সংবিধান, সংসদীয় রাজনীতি, নির্বাচন- সব কিছুই ভুয়া ব্যাপারে পরিণত হয়েছে by বদরুদ্দীন উমর
সরকারি
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত
হওয়ার কথা। গতকাল ১৩ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। দেখা
যাচ্ছে, এই প্রত্যাহারের পর ৩০০ আসনের মধ্যে ১২৮ আসনে প্রার্থীরা বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন! (উধরষু ঝঃধৎ, ১৪.১২.১৩)। এ ধরনের
ব্যাপার ইতিপূর্বে বাংলাদেশে কোনো স্বাভাবিক নির্বাচনে তো হয়ইনি, বিশ্বের
কোনো দেশে হয়েছে বলেও জানা নেই। এর একমাত্র ব্যতিক্রম বিএনপির আমলে ১৯৯৬
সালের ফেব্র“য়ারি নির্বাচন। তখন ৪৮ জন বিএনপি প্রার্থী বিনা
প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। বাস্তবত সাধারণত নির্বাচনে কোনো
আসনেই কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন না। সেটা কখনও হলেও ঘটে
কালেভদ্রে। কিন্তু বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে দু-একজন বা দু-চারজন নয়,
একেবারে ১২৮ জন নির্বাচিত হয়েছেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়!! এই হল
প্রার্থীদের অবস্থা। নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে প্রার্থীদের এই অনীহা
থাকলে সাধারণ ভোটারদের অবস্থা কী দাঁড়াবে সেটা বলাই বাহুল্য। তবে এ
ক্ষেত্রে একটা রাস্তা খোলা আছে ভোটার সংখ্যা বৃদ্ধির এবং সে রাস্তা হল দলীয়
গুণ্ডাপাণ্ডা, কর্মী এবং নির্বাচনী অফিসারদের দ্বারা জাল ভোট দিয়ে
বাক্সভর্তি করা। এটা খুব সহজ হবে, কারণ ভোটকেন্দ্রে কোনো বিরোধীদলীয়
প্রতিনিধিই উপস্থিত থাকবেন না।
লক্ষ্য করার বিষয়, এভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা একেবারে সরাসরি। তার নির্দেশে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের প্রার্থীও নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে দিয়েছেন! চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুল ইসলাম বিএসসি নির্বাচন কমিশনের কাছে দেয়া তার প্রত্যাহারপত্রে লিখেছেন, তিনি তাদের দলীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছেন! (উধরষু ঝঃধৎ, ১৪.১২.১৩)
এভাবে যে নির্বাচন ৫ জানুয়ারি হতে যাচ্ছে, সেটা কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই নির্বাচন হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য নয়। এই একইভাবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি বিএনপি নির্বাচন করেছিল। তার পরিণতি সবারই জানা। কিন্তু বর্তমান নির্বাচনের অবস্থা আরও খারাপ। একতরফা এই নির্বাচনে যেভাবে এত বিশালসংখ্যক আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন তাতে একে প্রহসন ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। এই প্রহসন সম্ভব করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনা সংবিধান এবং সংসদীয় রাজনীতিকেও প্রহসনে পরিণত করেছেন। সংবিধানের পবিত্রতা এবং তা রক্ষা করা নিয়ে অনেক গালভরা কথা তার দ্বারা অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলছেন। কিন্তু তাদের বক্তব্য অনুযায়ী সংবিধানের পবিত্রতার যে কথা তারা বলছেন সেটা নষ্ট ও কলুষিত করার ব্যাপারে তার ভূমিকাই প্রধান। আসলে তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে