ঈদ, তোবার শ্রমিক ও গাজার নিহত শিশুরা by সোহরাব হাসান
বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবারে ঈদে ঘরমুখো
মানুষের যাত্রা অনেকটা স্বস্তিদায়ক ছিল। মহাসড়কে যানজটের মাত্রাও
অপেক্ষাকৃত কম। আবহাওয়াও ছিল সহনীয়—বেশি বৃষ্টি নয়, বেশি রোদও নয়।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়
করেছেন।
>>নয় বছর বয়সী ফিলিস্তিনি এই মেয়েটি ঘরের বাইরে খেলছিল। এমন সময় ইসরায়েলি বোমা হামলায় স্প্লিন্টারবিদ্ধ তার শরীর। ছবিটি গাজা শহরের বেইত লাহিয়া এলাকার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের সামনে থেকে তোলা। ছবি: এএফপি
>>নয় বছর বয়সী ফিলিস্তিনি এই মেয়েটি ঘরের বাইরে খেলছিল। এমন সময় ইসরায়েলি বোমা হামলায় স্প্লিন্টারবিদ্ধ তার শরীর। ছবিটি গাজা শহরের বেইত লাহিয়া এলাকার কামাল আদওয়ান হাসপাতালের সামনে থেকে তোলা। ছবি: এএফপি
কিন্তু
এবারে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেননি তোবা গ্রুপের তিন হাজার শ্রমিক। ঈদের
আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি অবরুদ্ধ গাজার লাখ লাখ মানুষ। ২০১২ সালে তোবা
গ্রুপের তাজরীন কারখানা পুড়ে শতাধিক শ্রমিক মারা যান এর মালিক দেলোয়ার
হোসেনের অবহেলার কারণে। ঘটনার দেড় বছর পার হলেও নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও
আহত শ্রমিকেরা যথাযথ ক্ষতিপূরণ না পেয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।
সেই তোবা গ্রুপেরই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার শ্রমিক বেতন-বোনাসের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন গত সোমবার। ঈদের দিনও তাঁরা অনশনে ছিলেন। যেখানে বেতন পেয়েই মানুষের চলা কঠিন, সেখানে তিন মাস বেতন না পেয়ে এই শ্রমিকেরা যে চরম বিপাকে পড়েছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
টেলিভিশনে আমরা দেখলাম, কারখানা চত্বরে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন। কেউ কেউ হাউমাউ করে কাঁদছেন, আহাজারি করছেন। বাংলাদেশে গরিব শ্রমিকদের কান্না ছাড়া কী আছে? ঈদের আগে সরকারি ও বিএনপির নেতারা আন্দোলন নিয়ে বাগযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। একে অপরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু ঈদের দিনে অনশনরত শ্রমিকদের পাশে কেউ দাঁড়াননি। সরকারি বা বিএনপির কোনো শ্রমিকনেতাও সেখানে যাননি। শ্রমিকেরা বেতন-বোনাসের দাবিতে কারখানা চত্বরে অনশন করছেন; আর বাড়িতে তাঁদের প্রিয়জনেরা অপেক্ষায় আছেন কবে বেতন-বোনাস নিয়ে তাঁরা বাড়ি যাবেন।
শ্রমিকেরা বলছেন, বিজিএমইএ চাইলে ঈদের আগেই সমস্যার সমাধান করতে পারত। সমাধান করতে পারত হয়তো সরকারও। কিন্তু তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। বিজিএমইএ তৈরি পোশাক মালিকদের প্রতিষ্ঠান। তাই বলে তাঁরা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার তথা বেতন-ভাতার বিষয়টি এভাবে উপেক্ষা করতে পারে না। তোবা গার্মেন্টসের সম্পত্তি বিক্রি করেই যদি শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে হয়, তাহলে সেই উদ্যোগ তাঁরা আগে নিল না কেন? এখন বলছেন, দাম পাচ্ছে না। শ্রমিকেরা কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেনের শাশুড়িকেও কারখানা ভবনে আটকে রেখেছেন। ব্যক্তি হিসেবে তাঁর আটককে আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু তিনি যদি তোবা গ্রুপের মালিকদের কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকেও দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেছেন, কারখানা বিক্রি না করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা যাবে না। কারখানা বিক্রি করতে দু-তিন মাস দেরি হলে কি শ্রমিকেরা ততদিন না খেয়ে থাকবেন?
