অবৈধ।
ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির একটি ভবনে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় একটি রেস্তোরাঁ। ওপরের দোতলা ও তিনতলায় ফার্নিচারের দোকান। এর ওপরের তলাগুলোতে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান গত ২৩ জুন আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে অতীশ দীপঙ্কর ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির এসব ক্যাম্পাসে নানা অনিয়ম দেখতে পান। শিক্ষাসচিব প্রথম আলোকে বলেন, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স বিজ্ঞান বিভাগ আছে অথচ কম্পিউটার ল্যাবের অবস্থা গ্রামের হাইস্কুলের চেয়েও খারাপ।
অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় সচিব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ নেই।
আরও অনুমোদনের তোড়জোড়!: আরও দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ‘এনপিআই’ নামের বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে মানিকগঞ্জে। এর পেছনে আছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। আর সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি হবে ঢাকার অদূরে সাভারে। প্রথমে ঢাকার মিরপুরের ঠিকানায় আবেদন করলেও পরে সাভারে স্থায়ী ক্যাম্পাসের কথা বলে ফের আবেদন করে ওই ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একজন প্রখ্যাত ও প্রবীণ চিকিৎসকের নাম থাকলেও নেপথ্যে রয়েছেন গাজী আবদুস সালাম নামে এক ব্যক্তি, যিনি ঢাকা-খুলনা ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডজন খানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিক। সালামের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক থাকায় আগে বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়া হয়নি বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, এ দুটি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বর্তমানে দেড় শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন জমা রয়েছে। ইউজিসি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রস্তাবিত ১০৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে আরও কয়েকটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
* তিন দফায় বাড়ানোর পর সেপ্টেম্বরই শেষ সময় * কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী না পাওয়ার আশঙ্কায় ঢাকা শহরের বাইরে যাচ্ছে না...
নতুন ৩১টিসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন ৮৩। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী না পাওয়ার আশঙ্কায় ঢাকা শহরের বাইরে যাচ্ছে না। ‘জমি কিনেছি’, ‘নির্মাণকাজ করছি’ ‘যাচ্ছি’ —এ জাতীয় তথ্য দিয়ে ও অঙ্গীকার করে সময় বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠার সাত বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে হবে, যা আগে ছিল পাঁচ বছর। এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া ১১টির বাইরে অন্য ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরি করলেও শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি স্থানান্তর করেনি।
আপস করছে মন্ত্রণালয়!: অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন অমান্যকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও কার্যত আপস করছে। বারবার আইন ভঙ্গ করলেও ব্যবস্থা নিতে পারছে না। গত ছয় বছরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোনো নিয়মই মানত না। কিন্তু চাপের মুখে অনেকগুলোই নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেছে, অনেকে উদ্যোগ নিয়েছে। এর পরও বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হলে মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, ২০১০ সালে নতুন করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। প্রথমে ২০১২ সালের মধ্যে, দ্বিতীয়বার ২০১৩ সালের মধ্যে এবং সর্বশেষ এক লাফে দুই বছর বাড়িয়ে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়।
কিন্তু ইউজিসির কর্মকর্তারা এখন বলছেন, সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও নির্ধারিত সময়ে ২০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে যেতে পারবে না।
নিজস্ব ক্যাম্পাসের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় এক একর জমি ও অন্যান্য এলাকায় দুই একর নিষ্কণ্টক, অখণ্ড ও দায়মুক্ত জমি থাকতে হবে।
ইউজিসির চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যেই যেন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব ক্যাম্পাসে যায়, সে জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
ইউজিসির তথ্যানুযায়ী, পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠার পর ১০ বছর পার হয়েছে। কোনোটির বয়স দুই দশক। কিন্তু আইনের তোয়াক্কা করছে না তারা।