যেভাবে সংবিধানের অন্যতম প্রধান খুঁটি গণতন্ত্র ধ্বংস করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই শেখ হাসিনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নিজেদের সংবিধানকে একটা ভুয়া দলিলে পরিণত করেছেন। ১৯৭৩ সালের মূল সংবিধানে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে হলেও যেসব গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলা হয়েছিল, তার প্রত্যেকটিই এখন ভূলুণ্ঠিত। বাহ্যত, সেই সংবিধানের যে গণতান্ত্রিক চরিত্র ছিল, শেখ মুজিব নিজে এবং তারপর জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা তার লেশমাত্র আর অবশিষ্ট রাখেননি।
সংবিধান এমন কোনো পবিত্র জিনিস নয় যা চিরকালীন ও অপরিবর্তনীয়। সংবিধান পরিবর্তনের ব্যবস্থা সংবিধানেই থাকে। তার কারণেই সংবিধান সংশোধন করা হয়। সংবিধান আকাশ থেকে পড়ে না, শাসক শ্রেণীর চরিত্রের দ্বারাই সংবিধানের চরিত্র নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশও এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম নয়। ১৯৭৩ সালে জনগণকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে সংবিধানে অনেক ভালো ভালো কথা বলা হয়েছিল। অনেক ধারা রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেসবকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শেখ মুজিবই মূল সংবিধানের সংশোধনী এনে তার শাসনের মেয়াদকালেই বাংলাদেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদলীয় শাসনের প্রবর্তন করেছিলেন। সেই ফ্যাসিস্ট শাসনের নানা রদবদল সত্ত্বেও পরবর্তীকালে ধারাবাহিকভাবে যেসব সংশোধনী পাস করা হয়েছে, তাতে মূল সংবিধানের খুঁটিগুলোর কোনটিরই আর অস্তিত্ব নেই। এই সংশোধনীগুলোর সর্বশেষ হল শেখ হাসিনার দ্বারা কৃত পঞ্চদশ সংশোধনী। এর মাধ্যমে তিনি তার কমে যাওয়া জনপ্রিয়তার মুখে ক্ষমতাসীন থাকার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা করেছেন নিজে প্রধানমন্ত্রী থেকে ও সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করার। যেভাবে তিনি অনড়ভাবে তার এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাণপাত করছেন, তাতে বাংলাদেশে শুধু আওয়ামী লীগেরই নয়, সমগ্র শাসকশ্রেণীর চরিত্রই উন্মোচিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলোও যা করছে, সেটা আওয়ামী লীগের সংসদীয় নির্বাচনের ফ্যাসিস্ট চরিত্রের অন্য একদিক। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের নামে হরতালের পর হরতাল, অবরোধের পর অবরোধ দিয়ে দেশের জনগণের জীবন তারা বিপর্যস্ত করছে। আওয়ামী লীগকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য বাধ্য করার উদ্দেশ্যে যেভাবে বোমাবাজির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি তারা চালিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গেও কোনো বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এই শাসকশ্রেণী এতই অধম যে, এদের প্রকৃত বুর্জোয়া বলাও সম্ভব নয়। এরা হল লুটপাট, চুরি, দুর্নীতি, প্রতারণা ইত্যাদির মাধ্যমে গঠিত এমন এক শাসকশ্রেণী, যাদের পক্ষে প্রকৃতপক্ষে বুর্জোয়া হয়ে ওঠাও সম্ভব হয়নি। কাজেই লুম্পেন বুর্জোয়াদের এই শাসনে জনগণের কোনো অধিকার যে কোনো ক্ষেত্রেই নেই, এতে বিস্মিত হওয়ার কী আছে?