বাংলাদেশে একশ্রেণির মানুষ শ্রমিকদের ঘামে-রক্তে গড়া সম্পদের মালিক হলেও সেই শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কিংবা নিরাপত্তা দিতে চান না। এ কারণেই তাজরীন গার্মেন্টস ও রানা প্লাজার ঘটনা ঘটছে। তোবা গ্রুপের তিন হাজার শ্রমিককে যারা আমরণ অনশনে যেতে বাধ্য করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।
দ্বিতীয় বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটেছে গাজা উপত্যকায়। গত কয়েক দিনে সেখানে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী ১১ শতাধিক নিরীহ নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যা করেছে। এমনকি সোমবার সেখানে যখন ঈদ উদযাপিত হচ্ছিল, তখন ইসরায়েলি বাহিনী হামলা অব্যাহত রেখেছিল। তাদের নৃশংসতা থেকে রেহাই পায়নি নামাজ আদায়রত মুসল্লিরা, হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রোগীরা। রেহাই পায়নি ঈদের দিন পার্কে খেলতে যাওয়া শিশুরাও। ইসরায়েলি বাহিনী ধ্বংস করেছে বসতবাড়ি, স্কুল, হাসপাতালসহ সব ধরনের বেসামরিক স্থাপনা।
কিন্তু গাজায় এই ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেক যেভাবে সোচ্চার হওয়ার কথা, সেভাবে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুচ্চ আহ্বানকে পাত্তা দিচ্ছে না এই জায়ানবাদী রাষ্ট্রটি। নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত অস্ত্রবিরতির আহ্বানও আমলে নিচ্ছে না তারা।
মারাত্মক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র না বানালেও সাদ্দাম হোসেনের ওপর সেই দায় চাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে প্রহসনমূলক বিচারের নামে তাঁকে হত্যা করা হয়। সাদ্দাম তাঁর দেশে যে অপরাধ করেছেন, তার চেয়ে বেশি অপরাধ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজা ও পশ্চিম তীরে। মানবাধিকারের এই মোড়লেরা এখন নীরব কেন? ইসরায়েলকে মৃদু ভর্ত্সনা ছাড়া কিছুই করছে না তারা। কেন এই স্ববিরোধী ভূমিকা? কেন এই আত্মপ্রতারণা?
জন কেরির মধ্যপ্রাচ্য মিশন তখনই সফল হবে যখন তিনি যুদ্ধবাজ ইসরায়েলকে নিরস্ত্র করতে পারবেন। অন্যথায় শান্তিরই ললিত বাণী ব্যর্থ পরিহাস হয়ে দেখা দেবে। এ ব্যাপারে মুসলিম বিশ্ব ও তাদের সংস্থা ওআইসির ভূমিকাও লজ্জাজনক।
সেই তোবা গ্রুপেরই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের তিন হাজার শ্রমিক বেতন-বোনাসের দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন গত সোমবার। ঈদের দিনও তাঁরা অনশনে ছিলেন। যেখানে বেতন পেয়েই মানুষের চলা কঠিন, সেখানে তিন মাস বেতন না পেয়ে এই শ্রমিকেরা যে চরম বিপাকে পড়েছেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
টেলিভিশনে আমরা দেখলাম, কারখানা চত্বরে শ্রমিকেরা বিক্ষোভ করছেন। কেউ কেউ হাউমাউ করে কাঁদছেন, আহাজারি করছেন। বাংলাদেশে গরিব শ্রমিকদের কান্না ছাড়া কী আছে? ঈদের আগে সরকারি ও বিএনপির নেতারা আন্দোলন নিয়ে বাগযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। একে অপরকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু ঈদের দিনে অনশনরত শ্রমিকদের পাশে কেউ দাঁড়াননি। সরকারি বা বিএনপির কোনো শ্রমিকনেতাও সেখানে যাননি। শ্রমিকেরা বেতন-বোনাসের দাবিতে কারখানা চত্বরে অনশন করছেন; আর বাড়িতে তাঁদের প্রিয়জনেরা অপেক্ষায় আছেন কবে বেতন-বোনাস নিয়ে তাঁরা বাড়ি যাবেন।
শ্রমিকেরা বলছেন, বিজিএমইএ চাইলে ঈদের আগেই সমস্যার সমাধান করতে পারত। সমাধান করতে পারত হয়তো সরকারও। কিন্তু তারা কেউ এগিয়ে আসেনি। বিজিএমইএ তৈরি পোশাক মালিকদের প্রতিষ্ঠান। তাই বলে তাঁরা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার তথা বেতন-ভাতার বিষয়টি এভাবে উপেক্ষা করতে পারে না। তোবা গার্মেন্টসের সম্পত্তি বিক্রি করেই যদি শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে হয়, তাহলে সেই উদ্যোগ তাঁরা আগে নিল না কেন? এখন বলছেন, দাম পাচ্ছে না। শ্রমিকেরা কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেনের শাশুড়িকেও কারখানা ভবনে আটকে রেখেছেন। ব্যক্তি হিসেবে তাঁর আটককে আমরা সমর্থন করি না। কিন্তু তিনি যদি তোবা গ্রুপের মালিকদের কেউ হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকেও দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি বলেছেন, কারখানা বিক্রি না করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করা যাবে না। কারখানা বিক্রি করতে দু-তিন মাস দেরি হলে কি শ্রমিকেরা ততদিন না খেয়ে থাকবেন?