জানতে চাইলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বেনজীর আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘ভালো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব ক্যাম্পাসে চলে গেছে, কয়েকটি যাওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। বাকিগুলোর বিষয়ে বাস্তবতার নিরিখে মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
স্থায়ী ক্যাম্পাসে যারা: ১১টির মধ্যে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গভাবে নিজস্ব ক্যাম্পাসে গেলেও সব শর্ত পূরণ করতে পারেনি। ফলে মাত্র দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী সনদ পেয়েছে। এ দুটি হলো আহ্ছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিটি বিশ্ববিদ্যালয় সাভারের বিরুলিয়ার খাগানে নিজস্ব ক্যাম্পাস করে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এখনো তারা রাজধানীর ১৩/এ পান্থপথে ভাড়া করা বাড়িতে ‘সিটি ক্যাম্পাস’ খুলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়া নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় হলো: নর্থ সাউথ, ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি-চট্টগ্রাম, ইনডিপেনডেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও গণবিশ্ববিদ্যালয়।
আংশিক নিজস্ব ক্যাম্পাসে: ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি আশুলিয়ায় নিজস্ব ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এখনো অধিকাংশ শিক্ষার্থী পড়ছেন ঢাকার শুক্রাবাদে। এ ছাড়া নিজস্ব ক্যাম্পাস করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করলেও এখনো ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় মহাখালীতে, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি মিরপুর-২-এ আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আর বিজিসি ট্রাস্ট চট্টগ্রামের চন্দনাইশে নিজস্ব ক্যাম্পাস থাকলেও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে চট্টগ্রাম শহরে দুটি ক্যাম্পাস চালাচ্ছে।
নিজস্ব ক্যাম্পাসে না গেলেও নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নির্মাণাধীন ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মরিয়ম ইউনিভার্সিটি, সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও ইউআইটিএস। সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন ইউজিসির কর্মকর্তারা।
ফাউন্ডেশনের জমিতে বিশ্ববিদ্যালয়: আইনানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে জমি থাকার কথা থাকলেও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা না করে ফাউন্ডেশনের নামে কেনা আরও কম পরিমাণ জমিতে অবকাঠামো নির্মাণ করে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এগুলো হলো: মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল, দি মিলেনিয়াম, পিপলস ও সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি।
অন্যগুলোর হালচাল: নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম জমিতে নির্মিত ক্যাম্পাসে আংশিক শিক্ষা দিচ্ছে স্টেট ইউনিভার্সিটি। আর নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ করছে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক ও রয়েল ইউনিভার্সিটি।
নির্ধারিত পরিমাণ জমিতে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় নকশা অনুমোদন করেছে। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরু করতে পারেনি। এগুলো হলো গ্রিন ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি। এর মধ্যে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির নামে অননুমোদিত ক্যাম্পাস রয়েছে বলে ইউজিসি জানিয়েছে।
নির্ধারিত পরিমাণ জমি কিনলেও ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে নকশা অনুমোদন পায়নি এবং জমি ব্যবহারের অনুমতি অর্জন করেনি, এমন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে আছে ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ, ইস্টার্ন, ইউনাইটেড, ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অব সায়েন্সেস, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস ও অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
এ ছাড়া ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি, প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, আশা ইউনিভার্সিটি, ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি, নর্দান ইউনিভার্সিটি ও এশিয়ান ইউনিভার্সিটি জমি কিনলেও নির্মাণকাজ শুরু করেনি।
দ্বন্দ্ব: দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় চার ভাগে বিভক্ত হয়ে কথিত শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং এর প্রায় দেড় শ শাখার নামে শিক্ষা-বাণিজ্য চলছে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন করেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সনদ বিক্রি করা ঠেকাতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