এরশাদ নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া সত্ত্বেও তার দলের মধ্যে ভাঙনের চেষ্টা করে তার নিজের এবং দলের অন্যদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে হুকুম দিয়ে এবং চিকিৎসার নামে এরশাদকে হাসপাতালে আটকে রেখে যে খেলা শেখ হাসিনা দেখাচ্ছেন, এটা কোনো বুর্জোয়ার কাজ নয়। বুর্জোয়া নামেরও অযোগ্য লুম্পেন বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি হিসেবেই শেখ হাসিনা এ কাজ করেছেন। এ ধরনের কাজ করার জন্যই যে তিনি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী গায়ের জোরে জাতীয় সংসদে পাস করেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এর মাধ্যমে তিনি এ বিষয়টি প্রমাণসিদ্ধ করেছেন যে, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান, সংসদীয় রাজনীতি এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক ভুয়া ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয়।
তবে এটা মনে করার কিছুই নেই যে, এসব কাজ করে শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবেন। অতি চালাকের যে অবস্থা হয়, শেখ হাসিনার অবস্থা তা-ই হবে। তবে এর দ্বারা শুধু তারই ভরাডুবি হবে না, তাদের নৌকার তলা তিনি যেভাবে ফুটো করেছেন, তাতে তার দল আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়েই তিনি তলিয়ে যাবেন।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
লক্ষ্য করার বিষয়, এভাবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীদের নির্বাচিত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা একেবারে সরাসরি। তার নির্দেশে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের প্রার্থীও নিজেদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতিয়ে দিয়েছেন! চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ প্রার্থী নূরুল ইসলাম বিএসসি নির্বাচন কমিশনের কাছে দেয়া তার প্রত্যাহারপত্রে লিখেছেন, তিনি তাদের দলীয় নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশেই নিজের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করছেন! (উধরষু ঝঃধৎ, ১৪.১২.১৩)
এভাবে যে নির্বাচন ৫ জানুয়ারি হতে যাচ্ছে, সেটা কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতেই নির্বাচন হিসেবে গণ্য হওয়ার যোগ্য নয়। এই একইভাবে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি বিএনপি নির্বাচন করেছিল। তার পরিণতি সবারই জানা। কিন্তু বর্তমান নির্বাচনের অবস্থা আরও খারাপ। একতরফা এই নির্বাচনে যেভাবে এত বিশালসংখ্যক আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন তাতে একে প্রহসন ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। এই প্রহসন সম্ভব করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ হাসিনা সংবিধান এবং সংসদীয় রাজনীতিকেও প্রহসনে পরিণত করেছেন। সংবিধানের পবিত্রতা এবং তা রক্ষা করা নিয়ে অনেক গালভরা কথা তার দ্বারা অনুষ্ঠিত এই নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলছেন। কিন্তু তাদের বক্তব্য অনুযায়ী সংবিধানের পবিত্রতার যে কথা তারা বলছেন সেটা নষ্ট ও কলুষিত করার ব্যাপারে তার ভূমিকাই প্রধান। আসলে তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে যেভাবে সংবিধানের অন্যতম প্রধান খুঁটি গণতন্ত্র ধ্বংস করেছিলেন, তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই শেখ হাসিনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে নিজেদের সংবিধানকে একটা ভুয়া দলিলে পরিণত করেছেন। ১৯৭৩ সালের মূল সংবিধানে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে হলেও যেসব গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলা হয়েছিল, তার প্রত্যেকটিই এখন ভূলুণ্ঠিত। বাহ্যত, সেই সংবিধানের যে গণতান্ত্রিক চরিত্র ছিল, শেখ মুজিব নিজে এবং তারপর জিয়াউর রহমান, এরশাদ, খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনা তার লেশমাত্র আর অবশিষ্ট রাখেননি।
