সিরিয়া ক্রমেই গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, সিরিয়া ক্রমেই পূর্ণমাত্রায় গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটির নিরাপত্তাকর্মীদের সপক্ষ ত্যাগ করার আহ্বানে গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত দেশব্যাপী বৃহত্তর সমাবেশে সরকার-সমর্থিত বন্দুকধারীরা গুলি চালিয়েছে। এতে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার গ্রুপ সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের প্রধান রামি আবদেল রহমান জানান, নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে শুক্রবার ১২ জন প্রাণ হারিয়েছে। এর মধ্যে সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলের দায়েল এলাকায় সাতজন, দারা এলাকায় একজন নারী ও এক শিশু, দামেস্কের ভেতরে-বাইরে দুজন এবং আলেপ্পো এলাকায় একজন রয়েছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় বহু লোক আহত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সিরিয়ায় অধিকার আদায়ের আন্দোলন ক্রমশ সশস্ত্র সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। আন্দোলনকারীরা এখন বিক্ষোভের পরিবর্তে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামে অংশ নিতে হন্যে হয়ে অস্ত্র খুঁজছে। এ ছাড়া তারা সপক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার জন্য দেশটির নিরাপত্তাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক নিরাপত্তাকর্মী সপক্ষ ত্যাগ করেছেন। সরকারি বাহিনী থেকে অনেকে পালিয়ে গেছেন। গত শুক্রবারের বিক্ষোভ সমাবেশ ছিল মূলত দলত্যাগীদের বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে এককাট্টা হওয়ার আহ্বান জানানোর জন্যই। আন্দোলনকারীরা বলছে, দলত্যাগী নিরাপত্তাকর্মীরাই তাদের আন্দোলনের ভবিষ্যৎ।
সিরিয়ায় অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ক্রমেই সশস্ত্র আন্দোলনের দিকে ধাবিত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কর্মকর্তারা। মানবাধিকার কমিশনার নভি পিল্লাই বলেছেন, সিরিয়ার চলমান সংঘাত বন্ধে আরও অনেক কিছুই করার রয়েছে। তিনি বলেন, চলমান দমন-পীড়ন এবং হত্যাযজ্ঞের জের ধরে সিরিয়ার পরিস্থিতি পূর্ণমাত্রায় গৃহযুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে। সে রকম পরিস্থিতির দিকে যাওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সমষ্টিগতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
নভি পিল্লাই আরও বলেন, যেহেতু সিরিয়ার সেনারা ক্রমবর্ধমানভাবে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে এবং সপক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে, সেহেতু পরিস্থিতি সশস্ত্র যুদ্ধের দিকেই মোড় নিচ্ছে।
এদিকে ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা বিক্ষোভে সরকারি বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে সিরিয়ার সরকার বলেছে, তাদের এক হাজার ১০০ নিরাপত্তাকর্মী নিহত হয়েছে।
লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উৎসাহী হয়ে যে ধরনের ভূমিকা রেখেছে, সিরিয়ায় সে রকমটি পরিলক্ষিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ সিরিয়ায় কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা পরিষদে সিরিয়ার ওপর অধিকতর নিষেধাজ্ঞা আরোপে ওয়াশিংটনের প্রচেষ্টা গত সপ্তাহে চীন ও রাশিয়ার ভেটো দেওয়ার কারণে হোঁচট খেয়েছে।
কূটনীতিকেরা বলছেন, সিরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পক্ষের ও বিপক্ষের কূটনীতিকদের মধ্যে অন্যরকম যুদ্ধ শুরু হয়েছে। জার্মানি, যুক্তরাজ্য ফ্রান্স ও পর্তুগালের কূটনীতিকেরা প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধাচার করেছেন। তাঁরা বলছেন, সিরিয়ার ব্যাপারে নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। আর চীন ও রাশিয়ার কূটনীতিকেরা বলছেন, নিরাপত্তা পরিষদকে কোনোমতেই সিরিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপের পথে হাঁটা ঠিক হবে না।

No comments

Powered by Blogger.