ইবাইস ইউনিভার্সিটিতে দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি নিয়ে মামলা চলছে। চট্টগ্রামে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব আছে।
এর মধ্যে আবার অনুমোদনহীন ক্যাম্পাস পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে প্রাইম ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সাউদার্ন, নর্দান, দি পিপলস, বিজিসি ট্রাস্ট, ইবাইস, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।
যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয়: ব্যস্ততম সড়ক ও আবাসিক এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা যাবে না, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস থাকা যাবে না—এগুলো আইনের কথা ও সরকারের সিদ্ধান্ত। কিন্তু আইন ভঙ্গ করে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যত্রতত্র ক্যাম্পাস খুলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রচুর অভিযোগ আছে।
গত ২৪ জুন ও ১২ জুলাই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কারওয়ান বাজার থেকে ফার্মগেট এলাকার মাঝামাঝি এলাকায় কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউয়ের মতো ব্যস্ততম সড়কের ঠিক পাশেই গড়ে উঠেছে নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্যাম্পাস। অথচ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস বনানীতে। আর স্থায়ী ক্যাম্পাসের কাজ চলছে গাজীপুরের কাশিমপুরে।
কারওয়ান বাজারের এই ক্যাম্পাস থেকে কিছু দূর পূর্বদিকে ৭১ কারওয়ান বাজারে চলছে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির একটি ক্যাম্পাসের কার্যক্রম। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির পূর্ব পাশের দেয়াল ঘেঁষে বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলানো। উত্তর পাশের দেয়াল ঘেঁষে ঠেলাগাড়ি গ্যারেজ। দক্ষিণ পাশেই বাজারের অংশ। শুধু পশ্চিম পাশের রাস্তাটি কিছুটা পরিষ্কার। ওপরে গিয়ে শ্রেণিকক্ষের ঘিঞ্জি পরিবেশ দেখা যায়।
পান্থপথ এলাকায় দেখা যায়, পাশাপাশি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। পান্থপথ সড়কের উত্তর পাশে ১৩/এ ঠিকানায় সিটি ইউনিভার্সিটির সিটি ক্যাম্পাস। সড়কটির বিপরীত পাশে তিনটি ভবনে ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। পাশেই অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। ইউজিসির একজন কর্মকর্তা বলেন, অতীশ দীপঙ্করের এই ক্যাম্পাসটি অবৈধ।
ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির একটি ভবনে গিয়ে দেখা যায়, নিচতলায় একটি রেস্তোরাঁ। ওপরের দোতলা ও তিনতলায় ফার্নিচারের দোকান। এর ওপরের তলাগুলোতে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।
শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান গত ২৩ জুন আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে অতীশ দীপঙ্কর ও ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটির এসব ক্যাম্পাসে নানা অনিয়ম দেখতে পান। শিক্ষাসচিব প্রথম আলোকে বলেন, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সায়েন্স বিজ্ঞান বিভাগ আছে অথচ কম্পিউটার ল্যাবের অবস্থা গ্রামের হাইস্কুলের চেয়েও খারাপ।
অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় সচিব শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ নেই।
আরও অনুমোদনের তোড়জোড়!: আরও দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দেওয়ার তোড়জোড় শুরু করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ‘এনপিআই’ নামের বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে মানিকগঞ্জে। এর পেছনে আছেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। আর সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি হবে ঢাকার অদূরে সাভারে। প্রথমে ঢাকার মিরপুরের ঠিকানায় আবেদন করলেও পরে সাভারে স্থায়ী ক্যাম্পাসের কথা বলে ফের আবেদন করে ওই ইউনিভার্সিটি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একজন প্রখ্যাত ও প্রবীণ চিকিৎসকের নাম থাকলেও নেপথ্যে রয়েছেন গাজী আবদুস সালাম নামে এক ব্যক্তি, যিনি ঢাকা-খুলনা ও কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ডজন খানেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিক। সালামের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিতর্ক থাকায় আগে বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়া হয়নি বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।
জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, এ দুটি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বর্তমানে দেড় শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন জমা রয়েছে। ইউজিসি সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রস্তাবিত ১০৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। এগুলোর মধ্যে আরও কয়েকটি অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
No comments