সংবিধান এমন কোনো পবিত্র জিনিস নয় যা চিরকালীন ও অপরিবর্তনীয়। সংবিধান পরিবর্তনের ব্যবস্থা সংবিধানেই থাকে। তার কারণেই সংবিধান সংশোধন করা হয়। সংবিধান আকাশ থেকে পড়ে না, শাসক শ্রেণীর চরিত্রের দ্বারাই সংবিধানের চরিত্র নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশও এদিক দিয়ে ব্যতিক্রম নয়। ১৯৭৩ সালে জনগণকে প্রতারণার উদ্দেশ্যে সংবিধানে অনেক ভালো ভালো কথা বলা হয়েছিল। অনেক ধারা রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেসবকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শেখ মুজিবই মূল সংবিধানের সংশোধনী এনে তার শাসনের মেয়াদকালেই বাংলাদেশে বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদলীয় শাসনের প্রবর্তন করেছিলেন। সেই ফ্যাসিস্ট শাসনের নানা রদবদল সত্ত্বেও পরবর্তীকালে ধারাবাহিকভাবে যেসব সংশোধনী পাস করা হয়েছে, তাতে মূল সংবিধানের খুঁটিগুলোর কোনটিরই আর অস্তিত্ব নেই। এই সংশোধনীগুলোর সর্বশেষ হল শেখ হাসিনার দ্বারা কৃত পঞ্চদশ সংশোধনী। এর মাধ্যমে তিনি তার কমে যাওয়া জনপ্রিয়তার মুখে ক্ষমতাসীন থাকার উদ্দেশ্যে ব্যবস্থা করেছেন নিজে প্রধানমন্ত্রী থেকে ও সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করার। যেভাবে তিনি অনড়ভাবে তার এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রাণপাত করছেন, তাতে বাংলাদেশে শুধু আওয়ামী লীগেরই নয়, সমগ্র শাসকশ্রেণীর চরিত্রই উন্মোচিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বিরোধী দলগুলোও যা করছে, সেটা আওয়ামী লীগের সংসদীয় নির্বাচনের ফ্যাসিস্ট চরিত্রের অন্য একদিক। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের নামে হরতালের পর হরতাল, অবরোধের পর অবরোধ দিয়ে দেশের জনগণের জীবন তারা বিপর্যস্ত করছে। আওয়ামী লীগকে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের জন্য বাধ্য করার উদ্দেশ্যে যেভাবে বোমাবাজির মাধ্যমে হত্যাকাণ্ড, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি তারা চালিয়ে যাচ্ছে, তার সঙ্গেও কোনো বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এই শাসকশ্রেণী এতই অধম যে, এদের প্রকৃত বুর্জোয়া বলাও সম্ভব নয়। এরা হল লুটপাট, চুরি, দুর্নীতি, প্রতারণা ইত্যাদির মাধ্যমে গঠিত এমন এক শাসকশ্রেণী, যাদের পক্ষে প্রকৃতপক্ষে বুর্জোয়া হয়ে ওঠাও সম্ভব হয়নি। কাজেই লুম্পেন বুর্জোয়াদের এই শাসনে জনগণের কোনো অধিকার যে কোনো ক্ষেত্রেই নেই, এতে বিস্মিত হওয়ার কী আছে?
এরশাদ নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া সত্ত্বেও তার দলের মধ্যে ভাঙনের চেষ্টা করে তার নিজের এবং দলের অন্যদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে হুকুম দিয়ে এবং চিকিৎসার নামে এরশাদকে হাসপাতালে আটকে রেখে যে খেলা শেখ হাসিনা দেখাচ্ছেন, এটা কোনো বুর্জোয়ার কাজ নয়। বুর্জোয়া নামেরও অযোগ্য লুম্পেন বুর্জোয়াদের প্রতিনিধি হিসেবেই শেখ হাসিনা এ কাজ করেছেন। এ ধরনের কাজ করার জন্যই যে তিনি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী গায়ের জোরে জাতীয় সংসদে পাস করেছেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এর মাধ্যমে তিনি এ বিষয়টি প্রমাণসিদ্ধ করেছেন যে, বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধান, সংসদীয় রাজনীতি এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক ভুয়া ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয়।
তবে এটা মনে করার কিছুই নেই যে, এসব কাজ করে শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবেন। অতি চালাকের যে অবস্থা হয়, শেখ হাসিনার অবস্থা তা-ই হবে। তবে এর দ্বারা শুধু তারই ভরাডুবি হবে না, তাদের নৌকার তলা তিনি যেভাবে ফুটো করেছেন, তাতে তার দল আওয়ামী লীগকে সঙ্গে নিয়েই তিনি তলিয়ে যাবেন।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
No comments