বাংলাদেশে একশ্রেণির মানুষ শ্রমিকদের ঘামে-রক্তে গড়া সম্পদের মালিক হলেও সেই শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কিংবা নিরাপত্তা দিতে চান না। এ কারণেই তাজরীন গার্মেন্টস ও রানা প্লাজার ঘটনা ঘটছে। তোবা গ্রুপের তিন হাজার শ্রমিককে যারা আমরণ অনশনে যেতে বাধ্য করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি অবিলম্বে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হবে।
দ্বিতীয় বেদনাদায়ক ঘটনাটি ঘটেছে গাজা উপত্যকায়। গত কয়েক দিনে সেখানে হামলা চালিয়ে ইসরায়েলি বাহিনী ১১ শতাধিক নিরীহ নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যা করেছে। এমনকি সোমবার সেখানে যখন ঈদ উদযাপিত হচ্ছিল, তখন ইসরায়েলি বাহিনী হামলা অব্যাহত রেখেছিল। তাদের নৃশংসতা থেকে রেহাই পায়নি নামাজ আদায়রত মুসল্লিরা, হাসপাতালে চিকিত্সাধীন রোগীরা। রেহাই পায়নি ঈদের দিন পার্কে খেলতে যাওয়া শিশুরাও। ইসরায়েলি বাহিনী ধ্বংস করেছে বসতবাড়ি, স্কুল, হাসপাতালসহ সব ধরনের বেসামরিক স্থাপনা।
কিন্তু গাজায় এই ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিশ্ববিবেক যেভাবে সোচ্চার হওয়ার কথা, সেভাবে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার অনুচ্চ আহ্বানকে পাত্তা দিচ্ছে না এই জায়ানবাদী রাষ্ট্রটি। নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত অস্ত্রবিরতির আহ্বানও আমলে নিচ্ছে না তারা।
মারাত্মক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র না বানালেও সাদ্দাম হোসেনের ওপর সেই দায় চাপিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে আগ্রাসন চালিয়েছিল। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে প্রহসনমূলক বিচারের নামে তাঁকে হত্যা করা হয়। সাদ্দাম তাঁর দেশে যে অপরাধ করেছেন, তার চেয়ে বেশি অপরাধ করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজা ও পশ্চিম তীরে। মানবাধিকারের এই মোড়লেরা এখন নীরব কেন? ইসরায়েলকে মৃদু ভর্ত্সনা ছাড়া কিছুই করছে না তারা। কেন এই স্ববিরোধী ভূমিকা? কেন এই আত্মপ্রতারণা?
জন কেরির মধ্যপ্রাচ্য মিশন তখনই সফল হবে যখন তিনি যুদ্ধবাজ ইসরায়েলকে নিরস্ত্র করতে পারবেন। অন্যথায় শান্তিরই ললিত বাণী ব্যর্থ পরিহাস হয়ে দেখা দেবে। এ ব্যাপারে মুসলিম বিশ্ব ও তাদের সংস্থা ওআইসির ভূমিকাও লজ্জাজনক।
No comments